Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Bhaswar Chatterjee

কলকাতার কাশ্মীরি বন্ধুকে দুর্গাপুজোর নিমন্ত্রণ জানাতে যাব: ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়

এই প্রথম আমি ৫ দিনের রোজা রেখেছিলাম। এই প্রথম আমি রমজানের দাওয়াত পেলাম: ভাস্বর 

মুসাদ্দিক আহমেদ খানের সঙ্গে ভাস্বর। উপহার দেওয়া-নেওয়া।

মুসাদ্দিক আহমেদ খানের সঙ্গে ভাস্বর। উপহার দেওয়া-নেওয়া।

ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২১ ১৮:১২
Share: Save:

এই প্রথম আমি ৫ দিনের রোজা রেখেছিলাম। এই প্রথম আমি রমজানের দাওয়াত পেলাম। কী যে ভাল লাগছে! কলকাতায় আমার এক কাশ্মীরি বন্ধু থাকেন। নাম মুসাদ্দিক আহমেদ খান। ওঁদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ। সেখানেই রাতে খাওয়াদাওয়া করব। অতিমারিতে কলকাতা ম্রিয়মাণ। মন আমারও খারাপ। বৃহস্পতিবারেই আমার কাছের এক আত্মীয়কে কেড়ে নিয়েছে করোনা। সেই মনখারাপ, অতিমারির ভয় সরিয়েই কিছুক্ষণের জন্য যাব মুসাদ্দিকের বাড়ি। ভালবাসার উষ্ণতায় নিজেকে সেঁকে নিতে।

উৎসবের আগে নিয়ম মেনে আমরা উপহার বিনিময়ও করেছি। মুসাদ্দিক আমাকে একটি কুর্তা-পাজামার সেট দিয়েছে। আর দিয়েছে আতর। যেটা আমার ভীষণ প্রিয়। আমিও ওকে নতুন কুর্তা উপহার দিয়েছি। মুসাদ্দিক হয়তো আজ ওটাই পরবে। ও অবশ্য আশ্বস্ত করে বলেছে, বাড়িতে আমন্ত্রিতের ভিড় থাকবে না। খুব কাছের হাতেগোনা আত্মীয়, বন্ধু থাকবেন। আর আমি। আমাকে পই পই করে বলে দিয়েছেন, ‘‘ভাইজান মাস্ক পরে স্যানিটাইজার সঙ্গে নিয়ে আসবেন।’’ নিজের এবং ওঁর পরিবারের কথা ভেবে সমস্ত বিধি মেনে, দুটো মাস্ক পরে উদযাপনে যোগ দেব।

এ বার প্রশ্ন, দাওয়াতের মেনু কী? বিরিয়ানি, গোরুর মাংস, ফিরনি, সিমুই তো থাকবেই। আর কী কী বিশেষ পদ থাকবে সেটা গিয়ে জানতে পারব। আমার রোজা রাখার খবর নেটমাধ্যমে শেয়ার করতেই সবাই রে রে করে উঠেছিলেন। বলেছিলেন, এ বার ভাস্বর গোরুর মাংস-ও খাবেন! তাঁদের জানাই, আমি আমার মতো খাওয়াদাওয়া করব। এবং সেখানে গো-মাংস থাকবে না। আরও একটা কাজ করব। আমার বাড়ির দুর্গাপুজোয় মুসাদ্দিককে সপরিবারে নিমন্ত্রণ করে আসব। আজ, ইদের দিনে।
কিছু দিন আগেই বাবাকে নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানেও আমার অনেক বন্ধু। তাঁদেরই এক জন রিয়ান মঞ্জুর। আসার আগে আমি উৎসবের উপহার হিসেবে ওঁকে একটি টি-শার্ট দিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার রাতে রিয়ান জানালেন, আমার দেওয়া জামা পরে রোজা ভেঙেছেন। ছবিও পাঠিয়েছেন। দেখে-শুনে মনটা ভরে গেল। ফোনেই ইদ মুবারক জানালেন। কথা হল কাশ্মীরের সইম মুস্তাফার সঙ্গেও। সইম খুব ভাল ক্রিকেটার। কাশ্মীরি ক্রিকেট বোর্ডে বড় পদে আসীন। ফোনে ওঁর থেকে একটা মজার বিষয় জানলাম। কাশ্মীরে বৃহস্পতিবার থেকে ইদ পালিত হচ্ছে। কারণ, ওঁরা ওই দিন সন্ধেয় চাঁদ দেখেছেন। দেশের বাকি অংশ চাঁদ দেখবেন আজ, শুক্রবার। তাই কলকাতায় খুশির ইদ পরের দিন।

সইম জানিয়েছেন, অতিমারির কারণে উদযাপনে বদল ঘটিয়েছেন কাশ্মীরীরাও। কেমন সেই পরিবর্তন? বিশেষ কী করছেন তাঁরা? ক্রিকেটার বন্ধুর কথায়, কাশ্মীরে এমনও অনেক হতদরিদ্র আছেন যাঁদের চুলা জ্বালানোর জন্য কাঠ কেনার পয়সাটুকুও নেই। কিংবা বয়সের ভারে এতটাই নুয়ে পড়েছেন যে উদযাপন দূরের কথা, সোজা হয়ে হাঁটাচলার শক্তিটুকুও নেই। সইম সহ বেশ কিছু কাশ্মীরী এই ইদে তাঁদের পাশে। রাস্তায় অযথা ভিড় না বাড়িয়ে অন্ন, অর্থ, উপহার নিয়ে সেই সব অসহায়দের বাড়িতে। যাতে ইদের আনন্দ থেকে কেউ বঞ্চিত না হন।

শুনে মনে হল, সাধে বলে কাশ্মীর পৃথিবীর বুকে নেমে আসা এক টুকরো স্বর্গ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE