অপরাধী যদি আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যায়, তা হলে কি সামাজিক ন্যায় বলে কিছু থাকে আদৌ? তেমন ক্ষেত্রে বিচারের বাণী যে নীরবে নিভৃতে কাঁদে না, সে কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য রচিত হয় এক বিশেষ ধরনের সাহিত্য, যার নাম ‘লিগ্যাল থ্রিলার’ বা ‘কোর্টরুম ড্রামা’। বন্ধ আদালতকক্ষ, বাদী ও বিবাদী পক্ষের যুক্তি ও প্রতিযুক্তির চাপানউতর এবং সব শেষে বিচারকের রায়— এই ধরাবাঁধা কাঠামোর মধ্যেই ঘোরাফেরা করে এই বিশেষ ধারার সাহিত্য বা তা থেকে নির্মিত চলচ্চিত্র। ভারতীয় সিনেমায় কোর্টরুম থ্রিলারের জায়গাটি বহুকাল ধরেই পোক্ত। সেই ধারায় নবতম সংযোজন রুমি জাফরি পরিচালিত ‘চেহরে’।
উত্তর ভারতের বরফরাজ্য থেকে গাড়ি চালিয়ে দিল্লির দিকে যাচ্ছে সমীর মেহরা নামের এক উচ্চপদস্থ চাকুরে। তুষারপাতের দুর্যোগের মধ্যেই একটি গাছ পড়ে পথ বন্ধ হওয়ায় সেই নির্জন জায়গায় সে বেকায়দায় পড়ে এবং তার সঙ্গে দেখা হয় পরমজিৎ সিংহ বুল্লেরের। বুল্লের সমীরকে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয়ের জন্য নিয়ে যায়। বন্ধুটি এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জগদীশ আচার্য। জগদীশের বাড়িতে তখন আড্ডার অপেক্ষায় রয়েছে এক প্রাক্তন ফাঁসুড়ে হরিয়া। জগদিশের বাড়ির দেখাশোনা করে আনা নামের এক যুবতী, যে কিনা নৃশংস সব অত্যাচারের ছবি আঁকে। এমন পরিস্থিতিতেই সেই বাড়িতে প্রবেশ করে লতিফ জাইদি নামের এক প্রাক্তন আইনজীবী। জানা যায়, বুল্লেরের সাবেক পেশাও ছিল ওকালতি। সমীরকে এই একদা আইনজীবীরা জানায়, তারা অবসর মতো একটি খেলা খেলে। যেখানে কোনও থমকে থাকা ফৌজদারি মামলার নকল বিচার হয়। সেখানে জাইদি ও বুল্লের বাদী ও বিবাদী পক্ষের উকিল হিসবে অবতীর্ণ হয়। আচার্য বিচারপতির কাজ করে। হরিয়া অপেক্ষা করে রায়ের। অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হলে সে তাকে ফাঁসির সাজা দেয়। আর এর মধ্যেই রয়েছে জো নামে এক মূক অথচ বধির নয়, এমন চরিত্র। যে আদালতের পেয়াদার কাজ করে।
ছবির গোড়াতেই দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে, বুল্লের যেন অপেক্ষা করে ছিল সমীরের আগমনের। তার পর তাকে আচার্যের বাড়িতে নিয়ে আসা এবং হরিয়ার দ্ব্যর্থবোধক ভাষায় তাকে সম্বোধনই জানিয়ে দেয় সমীরের কোনও ছায়াচ্ছন্ন অতীত রয়েছে, যাকে বার করে আনতেই যেন এই আদালত-আদালত খেলার অবতারণা। সমীরকে সেই খেলায় অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়। দোনামনা করে সমীর রাজি হয় খেলতে। কিন্তু সে জানায়, তার জীবনে কোনও ‘অপরাধ’ সে অর্থে নেই। ফলে যে কোনও ‘বানানো’ অপরাধের জন্য সে এই খেলায় নামতে রাজি। তার পক্ষের উকিল হিসেবে দাঁড়ায় বুল্লের আর সরকারি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে অবতীর্ণ হয় জাইদি।