Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Entertainment

একদল সশস্ত্র লোক হোটেলে গোটা ইউনিটকে মারতে এল! তার পর...

জনমানবহীন জায়গায় রাজস্থানি কিছু মানুষের আক্রমণের সম্মুখীন হয় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ইউনিট।

কিশোর কুমার জুনিয়রের চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

কিশোর কুমার জুনিয়রের চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:২১
Share: Save:

বয়স তাঁর উল্টো দিকে চলে। সাদা পোশাকে তিনি উজ্জ্বলতর। ‘কিশোরকুমার জুনিয়র’-এর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর পাশে বেগুনি-সবুজ শাড়িতে অপরাজিতা আঢ্য। আর হিট জুটির পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। আড্ডায় বসলেন আনন্দবাজার ডিজিটালের জন্য।

এ বারের পুজো আসলে কিশোরকুমারের কার্নিভাল। কিশোরকুমার যে যে প্রান্ত থেকে গিয়েছেন সে অভিনয় হোক, গান হোক, পরিচালনা হোক কার্নিভালই হয়েছে। অন্য দিকে, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আর দুর্গাপুজো— এ দুটো একে অন্যের পরিপূরক। একটা পুজোয় তাঁর তিনটে ছবি এসেছে, লক্ষ্মীপুজোয় আরও তিনটে, কালীপুজোয় আরও তিন। ন’টা ছবি নিয়ে তিনি ইন্ডাস্ট্রি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। আজকে পুজোয় ছ’টা ছবি রিলিজ নিয়ে তাঁর কাছে প্রশ্ন করলে তিনি শুধু হাসেন। ‘‘আসলে আমরা যখন ছবি করতে আরম্ভ করিনি তখন থেকে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের এতগুলো ছবি বেরোচ্ছে। তাঁর কাছে পুজোয় অনেক ছবি রিলিজ অভ্যেসের মতো। এই ‘কিশোরকুমার জুনিয়র’-এর কোনও প্রতিপক্ষ হয় না। এ ছবি এমনই ছবি! সবাই তো ট্রেলর নিয়ে উচ্ছ্বসিত! এই সে দিন সৃজিত বলছিল এই ছবি প্রথম দেখব। এটাই পাওয়া।’’ পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় একেবারে নিজস্ব স্টাইলে মাঠে নেমে ছক্কা হাঁকালেন।

কিন্তু কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, এই ছবি তিনি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ছাড়া করতেন না।

দেখুন আড্ডার ভিডিয়ো

আরও পড়ুন: দ্বিতীয়বার প্রসেনজিতের স্ত্রী হয়ে কেমন লাগল? অপরাজিতা বললেন...

প্রশ্ন করি স্বয়ং নায়ককে...কেন?

‘‘কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ছবি তৈরি করবে সেটা শুধু গানের ছবি হবে? অসম্ভব! এ ছবি কোথা থেকে যে কোথায় গিয়ে পৌঁছয়, তা দর্শকরা ট্রেলর দেখে ইতিমধ্যেই বুঝেছেন। এ ছবি প্লেব্যাক সিঙ্গারের নয়। এ ছবি মঞ্চের, গায়কের। তার কথা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, হিন্দি থেকে বাংলা গান গাইছে...সব মিলিয়ে দারুণ চ্যালেঞ্জের বিষয়। আমার পাশের ভদ্রলোক (কৌশিক) চমৎকার সাহায্য করেছেন এই চরিত্র রূপায়ণে,’’ বললেন প্রসেনজিৎ।

ট্রেলার দেখে সবাই ভেবেছিল গানের ছবি। পরিচালক বললেন, ‘‘ছবির জন্য গান এসেছে। আমি তো বিনাকা গীতমালা তৈরি করতে চাইনি। এর পেছনে গল্প আছে। ছবিটা দেখলে বোঝা যাবে। আর একটা কথা, এ ছবি যেমন বুম্বাদা ছাড়া হত না, তেমনই রীতার চরিত্র আমি অপাকে ভেবেই লিখেছি। মা, বোন, মাসিদের প্রাণের ধন হয়ে যাবে অপরাজিতা।’’ প্রসেনজিৎ-অপরাজিতা জুটি এখন দর্শকদের প্রিয়।

‘‘এখানে কিন্তু ন্যায্য প্রশংসা পাওয়া উচিত শিবুর। ধরো, একটা গোটা পেনসিল ছিল। সেটার নাম ‘প্রাক্তন’। পেনসিল দু’ভাগে ভাঙা হয়েছে। একটা ‘দৃষ্টিকোণ’, আর একটা ‘কিশোরকুমার জুনিয়র’। এই প্রশংসা শিবুর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া উচিত।’’ যোগ করলেন কৌশিক।

আরও পড়ুন: আবির চট্টোপাধ্যায় এ বার নতুন রূপে, জানেন কোথায়?​

হাসিতে প্রসেনজিতের গায়ে বার বার ঢলে পড়ছিলেন অপরাজিতা!...

‘‘কৌশিকদা গত বছর পুজোয় আমায় এ ছবির কথা যখন বলে কী বলব, চিত্তবৈকল্য হচ্ছিল! কৌশিকদার কাছে তো হাতে ধরে অভিনয় শেখা। তিনটে মানুষের কাছে আমি অভিনয় শিখেছি। কৌশিকদা, অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়, রবি ওঝা। তার পরে বুম্বাদার সঙ্গে আবার কাজ করার সুযোগ। এ গুরুদেবের কৃপা ছাড়া সম্ভব না। স্ক্রিপটা ঠিকমতো শোনাও হয়নি। জয়সলমিরে চলে এলাম। দেখলাম হয়ে গেল। কৌশিকদা বলেই হল। সবাই এত ভাল, মনে হচ্ছিল আমার সঙ্গত যেন ঠিক হয়।’’

বর্ডারের কাছে শুটিং। কোনও জনমানব নেই। ‘‘কুকুর আসতো খাওয়ার জন্য। রাত্তির ১টায় ফিরছি। ভাবতাম, কোথায় আছি রে বাবা,’’ শিহরিত প্রসেনজিৎ।

‘‘বেহালার ছেলে লর্ডসে গিয়ে যখন জামা ওড়ায় তার আনন্দই আলাদা। তেমনই নেতাজি নগরের কিশোরকুমার জুনিয়র পৌঁছে যাচ্ছে ইন্দো-পাক সীমান্তে। তাঁর একমাত্র অস্ত্র গান। সঙ্গে তার পরিবার। মিউজিশিয়ান।’’

এই গানের পাশাপাশি গানও আছে ছবিতে! আর সেখানেই রহস্য!

‘‘এই জনমানবহীন জায়গায় আমি ঘুরে বেড়িয়েছি,’’ হাসছেন অপরাজিতা।

‘‘কেবল বলবে, গ্যাপ আছে? নাহ, মানে জাগ্রত মন্দির আছে। পঁয়তাল্লিশ-আটচল্লিশ গরমে পুজো করে ফাটিয়ে অপা প্রসাদ খাইয়ে দিল।’’

‘‘ওই গরমে আমি গানের শট দিচ্ছি। সব্বাই নাচছে। অপার শটে এক পোশাক ওই নিয়ে নাচছে। আসলে গান যে কী ভাবে মানুষকে ইন্সপায়ার করে...এই ছবি দেখলে মানুষ বুঝবে,’’ বললেন প্রসেনজিৎ। কিশোরকুমার এক সময় তাঁর জন্য গান গেয়েছেন, আর আজ তিনি নিজে কিশোরকুমার জুনিয়র-এর চরিত্রে!

জনমানবহীন জায়গায় রাজস্থানি কিছু মানুষের আক্রমণের সম্মুখীন হয় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ইউনিট। ‘‘রীতিমতো রাতে একদল আর্মড লোক হোটেলে মারতে এসেছে। জানলা ফাঁক করে দেখার সাহস পাচ্ছি না। সবাইকে ওরা ‘উড়া দেঙ্গে’! লোকাল লোকের সহায়তায় তখন তাদের ঠান্ডা করা হলেও পরের দিন অস্ত্র নিয়ে তারা শুট বন্ধ করার হুমকি দিল। যা-ই হোক, পুলিশের হস্তক্ষেপে মিটলো। প্রথম কথা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলল, ‘‘কিশোরকুমারের গান চালাও।’’ সবাই আবার উত্তেজনায় ফুটছে। এই গল্প দিয়ে ছবি হিট করানো যায় না। সে বয়স আমার নয়। কিন্তু টেকনিশিয়ানদের সহযোগিতা যা পেয়েছি...বুম্বাদাকে আগে ছেড়ে দিতে চাইলে ওই পরিস্থিতিতে বুম্বাদা পুরো ইউনিটের জন্য বসে রইল। বলল একসঙ্গে যাবো। এটাই দেখার মতো...,’’ আবেগ কৌশিকের গলায়।

মরুভূমির শূন্য চরাচরে মধ্যরাতে ইউনিটের একুশটা গাড়ি চলেছে বালির বুক চিরে...সামনে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ি! তিনি বরাবরের মতো সেই দুর্যোগের রাতে ইন্ডাস্ট্রিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন...

লোকেশন সৌজন্য: নভোটেল

অ্যাঙ্করের শাড়ি: সন্ধ্যারাগ

ভিডিয়ো: অজয় রায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE