মৌ মুখার্জি নাকি মিস জোজো? কোনটা বলব বলুন তো?
মিসেস মিস জোজো বলাই ভাল
ওমা! মিসেস জুড়ছেন কেন? না হলে বর রেগে যাবে?
আসলে অনেকে বিশ্বাসই করতে চায় না আমার বিয়ে হয়ে গেছে, মেয়ে আছে। তবে বরের আপত্তির প্রশ্নই ওঠে না। ও একদম অন্য রকম মানুষ। একবার ভাবুন তো সেই কবে থেকে মঞ্চে কখনও লাল চুলে, কখনও অন্য রকম পোশাকে, ভিন্ন শরীরী ভঙ্গিমায় আমি পারফর্ম (নাচ,গান) করে আসছি। গায়িকারা যে গানের সঙ্গে কথা বলবে এটা তো কেউ ভাবতেই পারত না! ‘ওয়াই টু কে’ ছবিতে আমার আর রণির (রজতাভ) স্মুচিং-এর দৃশ্য ঝড় তুলেছিল সেই কবে। অন স্ক্রিন অভিনয় করতে গিয়ে সিগারেট খেয়েছি, গাজাও টেনেছি। আমি আজও অনুষ্ঠান করতে গিয়ে দর্শক হিসেবে কোনও আকর্ষণীয় পুরুষ বা ছেলেকে খুব ভাল লেগে গেলে আমি তাকে আই লাভ ইউ বলতেই পারি! আমি তো এ রকমই! দেখুন আমার স্বামী খুব ভাল করে জানেন যে-জোজোকে তিনি বিয়ে করেছেন, তার সঙ্গে বাইরের জোজোর কোনও মিল নেই।
স্মোকি আইস, শরীরী ভঙ্গিমা, ঝকমকে পোশাক এগুলোর জন্যই কি জোজো জনপ্রিয়? লোকে তো এক সময় গান শোনার চেয়ে জোজোকে দেখতে যেত বেশি!
অফকোর্স! দেখতেই আসত। এটা ঈশ্বরের আশীর্বাদ বলে মনে করি আমি। দেখতেই আসুক! তাতে কী? জোজো আসলে একটা কমপ্লিট প্যাকেজ। আর সত্যি কথা বলতে ছোটবেলা থেকেই আমি নিজেকে গ্রুম করেছিলাম ‘অন্য কিছু’ করব বলে। মানে আমাকে যাতে পাশের বাড়ির মেয়ের চেয়ে, মঞ্চে যাদের দেখা যায় তাঁদের চেয়ে, আলাদা লাগে। সাত বছর বয়স থেকে পাবলিক শো আরম্ভ করেছিলাম। যতক্ষণ জেগে থাকতাম, সব ধরনের গান শুনতাম। মা-কে মজা করে বলতাম, আমি তানসেন নই, কিন্তু কানসেন! শুনে শুনেই গান শেখা। আমার মা-বাবা গান করতেন। বাড়িতে গানের চর্চা তো ছিলই। কিন্তু তখন থেকেই আমি ম্যাডোনা, বনি এম, অ্যাবা আর মাইকেল জ্যাকসনের লাইভ কনসার্টের ভিডিয়ো দেখতাম। অন্ধের মতো ওঁদের গান গাওয়ার ভঙ্গি, মেক আপ, ছন্দ, অনুসরণ করতাম। আমার মনে হত...
ম্যাডোনার শরীর খোলা পোশাক...
রাইট! আমার স্টেজ শো যদি দেখে থাকেন, দেখবেন জোজো কিন্তু ‘কভার গার্ল’। ম্যাডোনার ফ্যান হলেও কোনও দিন মনে হয়নি শরীরের এই অংশটা খোলা রাখব, ওই অংশটা শো করব। ম্যাডোনার মেক আপ দেখতাম। যে রকম গ্লাভস্ পরেছে সে রকম পরতে চাইতাম। আজকাল দেখি সুন্দর ফিগার হলেই সেটা দেখানোর প্রবণতা মেয়েদের মধ্যে খুব বেশি। কিন্তু আমি তেমন করে কোনও দিন ভাবিনি।
অশ্লীল পোশাক পরেননি কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির আইটেম নাম্বারে পিএইচ ডি করে ফেলেছেন। ইউ টিউবে বাংলা হট, সেক্সি সং মানেই জোজো। ‘লারেলাপ্পা’ গান মানেই জোজো। খারাপ লাগে না? মনে হয় না শিল্পী জোজোর ভার্সেটালিটি, মুন্সিয়ানাকে সেটা কোথাও আঘাত করে?
নাহ্। আমি তো দেখেছি মঞ্চে খালি গলায় রবীন্দ্রনাথের গান গাইলে লোকে কেমন করে কেঁদে ফেলে। এক কণ্ঠের বহুরূপী আমি। আজকের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মতো। ‘আমি আপন করিয়া’-ও গাইতে পারি আবার ‘ভিগি ভিগি সি রাতে’। আশাজি, লতাজি, এক গলায় একই সঙ্গে দুজনের গান, গজল, পুরনো বাংলা গান, আবার কোনও লাভ মেকিং সেক্সি গান সবটাই চলে আসে। আমি কিন্তু শুধু গায়িকা হতে আসিনি। আমি বিশ্বাস করি সাধারণ মানুষকে কাছে পেতে গেলে পারফর্মার হতে হবে। যে যা শুনতে চাইবে আমাকে শোনাতেই হবে। তাই কেউ সেক্সি সং হিসেবে আমায় মনে রাখবে, কেউ আমার নাচের জন্য মনে রাখবে। ‘ভাল’ গান বা ‘খারাপ’ গান নয়। ছবির খাতিরে কোনও অশ্লীল শব্দ থাকলেও সেই গান গাইতে আমার কোনও সমস্যা হয় না। গান আমার কাছে কেবলই গান।
এত ধরনের যে গান গাইতে পারেন, সেটা কি আপনি নিজে অভিনেত্রী বলে সম্ভব হয়েছিল?
হতেও পারে। মা গান গাইতে চলে গেলে, মায়ের চিরুনিকে মাইক করে আয়নার সামনে গান গাইতাম। আসলে জাস্ট গান গাইব তো কখনও ভাবিনি। বরং গানটাকে পারফর্ম করব ভাবতে ভাবতে অভিনয়টাও ভেতরে চলে এসেছে।
অনেকে কিন্তু আবার এটাও বলেন জোজো কেন রোগা হয় না? ওবেসিটি আর গান এ দুটোর মধ্যে
একটা যোগাযোগ আছে বলছেন? আদনান সামি, আবিদা পরভীন, নুসরত ফতে আলি খান, বড়ে গোলাম আলি খান... হবে হয়তো। গলার জোর বাড়ে বুঝলেন? আসলে ওই জিরো ফিগার, ডায়েট এ সব নিয়ে জোজোকে কোনও দিন ভাবতে হয়নি। আমার গানই শেষ কথা! যদিও এখন প্রায় সাত-আট কিলো কমেছে। কিন্তু আমার মনে হয় জোজোকে লোকে এ ভাবেই পেতে চায়।
হঠাৎ নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে জনসমক্ষে আনতে চাইলেন কেন? নিজের বাবা-মায়ের সম্পর্ক নিয়ে মুখ না খুললে কি চলছিল না? এটাও কি বলবেন দর্শকের চাহিদার জন্য করা?
আমি একটা অডিয়ো বায়োগ্রাফি করেছি। ‘অথবা জোজো’। তিরিশ মিনিটের একটা উপস্থাপনা। অডিয়োর সঙ্গে একটা ভিস্যুয়াল প্রেজেন্টেশনও আছে। আমি জানি এ রকম প্রচুর মানুষ আছেন, যাঁরা আমাকে দেখে আমার মতো করে পারফর্ম করছেন। আমাকে অনুসরণ করছেন। কিন্তু একটু সমস্যায় পড়লেই আবার গান ছেড়ে দিতে চাইছেন। তারা তো কেবল আমার বাইরের চাকচিক্যটাই দেখেছেন। কিন্তু আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে ভয়ানক অ দিন কাটিয়েছি! আমার মনে হয় সেটাও তাদের বলা দরকার যাতে সেটা জেনে তারা মনের জোর বাড়াতে পারে। নিজেদের লড়াইটা নিজেরা চালিয়ে যেতে পারে। সহজেই ভেঙে না পড়ে।
কেমন সমস্যার কথা বলেছেন?
অ্যালবামে আমি আমার বাবা-মায়ের সেপারেশনের কথা বলেছি। আমি তখন তিন বা চার। আমার তো বাবা-মা দু’জনকেই চাই। কাকে বাছব? আমায় বাছতে হয়েছে! মা’র কাছেই থাকতাম। স্কুলে গিয়ে বাবাকে আমার সঙ্গে দেখা করতে হত। দিন আরও কঠিন হল মা যখন দ্বিতীয় বার বিয়ে করলেন। মায়ের সেই বিয়ে নিয়ে কোনও সমস্যা আমার ছিল না। কিন্তু যাঁকে মা বিয়ে করলেন, তিনি বাজে মন নিয়ে, খারাপ ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতেন! সেটা বুঝতে একটুও সময় লাগেনি আমার। আর আমার নিজের মা সেটা বুঝতেও চাইতেন না। উল্টে ভাবতেন, আমি ওই লোকটাকে হিংসে করি। ওই ট্রমার মধ্যে দিয়েও যেতে হয়েছে আমার। মনে আছে পাড়ায় ব্যাডমিন্টন খেলছি। আমার মিউজিশিয়ানরা এসে বলেছিল, আজ তো তোমার মায়ের বিয়ে। তুমি যাবে না? মায়ের নতুন সংসারে গিয়েও দেখেছিলাম, মা সেখানে আমায় নিজের মেয়ে বলেও পরিচয় দিচ্ছেন না! ফ্যামিলি লাইফ বলে কিছুই ছিল না আমার। তার পরেও গান নিয়ে কিন্তু ফোকাসড্ ছিলাম আমি। জোজোর মুখে হাসি মানেই কিন্তু জোজোর জীবনটা আলোয় ভরা নয়! এটা লোককে বলার সময় হয়েছে! আর আমি আমার জীবনের কথা যেমন করে বলব, আর কেউ তেমন করে কি বলতে পারবে?
নিজের ফ্যামিলি লাইফ ছিল না বলেই কি অল্পবয়সে বিয়ে করেছিলেন?
হ্যাঁ, অল্পবয়সে পেকে গেলে যা হয়! আমার স্বামী, বাবা, শাশুড়ি অনেক সহযোগিতা করেছেন আমায়। নয়তো এত দূর আসা যেত না।
বিয়ের পর প্রেমে পড়েননি?
হ্যাঁ, আমার মনটা ভীষণ তুলতুলে তো। বিয়ের পরেও প্রেমে পড়েছি। আমি তো হিপোক্রিট নই। কিছু লুকোইনি কারও কাছে। ভেসে গিয়েছি। কিন্তু আমার মেয়েকে যাতে আমার মতো কিছু ফেস না করতে হয়, সে দিকে বরাবর নজর রেখেছি। একবার তো সুইসাইড করতেও গিয়েছিলাম... জাস্ট কয়েক বছর আগে। কেউ জানত না। ভুলও করেছি। আর সেই ভুল থেকেই উঠে দাঁড়িয়েছি। আরও স্ট্রং পারফর্মার হয়েছি। সবটাই ‘অথবা জোজো’-তে বলা আছে।
অ্যালবামের নাম ‘অথবা জোজো’ কেন?
অ্যালবামে ঝিলিকের জীবন আর একাকীত্বর সত্যি কথা শোনা যাবে। সেই একাকীত্বে ‘আমার প্রাণের ’পরে চলে গেল’র হামিং... ঝিলিক বলে, ভালবেসে ভুল করিনি। ভালবাসাটা ভুল ছিল। ঝিলিকের মেয়ে অষ্টাদশী। তবুও সে একটা বাচ্চা অ্যাডপ্ট করতে চায়..... ঝিলিকের সোনারঙা মেঘের আড়ালেই তো আছে আগুনে পোড়া সূর্য... ‘অথবা জোজো’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy