Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Interview of Ambarish Bhattacharya

‘প্রেমিকা আমার লুঙ্গি পরা বন্ধ করে দিয়েছিল প্রায় তিন বছর’

বেলগাছিয়ার সরকারি হাউজিং-এ ঢোকার মুখেই বিশ্বকর্মা দাঁড়িয়ে। মাঝারি ভলিউমে পাড়া কাঁপাচ্ছেন হানি সিংহ। মাঝ দুপুরে হাল্কা বৃষ্টিতে ঝিলের জলে টাপুর টুপুর। আর ড্রয়িংরুমে পাঞ্জাবিতে সেজে আড্ডা দিতে তৈরি ‘ঠাকুরপো’। অর্থাত্ অম্বরীশ ভট্টাচার্য। হ্যাঁ, টেলি পাড়ায় এখন তিনিই পয়লা নম্বর ‘ঠাকুরপো’। সৌজন্যে ‘মহানায়ক’, ‘গোয়েন্দা গিন্নি’র মতো সিরিয়াল। সঙ্গী স্বরলিপি ভট্টাচার্য। বেলগাছিয়ার সরকারি হাউজিং-এ ঢোকার মুখেই বিশ্বকর্মা দাঁড়িয়ে। মাঝারি ভলিউমে পাড়া কাঁপাচ্ছেন হানি সিংহ। মাঝ দুপুরে হাল্কা বৃষ্টিতে ঝিলের জলে টাপুর টুপুর। আর ড্রয়িংরুমে পাঞ্জাবিতে সেজে আড্ডা দিতে তৈরি ‘ঠাকুরপো’। অর্থাত্ অম্বরীশ ভট্টাচার্য। হ্যাঁ, টেলি পাড়ায় এখন তিনিই পয়লা নম্বর ‘ঠাকুরপো’। সৌজন্যে ‘মহানায়ক’, ‘গোয়েন্দা গিন্নি’র মতো সিরিয়াল। সঙ্গী স্বরলিপি ভট্টাচার্য।

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:২৫
Share: Save:

বৃষ্টিতে ঘুড়ি ওড়ানোর প্ল্যান ভেস্তে গেল নাকি?

ধুর। আমি কোনও কালেই ঘুড়ি ওড়াতে পারি না। আমার বাড়ির পাশে একটা কারখানা ছিল। সেখানে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন জমিয়ে খাওয়াদাওয়া হত। সেটাই ছিল আমার কাছে বিশ্বকর্মা পুজোর একমাত্র আনন্দ। সেটা বন্ধ হয়ে গেল…

তা ইন্ডাস্ট্রির গণ ঠাকুরপো হয়ে কেমন লাগছে আপনার?

বর হওয়ার থেকে ঠাকুরপো হওয়া অনেক সেফ!

কেন?

কোনও দায়িত্ব থাকে না। অথচ বৌদিদের আদর পাওয়া যায় (ভাবলেশহীন মুখ)।

দুপুর ঠাকুরপো হতে ইচ্ছে করে নাকি?

(মুচকি হেসে) একটা সময় ইচ্ছে করত বৈকি। তবে এখন আর…

কী?

না থাক। দুপুরবেলায় কী করি না করি সেটা গোপন থাকাই ভাল। দর্শকদের কাছে আমার ইমেজটা খারাপ হয়ে যাবে। আরও একটা কথা আছে যদিও।

বলুন না।

আসলে টেলিভিশনে আমার যাঁরা বৌদি হন, তাঁরা আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্রী। ফলে তাদের সঙ্গে দুপুরের খেলাটা ঠিক…

আপনি কি অভিনেতাই হতে চেয়েছিলেন?

আমার বেসিক্যালি কিছু হওয়ারই ইচ্ছে ছিল না। আমি খুবই অলস। পরিশ্রম করতে মোটেই ভাল লাগত না। তবে সে তো আর হল না। ১৮-১৯ বছর বয়স থেকে আমার থিয়েটার করা শুরু। তবে দেবেশদা মানে দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্লায় পড়ে সিরিয়াসলি অ্যাক্টিং শুরু করি। ফ্যাতাড়ু-র প্রোডাকশনে থাকতেই অভিনয় শেখার শুরু। সেখান থেকেই ‘রাজা গজা’র অডিশনে ডাক পেয়েছিলাম। তার পর থেকে চলছেই। গত ১০ বছর ওখান থেকে আর বেরতে পারলাম না।

আপনাকে কিন্তু এখনও পর্যন্ত ভাঁড় হিসেবেই ট্রিট করছেন পরিচালকরা। খারাপ লাগে?

না। খারাপ লাগে না। কারণ আমার কোনও এক্সপেক্টটেশন ছিল, কোনও অ্যাম্বিশনও নয়। ফলে যা পেয়েছি অনেক পেয়েছি। কোনও অপ্রাপ্তি নেই। যে চরিত্র পাই সেটাই ভাল করে করার চেষ্টা করি।

বিভিন্ন চরিত্র করতে ইচ্ছে হয়?

ইচ্ছে তো হয় বটেই। কিন্তু, আমাদের এখানে সমস্যা হল সবই মার্কা হয়ে যায়। না হলে বলুন তো, রবি ঘোষের মতো আন্তর্জাতিক মানের অভিনেতা কমেডিয়ান হিসেবে মার্কা মেরে গেলেন। একটা ‘গুপি-বাঘা’ বা একটা ‘গল্প হলেও সত্যি’ না হলে রবি ঘোষের কেরিয়ারে কী থাকত? কত বড় মাপের এক জন অভিনেতা সারা জীবন ভাঁড়ামো করে গিয়েছেন। বা ধরুন তুলসী চক্রবর্তীর জীবনে একটা ‘পরশপাথর’। আর এখন তো তেমন পরিচালক নেই, যাঁরা ব্যবহার করবেন।

‘মহানায়ক’-এ তো সিরিয়াস রোলে কাজ করছেন।

হুম। ‘মহানায়ক’-এ আমার চরিত্র সবার পছন্দও হয়েছে।

সিরিয়ালটা হিট না ফ্লপ?

টিআরপির হিসেবে দেখলে ফ্লপ। কিন্তু ১০ বছরে ২০-২৫টা মেগাতে কাজ করেও কোনও সিরিয়ালকে নিয়ে এত আলোচনা হতে দেখিনি।

আর সমালোচনা?

দর্শক দেখছেন বলেই তো সমালোচনা করছেন। আর এ তো হবেই। রবীন্দ্রনাথ আর উত্তমকুমারকে তো ঠাকুর বানিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে। যেন, এদের কোনও ব্যক্তিগত জীবন ছিল না, প্রেম ছিল না, কেচ্ছা ছিল না! এটা ভাবতেই বাঙালি ভালবাসে। আর এই কাজটা তো অনুপ্রেরণায় হচ্ছে। কাল্পনিক। ফলে সব যে হুবহু এক হতে হবে এর কোনও মানে নেই। আমার কাজ দর্শকের পছন্দ হয়েছে, আমি এতেই খুশি। বাকি তো সব বড় বড় ব্যাপার।

বড় ব্যাপার মানে?

দেখুন বুম্বাদা একজন লেজেন্ড। ভাল লাগুক, খারাপ লাগুক বুম্বাদা বাংলার সংস্কৃতি জগতে একটা ব্যাপার সেটা মানতেই হবে। তো, বুম্বাদাকে কার ভাল লাগল, পাওলিকে কার ভাল লাগল এগুলোই বড় ব্যাপার।

প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজের এক্সপিরিয়েন্স কেমন?

এককথায় অসাধারণ। জানেন, ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ আমার শত্রু নয়, তবে বন্ধুও কেউ নয়। গত ছ’মাসে বুম্বাদা খুব ভাল বন্ধু হয়ে গিয়েছে। ওঁর মতো মানুষ হয় না। এত ভাল গাইড ভাবা যায় না। প্রত্যেক দিন মনে হত, নতুন কারও সঙ্গে কাজ করছি।

আর পাওলি, তনুশ্রী বা অন্য নায়িকারা?

(হাত নেড়ে) তারা পাত্তাই দেয়নি আমাকে। অভিনয় করেছে, বাড়ি চলে গিয়েছে। তাদের সময় ছিল নাকি আমাকে পাত্তা দেওয়ার? একমাত্র বুম্বাদা আমাকে পাত্তা দিয়েছে।

সেকি! আপনার অনস্ক্রিন বৌদি মানে মিশকাও পাত্তা দেননি?

মিশকা তো থিয়েটারের মেয়ে। ওর সঙ্গে অনেক আগে থেকেই বন্ধুত্ব ছিল আমার। তাই আমাদের কেমিস্ট্রিও খুব ভাল লেগেছে দর্শকের।

কিন্তু, সন্ধের প্রাইম স্লট থেকে সরিয়ে দেওয়া হল কেন?

আমার মনে হয় এই সিরিয়ালের পুরুষ দর্শক অনেক বেশি। আর সন্ধে সাতটার টার্গেট অডিয়েন্স মূলত সাংসারিক কূটকচালি দেখতেই ভালবাসেন।

আপনি কি ডিরেক্টরস অ্যাক্টর?

হান্ড্রেড পার্সেন্ট। পরিচালক ভাল হলে তবেই তো অভিনয় ভাল হয়। যেমন ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’-এর কথাই ধরুন। অনিন্দ্যদা না থাকলে আমার চরিত্রটা অত ভাল হত না।

সেখানে তো আপনি বেশ প্রেমিক। কিন্তু বাস্তবে? প্রেম করছেন?

এই মুহূর্তে করছি না। তবে দু’ঘন্টা পরেই করতে পারি (হাসি)।

আগের প্রেমগুলো টিকল না কেন?

(একটুও না ভেবে) বোধহয় হাজব্যান্ড মেটিরিয়ালটা আমার মধ্যে কম। প্রেমিকটাই বেশি। তাই এক-দু’বছরের মধ্যেই যখন মেয়েরা আমার মধ্যে ওই হাজব্যান্ড মেটিরিয়াল খুঁজতে যায়, তখনই সমস্যা হয়। মেলাতে পারে না। মহিলারা আমাকে বেশ পছন্দ করে, একটু আদর করে গাল টিপে দিল, কিন্তু ওই পর্যন্তই। প্রেমিক হিসেবে কেউ ভাবতে চায় না।

কোনও আক্ষেপ রয়েছে আপনার?

হুম। ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার’ নাটকে পটলবাবুর চরিত্রটা আমাকে করতে বলেছিলেন রমাপ্রসাদ বণিক। সে সময় আমি সিরিয়ালের জন্য সময় দিতে পারিনি। সেটার জন্য আপশোস রয়েছে তো বটেই।

কেরিয়ারে এমন কোনও ঘটনা রয়েছে, যেটা না হলেই ভাল হত?

সিরিয়ালের পর ‘রাজা গজা’ একটা ফিল্ম হয়েছিল। সেটা না হলেই ভাল হত। সুপার ফ্লপ হয়েছিল ছবিটা।

অম্বরীশের সম্পর্কে কোন তথ্য দর্শক এখনও জানেন না?

(একটু ভেবে) আমি বেশির ভাগ সময় লুঙ্গি পরে থাকতে ভালবাসি। আমার একটা সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার সবচেয়ে পজিটিভ দিক তো ছিল, আবার লুঙ্গি পরতে পারা। কারণ সেই সম্পর্ক চলাকালীন প্রেমিকা আমার লুঙ্গি পরা বন্ধ করে দিয়েছিল প্রায় তিন বছর। কী যন্ত্রণা! ভাবতে পারবেন না। তার সঙ্গে যে দিন ছাড়াছাড়ি হল, খুব কষ্ট লাগল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে গেল, কাল থেকে আবার লুঙ্গি পরতে পারব (হাসি)।

আরও পড়ুন

কলকাতা এ বার নতুন সাজে আনন্দ উৎসবে

বরণের সময় এল কাছে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE