Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Darshana Banik

Darshana Banik: স্কুলে পড়ার সময়ে বিয়ের সম্বন্ধ এসেছিল, এক কথায় নাকচ করেন বাবা: স্মৃতিচারণ দর্শনার

আনন্দবাজার অনলাইনে বাবার কথা লিখলেন মাতৃহারা দর্শনা বণিক।

বাবা তারণ বণিকের সঙ্গে দর্শনা

বাবা তারণ বণিকের সঙ্গে দর্শনা

দর্শনা বণিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২১ ২৩:৫০
Share: Save:

অপূর্ব-র লেখার বড় শখ ছিল। কাশীতে সে এক বার তার স্কুলের পত্রিকায় লেখা জমা দিয়েছিল। কিন্তু লেখা ছাপাতে গেলে কিছু টাকা লাগবে। তখন হরিহর অসুস্থ। কিন্তু তবু ছেলের মুখে হাসি দেখতে তিনি সর্বজয়াকে আড়াল করে অনেক কষ্টে সঞ্চয় করা ৪টে টাকা অপুকে দেয়। অপু খুশি মনে বলে, ছাপা বেরোলে তোমায় দেখাব বাবা।

আমার কাছেও (আমার এবং দাদার কাছে) আমার বাবা এ রকমই। আমার নানা আবদার ছোট বেলা থেকে মেটানো যেন বাবার অভ্যেস। আমার বই পড়তে শেখা, রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, আঁকতে শেখা সবই প্রথম বাবার কাছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহে নতুন গল্পের বই এনে দিয়ে বাবা ছোট ২ লাইন একটা লেখা লিখে দিতেন। যা আজও থেকে গিয়েছে। বাবার সেই লেখা আজও অনেক স্মৃতি মনে পড়িয়ে দেয়।

দাদা দেবপ্রিয় বণিক, বাবা তারক বণিক এবং বৌদি শ্রীতমা চক্রবর্তী বণিকের সঙ্গে দর্শনা

দাদা দেবপ্রিয় বণিক, বাবা তারক বণিক এবং বৌদি শ্রীতমা চক্রবর্তী বণিকের সঙ্গে দর্শনা

মনে পড়ে, এক বার এক শিক্ষিকার কাছে পড়তে গিয়েছিলাম। তিনি আবার কড়া ধাতের মানুষ। আর আমি ছিলাম ভীষণ মেজাজি। ২-৩ দিন পরেই এক দিন ক্লাস চলাকালীন মনে হল, আর নয়। বললাম, আমায় বেরোতে হবে ম্যাম। বাড়িতে একটু তাড়াতাড়ি ফেরা দরকার। ম্যাম আমায় ছুটি দিয়ে দিলেন। এ দিকে গাড়ি নিয়ে বাবা আমায় নিতে আসতেন। ফলে, সঙ্গে টাকাপয়সা কিছুই থাকত না। ছুটি পেয়ে মাথায় হাত, কী করে বাড়ি ফিরব? আমি ওই শিক্ষিকারই বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। যথা সময়ে পড়ানো শেষ হল। উল্টো দিক থেকে দেখি বাবাও আসছেন। ম্যাম যাতে কিছু বলতে না পারেন তার জন্য আগে ভাগেই আমি দৌড়ে বাবার কাছে পৌঁছে গিয়েছি। কিন্তু কপাল দেখুন, বাবা আমায় নিয়ে সেই গুটিগুটি পায়ে হাজির শিক্ষিকার কাছে! ম্যাম তো বাবার কাছে আমার নামে প্রচণ্ড নালিশ করলেন। সব শুনে আমায় নিয়ে গাড়িতে উঠেই বাবার প্রথম কথা, ওঁর কাছে আর তোকে পড়তে হবে না। তোর যে ভাল লাগছিল না শিক্ষিকাকে, সেটা বলবি তো!

বই উপহার দিলে দর্শনার বাবা এমন করেই লিখে দিতেন

বই উপহার দিলে দর্শনার বাবা এমন করেই লিখে দিতেন

এর পর আরও ছোট বেলায় ফিরে গেলে মনে পড়ে, প্রতি রবিবার বাবার গল্প বলে ঘুম পাড়ানোর দিনগুলো। মনে পড়ে, কখনও এসপ্ল্যানেড নিয়ে যাওয়া, কলকাতার সমস্ত দ্রষ্টব্য জায়গাগুলো ঘুরিয়ে দেখানো— সব কিছু। আমি প্রথম সিনেমা দেখেছি বাবার সঙ্গে! বইমেলাতেও প্রতি বছর নিয়ে যেতেন বাবা। শীতকাল এলেই নিয়ম করে আমরা বাবার সঙ্গে সার্কাস দেখতে যেতাম।

বাবার সঙ্গে অভিনেত্রী

বাবার সঙ্গে অভিনেত্রী

অভিনয় দুনিয়ায় পা রাখার পর একটা প্রশ্ন ঘুরে ফিরে শুনতে হয়েছে, এই কাজে মা-বাবার সমর্থন ছিল? এখন মনে হয় আমার বাবা নিজেকে নিজে চেনার থেকে আমায় বেশি চিনেছিল। বাবা যখন আমায় জিজ্ঞেস করতেন কী হতে চাই? আমার ২টো পছন্দের কথা বাবাকে বলতাম। হয় শিক্ষিকা হব নয় শিল্পী! মা শুনে চিন্তিত হতেন। বাবা কিন্তু খুব খুশি। কলেজে ওঠার পর আমার পছন্দ গেল বদলে। একটু বাস্তবসম্মত চিন্তা আস্তে আস্তে মাথায় ভিড় করছে। সেই জায়গা থেকে বাবাকে জানালাম বিমান সেবিকা হব। বাবা সে দিন বলেছিলেন, কেন গতে বাঁধা জীবন বাঁচবি? ঘুরে বেড়া। দুনিয়া দেখ। নিজের মতো করে ভাব। নিজের ইচ্ছেয় বাঁচ। সবাই যে পথে হাঁটে সেই পথে না-ই বা হাঁটলি!

দর্শনাকে বাবার উপহার

দর্শনাকে বাবার উপহার

এই প্রসঙ্গে বলি, আমার বেড়ানো প্রীতি কিন্তু বাবা-ই তৈরি করে দিয়েছেন। বাবার মস্ত শখ দেশ দেখে বেড়ানো। এই বিষয়ে বাবা আমার আর দাদার থেকেও বেশি উৎসাহী। আমি প্রিয় শহর লন্ডন। বাবা আমাদের সেখানে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর আমায় বলেছিলেন, আমার এই শখ অন্তত তোর মধ্যে বেঁচে থাক। বার বার এখানে ঘুরতে আসিস। আমি জানি, তুই অনেক সুযোগ পাবি। বাবার এই উৎসাহ আজীবন মনে থাকবে।

আমি তখন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আমার সম্বন্ধ এসেছে। পাত্র পক্ষের কথায়, বিয়ে পরে হবে। এখন কথা হয়ে থাক। গড়পরতা বাঙালি ঘরে যা হয় আর কি। মা-ও নিমরাজি। ইচ্ছে, আমি ওঁদের মুখোমুখি বসি। বাবা শুনেই এক কথায় সে দিন নাকচ করে দিয়েছিলেন। আসলে আমায় নিয়ে বাবার অনেক আশা, অনেক স্বপ্ন। তাই বাবা চাননি সাত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে সেই স্বপ্নগুলোর অপমৃত্যু ঘটাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Darshana Banik Fathers Day 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE