Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কে বড়, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি না চলচ্চিত্র, বিতর্কে তোলপাড় রাজ্য

কয়েক দিন আগে চলচ্চিত্র উৎসবের এক আলোচনা সভায় অনীক দত্ত কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘‘সিনেমা এখন আর পরিচালক, প্রযোজকদের বিষয় নয়, নন্দন প্রাঙ্গণে যাঁর ছবি ছড়িয়ে আছে, বাস্তবে তিনিই বোধহয় সিনেমার একমাত্র ব্যক্তিত্ব।’’

চলচ্চিত্র উৎসবে নন্দন সেজেছে মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

চলচ্চিত্র উৎসবে নন্দন সেজেছে মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৬:০৬
Share: Save:

তুমি কি কেবলই ছবি?

সিনেমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব ঢুকে পড়েছে সেই ‘রাজনৈতিক’ প্রশ্নে। প্রযত্নে পরিচালক অনীক দত্ত। উৎসবের মঞ্চেই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, নন্দন চত্বর জুড়ে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ব্যবহারের উদ্দেশ্য নিয়ে। তাঁর মন্তব্যে কার্যত দ্বিধাবিভক্ত রাজ্যের বিশিষ্ট মহল। বিতর্ক শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। এই নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তির্যক মন্তব্য করেছেন অনেকে।

কয়েক দিন আগে চলচ্চিত্র উৎসবের এক আলোচনা সভায় অনীক দত্ত কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘‘সিনেমা এখন আর পরিচালক, প্রযোজকদের বিষয় নয়, নন্দন প্রাঙ্গণে যাঁর ছবি ছড়িয়ে আছে, বাস্তবে তিনিই বোধহয় সিনেমার একমাত্র ব্যক্তিত্ব।’’ মন্তব্যের সমর্থনে অনীকের যুক্তি, ‘‘একটি চলচ্চিত্র উৎসবের প্রাঙ্গণে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছবি সর্বস্ব হোর্ডিং, কাট আউট লাগানো হবে কেন? এটা অর্থহীন এবং মোটেই নান্দনিক নয়।’’

অনীককে সমর্থন করে বিশিষ্টদের একাংশের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবকে ‘কান’ উৎসবের সমতুল্য করতে চাইছেন, কিন্তু পৃথিবীর অধিকাংশ চলচ্চিত্র উৎসবে এ ভাবে রাজনীতিক বা রাষ্ট্রনেতাদের ছবি টাঙানো হয় না। আর অন্য অনেকের বক্তব্য, এ ধরনের মন্তব্য আসলে চলচ্চিত্র উৎসবের জীবনী শক্তিকে নষ্ট করে।

পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এটা অনীকের ব্যক্তিগত মতামত। তবে লক্ষ লক্ষ মানুষ কিন্তু ছবি দেখছেন। ছবি চলাকালীন মাটিতেও দর্শক বসছেন। সেখানেই উৎসব সফল।’’

যোগেন চৌধুরীর কথায়, ‘‘এ ধরনের মন্তব্যে কেবল বিতর্কই তৈরি হয়, সদর্থক কাজ হয় না। আগের চেয়ে উৎসবের চেহারা অনেক ভাল হয়েছে। সেটাই জরুরি বিষয়।’’

কিন্তু এখানেই বিতর্ক থেমে থাকছে না। অনীকের মন্তব্যকে কেউ কেউ আরও একটু বড় পরিসরে দেখতে চাইছেন। প্রশ্ন উঠছে, শুধু চলচ্চিত্র উৎসব নয়, রাজ্যের প্রায় সমস্ত অনুষ্ঠানেই কেন মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ব্যবহৃত হবে? কেন রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীর হোর্ডিং থেকে মঞ্চ— সর্বত্র মনীষীদের ছবির সঙ্গে কার্যত একই সমান্তরালে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ব্যবহৃত হয়? এ সম্পর্কে অভিনেতা কৌশিক সেনের মন্তব্য, ‘‘সংস্কৃতির অঙ্গনে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার আসলে একটা রাজনৈতিক প্রবণতা। সেটা কেউ পছন্দ করতে পারেন, কেউ না-ও করতে পারেন। কিন্তু এটাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। অনীকদা সেটাই স্পষ্ট করে বলেছেন। আমি ওঁকে সমর্থন করি।’’ একই সঙ্গে কৌশিকের আশঙ্কা, বিষয়টি নিয়ে নতুন করে যে ‘আমরা’ ‘ওরা’ শুরু হয়েছে, সেটা গণতন্ত্রের পক্ষে ‘শুভ’ নয়।

শহরের রাস্তায় দলের নেতাদের ছবি সর্বস্ব কাট আউট, হোর্ডিং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য পছন্দ করেন না। কখনও কখনও উষ্মাও প্রকাশ করেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর ছবির ‘উদার’ প্রদর্শন কেন হবে, সেই প্রশ্নও উঠছে বিভিন্ন মহলে।

ছবি ব্যবহারের এই প্রবণতা নিয়ে অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘বিষয়টি স্পর্শকাতর। এ নিয়ে কিছু বলব না।’’ মন্তব্য করতে চাননি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও।

অনীকের পাল্টা প্রশ্ন সেখানেই। ‘‘কেন এই সাধারণ কথাটিকে স্পর্শকাতর বলে মনে করছেন অনেকে? কেনই বা সাধারণ একটি মন্তব্য ঘিরে এত আলোচনা? তা হলে কি অধিকাংশের মনেই এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল? কিন্তু প্রকাশ করতে চাইছেন না বা পারছেন না?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE