Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Entertainment News

শরীর নয়, মনের সখ্যে বিশ্বাসী আমি

সম্পর্ক নিয়ে অকপট অরিন্দম শীল।তেমনই খোলাখুলি রাজনীতি আর ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে।জন্মদিনের পরের সকাল। টেবিলের এক পাশে রাখা ‘বালিঘর’-এর চিত্রনাট্যের বারো নম্বর ড্রাফ্ট। ঠিক তার পাশেই ব্যোমকেশের প্রথম অংশের চিত্রনাট্য। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তাঁর জন্যই আবার নতুন শবরের গল্প লিখছেন। কথা চলছে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে বড় বাজেটের ছবি করার। প্লট রেডি। এক মাসের মধ্যে গল্প লেখা হবে, এই ছবির পুরো শ্যুটটাই হবে বিদেশে। শর্ট ফিল্ম, ওয়েব সিরিজ, টেলিভিশনে তাঁর কাজ চলছে। অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক অরিন্দম শীল অন্য মেজাজে স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে।কথা চলছে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে বড় বাজেটের ছবি করার। প্লট রেডি। এক মাসের মধ্যে গল্প লেখা হবে, এই ছবির পুরো শ্যুটটাই হবে বিদেশে। শর্ট ফিল্ম, ওয়েব সিরিজ, টেলিভিশনে তাঁর কাজ চলছে।

কাজের ফাঁকে অরিন্দম।

কাজের ফাঁকে অরিন্দম।

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ১৬:২৭
Share: Save:

সম্পর্ক নিয়ে অকপট অরিন্দম শীল।তেমনই খোলাখুলি রাজনীতি আর ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে।জন্মদিনের পরের সকাল। টেবিলের এক পাশে রাখা ‘বালিঘর’-এর চিত্রনাট্যের বারো নম্বর ড্রাফ্ট। ঠিক তার পাশেই ব্যোমকেশের প্রথম অংশের চিত্রনাট্য। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তাঁর জন্যই আবার নতুন শবরের গল্প লিখছেন। কথা চলছে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে বড় বাজেটের ছবি করার। প্লট রেডি। এক মাসের মধ্যে গল্প লেখা হবে, এই ছবির পুরো শ্যুটটাই হবে বিদেশে। শর্ট ফিল্ম, ওয়েব সিরিজ, টেলিভিশনে তাঁর কাজ চলছে। অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক অরিন্দম শীল অন্য মেজাজে স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে।

আপনাকে বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছে। এটা কি জন্মদিনের পার্টির এফেক্ট?

অরিন্দম: বলতে পারেন। কারণ ইন্ডাস্ট্রিতে তিরিশ বছর পর টিকে থাকার পর অরিন্দম শীল এই প্রথম জন্মদিনের সারপ্রাইজ পার্টি পেয়েছে। আমার টিমের এই ভালবাসায় আমি মুগ্ধ! আমার পছন্দের মানুষ। আমার সঙ্গে কাজের মানুষরা সে দিন আমার জন্য এসেছিলেন! সময় দিয়েছিলেন,এটাই পাওয়া।

শুধু কি তাই? ফেসবুকে তো মানুষ আপনার সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করে আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে!

অরিন্দম: পার্টিতেই আবীর (চট্টোপাধ্যায়) আমায় বলছিল, ‘ক্যাপ্টেন লোকে তোমার সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করে উইশ করছে তোমায়।আমি বললাম, খুব ভাল তো। সিনেমার প্রতি প্যাশনের সঙ্গে সঙ্গে আমার যশও চাই। আমি রাস্তায় হাঁটলে লোকে যদি আমায় না-ই চিনতে পারল তো পরিচালক না হয়ে এমএনসি-র কর্তা হয়েই থাকতে পারতাম।আজ লোকে যখন বলে অরিন্দম শীলের ছবি দেখতে যাব, অরিন্দম শীলের সঙ্গে কাজ করব তখন সেটা আমি এনজয় করি।

এটা কি অরিন্দম শীলের অহঙ্কার নয়?

অরিন্দম: একেবারেই না। বয়সের মধ্যাহ্নে এসে সিনেমা করছি। আমার সমসাময়িক বেশিরভাগ পরিচালক আমার চেয়ে ছোট। সেখানে দাঁড়িয়ে পাঁচ বছরে ছবি করে আত্মবিশ্বাসটা পেয়েছি, যা থেকে বলতে পারি আজ যদি আমার ছবি দেখতে এসে দর্শক দশ মিনিট পরে হল থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে আমি মরে যাব। ছবি করা বন্ধ করে দেব।যদিও বাংলা ছবির ক্ষেত্রে এরকম ঘটে প্রায়। আমি শকড!

আপনি কম বাজেটে ঝকঝকে ছবি তৈরি করেন। ফর্মুলাটা কী?

অরিন্দম: আমার মধ্যে উত্তর কলকাতার দাদাগিরি আছে।আর মুম্বইতে ‘গুন্ডে’করতে গিয়ে, ‘কহানি’করতে গিয়ে আমি গেরিলা শ্যুটের কায়দা শিখেছি। আমি জানি কেমন করে বিদ্যা বালনকে কালীঘাটের মতো জমজমাট রাস্তায় আগে থেকেকোনও হইচই না করে পার করে দেওয়া যায়।শ্যুট করে নেওয়া যায়। দেবকে ‘বুনোহাঁস’-এর সময় বাস থেকে নামিয়ে কেউ কিছু বোঝার আগে শ্যুট করে নিয়ে বেরিয়ে গেছি।

এই আত্মবিশ্বাস আছে বলেই কি আপনি ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রমোট করছেন?

অরিন্দম: দেখুন বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে পাঁচজন পরিচালক, নায়ক-নায়িকা দিয়ে আর চলবে না। বাড়াতে হবে। আমি বলে দিচ্ছি, ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু আচ্ছা আচ্ছা পরিচালককে শুইয়ে দেবে।সাতাশে এপ্রিল ওর ছবি মুক্তি পেলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে।


‘ভাল বই পড়ি আজকাল। একটু তাত্ত্বিক হয়ে গেছি’ বললেন পরিচালক।

এই আচ্ছা আচ্ছা পরিচালকের মধ্যে তো আপনিও আছেন!

অরিন্দম: আছি তো।আমি চাই আমার প্রতিযোগী শক্তিশালী হোক যাতে আমি আরও ভাল ছবি করতে পারি। ওকে নিয়ে লোকের ভয়। আসল প্রতিযোগীকে নিয়ে আমরা কথা বলিনা। সরিয়ে রাখি।তাই মানস মুকুলকে নিয়ে আমরা কথা বলি না। তার চেয়ে দুর্বল কোনও পরিচালককে নিয়ে কথা বলি আরও শক্তিশালী কিছুকে চাপা দেওয়ার জন্য। এটা মানুষের প্রবৃত্তি। কিন্তু আর পাঁচটা পরিচালকের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রি আটকে থাকবে না। এই যে অতনু ঘোষ, এতদিন সময় লাগল ওর বেরিয়ে আসতে। আমি তো কবে থেকে বলছি ওর কথা। ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী আর একজন পরিচালক যে বেরিয়ে আসতে এখন পারছে না। অথচ ছবি করলে ও কাঁপিয়ে দেবে।ভাল বই পড়ি আজকাল। একটু তাত্ত্বিক হয়ে গেছি।

আর রাগ?

অরিন্দম: তবে আর কোনওকিছুর উপর রেগে যাই না।আগে মুখের উপর কথা বলতাম। এখন আমার পার্টিতে কেউ আমার পয়সায় মদ খেয়ে পরে আমায় গালাগালি দিলে খুশি হই।ভাবি, এটাই হওয়ার ছিল।আমি জানি, আমি এমন কিছু করতে পেরেছি যে আমি কারও আলোচনা, সমালোচনার বিষয় আজ।

আরও পড়ুন, ‘আমার কাছে রাজের নম্বর পর্যন্ত নেই!’

এই কিছুক্ষণ আগেই উত্তর কলকাতার দাদাগিরির কথা বলছিলেন, সেখান থেকেই কিরাজনীতিতে আসা?

অরিন্দম: আমি আসলে একটা সমাজ বদলের শরিক হতে চেয়েছিলাম।

কিন্তু আপনি দল বদলের শরিক হলেন, মত পরিবর্তন করলেন। লোকে আবার যা খুশি বলতে শুরু করেছিল।

অরিন্দম: মতাদর্শ? আজও লেনিনের মূর্তি ভাঙলে আমার কষ্ট হয়।কিন্তু যারা লেনিনের মূর্তি ভাঙলতাদের ওপর যতটা নারাগ হয় তার চেয়েও বেশি রাগ হয় তাদের ওপর যারা লেনিনের মতাদর্শের ওপর চলে সমাজ বদলাবে ভেবেছিল। কিন্তু আজ নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু বোঝে না। কমিউনিজম কেরল ছাড়া ভারতবর্ষের ম্যাপে আর নেই! কী মর্মান্তিক।

আপনার রাজনৈতিক মতাদর্শ এখন কী?

অরিন্দম: আমি অন্ধের মতো কাউকে আর সমর্থন করি না। আজ তৃণমূল ভাল কাজ করলে আমি সমর্থন করব। মোদী ভাল কাজ করলে সেটা ভাল বলব। কিন্তু ধর্মের নামে রাজনীতি করাকে কখনওই সমর্থন করব না।আমি গরু খাই এবং খেতে ভালবাসি। এই খাওয়াটা কোনও রাজনীতি, প্রধানমন্ত্রী আমায় বন্ধ করাতে পারবেন না।আমার পরের ছবি ‘বালিঘর’-এ এরকম চরিত্র আছে জানেন, যে প্যানিক অ্যাটাকে ভোগে। সে তার মেয়ের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে ভোগে। আমরা সন্তানদের কোন পৃথিবীতে রেখে যাব? রাজনীতিতে যারা আছে তারা ভাবছে পাঁচ বছরে কী কী নিজের জন্য গোছাতে পারব?পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতিতে সাময়িক লাভ, আসলে আমাদের ধ্বংসের দিন শুরু হয়ে গেছে। নয়তো একটা নীরব মোদী এ ভাবে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে পারে না! ভারতবাসী কি ‘বোকা’!

এই আশা ফুরিয়ে আসা জীবনে ছবি তৈরির কথা ভাবেন কেমন করে?

অরিন্দম: ভাবি, কারণ ছবির মধ্য দিয়ে এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই। সেই কারণেই তো ধনঞ্জয় করলাম।

কিন্তু ধনঞ্জয় হিট ছবি নয়।

অরিন্দম: দর্শক স্বীকৃতি দিয়েছে। আর দিয়েছে বলেই ধনঞ্জয় হিন্দিতে হতে চলেছে।ছবি হিট হওয়ার হিসেব বদলাচ্ছে। আমার ‘দুর্গা সহায়’ এসেছিল‘বাহুবলী’-র সঙ্গে। যে ভাবে চলার কথা, চলেনি। কিন্তু ওই ছবির টাকার পুরোটাই স্যাটেলাইট রাইটস্ বিক্রি করে এসেছিল। ধনঞ্জয় প্রথম দিন থেকে লাভ করতে থাকে কারণছবিটা অ্যামাজন এক্সক্লুসিভ ছিল। শুধু সিনেমা হল দিয়ে ছবি হিট বা ফ্লপ বিচার করলে হবে না। তবে বাংলা ছবির এস ভি এফ-এর মতো শক্ত মাথার প্রযোজক চাই। আরও সিনেমা হল চাই। নয়তো ইন্ডাস্ট্রি এগোবে না।


কাজের মেজাজে পরিচালক।

এত ছবির কথা বলছেন, শেষ দু’সপ্তাহে ফাটাফাটি বাংলা ছবির নাম বলতে পারবেন?

অরিন্দম: না, পারবনা। আমরা তো ফাঁকা মাঠে লাঠি ঘোরাচ্ছি। আমি খুব চাই নতুন পরিচালক আসুক। কার কত দম বোঝা যাবে। পরিচালকেরা একসঙ্গে বসতে অবধি চায় না। কম চেষ্টা করেছি?‘সিনেমা ভয়েস’বলে একটা সংগঠন তৈরি করে সবাইকে অফিসে মিটিংয়ের জন্য ডেকেছি, একজন ঢুকেই বাইরে গিয়ে ফোন করে বলছে, ‘‘এই, তুই ওকে কেন ডেকেছিস? ও থাকলে আমি নেই।’’

এই বিষয়ে মুম্বই অনেক প্রফেশনাল!

অরিন্দম: অনেক। ভাবতে পারব না আমরা।অক্ষয় তো সরে গেল। আগে ‘পদ্মাবত’এল, তারপর ‘প্যাডম্যান’।এই ঈদে সলমন এলে পরের ঈদে আমির আসে। একটা মৃত্যু ঘটলে ইন্ডাস্ট্রি কী ভাবে পাশে দাঁড়ায়! আমাদের সুপ্রিয়া দেবী চলে গেলে ক’জন যায়? আমাদের মধ্যে উদারতা নেই। মানসিক অবক্ষয় শুরু হয়ে গেছে।

(কথা বলতে বলতে অঞ্জন দত্তের ফোন।)

অঞ্জন দত্তের সঙ্গে ঝগড়া মিটে গেছে?

অরিন্দম: ঝগড়া নয়, অভিমান। আরে, আমরা একসঙ্গে ‘বং কানেকশন’করেছি। তখন পরমের জামা কাপড় ইস্ত্রি করে সেটে পাঠিয়েছি।রাতে একসঙ্গে মদ্যপান করেছি। ঝগড়া করেছি। এইভাবে সিনেমা করেছি। ওই নাড়িটা ছিন্ন হতে পারে না। অঞ্জনদা ‘দুর্গ রহস্য’আমায় দিতে চায়। হয়তো ‘রক্তের দাগ’আর ‘দুর্গ রহস্য’র পর আর ব্যোমকেশ করব না।

আরও পড়ুন, নতুন লুকে চমকে দিলেন তাপসী

দেখিনারী আর অরিন্দম শীল,এই আলোচনা টলি পাড়ায় বেশ চর্চিত। মজা করে বলা হত, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে...

অরিন্দম: লেট মি ক্লিয়ার। এখন পরিস্থিতি এমন, কারও সঙ্গে পাল্লা দেওয়া বা কাস্টিং কাউচ— কিছুরই দরকার হয় না। অঢেল প্রস্তাব আসে। তবে আমি মন ছাড়া শুধু শরীরে বিশ্বাস করি না।

কিন্তু শোনা যায় অরিন্দম শীলের প্রচুর সম্পর্ক, এমনকী নায়িকাদের সঙ্গেও...

অরিন্দম: (হেসে) ‘প্রচুউউর’সম্পর্ক, ভালবাসা। মিমি থেকে তনুশ্রী, সোহিনী সবাই বলে অরিন্দমদার সঙ্গে শেয়ার করা যায়। আমার ছবির নায়িকাদের সঙ্গে আমার সখ্য তৈরি হয়। সেটা শরীরের নয়। শরীরের সখ্য হলে টেক ইট ফর গ্রান্টেড হয়ে যাবে। মনের সাহায্য আমি পাব না তো। কাজের ক্ষেত্রে সেটা ক্ষতিকারক।সখ্য থেকে কোনও সম্পর্কে যদি শরীর আসে, আসবে। তবে সিনেমা আমার প্রায়োরিটি।

উভাল নোরা হাপারির ‘সেপিয়ানস্’-এর পাতায় মগ্ন তিনি। পৃথিবীর সব আলো নিভে যাওয়ার পর স্বপ্ন দেখার, দেখানোর অদম্য বাসনা তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE