‘গহীন হৃদয়’ এর একটি দৃশ্যে কৌশিক সেন এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
অগ্নিদেব আর ঋতুপর্ণার কম্বিনেশন মানেই সম্পর্কের জটিলতা আর যৌনতার গন্ধ...
ঋতুপর্ণা: এক এক জন পরিচালক এক এক ধারায় চলেন। অগ্নির ছবিতে নায়িকার ‘ফিজিক্যালিটি’ একটা বড় জায়গা জুড়ে থাকে। অন্য পরিচালক হয়তো সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানসিক চেতনার দিকটা বড় করে দেখান। এটাই স্বাভাবিক। তবে এ ছবিতে অগ্নির দেখার চোখটাই আলাদা। আর গল্পের প্রয়োজনে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে তো যৌনতা আসবেই! সেটাকে অস্বীকার করব কেন বলুন তো? আর এই সাদা-কালোর ব্যাকগ্রাউন্ডে যৌনতার নান্দনিকতাও চমৎকার ফুটে উঠেছে এই ছবিতে।
অগ্নিদেব: এই যে যৌনতার প্রসঙ্গ উঠল, এ ক্ষেত্রে একটা কথা না বলে পারছি না। আমার অনেক ছবিতে যৌনতা একেবারেই নেই। তখন এই প্রশ্ন করা হয় না তো! এটা একটা সস্তার ট্যাগলাইন। এই গল্পের নায়িকা নিজেই অসম্ভব ফিজিক্যাল! আর সম্পর্কে যৌনতা আসতেই পারে। এটা ২০১৮! ইন্টারনেটের যুগে অ্যাডাল্ট সিন দেখার জন্য আমার ছবি দেখতে কেউ আসবে না! তার জন্য ইন্টারনেট যথেষ্ট! তবে সোহিনী চরিত্রটা একেবারেই আলাদা! প্রচুর লেয়ার এই চরিত্রের। নায়িকা হয়েও কিন্তু অদ্ভুত একটা গ্রে শেড আছে চরিত্রের। সেখান থেকে ছবি যত এগোবে, তার উত্তরণ হবে।
ছবির প্রচার দেখে মনে হচ্ছে ঋতুপর্ণা কতটা সাহসী সেটাই ছবির বিষয়...
ঋতুপর্ণা: এত বছর বাদে ঋতুপর্ণার নতুন করে কোথাও কিছু প্রমাণ করার নেই। একেবারেই নয়। ‘WHO’ বলছে ২০২০-তে ভারতের প্রত্যেক ঘরে এক জন করে ক্যান্সার পেশেন্ট থাকবে। ভাবা যায়! সোনালি বেন্দ্রের ক্যান্সারের কথা পড়ে মনটা ভীষণ খারাপ হয়েছিল! এমন একটা রোগ যার নিরাময়ের ব্যবস্থা নেই! কোন সময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা? কোনও দাম্পত্যে যদি ক্যান্সার ঢুকে পড়ে? সম্পর্কটা কোথায় যায়? এবং এমন এক দিনে এই ক্যান্সারের প্রবেশ যেখানে মহিলা ঠিক করেছেন তিনি আর এই সংসারে থাকতে পারছেন না! এ রকম একটা মানসিক টানাপড়েনের ছবি ‘গহীন হৃদয়’। আমরা অনেকেই জানি না, আমাদের হৃদয়ে কী চলছে! আর ক্যান্সারের মতো সমস্যায় এক জন অভিনেত্রী হিসেবে আমি রিয়্যাক্ট করব না তো কে করবে? অগ্নি এই ছবিতে সাহিত্য নিয়ে যে ট্রিটমেন্ট করেছে সেটা দর্শকের মনে থেকে যাবে, এটুকু বলতে পারি।
অগ্নির ছবিতে নায়িকার ‘ফিজিক্যালিটি’ একটা বড় জায়গা জুড়ে থাকে।
দর্শকের প্রসঙ্গ যখন এল তখন একটা কথা জানতে চাই। বাঙালি দর্শক কী বদলে যাচ্ছে?
অগ্নিদেব: আমি বলব এটা। বাংলা ছবির দর্শকের লয়্যালটি আজ নেই। বেশির ভাগ হলে যায় না। পরে চ্যানেলে ছবিটা দেখে নেয়। এটা করলে বাংলা ছবির কী হবে?
কিন্তু এই বাংলা দর্শক তো আজও ‘বিচারক’ দেখে, ‘দীপ জ্বেলে যাই’ দেখে...
অগ্নিদেব: একশো বার! সেটাই তো বলছি! সেই দর্শক কোথায় আজ? সিনেমা দেখার জন্য মানুষ এখন অগাধ টাকা খরচ করে না। এ বার তাদের সামনে ‘সঞ্জু’ থাকলে তারা কি আর ‘গহীন হৃদয়’ দেখবে? সলমন খানের মতো প্রোডাকশন কি আমরা করতে পারি? আর এখন আবার ছবি মানে ‘ভাল’ বা ‘খারাপ’ নয়। ‘হিট’ বা ‘ফ্লপ’। ছবির বিচার হয় বক্স অফিসে প্রথম দিনের কালেকশন হিসেবে! অর্থনীতি বিনোদনকে রুল করছে। আমিও এই বদলের যুগে ছবি করতে গিয়ে এখন আর বেশি ভাবি না। ‘পলিটিক্যাল মার্ডার’ অনেক ভেবে করেছিলাম। ওমা! দেখলাম দর্শক সেটা নিল না! এখন বুঝেছি, দর্শকের জন্য ভাবতে বসলে ছবি নয়। ধারাবাহিক করতে হবে।
অনস্ক্রিন ঋতুপর্ণার পারফরম্যান্স দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন দর্শক।
এই ধারার ছবিতে বরাবর ঋতুপর্ণা কেন?
অগ্নিদেব: সোহিনীর চরিত্র ঋতু ছাড়া আর কেউ করতে পারত না। আর এ বার দেখলাম ওকে কিছু বলতেই হলো না! ও চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গেছে। এক কথায় অসাধারণ!
ঋতুপর্ণা: আসলে সুচিত্রা ভট্টাচার্যের এই গল্পটা আজকের গল্প। ‘দহন’ করার সময় এমন অনুভূতি হয়েছিল! এক জন মহিলা, তাঁর ক্যান্সারে আক্রান্ত স্বামী। শাশুড়ির দায়িত্ব। অন্য দিকে প্রেমিক। কী হবে তার পর? সমাজও সোহিনী চরিত্রের মধ্যে দিয়ে বাস্তবের রূপটা দেখতে পাবে। এত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার পর এখন আমি যে চরিত্রই করব তার মধ্যে গভীরতা থাকবে যা মানুষকে ভাবাবে। সেই জায়গা থেকেই সোহিনীকে খুব নিজের মনে হয়।
আরও পড়ুন: বান্ধবীরা বলে আমার দ্বারা প্রেম হবে না, বলছেন আবীর
আরও পড়ুন: কমার্শিয়াল নয়, ‘মাটি’তে প্রয়োজন ছিল ভাল অভিনেতার, বললেন দুই পরিচালক
এই ছবির চিত্রনাট্য তো সুদীপার লেখা?
ঋতুপর্ণা: সুদীপা খেটে কাজটা করেছে। আর কৌশিক, দেবশঙ্কর তো অনবদ্য।
অগ্নিদেব: সুদীপা থাকায় চরিত্র, চিত্রনাট্য সব নিয়ে কাজ করতে সুবিধে হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy