Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
chhori

Chhori Review: নিটোল গল্পে সমাজের আয়না, খানিক বিচ্যুতি নিয়েও মন কাড়ল ‘ছোড়ি’

আপাতদৃষ্টিতে একটি ভূত বা অশরীরী জাতীয় একটি নিছক ভয়ের ছবি মনে হলেও এ ছবি আসলে কিছুটা আমাদের সমাজের গোপন কালো দিক।

এক মরাঠি ছবির রিমেক, এ ছবিটি সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে আমাজন প্রাইমে।

এক মরাঠি ছবির রিমেক, এ ছবিটি সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে আমাজন প্রাইমে।

সুচন্দা অধিকারী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭:১৯
Share: Save:

‘ছোড়ি’। নামেই কিছুটা আন্দাজ করা যায় এই ছবি নারীকেন্দ্রিক ছবি। তবে নিছক নারীকেন্দ্রিক বললেও ভুল বলা হবে। বলা ভাল, একটি ঝরঝরে নিটোল ছবি, যা আবার প্রশ্ন তোলে নিজেদের ভিতরে। পরিচালক বিশাল ফুরিয়া অল্প কথায়, খুব সরল পথে সমাজের ছবিটা বেশ জোরালো ভাবেই তুলে ধরেছেন। এক মরাঠি ছবির রিমেক, এ ছবিটি সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে আমাজন প্রাইমে।

আপাতদৃষ্টিতে একটি ভূত বা অশরীরী জাতীয় একটি নিছক ভয়ের ছবি মনে হলেও এ ছবি আসলে কিছুটা আমাদের সমাজের গোপন কালো দিক। কাহিনিতে প্রথমে নতুনত্ব না থাকলেও শেষে একটি সুন্দর মোড় ঘোরানো গল্প ছবিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়।

এক দম্পতির মিষ্টি সম্পর্কে গল্প শুরু। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হন। তার পরে কিছু অনাহূত সমস্যা এসে পড়ে হরিয়ানার প্রত্যন্ত একটি গ্রামের ওই দম্পতির জীবনে। বাকিটা সংগ্রামের ও বিপদ থেকে পরিত্রাণের এক ছিমছাম, নিটোল কাহিনি। অবাঞ্ছিত নাচ গানের বাহুল্য এ ছবিতে নেই।

সংগ্রামের ও বিপদ থেকে পরিত্রাণের এক ছিমছাম, নিটোল কাহিনি।

সংগ্রামের ও বিপদ থেকে পরিত্রাণের এক ছিমছাম, নিটোল কাহিনি।

ছবির নায়িকা সাক্ষীর চরিত্রটিকে যত্নে, দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন নুসরৎ ভরুচা। হেমন্ত অর্থাৎ নায়ক‌ও বেশ মানানসই। অল্প কিছু চরিত্রে নিয়ে গুছিয়ে গল্প বলার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। এ কাহিনির এক অসাধারণ চরিত্র ভন্নো দেবী। অভিনয় করেছেন মিতা বশিষ্ঠ। তাঁর অভিনয় নিয়ে আর নতুন করে কিছুই বলার নেই। তবে অনেক দিন পরে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে মিতা বেশ নতুনত্বের ঝলক এনে দিয়েছেন।

চিত্রনাট্যের গতি অনায়াস হলেও মাঝখানে বেশ খানিকটা অংশে গতি হারিয়েছে। গল্পের শুরুটা আরও গোছানো হতে পারতো। ছবির মাঝখানের গল্প অনেকটাই এক‌ জায়গায় ঘুরপাক খেয়েছে। তার একঘেয়েমি দর্শকদের কিছুটা হলেও বিরক্তি আনবে।
ছবির চরিত্র ও তাদের সাজসজ্জা মানানসই। শহুরে মেয়ে সাক্ষী আর প্রত্যন্ত গ্রামের ভন্নো দেবী সাজের ফারাকে আলাদা করে চোখে পড়েন। প্রস্থেটিকের সঠিক ব্যবহার ছবির বাকি চরিত্রগুলোকে অলৌকিক হতে দেয়নি। যার ফলে এক দগ্ধ গৃহবধূ বা এই ধরনের চরিত্রগুলোর রূপ স্বাভাবিকই দেখায়।

