Advertisement
E-Paper

নুন-মিষ্টি কম, জমল না খিচুড়ি

জন ফাভরোর ‘শেফ’ (২০১৪)-এর অরিজিনাল ছবিটার আদলে বানানো এই হিন্দি রিমেকে রোশন কালরা (সেফ আলি খান) ‘চাঁদনি চক দি পুত্তর’, বড় হয়েছে চাট গলির আলু টিক্কি, চাটনি আর ছোলা ভাটুরা খেয়ে।

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৭ ০৮:৫০

ধরুন আপনার বেশ চনমনে খিদে রয়েছে, সামনে সারি সারি রেকাবিতে থরে থরে সাজানো রয়েছে লোভনীয় খাবার। অথচ খেতে গিয়ে দেখলেন কোনও পদে নুন নেই, কোথাও ঝাল কম, কোথাও বা মিষ্টির অভাব। রাজা কৃষ্ণ মেননের ‘শেফ’ দেখলে ঠিক এ রকমটাই মনে হবে। মানে প্রচুর কিছু উপাদান ছিল, তাকে কষিয়ে রান্নার সুযোগও ছিল। কিন্তু পরিচালকের অগোছালো নির্দেশনা আর চিত্রনাট্যের অবহেলাতেই গোল খেয়েছে ‘শেফ’।

জন ফাভরোর ‘শেফ’ (২০১৪)-এর অরিজিনাল ছবিটার আদলে বানানো এই হিন্দি রিমেকে রোশন কালরা (সেফ আলি খান) ‘চাঁদনি চক দি পুত্তর’, বড় হয়েছে চাট গলির আলু টিক্কি, চাটনি আর ছোলা ভাটুরা খেয়ে। বাবার স্বপ্নকে তোয়াক্কা না করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় সে। অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে থেকে, খেয়ে, রান্না শিখে পরে পাড়ি দেয় সোজা নিউ ইয়র্কে। সেখানে আবার সে মিশেলিন স্টারওয়ালা শেফ, যাকে বলে রান্নার জগতের অস্কার তার পকেটে। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও কেউ যদি রোশনের রাঁধা খাবার খেয়ে সমালোচনা করে, মাথা গরম করে রাঁধুনি লক্ষ্মীস্বরূপ কাস্টমারকেই মারধর করে বসে। তার পর চাকরি খুইয়ে বিদেশ থেকে সোজা এ দেশের শরণাপন্ন হয়। কোচিতে রয়েছে রোশনের প্রাক্তন স্ত্রী রাধা (পদ্মপ্রিয়া জানকীরামন) আর ছেলে আরমান (স্বর কাম্বলে)। হাজার মানসিক টানাপড়েনের পর রোশন একটা পুরনো দোতলা বাসের সংস্করণ করে চালু করে ফুড ট্রাক ‘রাস্তা ক্যাফে’। নিউ ইয়র্ক থেকে যোগ দেয় রোশনের সাগরেদ নজরুল (চন্দন রায় সান্যাল)। তার পর রমরমিয়ে সেই ট্রাকে করে রোশন, নজরুল আর আরমান মিলে বিক্রি করে রোশনের আবিষ্কার রোৎজা, মানে রুটিওয়ালা পিৎজা।

ফুডপর্ন বা ফুডগ্যাজম নিয়ে ছবি বানানো নতুন নয়। বরং রান্নার গল্প নিয়ে বহু ভাল ছবি তৈরি হয়েছে। ফলে খাদ্যরসিক সিনেমাপ্রেমীদের ‘শেফ’ নিয়ে প্রত্যাশাটা যে অনেকটাই থাকবে, এ আর নতুন কী! ছবির প্রথমার্ধ জুড়ে রোশন শুধুই রেঁধে গিয়েছে পাস্তা। তা-ও আবার শুধু কার্ভিং ফর্ক দিয়ে পাস্তা তুলে কালো প্লেটে রাখা। আর পরের অর্ধ জুড়ে রোৎজা। ভারতীয় রান্নাবান্নার উপকরণ আর রঙের অভাব নেই মোটেও। অথচ মেননের এই ছবিটা ক্যামেরার কাজ আর রান্নার কায়দায় ‘জুলি অ্যান্ড জুলিয়া’, ‘দ্য লাঞ্চবক্স’, ‘স্ট্যানলি কা ডাব্বা’ বা ‘হান্ড্রেড ফুট জার্নি’র ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারল না।

‘শেফ’-এ একজন শেফের গল্প কম, বাবা-ছেলে কিংবা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের টানাপড়েনের গল্প অনেক বেশি। সেফ সুদক্ষ ভাবে নিজেকে একজন অসুরক্ষিত, স্বপ্ন আর বাস্তবের দোলাচলের মাঝে অসহায় মানুষ হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছেন। নবাগত স্বর আর পদ্মপ্রিয়া ঠিকঠাক। আর চন্দন তো বরাবরই ছোটা প্যাকেটে বড়া ধামাল। তবে পাঁচ মিনিটের স্ক্রিন প্রেজেন্সে কেল্লা মাত করেছেন মিলিন্দ সোমন। কাঁচা-পাকা চুলে, দক্ষিণ ভারতীয় লুঙ্গিতে অমন সুদর্শন চেহারার মিলিন্দের ডায়লগ ডেলিভারিতে মুগ্ধ হতে হয় বইকী!

রোশনের মুখে বাংলাদেশি নজরুলকে টিটকিরি মেরে ‘তার পার করকে, গোলিয়া খাতে হুয়ে আয়ে হো?’র মতো ডায়লগের ধৃষ্টতা দেখে অবাক হতে হয়! রীতেশ শাহ, সুরেশ নায়ার আর রাজা কৃষ্ণ নায়ারের ডায়লগ লেখার প্রতি অনেক যত্নশীল হওয়া উচিত ছিল।

ভাল রান্না চাখার জন্য আলাদা করে দারুচিনি, গোলমরিচ বা এলাচের স্বাদ বোঝার দরকার হয় না। শুধু ঠিকঠাক টক-ঝাল-মিষ্টি বোঝাই যথেষ্ট হয়। ছবিতে কোচি থেকে দিল্লির সফর, সেফের অভিনয় থাকা সত্ত্বেও পরিচালকের ব্যর্থতায় শেফের রান্না মুখে রুচি আনল না।

Film review Saif Ali Khan box office Bollywood Hindi Film
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy