Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Entertainment News

সৃজিতের মতো অসংখ্য বান্ধবী বা কৌশিকের মতো জাতীয় পুরস্কার চাইনি: অনিকেত

আক্রমণাত্মক পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর ছবি ‘টুসকি’-তে অশ্লীল শব্দ ব্যবহারে সেন্সর বোর্ডের কড়াকড়ি থেকে আজকের রাজনীতির খেলা নিয়ে বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কেআক্রমণাত্মক পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর ছবি ‘টুসকি’-তে অশ্লীল শব্দ ব্যবহারে সেন্সর বোর্ডের কড়াকড়ি থেকে আজকের রাজনীতির খেলা নিয়ে বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিলেন।

অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। ছবি: অনিকেতের ফেসবুক পেজের সৌজন্যে।

অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। ছবি: অনিকেতের ফেসবুক পেজের সৌজন্যে।

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ১৫:৩০
Share: Save:

‘টুসকি’ কি বাচ্চাদের ছবি? অথচ পোস্টারে দেখছি ‘A’দেওয়া!
ও! পোস্টার দেখেছেন? তা-ও ভাল। হয়তো পাঁচশো পোস্টার ছেপেছে। হোর্ডিং তো দেখিনি তেমন। ছবির সেরকম প্রমোশন নেই। এটা তো আসলে চার বছর আগে করা ছবি। প্রযোজক চেয়েছিলেন। করেছিলাম। পরে বলেছিলেন, একী! বাচ্চাদের ছবিতে এমন গালাগালি! ফ্যামিলির সঙ্গে দেখা যাবে না! যেন ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ কখনও গালাগালি দেয় না! অথচ এটা তো বাচ্চাদের ছবি নয়। ছবির বিষয়টা তো বুঝতে হবে।

তাহলে এটা কী?
আমরা যে ধরনের সমাজে বসে আছি সেখানে একদিকে এখন সব পাওয়ার ভিড়, অন্য দিকে সব না পাওয়ার হতাশা। এর মাঝের দ্বন্দ্ব আছে তো। সবটাতো আর মোলায়েম নয়। এই দ্বিধাগুলো ছবিতে ধরা হয়েছে। অনেক বারুদ জমছে কিন্তু চার পাশে...সেই বিষয়টা টুসকি চরিত্রের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

কিন্তু গালাগালি?
আরে, এতে এত অবাক হওয়ার কী আছে? কান পাতলে পাঁচ বছরের মেয়ে স্কুল যাওয়ার পথে গালাগালি শোনে না? দেখুন, সেই বাচ্চার তখন যা বোধ তাতে হয়তো তার কাছে ‘টুইঙ্কল টুইঙ্কল’যা, একটা গালাগালিও তাই। আমরাই তো তাকে শেখাই এটা খারাপ ওটা ভাল। আর এই ছবিতে বস্তির মানুষের কথা আছে। তো তাদের মধ্যে একটা শ্রেণিকি রবীন্দ্রনাথের ভাষায় কথা বলবেনা গালাগালি দিয়ে কথা বলবে?

আরও পড়ুন, সত্যিকে ‘সত্যি’ বলতে আপত্তি কোথায়? প্রশ্ন তুললেন নওয়াজ়

আপনার ছবি মানেই কিছু না কিছু সমস্যা! আপনি ২০০৮-এ ‘রুম নাম্বার108’-এ বাবা-মেয়ের যৌন সম্পর্ক নিয়ে ছবি করতে চেয়েছিলেন...
হ্যাঁ, আমার মনে আছে যেদিন আমি আমার বন্ধু কৌস্তভ রায়কে চিত্রনাট্য শুনিয়েছিলাম। শুধু ও নয়, ওর সঙ্গে যারা ছিল তারা ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এগুলো তো বাস্তব ঘটনা। জানেন,মিশরে বাবার সঙ্গে মেয়ের বিয়ের চল ছিল, যাতে সম্পত্তি অন্য কোথাও না যায়। আজও এমন ঘটনা ঘটে তো। তাহলে? আরে আমি তো বিষয়টা সমর্থন করার জন্য ছবি বানাচ্ছি না। সেটাও তো বুঝতে হবে প্রযোজকদের। বিষয়টা তুলে ধরছি।


‘টুসকি’র একটি দৃশ্য।

আপনি প্রযোজকদের চাহিদা বোঝেন?
এখন যুগটাই তাই। আগে সত্যজিৎ রায় চিত্রনাট্য লিখে প্রযোজকদের শোনাতেন।এখন হাতে গোনা যে বড় বড় প্রযোজক সংস্থা আছে তারাই বলে দেয় গোপাল ভাঁড় তৈরি কর। গোয়েন্দাদের ছবি কর।

সব পরিচালক কী এইভাবেই ছবি করেন?
অনেকে করেন না। করতে চান না। তাই ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী, প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যর মতো পরিচালক ছবি করেন না আর! এই তো অবস্থা! এই যে ‘টুসকি’আসছে ২৪ অগস্ট, কোথায় প্রচার হয়েছে? বড় হাউসের ছবি হলে এই সমস্যা থাকে না। বেঙ্কটেশ, দেব নিজের মতো করে প্রচার করে। ওরা জানে ছবিটা কেমন করে ধরে রাখতে হয়। আমারও মাঝে মাঝে মনে হয়, আর নয়। থাক সব।আপনি জানেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় লিড রোলে,‘বাস্তব’বলে একটা ছবি রিলিজ হয়েছে তিনটে হলে?

আরও পড়ুন, প্রিয়ঙ্কার ‘এনগেজমেন্ট রিং’য়ের দাম জানেন?


নাহ, জানি না।
জানার কথাও নয়। ছবিটার কোনও প্রমোশন নেই তো। আমার প্রযোজকও কেন যে ছবিটা রিলিজ করছেন? হয়তো...রিলিজ হলে অন্য কোথাও বিক্রি হবে সেই ভেবে। আমারও মনে হয় আর ছবি করে কী হবে?

আপনি তো রাজনীতি নিয়ে ছবি করতে চান?
চাই।সেই কারণে ‘শংকর মুদি’করা। কিন্তু বাংলা ছবির প্রযোজক এই রিস্ক নেবে না।


শুটিংয়ের মাঝে অনিকেত।

কী থাকবে আপনার রাজনৈতিক ছবিতে?
দেখুন, রাজনীতিকে মানুষ বরাবর নিজের সুবিধের জন্য ব্যবহার করেছে। ক্ষুদিরাম বোস পকেটে বোমা নিয়ে কিংসফোর্ডকে মারতে গিয়ে নির্দোষ মানুষকে মেরে ফেললেন। তাঁর ফাঁসি হল। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী। এই এক উদ্দেশ্য নিয়ে দেশের জন্য আজ কোনও যুবক হাতে অস্ত্র নিলে আমরা তাকে সন্ত্রাসবাদী বলি। কেন? চে গেভারার গেঞ্জি পরে সূর্যসেনকে বলি স্বাধীনতা সংগ্রামী আর কিষাণজিকে সন্ত্রাসবাদী। সবটাই নিজেদের সুবিধামতো সাজানো। এই নিয়ে ছবি করতে চাই। কিন্তু ওই যে বললাম, প্রযোজক নেই।

সেই দুঃখে কি লাভপুরে জমি কিনে চাষবাস করছেন?
দেখুন, দুঃখ নেই। আমি কোনও দিন যশস্বী পরিচালক হতে চাইনি। আমি চাইনি সৃজিতের মতো আমার অসংখ্য বান্ধবী হোক বা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো জাতীয় পুরস্কার পাই। ওরা আমার বন্ধু। ওদের ছবি দেখি। ছবি নিয়ে ফেসবুকে লিখি। কিছু খারাপ লাগলে সেটাও ওদের বলি। আর লাভপুরে চাল,ডাল, গোয়ালে গরু, মুর্গি সব আছে। ওখানে থাকতে সবচেয়ে আরাম লাগে! খোলা আকাশে নিঃশ্বাস নেওয়া এখন সবচেয়ে জরুরি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE