Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Entertainment News

‘যাঁরা সমালোচনা করছেন তাঁরাই নিয়মিত প্রত্যেকটা এপিসোড দেখছেন’

‘বোঝে না সে বোঝে না’র ‘পাখি’ হোক বা ‘কুসুমদোলা’র ‘ইমন’— জনপ্রিয়তায় মধুমিতা চক্রবর্তী টেলি দর্শকদের কাছে প্রথম সারিতে। চুটিয়ে অভিনয় করছেন, করছেন সংসারও। স্পষ্টবক্তা নায়িকা প্রতিটা দিন ভাল থাকার স্বপ্ন দেখেন। কেরিয়ার হোক বা ব্যক্তিজীবন সহজ সত্যিটা শেয়ার করলেন শুটিং ব্রেকে।

স্বরলিপি ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১২:৩২
Share: Save:

‘বোঝে না সে বোঝে না’র ‘পাখি’ হোক বা ‘কুসুমদোলা’র ‘ইমন’— জনপ্রিয়তায় মধুমিতা চক্রবর্তী টেলি দর্শকদের কাছে প্রথম সারিতে। চুটিয়ে অভিনয় করছেন, করছেন সংসারও। স্পষ্টবক্তা নায়িকা প্রতিটা দিন ভাল থাকার স্বপ্ন দেখেন। কেরিয়ার হোক বা ব্যক্তিজীবন সহজ সত্যিটা শেয়ার করলেন শুটিং ব্রেকে।

‘পাখি’ হিসেবেও তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। ‘ইমন’কেও দর্শক দারুণ পছন্দ করছেন। কিন্তু আপনার কাছে কোন চরিত্রটা বেশি আপন?
আই রেসপেক্ট পাখি। এত বছর ধরে পাখিকে ভালবেসেছেন মানুষ। কিন্তু ইমন আমার নিজের। আমি ওর সঙ্গে কানেক্ট করতে পারি।

তা হলে মধুমিতাও ‘ইমন’-এর মতোই স্পষ্ট কথা বলতে ভালবাসেন?
আমাকে অনেকে বলেন, এতটা মিল বোধহয় আর কোনও চরিত্রের সঙ্গে আমার হয়নি। ক্যামেরা, লাইট- কিছু নিয়ে ভাবতে হয় না। শুধু অন্যান্য চরিত্রের নাম মনে রাখি। বাদবাকি পুরোটাই তো আমার নিজেরই রিঅ্যাকশন। যে ভাবে বাবাকে বলি, মাকে বলি, চিত্কার করে— ঠিক সে ভাবেই সেটেও কথা বলছি। ফলে আলাদা কোনও প্রিপারেশন নিতে হয়নি। পাখি করতে গিয়ে কিছু ম্যানারিজম ফলো করতাম। এখানে তাও না। বরং ভয়ে আছি। এর পরে যে চরিত্র করব সেখানে আবার ইমনের কোনও ছাপ থাকবে না তো!

‘ইমন’-এর ইউএসপিটা কী? কেন রাজি হয়েছিলেন?
শুরুরও তো একটা শুরু থাকে। সেটা আগে বলি। তিন বছর ‘পাখি’ হিসেবে কাজ করেছি আমি। সে ভয় পেত। কিন্তু ‘ইমন’-এর কোনও ভয় নেই। আসলে সিরিয়ালের ক্ষেত্রে একটা ম্যানারিজিম চলে আসে। কিন্তু সিনেমায় সেটা হয় না। কারণ জার্নিটাই এক দেড় মাসের। আমি দু’টো সিরিয়ালের মাঝে এক-দেড় মাসের গ্যাপ পেয়েছিলাম। ‘ইমন’ একদম কনট্রাস্ট একটা চরিত্র। নিজে যেটা ঠিক মনে করে সেটা ঠিক, যেটা ভুল মনে করে সেটা ভুল। কিন্তু মানুষ হিসেবে কোথাও ম্যানিপুলেটেড হয় না। স্ট্রেট ফরওয়ার্ড। এমন চরিত্র কখনও করার সুযোগ পাইনি। প্রথমে ভয় লেগেছিল। তবে লীনাদির (চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়) ওপর কনফিডেন্স ছিল। সেখান থেকেই এই চরিত্রে রাজি হওয়া।

আরও পড়ুন, ‘ছ’বছর আগে ভ্যালেন্টাইস ডে-র দিনই আমাকে প্রোপোজ করেছিল সে’

বাংলা সিরিয়ালের কনটেন্ট নিয়ে এখন দর্শকদের প্রচুর অভিযোগ। ইন্ডাস্ট্রির সদস্য হিসেবে কী বলবেন?
(সামান্য পজ) জানি না উত্তরটা দিলে কেউ রেগে যাবেন কিনা। তবুও বলি। আমি সিরিয়াল করার আগে বাড়িতে সিরিয়াল দেখার চল ছিল না। তখন থেকেই শুনতাম বাড়ির বড়রা বলতেন, বাংলা সিরিয়াল বসে দেখা যায় না। পুরো সিচুয়েশনটা তিনটে পার্টে ভাগ করা যায়। দেখুন, প্রোডিউসারের কাছে এটা ব্যবসা। আমাদের দিক থেকে দেখলে এটা ক্রিয়েটিভিটি। আর দর্শকদের কাছে বিনোদন। আমার প্রশ্ন, সিরিয়াল টিআরপি দিচ্ছে কেন?

দর্শক দেখছেন বলে।
ঠিক। এ বার প্রোডিউসার দেখছেন যা দিচ্ছি পাবলিক দেখছে, কেন ব্যবসা বন্ধ করবে বলুন? আমাদের এটা প্রফেশন। এ বার যে দর্শক এগুলো দেখছেন, তাঁরা কেন বলছেন এগুলো পছন্দ নয়? পছন্দ না হলে কেউ তো দেখতে জোর করছে না। পছন্দ না হলে দেখছেন কেন? দর্শকরাই বয়কট করুক। তখন দেখা যাবে হয়তো আমরাই নতুন কিছু দিচ্ছি দর্শকদের।

শিল্পী হিসেবে জাস্টিফাই করতে পারেন?
আমি তো আগেই বললাম, এটা আমার জীবিকা। কিছু করার নেই। যে বাই প্রফেশন পুলিশ, তার মারতে ভাল না লাগলেও ক্রিমিনালদের মারতেই হবে। ফলে দর্শক দেখবে আবার সমালোচনাও করবে— এটা একটা অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। একটা অন্য উদাহরণ দিতে পারি।

আরও পড়ুন, ‘ইন্ডাস্ট্রি আমাকে ইউজ করতেই পারত, করেনি’

বলুন প্লিজ…।
আমি ‘কেয়ার করি না’ নামের একটা সিরিয়াল করতাম। সেটা আরবান ছিল। বিশাল কিছু আলাদা বলছি না, তবে টিপিক্যাল মেগা সিরিয়ালের মতো ছিল না। অর্থাত্ সো কল্ড শাশুড়ি বউয়ের ঝগড়া বা হিরোর দুটো বিয়ে এ সব দেখানো হত না। কিন্তু সেটার টিআরপি খুব কম ছিল। পাশাপাশি আমি নাম বলব না, কিন্তু সে সময় ওই সো কল্ড কনটেন্টের কিছু সিরিয়াল চলছিল যেগুলোর দারুণ টিআরপি ছিল। ফলে যাঁরা সমালোচনা করছেন তাঁরাই কিন্তু নিয়মিত প্রত্যেকটা এপিসোড দেখছেন। তখন আমার প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, এটা কি ডিপ্লোম্যাসি নয়?

কখনও প্রতিবাদ করার কথা মনে হয়নি?
দেখুন, আমার হয়তো মনে হচ্ছে চরিত্রটা জাস্টিফায়েড নয়। আমি কাজটা করব না। বয়কট করব। কিন্তু আমি একা বয়কট করে কী হবে? এটা প্রথম প্রশ্ন। আর একটা কথা খুব নিরপেক্ষ জায়গা থেকে জানতে চাই, আমার কাছে আর কী অপশন রয়েছে? আমাদের এখানে ফিল্ম কালচারটা কতটা উন্নত? সিরিয়ালটা সাকসেসফুল। আর ফিল্মটা হয়তো উন্নত, হয়তো নয়— আমি খুব একটা শিওর নই এ ব্যাপারে। এটা তো ঠিক যে, বলিউড যে ভাবে উঠেছে টলিউড তো সেভাবে ওঠেনি। এ বার বলুন, আমি প্রতিবাদটা একা কী ভাবে করব? আমি যদি মনে করি এই সিরিয়ালটা করব না, তা হলে কালকে কি ভাল ছবির অফার পাব?

টলিউডে তো এখন অনেক এক্সপেরিমেন্টাল কাজ হচ্ছে।
সংখ্যায় ক’টা? নাম বলুন। আজ একই সঙ্গে একটা ভাল বলিউড ফিল্ম আর একটা খুব ভাল টলিউড ফিল্ম রিলিজ করলে দর্শক কোনটা দেখতে যাবেন? আজ যদি ‘পাতালঘর’-এর মতো ছবি আরও ১০টা হতো তখন হয়তো এভাবে ভাবতাম না।

টালিগঞ্জের পরিচালকদের ওপর ভরসা নেই তা হলে?
(হেসে) আমি এটা বলার জন্য খুব ছোট মানুষ। তবে অভিনেতাদের এই ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগ সত্যিই খুব কম।আর আমি সিরিয়ালে অভিনয় করে সত্যিই খুব ভাল আছি।

আপনার স্বামীও অভিনেতা (সৌরভ চক্রবর্তী)। একই ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন, কখনও ইগো ক্ল্যাশ হয়নি?
কখনও হয়নি। আমার তো মনে হয় একই প্রফেশনের হলে একে অপরকে বুঝতে সুবিধে হয়।

আরও পড়ুন, ‘পোশাক কোনও কোনও ক্ষেত্রে উত্তেজনা তৈরি করে, এটা মেয়েরাও জানে’

আর শাশুড়ির সঙ্গে আপনার ইকুয়েশন কেমন? ‘ইমন’-এর মতো?
একদম। আমার শাশুড়ির সঙ্গে রিলেশনটা দারুণ। সৌরভের থেকেও মা আমাকে বেশি সাপোর্ট করে।

কাজ আর সংসার ব্যালান্স করেন কী ভাবে?
এটাতে আমার কোনও ক্রেডিট নেই। আমার বর খুব ভাল বোঝে যে, কাজ সামলে আমি কতটা সংসারকে দিতে পারব। আমি খুব লাকি যে সৌরভ আমার জীবনে রয়েছে। মা, বাবা, দিদি— আমাকে কখনও বুঝতেই দেয় না আমি বৌমা। ফলে আলাদা করে দুটো জায়গা মেনটেন করার কথা কখনও ভাবতে হয়নি।

আপনি নাকি দারুণ রান্না করেন?
আমি যাই রান্না করি না কেন, সৌরভ খুব ভাল এক্সপ্রেশন দিয়ে বলে, হেব্বি হয়েছে। ফাটিয়ে দিয়েছিস। তবে আপাতত শুধু ওকেই খাওয়াই। নতুন বাড়িতে শিফট করার পর শ্বশুর শাশুড়িকেও খাওয়াতে পারব। তখন বুঝতে পারব সৌরভ আসলে বায়াসড হয়ে এ সব বলে কিনা (মুচকি হাসি)।

ভাল বউ হওয়ার টিপস দেবেন নাকি?
ডিপ্লোম্যাটিক হলে তাড়াতাড়ি কারও মন জয় করতে পারবেন। কিন্তু লং রানে সেটা সমস্যার। কত দিন আর অ্যাক্টিং করা সম্ভব বলুন? জীবনটা তো আর সিরিয়াল নয়। স্পষ্টবক্তা হওয়া ভাল। কিন্তু অন্যের ইমোশনটাও বোঝা উচিত।

আরও পড়ুন, ‘বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ডাকলেও যে লেজ উঠিয়ে যেতে হবে, তার কোনও মানে নেই’

আপনাদের প্রফেশনের ইনসিকিওরিটি নিয়ে চিন্তা হয় না?
চিন্তা তো হয়ই। কিন্তু এই ইনসিকিওরিটির আমাদের জন্য পুশও। সাকসেসফুল হওয়ার তাগিদটা থাকে। সারাক্ষণ একটা অ্যাডভেঞ্চার। সব কিছু তো সব সময় স্টেডি চলে না। ওই আনসার্টেনিটিটাই কোথাও গিয়ে আমাদের লাইফের স্পাইস হয়ে গিয়েছে। আমরা সিকিওরড লাইফ চাই না। এই ইনসিকিওরিটির মধ্যেই আমরা সাকসেসটা খুঁজে পেতে চাই।

ছবি: অনির্বাণ সাহা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE