শুটিংয়ের অবসরে।— নিজস্ব চিত্র।
এই যে চিত্কার করে সংলাপ বলছিলেন, আপনার ক্যারেক্টার কি সেটা ডিমান্ড করে?
কাঞ্চনা: ডিরেক্টর যেমন বলবেন, তেমন তো করতেই হবে। আর যাঁরা ভজ গোবিন্দ দেখেন, তাঁরা জানেন এই নাটকীয়তাটা দরকার।
শিল্পী হিসেবে জাস্টিফাই করতে পারেন?
কাঞ্চনা: দেখুন, চড়া দাগের অভিনয়ের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে অসুবিধে হয়েছে। তবে নিজেকে বুঝিয়েছি সব ধরনেরই একটা নিজস্ব ডিমান্ড থাকে। আমি যখন যাত্রা করেছি, এক ধরনের অভিনয়। যখন ব্রাত্য বসুর সঙ্গে থিয়েটার করেছি এক ধরনের অভিনয়। ইনফ্যাক্ট শেখর সমাদ্দারের সঙ্গেও একটা থিয়েটার করার কথা চলছে।
বাংলা সিরিয়াল নিয়ে দর্শকদের একটা অংশের ‘গেল গেল’ রব রয়েছে, জানেন তো?
কাঞ্চনা: সিরিয়াল টিআরপি-র পারদের ওপর নির্ভর করে। গল্প, অভিনয় এমনকী চরিত্রও। গেল গেল রব যেমন উঠছে, তেমন টিআরপিও বাড়ছে। ‘ভজ গোবিন্দ’ যেমন মেল অরিয়েন্টেড গল্প, কমেডিও আছে। আর মেগা সিরিয়ালের টিপিক্যাল কিছু পাঞ্চ তো রাখতেই হবে। চেঞ্জ করতে হলেও সেটা সময় নিয়ে করতে হবে। হঠাত্ করে কোনও চেঞ্জ হবে না।
আরও পড়ুন, ‘বুম্বাদাকে বিট করার মতো বোকামি এ জন্মে করতে পারব না’
আর বাংলা ছবির ক্ষেত্রে কি চিত্রটা আলাদা?
কাঞ্চনা: আমার তো মনে হয়, বাংলা ছবি শেষ পর্যন্ত না শখের থিয়েটারে পরিণত হয়।
সেকি! কেন বলছেন এ কথা?
কাঞ্চনা: এর ছবি চলতে দেব না, ওর ছবি নামিয়ে দেব— এ সব তো চলছেই। এটা না করে সামগ্রিক ভাবে ভাবতে হবে। না হলে শখের থিয়েটারই হবে বোধহয়।
কিন্তু প্রচুর বাংলা ছবির বক্স অফিস হিটের কথা বলেন প্রযোজক বা পরিচালক…
কাঞ্চনা: যারা বলছে, বাংলা ছবি ১০০ দিন বাজার করছে, ৫০ দিন বাজার করছে— এক দিন সন্ধে ছ’টা, সাড়ে ছ’টায় যদি হলে ঢোকা যায় তা হলে বোঝা যাবে আসল চিত্রটা। ফাঁকা হল দেখে হরর ফিল্ম মনে হবে। হাতে গোনা কিছু ছবি ছাড়া লোক হচ্ছে না। এক জন আর্টিস্ট হিসেবে সেটা খুব ভয়ের।
আরও পড়ুন, আমাজনের শুটিংয়ে ভগবানের দেখা পেয়েছিলেন দেব!
কেন? বাংলা ছবি দেখা কি দর্শক কমিয়ে দিচ্ছে?
কাঞ্চনা: অনেকে সময়ে যেতে পারছেন না, অনেক সময় সব হলে রিলিজ করছে না, অনেক সময় টাইমিংটা ঠিক হচ্ছে না। আর তারপর যেটা বললাম, হল থেকে ছবিটা তুলে দেওয়া— এ সব সমস্যা তো রয়েছে।
আপনার কোনও ছবির ক্ষেত্রে এ সব হয়েছে?
কাঞ্চনা: আমার লাস্ট দুটো ছবি ‘বিলু রাক্ষস’ আর ‘গুহামানব’-এর ক্ষেত্রে এটা হয়েছে। ‘গুহামানব’ তো এটা বেশি ফেস করেছে।
‘গুহামানব’-এর ফিডব্যাক কেমন?
কাঞ্চনা: ভালকে ভাল আর খারাপকে খারাপ বলায় আমি এগিয়ে আছি। টিপিক্যাল অ্যাকট্রেসদের মতো না বলে যদি অনেস্টলি বলি, তা হলে বলব, মিক্সড রিঅ্যাকশন পাচ্ছি। আমার অভিনয় অনেকে ভাল বলেছেন। তবে কিছু লোকের কিছু বক্তব্য রয়েছে। সে সব নিয়ে ওভাররিঅ্যাক্ট করতে নেই। সেগুলো পজেটিভলি নেওয়ার চেষ্টা করেছি। যেটা আগামী কাজগুলোতে হেল্প করবে। আর যেখানে একটা মানুষকে শুধু ছোট করার উদ্দেশ্য, সেই বক্তব্য মাথায় রাখিনি।
আরও পড়ুন, ‘ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক কম্প্রোমাইজ করতে হয়’
টিপিক্যাল অ্যাকট্রেসরা তা হলে সত্যি কথা বলেন না?
কাঞ্চনা: হা হা হা… মনে হয় না।
ভালকে ভাল আর খারাপকে খারাপ বলায় যে আপনি এগিয়ে, তাতে কাজ পেতে সমস্যা হয় না?
কাঞ্চনা: দেখুন, সম্পর্ক ভাল একটা জিনিস। আর তেল মারা আর একটা জিনিস। আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা ওই তেল মারাটাতে বাধা দেয়। সম্পর্ক ভাল যাদের সঙ্গে তাদের জন্য জান দিয়ে দিতে পারি। কমিটমেন্ট লেভেল আর তেল মারার মধ্যে যে সূক্ষ্ম লাইন আছে সেটা সব শিল্পীরই মেনটেন করা উচিত। ফলে যেটা সত্যি আমি সেটা বলেছি, বলবও। তাতে এখনও পর্যন্ত তো কোনও অসুবিধে হয়নি।
ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাক বাইটিং আছে নাকি?
কাঞ্চনা: প্রচণ্ড আছে। সব সময়ই ফেস করি।
আরও পড়ুন, আমাকে অনেকে ভালবাসেন, কিন্তু আমি...
কী ভাবে সামলান?
কাঞ্চনা: যারা সেটা করেন, তাঁদের বলব, গেট ওয়েল সুন। আসলে ব্যাক বাইটিং যাঁরা করছেন, তাঁদের সব সময় শত্রু বলে ভেবে নিই না। কারণ যিনি করছেন, আমার সম্পর্কে তাঁকে ভুল বোঝানোটা হয়তো অন্য কারও কাজ। সেটা মেটানোর চেষ্টা করি। তার পরও যদি দেখি একই কাজ করছেন, তখন বুঝি ওটাই তাঁর নেচার। তিনি হয়তো ওটা করে একটা সাইকোলজ্যিকালি স্যাডিস্টিক প্লেজার পান। তখন তাঁকে অসুস্থ রোগী বলে ক্ষমা করে দিই।
আর কাস্টিং কাউচ?
কাঞ্চনা: কাস্টিং কাউচ ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছে। এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। আমিও ফেস করেছি। তবে এটা কিন্তু সব প্রফেশনেই আছে।
আপনিও ফেস করেছেন?
কাঞ্চনা: হুম। কিন্তু এটা পুরোপুরি নিজের চয়েসের ওপর ডিপেন্ড করে। আপনি শর্টরুটে হাঁটবেন, নাকি ঘুরে ঘুরে যাবেন সেটা তো আপনিই ঠিক করবেন। আর আমি এটাকে কখনও জাস্টিফাই করি না এটা বলে, যে কাস্টিং কাউচ না হলে আমি আরও বড় কিছু হতাম। তা নয়। আমি যেটা হওয়ার সেটাই হয়েছি। তা না হলে তো সব মেয়েই তো মাধুরী দীক্ষিত হয়ে যেত। কেরিয়ার শুরু করার প্রথম তিন বছর এটা ফেস করেছি। তার পর আমাকে দেখে লোকজন বুঝে গিয়েছিল, এ সব আমার কাছে হবে না। কাজ পেতে তাই প্রথমদিকে একটু অসুবিধে হলেও পরে যখন কাজ পেয়েছি ভাল ভাল জায়গায় কাজ পেয়েছি।
আরও পড়ুন, সিভি’তে এত কম ছবি কেন? অফার পান না?
কোনও ছবির কাজ চলছে এখন?
কাঞ্চনা: একটা ছবি শুরু হওয়া আর লটারিতে দু’কোটি টাকা পাওয়া আমার কাছে মোটামোটি এক ব্যাপার। শুধু শুটিং না, যতক্ষণ না ছবি রিলিজ করছে তত ক্ষণ কিছু বলা যায় না। তবে রেডি হয়ে রয়েছে কয়েকটা ছবি। অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের ‘টুসকি’। অমিতরঞ্জন বিশ্বাসের ‘ব্রিজ’। প্রয়াত গৌতম সেনের ‘ধ্রুবকথা’।
নতুন বছর, কী এক্সপেক্টটেশন আপনার?
কাঞ্চনা: একটা জিনিস এত দিনে আমি বুঝেছি, জীবনের থেকে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই। আমি বছরে এখনও চারটে সেন্সেবেল ছবি করি। সিরিয়ালে মা মাসির রোল করেও ছবিতে লিড করছি। ফলে আকাঙ্খার তো কোনও শেষ নেই…।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy