Advertisement
E-Paper

ব্যোম শঙ্কর ভজ গৌরাঙ্গ

রাজনীতির মঞ্চে তাঁরা তো আছেনই। এ বার হাই ভোল্টেজ মেনস্ট্রিম ছবিতেও একই সঙ্গে। মিঠুন চক্রবর্তী ও দেব। বছরের সব চেয়ে বড় বাণিজ্যিক ছবির খবর দিলেন ইন্দ্রনীল রায়হ্যাঁ, এই সময়কার বাণিজ্যিক বাংলা ছবির ড্রিম কাস্টিংটা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে সোমবার সকালে। এক দিকে রাজ্যসভার এমপি গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী। অন্য দিকে ঘাটালের তৃণমূলের লোকসভার প্রার্থী দীপক অধিকারী। এক দিকে পাগলু। অন্য দিকে ফাটাকেষ্ট। এক দিকে মিঠুন চক্রবর্তী। অন্য দিকে দেব। আর এই অগস্ট মাস থেকে তাঁরা বড় পর্দায়। ছবির টাইটেল এখনও ঠিক না হলেও এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় সাম্প্রতিক কালে এত হাই ভোল্টেজ কাস্টিং বাংলা ছবিতে অবশ্যই দেখা যায়নি।

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০৪

হ্যাঁ, এই সময়কার বাণিজ্যিক বাংলা ছবির ড্রিম কাস্টিংটা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে সোমবার সকালে।

এক দিকে রাজ্যসভার এমপি গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী।

অন্য দিকে ঘাটালের তৃণমূলের লোকসভার প্রার্থী দীপক অধিকারী।

এক দিকে পাগলু। অন্য দিকে ফাটাকেষ্ট। এক দিকে মিঠুন চক্রবর্তী। অন্য দিকে দেব। আর এই অগস্ট মাস থেকে তাঁরা বড় পর্দায়।

ছবির টাইটেল এখনও ঠিক না হলেও এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় সাম্প্রতিক কালে এত হাই ভোল্টেজ কাস্টিং বাংলা ছবিতে অবশ্যই দেখা যায়নি। এখানে জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, জি-টিভির ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ প্রোগ্রামে মহাগুরুকে রিপ্লেস করেছিলেন দেবই। তবে এর জেরে তাঁদের সম্পর্কে যে কোনও চিড় ধরেনি তা এই একসঙ্গে ছবি করা থেকেই বোঝা যায়। আর এই দুই নেতা-অভিনেতার সঙ্গে এই ছবিতে দেখা যাবে টলিউডের আর এক জন বিখ্যাত স্টারকে। তাঁর নাম কোয়েল মল্লিক। এ রকম একটা স্বপ্নের কাস্টিংয়ের পেছনে রয়েছেন সুরিন্দর ফিল্মসের নিসপাল সিংহ রানে। তিনি এই ছবির প্রযোজক।

ছবি পরিচালনা করছেন বাণিজ্যিক বাংলা ছবির প্রথম সারির পরিচালক রবি কিনাগি। চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন ‘মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে’ খ্যাত এন কে সলিল। এবং সঙ্গীত পরিচালনায় জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

এর আগে ২০০৬-য়ে ‘যুদ্ধ’ ছবিতে দেখা গিয়েছিল মিঠুন ও জিৎ-কে। তার পর ২০১০ সালে রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘দুই পৃথিবী’ ছবিতে ছিলেন দেব ও জিৎ। কিন্তু হাই-প্রোফাইল কাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে হয়তো ওই দু’টি ছবিকেই পিছনে ফেলে দিচ্ছে এই নতুন ছবি।

এটা বলতেই বিরাট মন লাগে

সে দিন সন্ধ্যায় এই ছবি নিয়েই দেবের সঙ্গে আড্ডা হচ্ছিল। বিবেকানন্দ পার্কের লাগোয়া নিসপাল সিংহের অফিস। গরমে প্রচার করতে করতে দেবের গায়ের রং অন্তত দুই শেড কালো হয়ে গিয়েছে। একদিন কলকাতায় থেকেও ছুটি নেই দেবের। কারণ সে দিন সারা দিন তিনি সাউথ সিটি কমপ্লেক্সেই নতুন ফ্ল্যাটের ইন্টিরিয়ারের জন্য লাইট-ফ্যান কিনছিলেন। এর মাঝখানেই দই ফুচকা আর আলুর দম খেতে খেতে দেব জানালেন এই ছবি নিয়ে কতটা উত্তেজিত তিনি।

“আমি এই ছবিটা এক জনের জন্য করছি। তাঁর নাম মিঠুন চক্রবর্তী। এবং তার জন্য আমার থেকে বেশি খুশি কেউ নয়। আর এ ছাড়া রবি কিনাগিও রয়েছেন। হি ইজ ভেরি স্পেশাল টু মি। ওঁর সঙ্গে ‘আই লভ ইউ’ দিয়ে আমার যাত্রা শুরু। তার পর ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া’র মতো ব্লকবাস্টার ছবি করেছি। আবার রবিজির সঙ্গে কাজ করব ভেবেই ভাল লাগছে,” এক নিঃশ্বাসে বলছেন দেব।

দেবের সঙ্গে কথায় কথায় জানা গেল তাঁর অসম্ভব মিঠুন-প্রীতির পেছনে রয়েছে আর একটা বিরাট কারণ।

“সে দিন কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ইনোগরেশন। অমিতাভ বচ্চন এসেছেন। মনে আছে আমাকে হাত ধরে অমিতাভ বচ্চনের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন মিঠুনদা। এবং আমার সামনে অমিতজিকে বললেন, “আজ বেঙ্গল কা সব সে বড়া স্টার এহি লড়কা হ্যায়। মেরে সে ভি বড়া। অউর ইতনে কম উমর মে ইসনে জিতনা স্টারডম দেখা, ম্যায় ভি নহি দেখা থা।’ মিঠুনদা যখন এই কথাগুলো বলছিলেন আমি না স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। বস, আমরা শো বিজে আছি। এই কথাটা বলতে না বিরাট মন লাগে। যেটা একমাত্র মিঠুনদার আছে। আমাকে আর মিমোকে একই চোখে দেখেন মিঠুনদা। উই শেয়ার আ স্পেশাল বন্ডিং। শিলিগুড়িতে গত সপ্তাহে প্রচারের সময়ও এই ছবি নিয়ে মিঠুনদার সঙ্গে কথা হয়েছে আমার।” অসম্ভব এক্সাইটেড হয়ে বলেন দেব।

প্রযোজক নিসপাল সিংহ-ও দেবের কথার রেশ ধরেই বলছেন তিনিও কোনও দিন দেবের মধ্যে মিঠুন চক্রবর্তীকে নিয়ে কোনও ইনসিকিওরিটি দেখেননি। “ওই সব কোনও ব্যাপারই নয়। দেব ইনসিকিওর্ড হওয়ার ছেলেই নয়। ওর আর মিঠুনদার বন্ডিংটা জাস্ট ভাবতেই পারবেন না। দু’জনেই আমার কাছে এত স্পেশাল যে কাস্টিং নিয়ে আমার কোনও সমস্যাই হয়নি,” বলছেন কোয়েলের বর।

দেব ইজ দ্য কারেন্ট সুপারস্টার

অন্য দিকে মিঠুন চক্রবর্তীও এই ছবি নিয়ে অসম্ভব উত্তেজিত। আগের রাতেই সাগরদিঘি থেকে হেলিকপ্টারে করে কলকাতা পৌঁছেই রাতের ফ্লাইটে একদিনের জন্য মুম্বই গিয়েছেন। তার মধ্যেই কথা বললেন এই ছবিটা নিয়ে।

“আমি তো ভাই সুপার-ডুুপার এক্সাইটেড। এটার কৃতিত্ব দেব আমি রানেকে। রানে ইজ মাই ফেভারিট। ও দুষ্টুও। ঠিক আমাকে ইমোশনাল করে দেয়। তবে রানের ছবিতে আমি দেবের সঙ্গে কাজ করছি, এটা আমার কাছে দারুণ একটা কম্বিনেশন,” বলছেন মিঠুন চক্রবর্তী। দেবের প্রতিও যে তাঁর ভালবাসা উপচে পড়ছে, সে কথাও নির্দ্বিধায় বলেন মিঠুন। “দেব ইজ দ্য কারেন্ট সুপারস্টার, অ্যান্ড আই লাইক হিম আ লট। মিঠুন চক্রবর্তী অলওয়েজ স্পিকস দ্য ট্রুথ। দেব কারেন্ট সুপারস্টার, এই নিয়ে আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই,” নিজস্ব ভঙ্গিতে বলেন মিঠুন চক্রবর্তী।

কিন্তু অনেকের মনে একটা প্রশ্ন আসতে পারে এই ছবির কাস্টিং দেখে। এটা যদি ২০১৩র ডিসেম্বর হত তা হলে নিঃসন্দেহে এই প্রশ্নটা আসত না। কিন্তু এপ্রিল ২০১৪তে এই প্রশ্নটা আসা স্বাভাবিক। মিঠুন ও দেব দু’জনেই আজ সক্রিয় রাজনীতিতে রয়েছেন। আজকে যদি সিপিএমের কোনও সমর্থক বলেন তাঁরা এই ছবিটা দেখবেন না, সেই চিন্তাটা কি এসেছে এই তারকার মনে! “না আমার মনে আসেনি, আসবেও না। তার কারণ মানুষের কাছে আমাদের প্রথম পরিচয় অভিনেতা হিসেবে। আজকে আমরা যখন পলিটিক্সে এসেছি মানুষ কিন্তু আমাদের পলিটিশিয়ানের জ্যাকেটটা পরাচ্ছেন না। এবং পুরো বাংলাতে প্রচার করার সময় দেখছি, সিপিএম সমর্থক হোক কী বিজেপি— সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ আমরা সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে চাই বলে। তা ওঁরা যখন আমাদের কোনও জ্যাকেট পরাচ্ছেন না তখন ওঁদেরও আমরা শুধুই আমাদের দর্শক হিসেবেই দেখছি। আগেও ওঁরা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। ভবিষ্যতেও থাকবেন,” বেশ গুছিয়ে নিজের বক্তব্য রাখেন দেব।

কিন্তু ১৯৮৪ সালে প্রচারের সময় গুয়াহাটিতে এক জনসভায় অমিতাভ বচ্চনের কাছে এক জন একটা চিরকুট পাঠায়, যাতে লেখা ছিল ‘হোয়াই হ্যাভ ইউ পোলারাইজড আস? আমরা তো আপনার ফ্যান, আমাদের মধ্যে কেন মেরুকরণ করে দিচ্ছেন?’ এই চিন্তা কি কখনও হয়নি রাজ্যসভা সাংসদ মিঠুন চক্রবর্তীর?

“দেখুন, এটার ভেতর পলিটিক্স আনবেন না। পলিটিক্স আর ফিল্ম দু’টো আলাদা ক্ষেত্র। আমার আর দেবের সাধারণ মানুষের কাছে প্রথম পরিচয়টা অবশ্যই অভিনেতা হিসেবে। এবং সাধারণ মানুষের পাশে যে আমরা সব সময় রয়েছি, বাংলার মানুষ সেটা জানে। তাই আমাদের ছবি দেখতে সব মানুষ আসবে,” বলেন মিঠুন।

চোখা চোখা ডায়লগ তো থাকবেই

এ দিকে এত বড় ছবির নায়িকা হতে পেরে খুশি কোয়েল মল্লিকও। ‘অরুন্ধতী’র শ্যুটিংয়ের ফাঁকে জানালেন এই ছবি নিয়ে তাঁর উত্তেজনা কতটা। “মিঠুনদার সঙ্গে এটা হবে আমার পাঁচ নম্বর ছবি। দেবের সঙ্গে তো আগের বছর ‘রংবাজ’ করলাম। আমি অসম্ভব এক্সাইটেড এত বড় মাপের একটা ছবির সদস্য হতে পেরে। সবাই মিলে মন দিয়ে কাজ করে দর্শকের ভালবাসা পাওয়াটাই আমাদের সবার লক্ষ্য,” বলছেন কোয়েল।

রবি কিনাগি অন্য দিকে মনে করছেন দেব-মিঠুনের সঙ্গে এই ছবিটা তাঁর কাছে মস্ত বড় এক রেসপন্সিবিলিটি। “এত বড় দু’জন স্টার। তার ওপর কোয়েলের মতো নায়িকা। ফুল কনসেনট্রেশন আর ফোকাস নিয়ে ছবিটা বানাতে হবে আমাদের,” মুম্বই থেকে বলছেন রবি কিনাগি।

অন্য দিকে এই ছবিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হতে চলেছে ডায়লগের। দু’জনেই এত বড় স্টার। দু’জনের সংলাপেই যে ধারালো সংলাপ থাকবে তা বলাই বাহুল্য। সেই কথা স্বীকার করলেন চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখিয়ে এন কে সলিলও।

“হ্যা।ঁ দর্শক তো এত বড় দু’জন স্টারের কাছ থেকে চোখা চোখা চোখা ডায়লগ আশা করবেই। সেইমতোই লেখার চেষ্টা করছি। এর আগে ‘যোদ্ধা’ ছবিতে মিঠুনদা আর জিতের ডায়লগ লিখেছিলাম। কিন্তু এ বার যেন স্টেকটা একটু বেশি মাত্রায় রয়েছে,” বলছেন এন কে সলিল।

সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি তাতে এই ছবির শ্যুটিং শুরু হবে অগস্ট থেকে। শ্যুটিং হবে কলকাতা, হায়দরাবাদ ও রানিগঞ্জে। এ ছাড়া ছবির গানের শ্যুটিং হবে বিদেশে। তবে শ্যুটিং শুরু হওয়ার তিন মাস আগেই ছবি নিয়ে একটা ভবিষ্যদ্বাণী করে দেওয়া যায়। প্রথম দিন সেটে রবি কিনাগি অ্যাকশন বলার সময় থেকে ছবির ওপর নজর থাকবে প্রায় গোটা ইন্ডাস্ট্রির। আর ঘটনাচক্রে ঘাটাল থেকে দেব যদি জিতে এমপি হয়ে যান, তা হলে ছবির টাইটেল যে ‘এমপি ভার্সেস এমপি’ হবে না, সেটাই বা কে বলতে পারে!

indranil roy mithun chakraborty ananda plus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy