উড়নচণ্ডীর একটি দৃশ্যে সুদীপ্তা।
ছবি: উড়নচণ্ডী
পরিচালনা: অভিষেক সাহা
অভিনয়: চিত্রা সেন, সুদীপ্তা চক্রবর্তী,
অমর্ত্য রায়, রাজনন্দিনী পাল
‘রোড’, ‘এন এইচ ১০’ কিংবা ‘হাইওয়ে’। হিন্দিতে এমন উদাহরণ অজস্র। সাম্প্রতিক কালে বাংলার ভাঁড়ার ছিল প্রায় শূন্য। ভরে দিলেন অভিষেক সাহা। প্রথম ছবিতেই সম্পূর্ণ আউটডোর শুটিংয়ের সাহস দেখালেন। গৃহবন্দি বাংলা ছবিকে টেনেহিঁচড়ে ‘রাস্তায়’ আনার জন্য আপনাকে কুর্নিশ। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ছবিতে আমারা পুরুলিয়া দেখেছি। অভিষেকের পুরুলিয়া কিন্তু বেশ আলাদা। শুধুই ঊষরতা নয়। রুক্ষতার সমান্তরালে এখানে ওড়ে রঙের আবির। ‘উড়নচণ্ডী’ আসলে পথ চলতে চলতে জীবনের নানা রং ছড়িয়ে যায়। কখনও ধূসর। কখনও বা সাত রঙের হোলি।
মিনু’র (রাজনন্দিনী পাল) সৎমা জোর করে বিয়ে দিতে চায়। লাল বেনারসি আর মাথায় টোপর নিয়ে মিনু ছটতে থাকে। সে যাবে তার ভালবাসার মানুষ গোবিন্দের কাছে। পথে চলতে চলতে ছেলেমানুষ মিনু উপলব্ধি করে কঠোর বাস্তবতাকে। ঠুনকো ভালবাসা হারিয়ে আশ্রয় খোঁজে সেই রাস্তায়।
মরদের হাতে রোজ মার। দেওয়ালে পিঠ যায় বিন্দির (সুদীপ্তা চক্রবর্তী)। খালাসি ছোটুকে (অমর্ত্য রায়) সঙ্গী করে বরের ট্রাকটা নিয়ে দে চম্পট। তাদের কোনও গন্তব্য নেই! গুমোট গুমরে মরার বিপরীতে জীবনকে ‘বাছা’র সত্যিই কি সুনির্দিষ্ট গন্তব্য থাকে? বোধহয় না। বরং পথই তাদের দিক নির্দিষ্ট করে দেয়।
পাটের মতো সাদা চুল আর থানকাপড়ে রাস্তায় নামতে হয় বৃদ্ধা মাকে (চিত্রা সেন)। কারণ, ছেলেরা তাকে ঘরছাড়া করেছে। এই বয়সেও পথচলা ছাড়া তাঁরই বা উপায় কী!
‘উড়নচণ্ডী’ শুধু তিন জন ভিন্ন বয়সের নারীকে রাস্তায় এনে থমকে যায় না! শক্তি সঞ্চয় করতে শেখায়। অশুভের সঙ্গে লড়াই জিততে শেখায়। দেয় মুক্তির স্বাদ। লীনা যাদব পরিচালিত ‘পার্চড’ ছবিতে একটি বলিষ্ঠ দৃশ্য আছে— সমস্ত গালিগালাজে কি বার বার মেয়েদেরই টেনে আনা হবে? ছবির নারী চরিত্রেরা জোরালো প্রশ্ন শানায়, তারপর তাদের বাবা, দাদা, কাকাদের চিৎকার করে গালি দেয়। খোঁজে মুক্তির স্বাদ। ‘উড়নচণ্ডী’র তিন নারী যখন বাবা, বর আর ছেলেদের হাতে মার খেয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নামে তখন সেই দৃশ্যকল্প আয়নায় ভেসে ওঠে।
আরও পড়ুন: এই সময়ে দাঁড়িয়ে ‘মুল্ক’-এর মতো ছবি বানানোর সাহস দেখিয়েছেন পরিচালক
বাংলা মদ খেয়ে সুদীপ্তার মাতাল নাচ অভিনয়ের যাবতীয় ইনহিবিশনকে ছাড়িয়ে যায়। বাকিটা বলা বাহুল্য। দৃশ্যটি মনে রেখে দিলাম। অমর্ত্য আগামীর সম্পদ। রাজনন্দিনী’র নিজেকে আরও পরিণত করার সুযোগ থাকলো আগামীতে। চিত্রা সেন তাঁর কাজটুকু ঠিক ভাবে সামলেছেন। দুই দাপুটে অভিনেত্রীর উপস্থিতি নবাগতদের অভিনয়ের বাঁধুনিকে আরও জোরালো করেছে।
পুরুষ বহুরূপী কালীর অভিশাপ দৃশ্যের মন্তাজ মনে রাখার মতো। টুসু গানের ব্যবহারে দেবজ্যোতি মিশ্রের সঙ্গীত যথাযথ। প্রযোজক হিসেবে ‘উড়নচণ্ডী’র মতো একটি সাহসী স্ক্রিপ্ট নির্বাচনের জন্য প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য। শেষ করার আগে একটা কথা বলতেই হয়, ‘উড়নচণ্ডী’ কি শুধু রাস্তায় নেমে লড়াইয়ের গল্প? আর কিছু নয়? বিন্দি যখন বলে, বর বলেছিল এ তো শুধু ট্রাক না, আমাদের সন্তান! কিংবা ট্রাকের মালিক যে বিন্দি নিজে, এটা জানতে পরে ওর মুখের হাসি ‘অযান্ত্রিক’-কে মনে করায়। কোনও রকম তুলনায় যাচ্ছি না। কিন্তু স্মৃতিতে ফিরতে দোষ কোথায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy