সত্থুর 'গরম হাওয়া' প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, শুধুমাত্র বিষয়বস্তুর কারণে ছবিটিকে মহান বলা যেতে পারে। ওটিটি পর্দায় মুক্তি পাওয়া 'বিনয় বাদল দীনেশ'-এর চর্চাও শুরু হতে পারে তার বিষয়বস্তু নিয়েই। করোনা আবহে ওটিটি-তে ইদানীং রুদ্ধঃশ্বাস নাটকীয়তার প্রয়োজনে মাদক, বন্দুক আর নারীর উষ্ণতায় মোড়া কিংবা খুনেখেলার রমরমা। তাতে মেতে ওঠা দর্শকের কাছে এমন বিরল বিষয় তুলে ধরার জন্যে 'বিনয় বাদল দীনেশ' ছবির পরিচালক ও প্রযোজক সত্যি সত্যি প্রশংসার দাবি রাখেন। যে কোনও শিল্পভাবনার মূলে আদতে থাকে শিল্পীর আবেগ, তার পর আসে মাধ্যমের সার্থক প্রয়োগ। দেশপ্রেমের আবেগে ভেসে যাওয়া তিন যুবকের নাম প্রায় সব বাঙালি জানলেও, তাদের নির্ভীকতা বা আত্মোৎসর্গের সম্যক ধারণা তেমন নেই। রোমহর্ষক করিডর যুদ্ধের যে বিবরণ পাওয়া যায়, তা আবারও মনে করিয়ে দেয়, সত্যি ঘটনা গল্পের থেকেও আশ্চর্যজনক হতে পারে । তাই গল্পে নাটক আনতে আলাদা করে কোনও প্রয়াসের প্রয়োজন হয় না। ছবিটি সাদা-কালোয় তৈরির মধ্যে দিয়ে পুরনো দিনকে সজীব করে তোলার চেষ্টা প্রশংসনীয়। কিছু দৃশ্যও মনে রাখার মতো।
অভিনয়ের ক্ষেত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। তাঁর উপস্থিতি প্রতি মুহূর্তে সে আমলের নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিকদের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। রসময়, রাজেনবাবু এবং সরযূদেবীর চরিত্রে যথাক্রমে শঙ্কর দেবনাথ, প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় এবং অনুষ্কা চক্রবর্তীর সাবলীল অভিনয় মনে রাখার মতো।
দীনেশ যেখানে সাহেব পুলিশের মুখোমুখি হয়, সেই দৃশ্যটিতে একটু হোঁচট খেতে হয়। সে কালের বিপ্লবীরা ইংরেজিতে কথা বলত না। তাই অভিনয় বিশ্বাসযোগ্য হলেও চরিত্র চিত্রায়নের কারণে, ইংরেজি উচ্চারণ মিলিয়ে দীনেশকে একটু সাহেবি লাগে।