‘গহীন হৃদয়’ এর একটি দৃশ্যে কৌশিক সেন এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
ছবি: গহীন হৃদয়
পরিচালনা: অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়
অভিনয়: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, দেবশঙ্কর হালদার, কৌশিক সেন, দেবলীনা দত্ত, শংকর চক্রবর্তী, সোহাগ সেন, সুমন্ত মুখোপাধ্যায়
ছেলের স্কুল, রোজের বাজার, স্বামীর ওষুধ, শাশুড়ির পেনশন...টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত যাপনে ক্লান্ত সোহিনী (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত)। অ্যাসিডিটি আর মাইগ্রেনের গেরোয় আটকে পরা আনরোমান্টিক স্বামী ভাস্করের (দেবশঙ্কর হালদার) সঙ্গ চূড়ান্ত অসহ্যকর। সোহিনীর দাম্পত্যে অক্সিজেন বলতে একমাত্র অনুপম (কৌশিক সেন)। ভাস্করের বন্ধু অনুপম মারিয়ার সঙ্গে ডিভোর্স করে দেশে ফেরে। সাঁইত্রিশেও অনুপমের স্পর্শে ঝনঝন করে সোহিনী’র শরীর। নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারের নেশা চেপে বসে। সোহিনী ঠিক করে, আর নয়! সংসার ছাড়বে। আর পাঁচটা গোদা এক্সট্রা ম্যারিটালের ঢঙেই এগোতে থাকে সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কাহিনি অবলম্বনে অগ্নিদেবের ছবি। কিন্তু মোচড় দ্বিতীয়ার্ধে। হঠাৎ ধরা পরে ভাস্কর ক্যান্সার আক্রান্ত। দায়িত্বশীল স্ত্রী’র ভূমিকায় লড়ে যায় সোহিনী। অনুভূতিপ্রবণ মন একসময় অজান্তে ভালবেসে ফেলে ভাস্করকে। তখন এ ছবি আর ত্রিকোণ প্রেমের আপাত সরলীকরণে আটকে থাকে না। ‘গহীন হৃদয়’ ছুঁয়ে যায় ঘরে ফিরতে চাওয়া মধ্যবিত্ত মনকে।
এখন বিয়ে মানেই কার্যত আর একটা ডিভোর্স! বৈবাহিক সম্পর্কের ভঙ্গুরতা, আধুনিক মনের দৈন্যতার বিপরীতে ‘গহীন হৃদয়’ জীবনের ক্রাইসিসকে গুরুত্ব দিয়ে যাচাই করতে শেখায়। দ্রুত ছুটে চলা মুহূর্তে পেছন ফিরে থমকে দাঁড়াতে শেখায়। এ ছবির নিভৃত উপলব্ধি, ‘বিয়ে’ কিংবা ‘ডিভোর্স’ নামক সিদ্ধান্তগুলি এখনও অতটা ঠুনকো নয়!
আমার দেখা শেষ সাদাকালো বাংলা ছবি ‘মেঘে ঢাকা তারা’। তারও আগে ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘দোসর’। ‘গহীন হৃদয়’ এ তালিকায় নবতম সংযোজন। তবে বাস্তবের কাঠিন্য প্রকাশে সাদা-কালোর গহীন ব্যবহার ছবিতে অনুপস্থিত। এই সাদা-কালো বড্ড বেশি উজ্জ্বল। তবু ব্যতিক্রমী পদক্ষেপের জন্য পরিচালক ও কালারিস্ট দেবজ্যোতি ঘোষ অভিনন্দন পেতেই পারেন। স্বপ্ন দৃশ্যে mise en scene (দৃশ্যের আলোড়িত স্বীকারোক্তি) গঠনের প্রয়াস আলাদা ভাবে নজর কাড়ে।
এ ছবির ইউএসপি নিঃসন্দেহে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
এ ছবির ইউএসপি নিঃসন্দেহে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তাঁকে নিয়ে নতুন করে বলা বাহুল্য। পর্দা এবং পর্দার বাইরে উপস্থিতি বলে দিচ্ছিল বাংলা ছবি তাঁর হৃদয়ের গহীনে। তাঁর খিদে এখনও প্রবল। আইনক্সের ঝকঝকে স্পেশাল স্ক্রিনিংয়ে সে কথাই উঠে এল চিত্রনাট্যকার সুদীপা মুখোপাধ্যায়ের বয়ানে। রাত ২টোতেও সারা গায়ে কাদা মেখে অভিনয়ে তিনি অক্লান্ত। তবে দেবশঙ্কর হালদার আবারও হতাশ করলেন। ড্রামা ও ফ্লিম অ্যাক্টিং-এর মাঝের সূক্ষ্ম পাথর্ক্যগুলি তিনি বার বার গুলিয়ে ফেলেন। এক ম্যানারিজমধর্মী অভিনয় বড্ড ক্লান্তিকর। বরং ভাল লাগে কৌশিক সেনকে। পরিমিত অভিনয় ছাপ ফেলে। দেবলীনা দত্তের সুযোগ সীমিত। তিনি সৎ ব্যবহারের চেষ্টা করেছেন। আলিঙ্গন সোহাগ সেনকে। গুটিকয়েক দৃশ্যেই জাত চেনালেন। বাংলা ছবি তাঁকে আরও ব্যবহার করুক। সাউন্ড স্কেপের অভিনবত্ব চোখে পড়ার মতো। চিত্রনাট্য চলনসই।
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: হৃদয়ে ঘা দিল না ‘ধড়ক’
‘গহীন হৃদয়’ নায়িকা ও পরিচালক (ঋতুপর্ণা ও অগ্নিদেব ) জুটির সপ্তম ছবি। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ক্রমশ পরিণত হয়েছেন পরিচালক। আগামীতে এই পরিণতি আরও দৃঢ় হোক। ভাল বাংলা ছবির স্বার্থে এ জুটি ফিরে ফিরে আসুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy