‘একে অন্যকে ক্ষমা করার আগে, আমাদের একে অন্যকে বুঝতে হবে’ (Before we can forgive one another, we have to understand one another)- অ্যানার্কিস্ট লেখিকা এমা গোল্ডম্যানের এই উক্তি দিয়ে শুরু ব্রাত্য বসুর নতুন ছবি ‘ডিকশনারি’— সম্পর্কের অজানা অভিধান। বুদ্ধদেব গুহর ‘বাবা হওয়া’ এবং ‘স্বামী হওয়া’— এই দুই গল্পকে ভিত্তি করে পরিচালক যে ভাবে ছবি বুনেছেন, তাতে ঘুরে ফিরে উঠে এসেছে এই উক্তির গুরুত্ব। কখনও সম্পর্কের সামাজিক ও প্রথাগত সংজ্ঞাকে নতুন ভাবে নির্মাণের প্রচেষ্টার সঙ্গে, কখনও পরিবারের পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়ে।
ভাষা মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যম।আর সেই বিশাল মাধ্যমের ব্যপ্তিকে ক্রমানুসারে সাজিয়ে তার লিপিবদ্ধ রূপ হল অভিধান। কিন্তু অভিধানে কি সব শব্দের পর্যাপ্ত অর্থ মেলে? মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কে থাকে নিরন্তর দ্বন্দ্ব ও টানাপোড়েন— তার অনির্দিষ্ট বহিঃপ্রকাশ কতটাই বা ব্যক্ত করা যায় কিছু নির্দিষ্ট শব্দ আরোপ করে? অভিধানে বর্ণিত অর্থ আর বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লব্ধ অর্থের মধ্যে আসলে থেকে যায় বিস্তর ফারাক, আর এই দুই অর্থের মধ্যবর্তী শূন্যস্থানেই এই ছবির অবস্থান।
ছবিতে সমান্তরালে চলে দুই পরিবারের কাহিনি। একদিকে থাকে ঢালাই ব্যবসাদার মকর ক্রান্তি চট্টোপাধ্যায় (মোশারফ করিম), তার স্ত্রী শ্রীমতি (পৌলমী বসু) ও পুত্র রাকেশ (সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়) সমেত রাজারহাটের ঝাঁ চকচকে অট্টালিকায় এক পুরোদস্তুর শহুরে জীবন। অন্যদিকে বন বিভাগের চাকরিসূত্রে পুরুলিয়ার বরাভূমের অশোক (আবির চট্টোপাধ্যায়) আর তার স্ত্রী স্মিতা (নুসরত জাহান) এবং মেয়ে চানুর প্রকৃতির কোলে নিভৃত জীবন। এই দুই পরিবারের মধ্যে এক অদ্ভুত সংযোগ হল সুমন (অর্ণ মুখোপাধ্যায়)- পারিবারিক সূত্রে শ্রীমতির ভাই, আবার পড়াশোনার সূত্রে অশোকের কলেজের জুনিয়র। বরাভূমের এক কলেজের ইংরেজি অধ্যাপক সুমনের সাথে স্মিতার পরকীয়া সম্পর্ক নাড়িয়ে দেয় অশোক-স্মিতার পারিবারিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ছক, ছবিতে যোগ করে বহুমাত্রিক সম্ভাবনা।