অংশুল চৌবের সিনেম্যাটোগ্রাফি খুবই সাবলীল ও দক্ষ। দৃশ্যান্তরগুলো সম্পূর্ণ ভাবে গল্পের ধারা, স্থান-কাল-আবহ বোঝাতে ও ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। অতীত-বর্তমানকে আলাদা করে বোঝানোর কিছু ক্ষেত্রে একটু বিচ্যুতি চোখে ঠেকলেও অনেকগুলো গল্পকে গুছিয়ে একটা মালার মতো তৈরি করা হয়েছে অল্প কথায়। সেখানেই ছবির মুন্সিয়ানা। তবে উন্নিকৃষ্ণনের সম্পাদনায় চিত্রনাট্য আরও একটু মজবুত, আরও একটু মেদবর্জিত হতে পারত। শুরু থেকেই কিছু জিনিস বা দৃশ্য অযৌক্তিক ঠেকছিল। যেন মনে হচ্ছিল, চোখে আঙুল দিয়ে বলার চেষ্টা হচ্ছে যে এ ছবি ভয়ের। জোর করে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, অমুক কাজটা ভয় পাওয়ানোর জন্যই করা হচ্ছে কিংবা তমুক দৃশ্যে ভয় পেতে হবে! এখানেই সবচেয়ে বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে কেতন সোধার আবহ সঙ্গীত। অসময়ে অকারণে কিছু শব্দের ব্যবহার বড্ড অযাচিত লাগে। যেমন কিছু দৃশ্যে এক একটি চরিত্র খুব সাধারণ এবং সাবলীল ভাবেই হেঁটে চলেছে। সেখানে ভয়ের কোনও অনুষঙ্গও নেই। অথচ বার বার আবহ সঙ্গীতে ভয়ের উদ্রেক করার চেষ্টা হয়েছে। যা ওই দৃশ্যে একেবারে অহেতুক। হয়তো এমন শব্দের ব্যবহারে বারবার মনে করানোর চেষ্টা যে এর পরে গল্প কোনও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে গিয়ে দাঁড়াবে।

স্বল্প বাজেটের ছবিগুলির মধ্যে এটি অবশ্যই এক উল্লেখযোগ্য ছবি হয়ে থাকবে।

স্বল্প বাজেটের ছবিগুলির মধ্যে এটি অবশ্যই এক উল্লেখযোগ্য ছবি হয়ে থাকবে।

আরও পড়ুন:
আরও পড়ুন:

শুরুতেই বলেছি গল্পের বিষয়বস্তু আপাত ভাবে ভয়ের হলেও তার মোড় অন্য দিকে ঘুরে যায়। নাড়া দেয় নারীত্বকে। শুধু গর্ভে ধারণ করলেই মা নয়, নারী মাত্রেই মা— সে কথা মনে করিয়ে দেয়। ....

ভারতীয় সমাজে নারী এবং কন্যাসন্তানের স্থান এখনও বিশেষ উপরে নয়, বলে দেয় ছবি। ‘তুমি তো মেয়ে’, ‘বাবা রে, মেয়ে হয়েও এত ভাল করে করলে কাজটা!’, ‘অমুক কাজটা মেয়েমানুষের পক্ষে সুবিধের’ কিংবা ‘মেয়েদের আর কী!’— এ ধরনের মন্তব্য এখনও রাস্তাঘাটে আকছার শুনে অভ্যস্ত সব বয়সের নারীই। ভূত-প্রেত-অশরীরীর ভয়াল মোড়কে এ ছবি সমাজে মেয়েদের এই পিছিয়ে থাকার উপরে নতুন করে আলো ফেলে। আর ‘ছোড়ি’র এই গূঢ় বার্তার দিকটাই অনেক দিন ধরে মনকে নাড়া দিতে বাধ্য।

গুণ-তুক করা, নিশির ডাক, বশীকরণের মতো বিষয়গুলি অলৌকিক বস্তু বা অলৌকিক জগৎ নিয়ে নাড়াচাড়া করলেও এ ধরনের কার্যকলাপ এই ২০২১-এর বিজ্ঞান-প্রযুক্তি সমাজেও ভীষণ ভাবেই প্রকট এবং প্রবল। ছবিতে এই অলৌকিক বিদ্যার চর্চা, তার ফলাফল, সমাজে নারীর স্থান, কন্যাসন্তানের জীবনের আধারে প্রকাশ পেয়েছে।

স্বল্প বাজেটের ছবিগুলির মধ্যে এটি অবশ্যই এক উল্লেখযোগ্য ছবি হয়ে থাকবে। ছবি জুড়ে টানটান উত্তেজনা নেই বটে। তবে এর গল্প দর্শকদের নিরাশ করবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chhori review Bollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE