Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ব্রিটিশের হাত ধরেই টিভিতে ফের ব্রিটিশ ভারত

উত্তাল গোটা দেশ। স্বাধীনতার জন্য তোলপাড় কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। বণিকের মানদণ্ড যে আসলে রাজদণ্ড, তত দিনে টের পেয়ে গিয়েছেন সবাই। গ্রেফতার করা হয়েছে মোহনদাস করমচন্দ গাঁধী এবং বল্লভভাই পটেলকে। পুণের জেলে বসে অনশনও শুরু করে দিয়েছেন গাঁধী। ১৯৩২-এর ভারতবর্ষের ছবিটা খানিকটা এ রকমই। আর এই সময়টাকেই এ বার ক্যামেরা বন্দি করতে চলেছে একটি ব্রিটিশ প্রযোজক সংস্থা।

জুলি ওয়াল্টার্স

জুলি ওয়াল্টার্স

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:১৬
Share: Save:

উত্তাল গোটা দেশ। স্বাধীনতার জন্য তোলপাড় কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। বণিকের মানদণ্ড যে আসলে রাজদণ্ড, তত দিনে টের পেয়ে গিয়েছেন সবাই। গ্রেফতার করা হয়েছে মোহনদাস করমচন্দ গাঁধী এবং বল্লভভাই পটেলকে। পুণের জেলে বসে অনশনও শুরু করে দিয়েছেন গাঁধী। ১৯৩২-এর ভারতবর্ষের ছবিটা খানিকটা এ রকমই। আর এই সময়টাকেই এ বার ক্যামেরা বন্দি করতে চলেছে একটি ব্রিটিশ প্রযোজক সংস্থা।

‘জুয়েল ইন দ্য টাউন’ এবং ‘ডাউনটোন অ্যাবে’ করে ইতিমধ্যেই শিরোনামে এই প্রযোজক সংস্থাটি। ‘জুয়েল ইন দ্য টাউন’-এর পটভূমিও ছিল ভারতবর্ষ। তবে, সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। ঔপনিবেশিক শক্তির শেষ ক’টা দিন। সেই সিরিজের প্রায় ৩১ বছর বাদে প্রযোজকের নজরে আবার ভারতবর্ষ। নিজে ব্রিটিশ হয়েও, ব্রিটিশ রাজশক্তির শোষণের ছবিটা লুকিয়ে থাকে না তাঁর ক্যামেরায়। বরং বারবার নিজের ছবির জন্য ভারতবর্ষকেই বেছে নেন তিনি।

১৯৩২-এর গ্রীষ্মকাল। গরম থেকে বাঁচতে ভারতের রাজধানী তখন নিয়ে যাওয়া হয়েছে শিমলাতে। আর গ্রীষ্মকালীন রাজধানীর ছবিটাই টিভি সিরিজ ‘ইন্ডিয়ান সামারস’-এর মূল বিষয়। স্বাধীনতার ১৫ বছর আগে শহরটির অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াত যে সব গল্প, যে সব কানাকানি, গুজব সিরিজটির হাত ধরে তা-ই এ বার আসতে চলেছে টিভির পর্দায়। প্রেম-অপ্রেম, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি তখনকার মানুষের চাহিদাগুলো এ বার সময়ের বন্দি বাক্স থেকে উঠে আসবে চোখের সামনে। প্রাণ পাবে ইতিহাস।

তবে, পটভূমি শিমলা হলেও শ্যুটিং কিন্তু শিমলাতে নয়, হচ্ছে মালয়েশিয়ার পেনাং দ্বীপে। মালয়েশিয়ার উত্তর পশ্চিম উপকূলের কাছে এই দ্বীপটি। প্রযোজকের মতে, পেনাং দ্বীপের পরিবেশ সে সময়ের শিমলার মতো। ক্যামেরায় না কি বোঝাই যাবে না এ আসলে ভারত নয় মালয়েশিয়ার কোনও দ্বীপপুঞ্জ।

কিন্তু বারবার ভারতের ব্রিটিশ শাসনের সময়টাকেই কেন বেছে নিচ্ছেন প্রযোজক?

তাঁর কথায়, ইন্ডিয়ান সামারস আসলে এমন একটি ধারাবাহিক যার পরতে পরতে নাটকীয়তা। এখনকার সময়ে দাঁড়িয়েও তাই সে দিনগুলোর কাহিনি দর্শকরা উপভোগ করবেন বলেই মত প্রযোজকের। ‘ইন্ডিয়ান সামারস’ মূল উপন্যাসের লেখক, পাওল রুটম্যান। তাঁর স্ত্রী ভারতীয়। ভারতে নিজের পরিবারের সঙ্গে তিনি বেশ কিছু সময়ও কাটিয়েছেন। হয়তো সেই সব অভিজ্ঞতাই তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে থমকে থাকা সময়টার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে।

মামা মিয়া, হ্যারি পটার খ্যাত জুলি ওয়াল্টার্সকে দেখা যাবে এই সিরিজে। ভারতীয় এবং ব্রিটিশ বহু চরিত্রের বুনোটে তৈরি এই উপন্যাসের মূল তারকারা কাল্পনিক। যদিও তাঁদের পাশাপাশি ইতিহাস থেকে ভাইসরয় লর্ড উইলিংডনের মতো অনেক চরিত্রও জায়গা করে নেবেন টিভির পর্দায়। জুলি অভিনয় করেছেন সিনথিয়া কফিন নামের এক বিধবার চরিত্রে। শিমলার ‘রয়্যাল ক্লাব’ বলে একটি অভিজাত ক্লাবের মালিক তিনি। তাঁর নির্দেশেই শিমলার ব্রিটিশ সমাজের ওঠাবসা।

পঞ্চাশ পর্বের এই সিরিজটি ফেব্রুয়ারি মাস থেকে একটি ব্রিটিশ চ্যানেলে শুরু হওয়ার কথা। ১৯৮৪-এ যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল ‘জুয়েল ইন দ্য টাউন’। স্বাধীনতার ৬৮ বছর পরেও কি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়নি ইতিহাস? না কি ‘ইন্ডিয়ান সামারস’ তার পূর্বসূরিকেও ছাপিয়ে যাবে? সে উত্তরের দিকেই এখন তাকিয়ে সবাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shrabani basu julie walters indian summers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE