Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

ভূস্বর্গের গ্রামবাসীরাই হয়ে গেলেন সিনেমার কুশীলব

গত দু’বছরে কিন্তু কাশ্মীরের মাটিতেই হাফ উইডোদের নিয়ে দু’দু’টি ছবি  তৈরি হয়েছে। 

ট্যাক্সিচালকের ভূমিকায় বিলাল। ছবি: পরিচালকের সৌজন্যে

ট্যাক্সিচালকের ভূমিকায় বিলাল। ছবি: পরিচালকের সৌজন্যে

জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৫০
Share: Save:

অংশত, কার্যত স্বামীহীন। হাফ উইডো। শব্দটা কাশ্মীর উপত্যকায় খুব চেনা। কখনও সেনাবাহিনী, কখনও জঙ্গিরা তুলে নিয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর খোঁজ নেই, স্বামী বেঁচে আছেন না মারা গিয়েছেন জানা নেই— এমন মহিলাদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে শব্দটা। বিশাল ভরদ্বাজ-এর ‘হায়দার’ ছবিতে এর ব্যবহার আমদর্শককে সচকিত করেছিল। গত দু’বছরে কিন্তু কাশ্মীরের মাটিতেই হাফ উইডোদের নিয়ে দু’দু’টি ছবি তৈরি হয়েছে।

গত বছর কাশ্মীরি পরিচালক দানিশ রেনজু তৈরি করেন ছবি, ‘হাফ উইডো’। সেখানে কাশ্মীরি অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কাজ করেন। আর এ বছর পরিচালক প্রবীণ মোরছালে-র ‘উইডো অব সাইলেন্স’-এ অজস্র চরিত্রে অভিনয় করেছেন কাশ্মীরের একেবারে সাধারণ মানুষজন। কেউ বাসচালক, কেউ চায়ের দোকানি, কেউ বা ওখানেই খেতখামার করা সাধারণ গ্রামবাসী।

জাতীয় পুরস্কারজয়ী প্রবীণ সম্প্রতি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে এসেছিলেন তাঁর ছবি দেখাতে। সেরা ভারতীয় ছবির পুরস্কার জিতেছে সেটি। কাশ্মীরে গিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের নিয়ে শুটিং করার অভিজ্ঞতার কথা উৎসবের ফাঁকেই শোনা গেল প্রবীণের মুখ থেকে।

প্রবীণ এর আগে একটি ছবি করেছিলেন লাদাখ উপত্যকায়। সেখানেও স্থানীয়রাই ছিলেন অভিনেতা-অভিনেত্রী। সে ছবি, ‘ওয়াকিং উইথ দ্য উইন্ড’ তিনটি জাতীয় পুরস্কার জেতে। পরিচালক বলেন, ‘‘এর পরে কাশ্মীরের হাফ উইডোদের কাহিনি নিয়ে ছবি করার কথা যখন ভাবলাম গত বছর, আগের বারের চেনা ড্রাইভারই নিয়ে গেলেন বারামুলা, পুলওয়ামার গ্রামগুলো ঘুরিয়ে দেখাতে। ছবির অনেকটা রসদ এসেছে সেখান থেকেই।’’ তবে শুটিং করার জন্য তুলনামূলক ভাবে ‘শান্ত’ এলাকাই বেছে নেওয়া হল। দ্রাস আর সোনমার্গের মাঝামাঝি এলাকার একটা গ্রামে প্রবীণের ইউনিট তাদের ছাউনি ফেলল।

ছবিতে দু’টি প্রধান চরিত্র ছাড়া অভিনয়ে প্রায় সকলেই অপেশাদার এবং স্থানীয় মানুষজন। তাঁরা নিজেদেরই পোশাকআশাক পরে অভিনয় করেছেন। গ্রামেরই বাড়িতে, গ্রাম থেকেই সংগ্রহ করা জিনিসপত্র দিয়ে সেট সাজানো হয়েছে। ইউনিটের জন্য চা-জলখাবার গ্রামের মানুষই জোগান দিয়েছেন। ছবির বুড়ি দাদি, কিশোরী মেয়েটি, ওঁরা সকলে ওই গ্রামে থাকেন। ছবিতে এক বৃদ্ধাকে দেখা যায়, যাঁর ছেলে কার্গিলের যুদ্ধে মারা গিয়েছে। ওই বৃদ্ধা বাস্তবে দ্রাসের বাসিন্দা। একটা রুটির দোকান চালান। ট্যাক্সিচালকের চরিত্রে যাঁকে দেখা যায়, বাস্তবে তাঁর নাম বিলাল। শ্রীনগর-লেহ সড়কে বাস চালান তিনি।

বিলাল বাস্তবেও ভারী কাব্যময় ভাষায় কথা বলেন। ওঁর কথা বলার ধরনই অনুসরণ করা হয়েছে ছবিতে। সেখানে গাড়ির তল্লাশি নিতে আসা সেনার সঙ্গে গল্প জুড়ে দেন তিনি। ফুলের ঝাঁকাও বাদ যায় না তল্লাশি থেকে। ট্যাক্সিচালক বলেন, ‘‘ফুলগুলোকে বন্দুক দিয়ে খুঁচিয়ো না। ফুলেদের মন বদলে যেতে পারে!’’

শুটিং করতে গিয়ে অসুবিধা হয়নি? প্রবীণ জানান, সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েই শুটিং হয়েছে। প্রশাসন বলেছিল, সামরিক এলাকা এড়িয়ে শুটিং করলে সমস্যা নেই। প্রবীণ যোগ করেন, ‘‘আমি পুলিশি নিরাপত্তা নিই না। পুলিশ নিয়ে গ্রামে ঢুকলেই পরিবেশ অন্য রকম হয়ে যেতে পারে। সাধারণ মানুষের মতো গিয়ে শুটিং করি। কাশ্মীরের মানুষের আতিথেয়তার তুলনা হয় না।‘’

জানুয়ারি মাসে পরের ছবির শুটিংও কাশ্মীরেই হবে। প্রবল তুষারপাতের মধ্যে কবর খোঁড়ার কাজ করেন যাঁরা, তাঁদের নিয়ে গল্প। এমন বেশ কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতাই কাহিনির জন্ম দিয়েছে। তাঁরা নিজেদের সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের কাজ হল মৃত্যুকে তার মর্যাদা দেওয়া।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

film Jammu and Kashmir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE