‘ধড়ক’ ছবির একটি দৃশ্য।
স্পেশাল স্ক্রিনিং-এ ‘ধড়ক’ দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন জাহ্নবী কপূর। মা ছাড়া প্রথম ছবি মুক্তি পাচ্ছে, ভাবতে পারেননি তিনি...
অন্য দিকে, শ্রীদেবী কখনও চাননি, মেয়ে অভিনয় জগতে আসুক...
‘ধড়ক’ দেখতে গিয়ে প্রথম এই কথাই মাথায় এল, কারণ শুক্রবারের সকাল ৯টার আইনক্স-এর যে উৎসাহী ভিড় ‘ধড়ক’ দেখতে এসেছিল তাদের প্রায় সবাই জাহ্নবীকে দেখতেই হলে ভিড় জমিয়েছে ঢাউস পপকর্ণ বাকেট হাতে!
নাহ, ‘সাইরাট’-এর হিন্দি সংস্করণ ‘ধড়ক’ কি না এ নিয়ে কারোর যে খুব মাথাব্যথা ছিল এমন নয়।
প্রথমেই বলে নেওয়া ভাল, ‘সাইরাট’ দেখা দর্শকের এ ছবি একেবারেই ভাল লাগবে না! বরং ‘ধড়ক’-কে একটা ছবি হিসেবে দেখাই ভাল। কর্ণ জোহর জোরালো আপত্তি জানাবেন, তবে ছবি তৈরির সময় তাঁর পরিচালককে গাইড করা উচিত ছিল।
এ ছবি বলে দিল জাহ্নবী কপূর একেবারেই তাঁর মা শ্রীদেবীর মতো নন। যদিও এখনও সংলাপ বলায় তাঁর আড়ষ্টতা আছে। কিন্তু তাঁর সহজাত অভিনয় ধারা মাঝে মাঝে আলিয়া ভট্টকে মনে করিয়ে দেয়। অর্ধেক সময় নো মেক আপ লুকের জাহ্নবীর অভিনয়ের অভিব্যক্তি বি টাউনের ভবিষ্যৎকে আরও মজবুত করবে সন্দেহ নেই। তবে জাহ্নবীকে ভাল চিত্রনাট্য পেতে হবে। যেমন শহিদ কপূরের ভাই ঈশান খাট্টাকেও ভাল গল্প পেতে হবে। নাচ থেকে রোম্যান্টিক হিরো, অভিনয়ের পারদর্শিতা সবই আছে তাঁর মধ্যে। কিন্তু চিত্রনাট্য তাঁকে ততটাও সহযোগিতা করেনি। ছবিতে শয়নে, স্বপনে, জাগরণে তিনি জাহ্নবীকে দেখেন! অথচ ভয়ঙ্কর বিপদ থেকে পালিয়ে কলকাতার এক চিলতে ঘরে তাঁদের লাল-নীল সংসারে প্রথম কাছে আসার, সঙ্গে থাকার পাগলামি বা উষ্ণতা কিছুই দেখা গেল না। বা দর্শককে আকর্ষণ করল না। দেখা গেল কাপড় কাচা, রান্না করা অফিস যাওয়ার রুটিন জীবন। কী আর করবেন ঈশান। তাঁদের এমন প্রাণবন্ত জুটি রোম্যান্টিক হয়েও হল না!
‘ধড়ক’ ছবিতে জাহ্নবী কপূর এবং ঈশান খাট্টা।
আসলে রোম্যান্সের মুখ এ ছবি ক্ষমতা দিয়ে বন্ধ করেছে। মেনে নিলাম।
কিন্তু সামাজিক প্রেক্ষাপট? ক্ষমতার রাজনীতি কতটা প্রেমের বিরুদ্ধে গেল? আর যদি বা বিরুদ্ধেই গেল তা হলে সেই বিরুদ্ধ ভয়াল মূর্তির ছায়া ছবি জুড়ে টেনশন তৈরি করল না কেন? বেশ কিছু সময় ছবির গল্প, আর তাঁর পরিচালক শশাঙ্ক খৈতান ছবিকে প্রেমের ছবির মোড়কে জিইয়ে রেখে দিলেন! কেন? যেন এখন নায়ক-নায়িকার প্রেম, গান, খুনসুটি চলুক। তারপর ভাবা যাবে। হঠাৎ একটা চুমুর দৃশ্য থেকে উদয়পুরের এই দুই নায়ক-নায়িকার জীবনে তোলপাড় আরম্ভ! শুরু হল হিন্দি ছবির টিপিক্যাল লড়াই। দুই পরিবারের সংঘাত আর ক্ষমতার জয়। পরিবার ছেড়ে নায়ক-নায়িকাকে পালাতে দেখে ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ মনে পড়ে গেল!
দ্বিতীয় পর্যায়ে ছবি দেখতে দেখতে অনেকেই, এমনকি আমিও মোবাইল দেখতে থাকি! গতানুগতিক দৃশ্য, বড্ড একঘেয়ে লাগে! মনে হয়, কিছু মিস করলেও অসুবিধে হয় না। ‘সাইরাট’-এ নায়ক-নায়িকা যখন পালিয়ে যায় সেই অসাধ্য সাধনের টেনশন যতটা রিয়েল ছিল, ‘ধড়ক’-এ এই ঘটনা ততটাই অবাস্তব লাগে। মোবাইল, ইন্টারনেটের যুগে উদয়পুরে থেকে কলকাতায় জাহ্নবী-ঈশানের সংসার, বাচ্চা সব কিছুর পর জাহ্নবীর বাবা আবার ক্ষেপে উঠলেন! এত দিন তিনি কী করছিলেন? কোথাও কোথাও চিত্রনাট্যের বুনোট এ ভাবেই শিথিল হতে থাকে।
আরও পড়ুন: ‘ধড়ক’-এর আগেই জাহ্নবীর থেকে এক পা এগিয়ে ঈশান, কী ভাবে?
এই ছবি নিয়ে অনেক প্রশ্ন করা যায়। তবে এই প্রশ্নের মধ্যে উদয়পুরের জল আর কলকাতার গঙ্গার জলের সন্ধে মাখা একাকিত্ব জাহ্নবীর বেঁচে থাকার বেদনায় মিশতে দেখে বেশ লাগে। ভাল লাগে ছবিতে ঈশানের বন্ধু অঙ্কিত বিস্ট আর শ্রীধর ওয়াস্টার। আর অবশ্যই অভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায়কে। দর্শক খানিক নড়েচড়ে বসে। তিনি যেন ছবির খোলা হাওয়া!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy