Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
kamaleswar mukherjee

ইন্ডাস্ট্রিতে রাজনীতি নয়, কূটনীতি চলে: কমলেশ্বর

মনে করেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। নিজেকে রাজনীতির বাইরে রেখে প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘সংসার সীমান্ত’ আর কাফকার গল্প নিয়ে কাজ করছেন। ভার্চুয়াল জগতের ফেক প্রোফাইল, ‘গুড নাইট সিটি’র ব্যর্থতা— খোলামেলা আড্ডায় কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। সামনে স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ভার্চুয়াল জগতের ফেক প্রোফাইল, ‘গুড নাইট সিটি’-র ব্যর্থতা— অকপট কমলেশ্বর।

পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। ছবি: নিজস্ব

পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। ছবি: নিজস্ব

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ১৫:৩৬
Share: Save:

পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের চেয়ে অভিনেতা কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়কে ইদানীং বেশি দেখা যাচ্ছে। কেন?

নাহ্, তেমন কোনও বিষয় নয়। আসলে ছবি পরিচালনার ফাঁকে ফাঁকে সময় পেলে অভিনয় করি। আমার বন্ধুবান্ধবরা ছবিতে কাজের কথা বলে। হয়তো কয়েকটা পর পর হয়ে গেছে বলে এই প্রশ্ন উঠে এসেছে, মনে হয়েছে আমি অনেক অভিনয় করছি। তা নয়, এখন আর এত অভিনয় করব না।

‘গুড নাইট সিটি’-র মতো এত ভাল চিত্রনাট্য, চমৎকার কাস্টিং, তা-ও ছবিটা চলল না! কখন এল আর কখন গেল অনেকেই বুঝতে পারেননি...

উত্তর: ‘গুড নাইট সিটি’ ভাল চিত্রনাট্য কি না, আমি বলব না। কারণ আমি লিখেছি। তবে ছবিটা এক সপ্তাহের বেশি হল পায়নি। বিভিন্ন হলে খুব ঠিক সময় যে রিলিজ করেছিল তা-ও না। ছবিটা আপাতত বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে যাবে। আমি অবশ্য আশা করিনি এক জন স্কিৎজোফ্রেনিক আর সাইক্রিয়াটিস্টকে নিয়ে এই গল্প চলবে না। হ্যাঁ, এই ছবি ব্লক বাস্টার হবে সেটাও ভাবিনি। আমি ভেবেছিলাম দর্শক এই ছবি দেখবেন। আমার ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুবান্ধবরা দেখবেন। যাই হোক সেটা হয়নি। তবে এই ধারার ছবি আমি আবার তৈরি করব। এই ছবি নিয়ে আমি গর্বিত। দেখুন, সব ছবি তো আর বাজারের কথা ভেবে করা হয় না!

এই যে বললেন, ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুরা ছবিটা দেখবেন বলে ভেবেছিলেন, কমলেশ্বর কি ইন্ডাস্ট্রির রাজনীতির খেলায় জড়িয়ে যাচ্ছেন?

রাজনীতির খেলা? (হাসি) রাজনীতির একটা দর্শন থাকে। আপনি ইন্ডাস্ট্রির যে রাজনীতির কথা বলছেন ওটা রাজনীতি না বলে কূটনীতি বলাই ভাল! আর সেটা খুব ব্যক্তিগত জায়গা থেকে, ব্যবসা, হিসেব থেকে তৈরি হয়। এই ব্যক্তিগত খটাখটিকে রাজনীতি বলে মহিমান্বিত না করাই ভাল! আমি একেবারেই তার মধ্যে পড়ি না। আমার কাজ চুপচাপ ছবি বানানো। ইন্ডাস্ট্রিতে ভাল কাজও হচ্ছে প্রচুর, সে দিকে তাকানোই ভাল।

‘ককপিট’ ছবির একটি দৃশ্য।

আরও পড়ুন: প্রসেনজিৎ- জিৎ- দেবেই কেন আটকে টলিউড? প্রিয়াংশু বললেন...

দেবের সঙ্গে ছবি করা কি কোনও বড় ব্যানারের পছন্দ হয়নি?

দেবের সঙ্গে তো ‘ককপিট’ করেছি। আর আমি পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকতে চাই না। বড় ব্যানার বলতে শ্রী বেঙ্কটেশ ফিল্মস বলছেন আপনি। সে রকম কিছু নয় কিন্তু। আমি দেব আর এসভিএফ-এর সঙ্গেই তো ‘অ্যামাজন অভিযান’ করেছি। আমার মনে হয় না যে ‘ককপিট’ করেছি বলে এসভিএফ-এ আর ছবি করা যাবে না, বিষয়টা এমন নয়। আসলে আমার জীবনের দুটো ব্লকবাস্টার, এমনকি, সবচেয়ে প্রশংসিত ছবি ‘মেঘে ঢাকা তারা’ও এসভিএফ থেকে করা। ওই যে বললাম, হিসেব কষে ছবি তৈরি হয় না।

ছবি করলে তো বাজারের কথা ভাবতেই হয়। এই যে শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবি ‘হামি’ এত সফল, এই ছবিকে কী বলবেন?

শিবু আমায় বলেছিল ‘হামি’ দেখতে। আমার দেখা হয়নি, আমি দেখব ‘হামি’। কাজে বাইরে ছিলাম। তবে আমার বন্ধুবান্ধবেরা দু’বার ‘হামি’ দেখে ফেলেছে এটাও জানি। যে প্রসঙ্গে বলতে চাইছি সেটা হল ছবি চললে সে ছবি ভাল আর না চললে সে ছবি খারাপ, আমি এটার বিরুদ্ধে। আমার নিজের ছবির উদাহরণ দিয়ে বলি, ‘চাঁদের পাহাড়’ হিট ছবি। কিন্তু তাই বলে আমি এটা মানব না যে আমার তৈরি ‘মেঘে ঢাকা তারা’র চেয়ে ওটা ভাল ছবি। বাজারে চলেনি ‘গুড নাইট সিটি’, কিন্তু আমি ভাল ছবি বলব।

আরও পড়ুন: বরাবরই উচ্চাকাঙ্খী হাসিন, অফার এল বলিউডেরও

আমরা কি তা হলে বাজারকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি?

হ্যাঁ। ওই মার্কেট অ্যানালিস্টের দল বলে দিচ্ছে কোনটা কোথায় ভাল! মার্কেট অ্যানালিস্ট দিয়ে শিল্প হয় না। এই বাজারকেন্দ্রিক প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত। বিশ্বের সমস্ত ফিল্মমেকারই স্বীকার করে নিয়েছেন, ছবি ‘গাট ফিলিং’ থেকে তৈরি হয়। সফল হয়। মার্কেট রিসার্চ বা এটা করতেই হবে বলে ছবি করা যায় না! প্রত্যেক ছবির নিজস্ব ফর্মুলা আছে।

এখন কী ফর্মুলায় চলছেন কমলেশ্বর?

এখন গল্প লেখা হচ্ছে ছবির জন্য। এর সঙ্গে প্রেমেন্দ্র মিত্র-র ‘সংসার সীমান্ত’ নিয়ে কাজ শুরু করেছি।

ইন্ডাস্ট্রি কি প্রেম, গোয়েন্দা আর বাচ্চার মধ্যে আটকে যাচ্ছে?

নাহ্, ইন্ডাস্ট্রি কোথাও আটকে নেই। কয়েকটা ছবি এ বিষয়ে হয়েছে। শিবু বাচ্চাদের জন্য ‘হামি’ করেছে, সেই আবার ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ করেছে। অঞ্জনদা, অরিন্দমদা গোয়েন্দা নিয়ে কাজ করছে, আবার অন্য ধারার ছবি করছে। কেউ কোথাও আটকে নেই। আর প্রেম না থাকলে ছবি হবে কী করে? পৃথিবীর নব্বই শতাংশ ছবি প্রেম নিয়ে। সারা পৃথিবীর ছবির এক গল্প। প্রেম বাদ দিয়ে কোনও শিল্পী বেশি দিন থাকতে পারেননি।

মহাভারত ছাড়া আপনি থাকতে পারবেন? মহাভারত হবে না?

হবে। সুযোগ পেলেই করব!

ওয়েব সিরিজ?

বেশ কয়েকটা গল্প নিয়ে বসা হয়েছে। ওয়েবে অনেক মানুষকে একসঙ্গে পাওয়া যায়, যা হলে পাওয়া যায় না! আমি এই মাধ্যম নিয়ে খুবই আগ্রহী।

ছবির জন্য মুম্বইয়ের কোন অভিনেতাকে বাংলা ছবিতে কাস্ট করতে চান?

আমি রণবীর কপূর, আলিয়া ভট্ট, রণবীর সিংহের ভক্ত। তবে আমি নিজে শাশ্বত, রজতাভ, ঋত্বিক আর সুদীপ্তাকে মুম্বইয়ের ছবিতে কাস্ট করাতে চাই। সকলে দেখুক বাংলায় অভিনয়ে কী সম্ভাবনা আছে!

‘গুড নাইট সিটি’ ছবির একটি দৃশ্য।

আরও পড়ুন: জন্মদিনে ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খাব, বলছেন পরমা

সময়টা কি ফিকে হয়ে আসছে? সব ভার্চুয়াল?

ডিজিটাল মিডিয়া মানুষের কমিউনিকেশনের সুযোগ করে দিচ্ছে। এটা যেমন ভাল দিক তেমনই যন্ত্র কোথাও দূরত্ব সৃষ্টি করে, যে সম্পর্কে ফিজিক্যাল প্রেজেন্সের দরকার সেখানে শুধু ভার্চুয়াল ইন্টার‍অ্যাকশন হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে ফেক প্রোফাইল। ভার্চুয়াল জগতে মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে। বাজার অর্থনীতি থাকলে ঠকানোর ব্যবসা চলবেই, এটা আমার কথা নয়। রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন আগেই। তবে সব ছবিই এমন নয়। মনুষ্যত্বের জায়গাও আছে যার জোরে এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা যায়।

বাঙালির মনুষ্যত্ব আজ কোথায়? বাঙালি কি মৃত?

একেবারেই না। আমরা গাঙ্গেয় উপত্যকার মানুষ। একটু অলস আমরা। কিন্তু অর্থনৈতিক কাঠামো ঠিকঠাক হলে বাঙালি আরও উদ্দীপনা নিয়ে, সাংস্কৃতিক মনোভাব নিয়ে জীবন কাটাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE