Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Hiran Chatterjee

Hiran: আমাদের টালির ছাদ চুঁইয়ে জল, বিনা চিকিৎসায় বাবা মারা যান হাসপাতালের মেঝেতেই: হিরণ

‘‘যে এত কাছ থেকে জীবনের কালো দিক দেখেছে তাকে জাগতিক কোনও অনুভূতিই আর স্পর্শ করে না।’’

জীবনের লড়াইয়ের কথা বললেন হিরণ।

জীবনের লড়াইয়ের কথা বললেন হিরণ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২২ ১০:৫৮
Share: Save:

আনন্দবাজার অনলাইনের শনিবাসরীয় ‘অ-জানাকথা’ যেন জীবনস্মৃতির মঞ্চ। বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে তারকারা আসেন। মেলে ধরেন নিজেদের। প্রাণবন্ত করে যান লাইভ আড্ডা। এ সপ্তাহের অতিথি তারকা-বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়ও তার ব্যতিক্রম নন।

সদ্য রাজ্য বিজেপি-র হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই তাই চর্চায় হিরণ। শনিবারের আড্ডায় রাজনীতি যেমন ছিল তেমনই অর্গলহীন হয়েছিল তাঁর জমে থাকা কথার ঝাঁপি।


রাজনীতিকের দীর্ঘদিনের অনুযোগ, যত দিন অভিনয়ে ছিলেন শুনতে হয়েছে- শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে থাকেন। কোটি টাকার মালিক। অভাব কী বুঝবেন! আবার রাজনীতিতে এসে নির্বাচনে জিতে বিধায়ক হয়ে শুনতে হয়, নিশ্চয়ই কোনও ধান্দা আছে। তাই দল বদলে অন্য রঙে রঙিন! জমে থাকা ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসতেই এক অনুরাগীর কৌতূহল, বাস্তবের হিরণ তা হলে কেমন? কী করেই বা সামলান সব কিছু?

নিজের অনুযোগের মতোই অকপট খড়গপুরের তারকা-বিধায়ক। তাঁর দাবি, তিনি একই সঙ্গে নিন্দিত এবং নন্দিত হয়েও বেসামাল হন না কখনওই। কারণ, তিনি মাটির কাছ থেকে উঠে আসা মানুষ। কথায় কথায় ফাঁস হয় নায়কের জীবন-বৃত্তান্ত। যা রুপোলি পর্দাকেও হার মানায়। হিরণের বাড়ি উলুবেড়িয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে। অভিনেতা নিজ মুখে বলেছেন, ‘‘মাটির বাড়ির টালির ছাদের ঘরে মানুষ। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। বর্ষা এলেই খুব খুশি হতাম। কারণ, ভাঙা টালি চুঁইয়ে অঝোরে জল ঝরত। ঘর ভাসত বৃষ্টিতে। আমায় আর পড়তে হত না!’’ শুধু তা-ই নয়। এক হাঁটু কাদা ভেঙে স্কুলে যেতেন রোজ। সেখানে টেবিল, চেয়ার, বেঞ্চ ছিল না! চাটাই পেতে মাটিতে পড়তে বসত ছাত্ররা। তার পরেও তিনি দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি বার প্রথম হয়েছেন।

এর পরেই অভাবের আরও ভয়াবহ ছবি নায়ক তুলে ধরেছেন লাইভ আড্ডায়। বলছেন ‘‘অর্থের অভাবে অসুস্থ বাবার চিকিৎসা করাতে পারিনি। ১৯৯৭-এ বিনা চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন বাবা। তার তিন মাসের মাথায় মা-ও চির-বিদায় নেন। আমি অসহায়ের মতো শুধু দেখেছি।’’ এর পরেই হিরণ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটত। সবার থেকে নিজেকে সরিয়ে বদ্ধ ঘরে যন্ত্রণার উপশম খুঁজতেন। এক এক সময়ে সোজা হয়ে হাঁটার শক্তিও থাকত না তাঁর।

সেই সময়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে স্নাতক স্তরে ভর্তি হয়েছিলেন হিরণ। মানসিক পরিস্থিতির কারণে প্রথম বর্ষের পরীক্ষার পর আর পড়তে পারেননি। বদলে তাঁর প্রিয় রাখালদার হাত ধরে চলে এসেছিলেন রাজা রামমোহন রায় রোডের নগেন্দ্র মঠে। সেখানে তিন বছর ব্রহ্মচর্য আশ্রমও পালন করেছিলেন। কিছুটা মানসিক স্বস্তি পেয়ে ফিরে যান বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফের শুরু করেন পড়াশোনা। অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে এক সঙ্গে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দেন। এবং কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। অভিনেতা-বিধায়কের যুক্তি, যে মানুষ এত কাছে থেকে জীবনের কালো দিক দেখেছে তাকে জাগতিক কোনও অনুভূতিই আর স্পর্শ করে না। তার কাছে জীবন শুধুই রণক্ষেত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hiran Chatterjee Actor Bollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE