‘ভূমিকন্যা’য় সোহিনী।
শহুরে পাঁচতারার সাজানো ডায়াস। ‘‘কিছু বলার আগেই ক্ষমা চেয়ে নেব। প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে অনুষ্ঠান শুরু হল। আমাদের সকলেরই তৈরি হতে একটু সময় লাগল’’—সেখানে উঠে শেষ দুপুরে প্রথমেই এই কথাটা বললেন পরিচালক অরিন্দম শীল। আর মুহূর্তে গত এক ঘণ্টা ধরে অডিয়েন্সের একটু একটু করে তৈরি হওয়া হাল্কা ক্ষোভের মেজাজ এক নিমেষে ঠান্ডা।
আসলে অরিন্দমের ধরনটাই এমন। সামনে থাকা সকলকেই আপন করে নেন অনায়াসে। দর্শক তাঁর সিনেমায় মজে থাকেন। এ বার তাঁর হাত ধরেই মজবেন টেলিভিশনেও।
মঙ্গলবারের শহুরে পাঁচতারায় জমায়েতের কারণ ‘ভূমিকন্যা’। আগামী ৩০ জুলাই থেকে যা দেখা যাবে টেলিভিশনের পর্দায়। ইতিমধ্যেই প্রোমো দেখতে শুরু করেছেন দর্শক। এই গোটা কর্মকাণ্ডের ক্যাপ্টেন অরিন্দম শীল। পুরো অনুষ্ঠান সামলালেন অনেকটা বরকর্তার মেজাজে।
আরও পড়ুন, আগের সম্পর্কের সব খারাপ লাগা মুছে ফেলেছি, বলছেন শ্রাবন্তী
‘ভূমিকন্যা’র মূল পাঁচ চরিত্র।
রূপক সাহার উপন্যাস ‘তরিতা পুরাণ’কে নির্দিষ্ট এপিসোডের মধ্যে টেলিভিশনে দেখাবেন অরিন্দম। তাঁর কাছে প্রথম অফার আসে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের তরফে এক বছর আগে। তখন থেকেই ভাবনার পাশাপাশি চিত্রনাট্যের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু হয় শুটিং। ‘‘চ্যানেল আমাকে নতুন একটা চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। টেলিভিশনে সিনেমার মতো একটা সিরিয়াল করার সুযোগ। এতে টিআরপি-র ভাবনা কিন্তু আমার নয়। এটা অন রেকর্ড বললাম। তবে ক্যামেরা, লোকেশন, মিউজিক, এডিট, ভিএফএক্স— পুরোটাই সিনেমার মতো। আমি নিজে তো টেলিভিশন দিয়েই শুরু করেছি। গত পাঁচ, ছ’বছর হল সিনেমার কাজ করছি। টেলিভিশনকে কিছু ফেরত দেওয়ার সময় এসেছে এ বার। এ আমার কাছে শিকড়ে ফেরার মতোই। সেই সুযোগটা দেওয়ার জন্য চ্যানেলকে ধন্যবাদ,’’—অকপট অরিন্দম।
আরও পড়ুন, ‘এখন তো শুক্রবার রিলিজ হলে রবিবারই সুপারহিট লেখা হচ্ছে’
মূল চরিত্রে রয়েছেন সোহিনী সরকার, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, কৌশিক সেন, চিরঞ্জিত্ চক্রবর্তী, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, রূপাঞ্জনা মৈত্রর মতো শিল্পীরা। কেউ কেউ টেলিভিশনে আগেও অভিনয় করেছেন। কেউ বা প্রথম বার। সোহিনী বললেন, ‘‘নির্দিষ্ট এপিসোডে ভূমিকন্যা শেষ হয়ে যাবে। সেটা টেলিভিশনে এই কাজটা করার একটা বড় কারণ। টিআরপি-র উপর যদি এপিসোড নির্ভর করত, তা হলে আমি করতাম না। আর এই চরিত্রটা অন্য রকম। বলিউড বা হলিউডের অনেক চরিত্র দেখে হয়তো অনেক সময় মনে হয়েছে, ইস্, যদি এটা আমি পেতাম— এটা অনেকটা তেমন। অনেক অ্যাকশন সিকোয়েন্স রয়েছে। আউটডোর শুট পুরোটাই। আমি টেকনিশিয়ানদের ধন্যবাদ দিতে চাই। ওই টিমটা ছাড়া এটা হত না।’’
‘সনকা’র চরিত্রে রূপাঞ্জনা।
নাটকের অভ্যেসে বেড়ে ওঠা অনির্বাণকে সিনেমায় দেখেছেন দর্শক। কিন্তু টেলিভিশন তাঁর কাছে নতুন অভিজ্ঞতা। ‘‘সিনিয়ররা সব সময় শিখিয়েছেন চরিত্রের গ্রাফ। উঠছে, আবার পড়ছে। কিন্তু এখানে কাজ করে চরিত্রের গ্রাফ সংক্রান্ত ধারণাটা আমাকে বদলাতে হয়েছে,’’—শেয়ার করলেন অনির্বাণ।
প্রায় ১০ বছর আগে টেলিভিশনেই ‘সনকা’র চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রূপাঞ্জনা। ‘ভূমিকন্যা’তে ফের তিনি সনকা। তাঁর কথায়, ‘‘এই ক’বছরে সনকার কিন্তু অনেক বদল হয়েছে। সনকা খুব ইন্টারেস্টিং চরিত্র। আমাকে একটু ঘটি বাড়ির বউদের আদলে এখানে চরিত্রটা দেওয়া হয়েছে।’’
আরও পড়ুন, কাস্টিং কাউচের জন্য কিছু বড় ব্যানারের ছবি চলে গিয়েছে, বিস্ফোরক সৌমিলি
বিক্রম ঘোষের মিউজিক, উজ্জ্বয়িনীর টাইটেল সং, কৌশিক ভট্টাচার্যের চিত্রনাট্য, পদ্মনাভ দাশগুপ্তের সংলাপ, আঙ্কোরভাটের লোকেশনে শুটিং, অভিষেক রায়ের কস্টিউম— সব মিলিয়ে ‘ভূমিকন্যার’ সৌজন্যে সিনেমার ফ্লেভার ড্রইংরুমে বসে সপ্তাহের সাত দিন আধঘণ্টা পেতে চলেছেন দর্শক। অন্তত ট্রেলারে সে ইঙ্গিতই মিলছে। তবে ‘ভূমিকন্যা’র ব্যাকস্টোরি বা ভাবনা বলুন, অথবা অরিন্দমের বলতে চাওয়া অথচ বলতে না পারা কথাটা যেন বলে দিলেন কৌশিক সেন। অন্তত তাঁর দাবি তেমনটাই।
‘চন্দ্রভানু’র চরিত্রে কৌশিক সেন।
‘‘চরিত্র নিয়ে আমি কিছু বলব না। সে তো দর্শক দেখবেন। কিন্তু অরিন্দমও যেটা বলতে চেয়েছিল বলে আমার মনে হয়, আসলে বয়স হচ্ছে তো, অত রেখেঢেকে আর বলতে পারি না, ইদানীং টেলিভিশনে যে সব ধারাবাহিক হয় তার মেকিং বা অভিনয় দেখে আমার মনে হয়েছে আমি কি আদৌ অভিনয়টা পারি? ফলে আমার মনে হয়েছে, আশা করি অরিন্দমেরও তাই— সমালোচনা বাইরে থেকে না করে এমন একটা জিনিস তৈরি করে দেখানো যেখানে সত্যিই অভিনয়ের একটা জায়গা রয়েছে। মেকিং একটা আলাদা মাত্রা পাবে,’’— কঠিন কথাটাই সহজ ভাবে বললেন ‘ভূমিকন্যা’র ‘চন্দ্রভানু’ অর্থাত্ কৌশিক সেন।
আপাতত আর দিন কয়েকের অপেক্ষা। সিনেমার ফ্লেভার টেলিভিশনে পেতে চাইলে আপনার নজরে থাকুক ‘ভূমিকন্যা’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy