Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

এই বেশ ভাল আছি

প্রিয়ঙ্কা সরকার! এই মুহূর্তে ছেলে সহজকে নিয়ে হ্যাপিলি সিঙ্গল। তিনি অ্যাম্বিশাস। জীবনের কাছে তাঁর চাওয়া-পাওয়া খুব পরিষ্কার। প্রিয়ঙ্কা সরকার! এই মুহূর্তে ছেলে সহজকে নিয়ে হ্যাপিলি সিঙ্গল। তিনি অ্যাম্বিশাস। জীবনের কাছে তাঁর চাওয়া-পাওয়া খুব পরিষ্কার।

পারমিতা সাহা
শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ০০:৪৭
Share: Save:

কামালগাজির ফ্ল্যাটে বেল বাজাতেই হাসিমুখে দরজা খুললেন প্রিয়ঙ্কা। নতুন অতিথি দেখেই আলাপ করতে ছুটে এল ছোট্ট সহজ। এসেই আমাকে জানিয়ে দিল, মামমামের আজ ছুটি। তাই সে মায়ের সঙ্গে হেয়ার কাট করাতে যাবে। তার পর আমার দিকে ধেয়ে এল একগুচ্ছ ‘কঠিন’ প্রশ্ন! আঙ্কল কেন আমার সঙ্গে আসেনি, আমি কি চকোলেট খাই... ইত্যাদি-ইত্যাদি। সে সবের উত্তর দিয়ে, শুরু হল আমার প্রশ্ন করার পালা, প্রিয়ঙ্কাকে...

প্র: অনেকটা ওজন ঝরিয়ে ফেলেছেন দেখছি!

উ: হ্যাঁ, সেটা শুধু ওয়র্কআউট নয়, ক্রেডিট গোজ টু সহজ!

প্র: ফ্ল্যাটও তো খুব সুন্দর করে গুছিয়েছেন। নিজে সাজিয়েছেন?

উ: হ্যাঁ, নিজেই। অনলাইন শপিং (হাসতে-হাসতে)। আমার কাছে প্রায়োরিটি ছিল, চোট লাগতে পারে ঘরে এমন জিনিস না রাখা, যতটা সম্ভব ফ্রি স্পেস রাখা। আর আমার প্রচুর জিনিস, তাই স্টোরেজটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট। বসার বেঞ্চ, সোফার নীচ... সব জায়গায় স্টোরেজ।

প্র: আপনার বইয়ের কালেকশনও খুব ভাল দেখছি!

উ: হ্যাঁ। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হুমায়ুন আহমেদ... এঁরা আমার বরাবরের প্রিয় লেখক। আসলে আমি খুব ঘরকুনো। কাজ না থাকলে বাড়িতে। তখন গান শোনা, বই পড়া... এখন তো ছেলের জন্য ‘উইজার্ড অফ ওজ’ পড়ছি।

আরও পড়ুন: বিবি হয়ে ডেবিউ করলাম নেগেটিভে

প্র: কেরিয়ার, ছেলে, নতুন ফ্ল্যাট... সব মিলিয়ে প্রিয়ঙ্কা দারুণ ব্যস্ত!

উ: হ্যাঁ, ‘চ্যাম্প’-এ আমার ‘সাথী’ চরিত্রটার কিন্তু সবাই প্রশংসা করেছে! দেবের প্রোডাকশনের ‘ককপিট’-এও আমি আছি। গ্ল্যামারাস এক নায়িকার ভূমিকায়। এ ছাড়াও কয়েকটা ইন্টারেস্টিং ছবিও করছি। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ছায়া ও ছবি’, সায়ন্তন ঘোষালের ‘যকের ধন’, সুজিত মণ্ডলের ‘অন্বেষণ’... সো আই অ্যাম ভেরি হ্যাপি।

প্র: যে ধরনের কমার্শিয়াল ছবি দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন, তেমন কোনও ছবিতে আপনাকে দেখা যাচ্ছে না। সেটা কি পাচ্ছেন না, না কি নিজের চয়েস?

উ: সত্যি বলতে গেলে, হার্ডকোর কমার্শিয়াল ছবির অফার আমি এখন পাই না। বাণিজ্যিক ছবি করলে, তেমন ছবিই করব যেখানে অপূর্ব লোকেশনে আমাকে গ্ল্যামারাস দেখানোটা তারা অ্যাফোর্ড করতে পারবে। তা না হলে কনশাসলি আমি যে কাজগুলো করছি, যেখানে আমার ওই ইমেজটা পোর্ট্রে করার দরকার নেই, চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ, সেই কাজগুলোই করব।

প্র: এ শহরের এক বড় প্রযোজক সংস্থার সঙ্গে এক সময় আপনার মনোমালিন্য হয়েছিল, সেটাও কি কাজ না পাওয়ার একটা কারণ?

উ: আসলে ২০০৮ এ ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ যখন রিলিজ করে, তখন তো সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমা ছিল না। তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যেত না। ওঁরা আমার প্রেম গোপন রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি ওঁদের কথা মেনে নিইনি। ওঁদের সেটা খারাপ লাগে। আমি যখন প্রেম করেছি লুকোছাপা করিনি এবং যখন তা থেকে বেরিয়ে এসেছি, তখনও... ‘চিরদিনই...’ যখন রিলিজ করে, তখন কিন্তু একটা ট্রানজিশনের সময়। একটা কমার্শিয়াল ছবি যে এতটা ব্যবসা করতে পারে, সেটা আমি বা রাহুল কেউই বুঝতে পারিনি। তখনও কিন্তু স্বপন সাহা, অনুপ সেনগুপ্ত ছবি করছেন, বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত ছবি করছেন। ওঁর ছবিতে কাজ করেছি। তখন সেই কাজগুলো করতে চেয়েছিলাম, যেগুলো একটু অন্য ধরনের চরিত্র। তার পর এই সব কাজ করতে গিয়ে কমার্শিয়াল ছবি থেকে কখন যেন আমি কেমন আলাদা হয়ে গেলাম।

প্র: কেরিয়ার, সিঙ্গল মাদার হিসেবে সন্তান মানুষ করা... জীবন কি কখনও বড্ড কঠিন মনে হয়?

উ: কঠিন বলব না। তবে খানিকটা এগজসটিং তো বটেই। নিজের জন্য সময় পাই না। কলটাইম না থাকলেও রোজ ছ’টায় উঠতে হয় সহজের স্কুলের জন্য, ওকে রেডি করতে হয়। দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা বা লেট নাইট করাটা এখন ফার ফেচড লাক্সারি। তবে হেল্‌প পাই। রাহুলের যখন শ্যুটিং থাকে না তখন বা শ্যুটিংয়ের পর টাইম পেলে সহজের সঙ্গে দেখা করে যায়। রাহুলকে আমি নতুন একটা দায়িত্ব দিয়েছি, সহজকে বর্ণমালা শেখানোর। তখন আমি একটু রিল্যাক্স করতে পারি। আসলে এখন আমি অন্য কোনও ভাবে জীবনটা ভাবতে পারি না। এক বছর আগেও যে রকম ছিলাম, কেমন যেন আগের জন্মের কথা মনে হয়।

প্র: একা থাকার অদ্ভুত স্বাধীনতা আছে!

উ: একদমই তাই। আগে যে স্বাধীনতা ছিল না, তা নয়। তবে এখন কাজ আর সহজ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে হয় না। নিজের মতো রান্নাবান্না, থাকা... সপ্তাহে এক দিন ওকে বিজয়গড়ে পাঠিয়ে দিই।

প্র: একা সংসার সামলানোর কোনও প্রেশার নেই?

উ: হ্যাঁ, দু’বছর আগে আমার বাড়ির ইএমআই ছিল না। তার জন্য আমাকে আরও বেশি কাজ করতে হচ্ছে। তবে আমি নিজের সম্পর্কে একটা কথা বুঝে গিয়েছি, আমি প্রচণ্ড অ্যাম্বিশাস। আগে বাড়ির লোন শোধ করতে চাই। কামালগাজির কমপ্লেক্সের এই ফ্ল্যাট নিয়ে ক’দিন খুশি থাকব, জানি না। ক’দিন পর একটা পেন্টহাউসের শখ হতেই পারে! তখন সেটা আর্ন করতে হবে। কারও সঙ্গে থাকলে আমার অ্যাম্বিশনটা অন্য কারও ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হতে পারে।

প্র: জীবনে কোনও দুঃখ আছে?

উ: ভাবতে বসলে মনে হয়, কেন ক্লাস টুয়েলভের পর আর পড়লাম না... সতেরো বছর বয়সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা... নিজে মা হয়ে বুঝতে পারি, বাবা-মায়ের সঙ্গে অন্যায় করেছিলাম। ওটা না করলেও হতো। কতটা কনসার্নের জায়গা থেকে তারা বারণ করেছিল!

প্র: আপনার পরের লক্ষ্য কী?

উ: আলিয়া ভট্টের ‘উড়তা পঞ্জাব’ ছবির ওই চরিত্রটা বা ‘বিসর্জন’-এ জয়াদির চরিত্র— আমি জানি না, কত দিন ওয়র্কশপ করে ওই রকম কাজ করতে পারব। নানা ধরনের চরিত্র করব, কাজ করব... আমার অ্যাম্বিশন এই দিকে। আচ্ছা, একটা কথা বলুন তো, সেই সময় যদি টানা কয়েকটা ছবি করতাম, আমার জীবনে আলাদা কী হত? শুভশ্রী, মিমি বা সায়ন্তিকা যারা কমার্শিয়াল ছবি করছে, তারা বা আমার মধ্যে ডিফারেন্সটা কোথায়? আমার সঙ্গে চারটে বডিগার্ড নেই? আমি চাই না। ওরাও কাজ নিয়ে ভাবছে, যেটা আমিও করছি। বরং আমার জীবনে খুব সুন্দর কিছু এক্সপিরিয়েন্স আছে।

প্র: যেমন?

উ: আমার সংসার করার খুব ইচ্ছে ছোট থেকেই ছিল। আমার যখন ছেলে হয়, আমার স্কুলের বান্ধবী বলেছিল, দ্যাখ, ওর স্ট্রেট হেয়ার, ঠিক তুই যেমনটা চেয়েছিলি। যখন বিজয়গড়ে থাকতাম, তখন অন্য রকম লাইফস্টাইল ছিল। নিজের হাতে বাজার করেছি, সেটা এখনও করি। তবে জানি না, পাঁচ বছর বাদে আমার চাওয়াগুলো একই রকম থাকবে কি না!

প্র: আপনি কি সত্যিই সংসারী?

উ: (একটু ভেবে) নাহ, আমি সংসারী নই। আমার নিজেকে সংসারী ভাবতে ভাল লাগত। এটা একটা ফেজ ছিল। আমি ভীষণ মুডি, কল্পনাপ্রবণ, জেদি এবং খুব তাড়াতাড়ি বোর হয়ে যাই। এগুলো আমার দোষ। কিন্তু আমি এগুলোই পছন্দ করি। যখন বিয়ে করেছিলাম, তখন আমার স্কুলের বান্ধবীরা যে কতটা অবাক হয়েছিল, ভাবতে পারবেন না। আমি স্কুল লাইফে একদম অন্য রকম ছিলাম।

প্র: কী রকম ছিলেন?

উ: চূড়ান্ত অ্যাম্বিশাস। প্রেমের জন্য সময় নেই। আসলে জীবনে খুব কম বিষয়েই আমি শিয়োর।

প্র: এখন কী ব্যাপারে শিয়োর?

উ: শুধু সহজ। একমাত্র। ওর প্রতি আমি কী রকম থাকব, সেটা আমি জানি। তাই মা হওয়াটা আমার জন্য খুব ইম্পর্ট্যান্ট ছিল।

প্র: নতুন করে আবার জীবন শুরু করতে চান?

উ: এখন আমি টু বিজি টু থিঙ্ক অ্যাবাউট এনিথিং। তবে আমি জানি স্বাভাবিক ভাবেই কারও প্রেমে পড়ব। সম্পর্ক হবে। এটাই জী বন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE