Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Movies

‘ময়ূরাক্ষী’ অস্কারে পাঠানো উচিত ছিল: শিবপ্রসাদ

অস্কারের জুরি হয়ে এক গুচ্ছ প্রাদেশিক ছবি দেখে এলেন পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।বাংলা ছবির সীমাবদ্ধতাও যেন নতুন করে চিনেছেন তিনি!

‘ময়ূরাক্ষী’ ছবির একটি দৃশ্য।-ছবি: ফাইল চিত্র।

‘ময়ূরাক্ষী’ ছবির একটি দৃশ্য।-ছবি: ফাইল চিত্র।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:৫২
Share: Save:

অস্কারের জুরি হয়ে এক গুচ্ছ প্রাদেশিক ছবি দেখে এলেন পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ‘ভয়ানকম’-এর পোস্টম্যান, ‘ন্যুড’ ছবির সেই মডেল...তাঁকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে! তামিল, মরাঠি, মালয়ালাম ছবি দেখতে দেখতে বাংলা ছবির সীমাবদ্ধতাও যেন নতুন করে চিনেছেন তিনি।

সকলেই জানেন তিনি মুম্বইতে। কিন্তু কেন?

নতুন ছবি? নতুন কোনও কাস্টিং?উত্তর মেলে না।

অবশেষে রহস্যের সমাধান হল।

অস্কারের জুরি হয়ে পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভারতে সমসাময়িক প্রাদেশিক ছবির সঙ্গে নিজের আলাপ করছিলেন মুম্বইতে।

‘‘অস্কারের জুরি হয়ে একসঙ্গে এত ধরনের প্রাদেশিক ছবি দেখা আমার জীবনের লাইফ টাইম এক্সপেরিয়েন্স।চোখের সামনে একটা দিগন্ত খুলে গেল। হাতে ক্যামেরা আর চোখে স্বপ্ন থাকলে মানুষ কী যে সৃষ্টি করতে পারে...!’’

জুরি বোর্ডের সদস্যরা।

আরও পড়ুন: ‘নিজের কাজের ধারা বদলাতে চেয়েছিলাম’​

আরও পড়ুন: নতুন সম্পর্কে জড়ালেন স্বস্তিকা?​

কলকাতা ফিরলেও তিনি ঘোরের মধ্যে আছেন।তাঁর মাথায় ঘুরছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সেই পোস্টম্যান যে গ্রামে গ্রামে যুদ্ধে যাওয়া তরতাজা যুবকের খবর এনে দিত পরিবারকে। পৌঁছে দিত মানি অর্ডার। তাঁকে গ্রামের মানুষ যত্ন করে খাওয়াতেন।কিন্তু এক সময় তিনি সেই ছেলেদের মানি অর্ডার নয়, মৃত্যুর খবর নিয়ে আসতে শুরু করলেন। তাঁকে গ্রামের মানুষ ভয় পেতে শুরু করল...

এ ভাবেই গল্প বলছেন বাংলা ছবির সেলুলয়েডের গল্পকার।মরাঠী ছবি ‘ন্যুড’দেখে তিনি মুগ্ধ। ‘‘যে সব মহিলা আর্ট কলেজে বা অন্য কোথাও ন্যুড ছবির মডেল, তাঁদের জীবনের বাস্তবটা কেমন? চমকে গেছি এই বিষয় দেখে! বার বার প্রমাণিত হচ্ছে, তারকা ছাড়া সাধারণ মানুষের আড়ম্বরহীন গল্প দর্শক সিনেমার মধ্যে দিয়ে দেখতে চাইছে। মানে ‘ভিলেজ রকস্টার’দেখে আমার মনে হচ্ছে, এ তো মুর্শিদাবাদের গল্প! বা তামিল ‘টু লেট’দেখে মনে হচ্ছে এ যেন কলকাতাকে দেখছি। প্রত্যেকটা সিনেমা আমায় শিক্ষিত করেছে। আহা!’’সিনেমার আবেগে ভাসতে ভাসতে শিবপ্রসাদ বলছেন, সবচেয়ে দামি কথা, ‘‘গল্প যত আঞ্চলিক হবে সিনেমা ততই আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছবে।’’ জুরি নয়, নিজেকে যেন সিনেমার ছাত্র হিসেবে গত সাতদিন ধরে রেখেছিলেন।

এই তন্ময়তার মধ্যেই একটা প্রশ্ন আসে।

বাঙালি পরিচালক, যিনি বেশ কিছু সময় ধরে বক্স অফিসে বাংলা ছবির ‘হিট’-এর মানদণ্ড নির্মাণ করছেন, তাঁর মনে হয়নি বাংলা ছবি এই প্রাদেশিক ছবির ভিড়ে কেন নেই?
‘‘আমার তো মনে হয় ‘ময়ূরাক্ষী’-কে অস্কারের জন্য পাঠানো উচিত ছিল। এক এক বার থাকে না। পঞ্জাবি ছবিও তো ছিল না। আমি জুরি হওয়ায় আমিও কোনও ছবি পাঠাতে পারিনি। প্রযোজকদের উচিত ছিল বাংলা ছবি পাঠানো।’’

শুধু সিনেমা নয়। ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে সিনেমা নিয়ে আদানপ্রদানে তিনি আপ্লুত।
‘‘আর রাজকুমার, নীলাকান্ত রেড্ডি রাজেন্দ্রবাবু, অনন্ত মহাদেবন, এঁদের সঙ্গে বাংলা ছবি নিয়েও আলোচনা হল। ওঁদেরও হলের সমস্যা আছে।’’
আসলে অস্কারের নিয়ম মেনে ছবি পাঠাতে গেলেই প্রায় দেড় লক্ষ টাকার খরচ। সেটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম মেকারদের পক্ষে খরচ করা কঠিন।এ বিষয়ে প্রযোজকদের এগিয়ে আসতে হবে। বলছেন শিবপ্রসাদ।

‘‘এই ‘ভিলেজ রকস্টার’, ‘টু লেট’—এই ধরনের ছবি তৈরি করতে গেলে পশ্চিমবঙ্গে গিল্ডের নিয়ম কিন্তু ভাঙতে হবে। আগে থেকে যদি নিয়ম চাপানো হয়, এত জন টেকনিশিয়ানকে নিতেই হবে। তাহলে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম মেকাররা তো ছবি বানাতে পারবে না। ভয়ে পিছিয়ে যাবে।একটা ছবির বাজেটেই যদি তিরিশ লক্ষ টাকা লাগে, তাহলে চলবে কী করে?’’পরিচালক নয়, একজন প্রযোজক যেন কথা বলে উঠলেন।নিয়মের কড়াকড়িতে ক্যামেরা হাতে আনকোরা স্বপ্নগুলো না মরে যায়, আশঙ্কাশিবপ্রসাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE