Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Entertainment News

‘অনস্ক্রিন ন্যুডিটি নিয়ে আমার সমস্যা নেই, তবে...’

শহরের হোটেলে সে দিন তারকার মেলা। উপলক্ষ প্রতিম ডি গুপ্তর আসন্ন ছবি ‘আহা রে মন’ নিয়ে আড্ডা। সকলেই পরিচিত। কেবলমাত্র তিনি নতুন। কারণ সুমন মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘শেষের কবিতা’র পর এটি তাঁর দ্বিতীয় বাংলা ছবি। তিনি চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী। প্রথম আড্ডা, তবে তাতেই স্বচ্ছন্দে মনের কথা শেয়ার করলেন অভিনেত্রী। সাক্ষী ধোঁয়া ওঠা চা, কুকিজ...।

চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী।

চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী।

স্বরলিপি ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৮ ০০:৩০
Share: Save:

শহরের হোটেলে সে দিন তারকার মেলা। উপলক্ষ প্রতিম ডি গুপ্তর আসন্ন ছবি ‘আহা রে মন’ নিয়ে আড্ডা। সকলেই পরিচিত। কেবলমাত্র তিনি নতুন। কারণ সুমন মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘শেষের কবিতা’র পর এটি তাঁর দ্বিতীয় বাংলা ছবি। তিনি চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী। প্রথম আড্ডা, তবে তাতেই স্বচ্ছন্দে মনের কথা শেয়ার করলেন অভিনেত্রী। সাক্ষী ধোঁয়া ওঠা চা, কুকিজ...।

আপনি তো মুম্বইতে থাকেন।
হ্যাঁ, লাস্ট পাঁচ বছর মুম্বইতে।

প্রতিমকে আগেই চিনতেন?
চিনতাম মানে, হাই হ্যালো ছিল। আমার কিছু বন্ধু যারা ‘সাহেব বিবি গোলাম’-এ ছিল ছোট ছোট চরিত্রে। অলমোস্ট সিমিলার সার্কেল।

এই ছবির অফার এল কী ভাবে?
প্রতিমদা যখন অডিশন করছিল, আমি ছুটি কাটাতে কলকাতাতেই এসেছিলাম। তখন আমার বন্ধুর সঙ্গে ওঁর দেখা হয়। প্রতিমদা জানতে চায়, চিত্রাঙ্গদা কি কলকাতায়? ওর কথা ভাবছিলাম...। তার পর আমি ফোন করলাম। অডিশন হল। দু’টো সিনের একটা করেই টেক দিয়েছিলাম। প্রতিমদা ছিল সেখানে। সেটা ‘কি ফ্যাক্টর’। তার বেশ কিছু দিন পর সে সময় আমি জয়পুরে ছিলাম একটা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জন্য। তখন প্রতিমদার মেসেজ আসে...।

ট্রেলার দেখে কিন্তু আপনাকে নিয়ে অডিয়েন্সের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
ও! তাই...(হাসি)।

আরও পড়ুন, ‘কাস্টিং কাউচের শিকার হতে যাচ্ছিলাম আমিও’

আর যাঁরা জানেন, আপনি ঋতাভরীর দিদি, তাঁরা কিন্তু অলরেডি তুলনা করতে শুরু করেছেন।
(ঠাণ্ডা মেজাজে) যাঁরা তুলনা করবেন তাঁদের জাস্ট কোনও কাজ নেই। পাত্তা না দিলেই হল।

সত্যিই কি এই তুলনাটা জাস্টিফায়েড নয়?
আসলে আমি যেটা বলতে চাইছি, এ সব কম্প্যারিজন ঋতাভরীকে অ্যাফেক্ট করবে না। আমাকেও তো কত লোকে বলেছে, তোর বোন কত গ্ল্যামারাস, তুই সে ভাবে থাকিস না! তাতে কী? আমি এ ভাবে থাকতে পছন্দ করি। আরে, ও তো আমার কম্পিটিটর নয়। অন্য কারও সঙ্গে কম্পেয়ার করতে থাকলে আমার কাজটা ছোট হয়ে যাবে। শি ইজ ভেরি এন্টারপ্রাইজিং। আমি কিন্তু ওর মতো অত স্মার্ট নই।


সাহসী পোশাকে অভিনেত্রী।

যে ট্রেলার দেখে এত আলোচনা, অর্থাত্ ‘আহা রে মন’, সেখানে আপনি কেমন?
আমার চরিত্র তিতলি ঘড়ুই। সে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বিলং করে। বয়সে ছোট। কলেজে পড়ছে। বা কলেজে উঠবে। ওই রকম ফেজ। আমি ওই বয়সটা পেরিয়ে এসেছি। টিনএজের শেষের দিকে বা মাঝামাঝি সময়ে আমাদের হরমোনগুলো একটু অন্য রকম ভাবে রিঅ্যাক্ট করে। বাকি পৃথিবীর কাছে আমরা ছোট। কিন্তু নিজেরা মনে করি অনেক বড়। যেটা চাই সেটা পাব, কেন পাব না, কেন হবে না? যদি মনে হয়, এখন প্যারিসে গিয়ে বয়ফ্রেন্ডকে চুমু খাব, সেটা হতে হবে। কারণ প্র্যাকটিক্যাল লাইফটা তত জানা থাকে না ওই বয়সে। সেই ইনোসেন্সটা থাকে। ঠিক তেমনই তিতলি ইজ অলসো ইন লভ উইথ সামওয়ান। ওর নিজস্ব একটা জগত্ রয়েছে। সেখানে ভালবাসার একটা অন্য মানে রয়েছে। আমাদের সবারই হয়তো আছে। ছবিটা দেখলে হয়তো রিলেট করতে পারবেন, নিজের সঙ্গে বা পরিচিত কারও সঙ্গে। খুব ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার।

ওই বয়সে আপনি তিতলির মতো ছিলেন?
আমি অতটাও সিমিলার ছিলাম না। কিন্তু চারপাশে ওই রকম আবেগ, স্বপ্নের দুনিয়ায় থাকা অনেককে দেখেছি।

আরও পড়ুন, ‘প্রতিম ছাড়া অন্য কেউ হলে ‘আহা রে মন’ করব কি না ভাবতাম’

প্রিপারেশন কী ভাবে নিয়েছিলেন?
সব সময় তো মেথড অ্যাক্টিং হয় না। আর এই চরিত্রের প্রিপারেশনে, জার্নিটা খুব ইন্টারনাল ছিল। কতটা সময় আমি নিজের সঙ্গে কাটিয়েছি সেটা ইমপর্ট্যান্ট ছিল। এই ছবির শুটিং শুরুর আগে এক সপ্তাহ আমি নিজের সঙ্গেই ছিলাম। সেটাই ওয়ার্কশপ। প্রতিমদার সঙ্গেও বসেছিলাম। আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় অনেক মেমরি রিকাল্টেক্ট করেছি। তার পর সেটা মোর বিলিভেবল, মোর হিউম্যান করতে হয়েছে। সেটার জন্যই চুল কাটা, কিছু হাবভাব চেহারায় আনার মতো চেঞ্চ দরকার ছিল।

আপনার চুল কাটা নিয়েও তো অনেকে অনেক মন্তব্য করেছেন।
(হাসি) জানি, ছোট চুল হওয়াতে অনেকে অনেক কিছু বলেছে। ‘ইন্ডিয়ান উইমেন শুড হ্যাভ লং হেয়ার, দিস ইজ নট রাইট’- আমি এমন মেসেজও পেয়েছি। বাট আই অ্যাম হ্যাপি। লেট মি বি হ্যাপি।


চিত্রাঙ্গদা এখন যেমন। চুল কাটার পরও অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে।

কিন্তু চুল কাটলেন বলেও কথা শুনতে হল?
আসলে কনভেনশনাল ওয়ে অব লুকিং হয়তো আছে মহিলাদের ক্ষেত্রে। অভিনেত্রীর একটা নির্দিষ্ট চেহারা হওয়া উচিত বলে হয়তো মনে করেন অনেকে। আর এ সব তো থাকবেই।

এ সব ক্ষেত্রে মা (পরিচালক শতরূপা সান্যাল) খুব সাপোর্ট করেন?
মা সব ক্ষেত্রেই সাপোর্টিভ। ছোট থেকেই মা ওয়াজ ভেরি চিল। নিজে থেকে এমন সুন্দর জিনিস দেখাত, এত বই পড়াত...। আমি বাইবেলের অনেক গল্প জানি, রামায়ণ জানি— কারণ মা গল্পের মতো করে বলেছেন।

আরও পড়ুন, শ্রীলেখা নাকি নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছেন?

অভিনয়ের ক্ষেত্রে, বা যে কোনও পেশাতেই ব্যাকগ্রাউন্ড বা বড় হয়ে ওঠাটা তো খুব ইমপর্ট্যান্ট...
হ্যাঁ। মায়ের কথা তো বললামই। তা ছাড়া দাদু (প্রয়াত অধ্যাপক তরুণ সান্যাল) ছিলেন। ছোটবেলায় লুকিয়ে বলিউডের নাচগান দেখতাম আমরা দুই বোন। দাদু খুব রেগে যেত। মানে, সিনেমা দেখবে তো ‘বেবিজ ডে আউট’ দেখো। ‘টাইটানিক’, তা-ও ভাল। সে সময় দাদু আসছে বুঝতে পারলেই আমরা টিভি বন্ধ করে জামাকাপড় ভাঁজ করতে শুরু করতাম (হা হা হা...)। টাচ উড, আমার বন্ধুরাও দারুণ ছিল।

যেমন?
ভারতীয় বিদ্যাভবনে পড়েছি আমি। সেখানের বন্ধুরা তো ছিল। তার পর কলেজ মানে সেন্ট জেভিয়ার্স ইজ আ বিগ আই ওপেনার ফর মি। প্রচুর ছবি দেখেছি সে সময়।

আর বাবা (পরিচালক উত্পলেন্দু চক্রবর্তী)?
হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়ান সিনেমাতে কন্ট্রিবিউশন আছে বাবার। দ্যাটস অল। বড় জোর এটুকু বলব, বাবার সূত্রে ভাল জিন রয়েছে আমার। বাট মা-ই আমাদের কাছে বাবা। মার মতোই হতে চেয়েছি। অমন লড়াকু। মা-ই আমার হিরো।


দাদুর সঙ্গে চিত্রাঙ্গদা।

মুম্বইতে প্রচুর থিয়েটার করেন। এ বার সিনেমা। দুটো জায়গা আলাদা। অসুবিধে হয়নি?
আমি খুব হাংরি অ্যাক্টর। ভাল কাজ হলে ছোট হোক বা বড়, নাটক হোক বা সিনেমা— আমি কাজ করব। ওয়েস্টের মতো এখানে টেলিভিশন স্ট্রং হলে টেলিভিশনও করব। মিডিয়াম ইজ নট দ্য পয়েন্ট।

আর ক্যারেক্টার ডিমান্ড করলে অন স্ক্রিন কতটা বোল্ড হতে পারবেন?
ক্যারেক্টার ডিমান্ড করার থেকেও কে ডিরেক্ট করছেন, কতটা এসথেটিক্যালি শুট করছেন— এ সব অনেক কিছু ম্যাটার করে। তবে এখনও পর্যন্ত তো তেমন কিছু মাথায় রাখিনি। আসলে অনেক সময় প্রয়োজন না থাকলেও ওই সব সিন ন্যুড সিন ঢোকানো হয়। ফলে এখনই এটা করব, বা করব না, এমন কোনও ভাবনা নেই। দেখি, কেমন কাজ আসে।

আরও পড়ুন, ‘রেনবো জেলি দেখে হয়তো ভাববেন আমি আবার জিততে পারি’

চিত্রাঙ্গদার লাভ লাইফ নিয়ে কিন্তু অডিয়েন্স ইন্টারেস্টেড।
(হা হা হা...) আই অ্যাম নট সিঙ্গল ফর আ ভেরি লং টাইম। উই আর ফ্রেন্ডস ফর লাইফ। আমার অনেক দিনের বন্ধু।

তিনি কি এই ইন্ডাস্ট্রির?
(চোখ বড় করে) আর কিছু বলব না এটা নিয়ে। তবে আমি যেমন অ্যাক্টিংয়ের প্রতি সিরিয়াস, জীবনের সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তেমনই সিরিয়াস।

ছবি: ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE