Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Entertainment News

কাস্টিং কাউচের জন্য কিছু বড় ব্যানারের ছবি চলে গিয়েছে, বিস্ফোরক সৌমিলি

পাঁচ বছর পর টেলিভিশনে কামব্যাক করলেন অভিনেত্রী সৌমিলি বিশ্বাস। সৌজন্যে ধারাবাহিক ‘জয় বাবা লোকনাথ’। এতদিন কোথায় ছিলেন তিনি? প্রশ্নটা উঠতেই একরাশ ক্ষোভ সামনে আনলেন তিনি। মন খারাপ বসত করল আড্ডার গলিপথে। সাক্ষী থাকলেন স্বরলিপি ভট্টাচার্য।পাঁচ বছর পর টেলিভিশনে কামব্যাক করলেন অভিনেত্রী সৌমিলি বিশ্বাস। সৌজন্যে ধারাবাহিক ‘জয় বাবা লোকনাথ’। এতদিন কোথায় ছিলেন তিনি?

সৌমিলি বিশ্বাস।

সৌমিলি বিশ্বাস।

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ১২:৩৫
Share: Save:

কেমন আছেন?
ভাল। আপনি?

ভাল। গত পাঁচ বছর তো টেলিভিশন থেকে ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছিলেন। কোথায় ছিলেন?
পাঁচ বছর আগে আমার বিয়ে হয়েছে। এই ডিসেম্বরে বিয়ের বয়স ছয় হবে। অনেকে হয়তো ধরে নিয়েছিলেন বিয়ের পর আমি কাজ করব না। আমি কিন্তু কাজ করতে চেয়েছিলাম। শ্বশুরবাড়ি থেকেও কোনও বাধা ছিল না। হয়তো ওই সময়টা কপালে কাজ ছিল না। তবে এর মধ্যে সিনেমা করেছি। প্রদীপ সরকারের সঙ্গে চারটে বিজ্ঞাপনের কাজ করেছি।

বিয়ের পর ‘জয় বাবা লোকনাথ’ দিয়ে মেগায় ফিরলেন?
হ্যাঁ, এটাই বিয়ের পর মেগায় ফেরা।

তার মানে এই ক’বছর অফার আসেনি?
দেখুন, প্রথম দু’-এক বছর মেগা করতে চাইনি আমি। তার পর মায়ের চরিত্র এসেছিল। সেটা করতে চাইনি। অনেকে হয়তো ধরে নিয়েছিলেন আমি দেশের বাইরে সেটল। তখন আমাকে তো লোকে ফোন করতে পারত। জিজ্ঞেস করতে পারত, তুমি কি কাজ করছ? তুমি কি কলকাতায় আছ? আসলে কাজ দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না। তবে ‘লোকনাথ’ যেখানে চলছে সেই চ্যানেলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার কাজের ক্রাইসিসের সময়ে ওরা আমাকে সেই জায়গাটা দিয়েছে।

আরও পড়ুন, নওয়াজের সঙ্গে যৌন দৃশ্য ভাইরাল, কী বলছেন ঈশিকা?

এই যে সুযোগ পেলেন না, রাগ হয় কারও ওপর?
রাগ সে ভাবে বলব না। খারাপ লাগে। ধরুন, কোনও ইভেন্টে বেশ কিছু লোকের সঙ্গে দেখা হয়েছে, তারা গদগদ মুখ করে বলেছে, তোমার মতো চরিত্র পেলে নিশ্চয়ই বলব। মানে কী? তোমার মতো চরিত্র মানে কী? সো কলড যাঁরা হিরোইন তাঁদের মতো সব রকমের চরিত্র আছে। আমাদের জন্য নেই কেন (বেশ উত্তেজিত)?

আপনাদের মানে?
আমি আমাদের জেনারেশনের কথা বলব। অনন্যা। খুব কম কাজ করছে। দেখছি অন্তত সেটাই। কিন্তু খুব বড় মাপের অভিনেত্রী। মনামী, কনীনিকা, চান্দ্রেয়ী, রিমঝিম এই মুখগুলোকে সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না কেন? দেখা যাচ্ছে হয়তো অনেক দিন বাদে বাদে। এই গ্যাপটা হচ্ছে কেন? এখন তো মহিলাকেন্দ্রিক প্রচুর কাজ হচ্ছে। শুধু তো গাছের ডাল ধরে নাচছেন না নায়িকারা। তা হলে?

আরও পড়ুন, ‘যেখানে প্রোমোশনের সুযোগ থাকে, সেখানেই হয়তো কাস্টিং কাউচ আছে’

এত দিন ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন। নিজে কখনও এর কারণ ভেবেছেন?
এই সমস্যাটা অনেক বছরের। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হয়তো অপুদা (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়)। যখন সে ‘কহানি’ করল তার পর হাতে এত কাজ এল। বলিউড আলাদা করে চেনার পর। খরাজদা, টোটা রায়চৌধুরী, সব্যসাচী চক্রবর্তী, সুদীপ্তা চক্রবর্তী— সে ভাবে কি জায়গাটা পেল? যতটা কাজ করা উচিত, করছে কি? টলিউডের কিছু তো প্রবলেম রয়েছে। কিছু তো গ্যাপ আছে। আবার অনেকে আছে প্রচুর হাইপ পাচ্ছে, কিন্তু তারা ডিজার্ভ করে না।

মডেলিংয়ের দিন...।

কারা তাঁরা?
আমি কারও নাম বলতে চাই না। কিছু না করেও লোকে ভাবে আমি অহঙ্কারী। তাই এই বিতর্কে জড়িয়ে লাভ নেই। তবে আমাদের জেনারেশনেরও অনেকে কম কাজ পাচ্ছে। বলুন তো, মুম্বইয়ের লোক কি ভাবে আমাদের টলিউডে গিয়ে কাজ করতে হবে, তার পর রেকগনিশন পাব? এটা তো গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড। একটা বয়সের পর তো আর সে জায়গাটা পাবে না। আমাদের থেকে বয়সে বড় অনেকে এখনও হিরোইন। তা হলে আমাদের জেনারেশনটা সাফার করল কেন?

আপনি বলতে চাইছেন, এখন যাঁরা হিরোইন, তাঁরা সেই জায়গাটা ডিজার্ভ করেন না?
আমার প্রশ্ন, যাঁরা হিরোইন, তাঁরা কি সবাই ভীষণ ভাল অ্যাকট্রেস? নতুন জেনারেশনে কয়েক জন ডেফিনিটলি ভাল।

যেমন?
সোহিনী, তনুশ্রী ভাল কাজ করছে। শ্রাবন্তীকে ভাল লাগে। সবার নাম হয়তো এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। কিন্তু প্রত্যেকে কি সত্যি ভাল? এমন নয় যে সব ছবিতেই এক মুখ কাস্ট করতে হবে। আর কোনও হিরোইন কি নেই? পরিচালকরা নিজেদের গ্রুপের বাইরে বেরচ্ছেন না। কিছু কিছু ব্যানারে এক কাস্টিং। অন্যদের ট্রাই করা হচ্ছে না কেন? ট্রাই করে ফেলিওর হলে তখন আর নেবেন না।

আরও পড়ুন, তিন এক্কে তিন, কেয়ার অব সুদীপ্তা

টিভি সিরিয়ালেও কি এক অবস্থা?
সিরিয়ালেরও হিরো হিরোইন মানেই কেন নতুন মুখ? কেন পুরনোরা নয়? তবে লাস্ট এক দু’বছর কনীনিকা, অনন্যা কাজ করছে। মনামী অবশ্য ধারাবাহিক ভাবেই করেছে। আমি যদি মেনটেন করতে না পারতাম, ডিজার্ভ না করতাম তা হলে মেনে নিতাম। কিছুদিন আগে এক পরিচালক আমাকে বলছিলেন, তুই ভীষণ আন্ডাররেটেড। সেটা আমাদের দুর্ভাগ্য।

আপনিও সেটা মনে করেন?
নিজের মুখে বলতে চাই না। এটা দর্শক বা পরিচালকরা বিচার করবেন। এটুকু বলতে পারি, আমি যদি ভাল কাজ পেতাম, তা হলে হতাশ করতাম না। এটা শুধু আমার কথা নয়। অনেক দর্শক, অনেক পরিচালকও বলেন। আমি ‘আলো’ করেছিলাম ২০০৩-এ। আজও ‘আলো’র চরিত্রটা নিয়ে মানুষ বলেন। নিজেকে প্রমাণ তো করেছি। এত বছর পর ‘লোকনাথ’ করছি। লোকে ভাল ফিডব্যাক দিচ্ছে। ‘লোকনাথ’-এর মতো চরিত্র আগে করিনি। নিজেকে অনেক ভাঙতে হয়েছে। অনেক সময় শো করতে গিয়েছি, মানুষ জানতে চেয়েছে আপনাকে স্ক্রিনে দেখতে পাচ্ছি না কেন? অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছি। তাদের তো বোঝাতে পারি না, কেন দেখতে পাচ্ছেন না।

মেকআপ রুমে ব্যস্ত অভিনেত্রী।

ভাল অফার কেন পেলেন না?
এই ক্যালকুলেশনটা আমি আজও হাতড়ে বেড়াচ্ছি। আমার পিআর খারাপ। অয়েলিং করতে পারি না। দিনের পর দিন পায়ের কাছে বসে থাকতে পারব না।

যাঁরা ভাল অফার পাচ্ছেন, তাঁরা কি এই পথ অনুসরণ করছেন?
কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই পথ নিচ্ছেন অনেকে। আবার কিছু ক্ষেত্রে ভাল কাজ করেছেন, লাক ফেভার করেছে।

আর কাস্টিং কাউচ? ফেস করেছেন কখনও?
হুম। কাস্টিং কাউচ ফেস করেছি। সে জন্য কিছু বড় ব্যানারের ছবি চলে গিয়েছে। কখনও ডিরেক্টলি কেউ কিছু বলেননি। হয়তো কেউ বলেছে, যা না এটা কর না। তা হলে হবে। কিন্তু সেটা তো আমি করতে পারব না। ২০ বছরে ইন্ডাস্ট্রিতে হয়তো কম কাজ করেছি। কিন্তু আমার চরিত্র নিয়ে কেউ কোনওদিন কিছু বলতে পারেনি। এটা নিয়ে আমি মাথা উঁচু করে থেকেছি।

আরও পড়ুন, লোকনাথ কে? ‘উনি ধ্যান করতেন’, উত্তর পর্দার লোকনাথের

কাজ ছিল না যখন, তখন ডিপ্রেশন এসেছিল?
অবশ্যই ডিপ্রেশন এসেছিল। এটা তো লুকিয়ে লাভ নেই। আমার পরিবারকে ধন্যবাদ দেব। আমার হাজব্যান্ড খুব ভাল বন্ধু। আমাকে ক্রমাগত সাপোর্ট করে গিয়েছে। বাবা-মা বুঝিয়েছে। বলত, হয় পলিটিক্সে ঢোক, বোঝ, কর। আর না পারলে দুঃখ করো না। যেটুকু মাথা উঁচু করে করতে পারছ, সেটুকুই থাক।

‘লোকনাথ’-এ কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
খুবই ভাল। ‘লোকনাথ’ মানে অরণ্য কাজের ক্ষেত্রে খুব সিরিয়াস। ওর মা বলেন, এখন তোমার ছেলে। খেতে না চাইলে আমার ঘরে দিয়ে যান। কখনও বকে, কখনও বুঝিয়ে খাওয়াই। সবচেয়ে বড় কথা, বাচ্চারাও ‘লোকনাথ’ দেখছে। লোকনাথ, বেণী, বালগোপালের মতো চরিত্র রয়েছে, যারা বাচ্চাদের কাছে ফেভারিট। আর লোকনাথবাবার প্রচুর ভক্ত। প্রায় সব বাড়িতেই পুজো হয়। শুধু গ্রাম বা মফসসলে নয়, কলকাতাতেও ভক্ত রয়েছেন।

এখানেও তো মায়ের চরিত্র, তা হলে রাজি হলেন কেন?
লোকনাথ সাড়ে ১১ বছর বয়সে সন্ন্যাস নেন। ফলে পারিবারিক জীবন বন্ধ হয়ে যাবে। বড় হলে মা অফ হয়ে যাবে। সেটা রাজি হওয়ার একটা কারণ তো বটেই। কারণ বুড়ি হতে হবে না (হাসি)।

‘লোকনাথ’-এর শুটিংয়ে সৌমিলি এবং অরণ্য।

আপনি তো হলিউডেরও একটা ছবি করলেন।
হ্যাঁ। ‘ওয়ান লিটল ফিঙ্গার’। পরিচালক রূপম শর্মা। উনি লস অ্যাঞ্জেলসে থাকেন। এমনিতে অসমের মানুষ। ছবিতে ডেন রয়েছেন। জয়া শীল আছেন। অটিজিম আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে ছবি। আমি এক বাচ্চার মায়ের চরিত্রে করেছি। ওদের সামনে থেকে দেখে বুঝেছি এই বাচ্চাদের মায়েদের কতটা কষ্ট। আমি যে কতবার কেঁদেছি…। ওরা কিন্তু আমাদের থেকে বেশি রিঅ্যাক্ট করতে পারে। একটা গোটা ছবি ওরা টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন,আমাকে শুনতে হয়েছিল, কীর্তন? কী হবে এটা করে?’

আর কী কী কাজ করছেন এখন?
‘লোকনাথ’-এর পাশাপাশি নাচের স্কুল চলছে, অ্যাঙ্কারিং চলছে। আর একটা মেগার অফার এসছিল। কিন্তু একসঙ্গে অনেকগুলোতে জাগলিং করতে পারি না আমি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE