Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
KK

Rupankar Bagchi: ভিডিয়োয় কেকে-র নাম নেওয়া ভুল ছিল, আনন্দবাজার অনলাইনে স্বীকার করলেন রূপঙ্কর

জীবন ওলটপালট। রাতে ঘুম নেই। মেয়ে অবসাদে। স্ত্রী থমকে গিয়েছেন। চারদিকে ধিক্কার। আনন্দবাজার অনলাইনে প্রথম একান্তে মুখ খুললেন গায়ক রূপঙ্কর।

কেকে বিতর্কে নিজের ‘ভুল’ স্বীকার করলেন রূপঙ্কর বাগচি।

কেকে বিতর্কে নিজের ‘ভুল’ স্বীকার করলেন রূপঙ্কর বাগচি।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২২ ১৮:৩০
Share: Save:

প্রশ্ন: কেকে-বিতর্ক নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ‘ভুল হয়েছে’ বললেন না তো?

রূপঙ্কর: যে দিন সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলাম, সে দিন সংবাদমাধ্যমের বন্ধুরা ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলেন। প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা কথা বলা সম্ভব নয়। তাই সবাইকে ডেকেছিলাম।

প্রশ্ন: যাঁদের ডাকলেন, তাঁদের প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন না!

রূপঙ্কর: তখন যে সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, সেখানে আবার যদি নিজের মতো কথা বলতাম, কী হত কে জানে! সকলের প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে যদি আবার ভুল কিছু বলি? আমার মধ্যে ভয় কাজ করছিল। তাই লিখে এনেছিলাম। সেই লেখা নিয়েও সমালোচনা হয়েছে।

প্রশ্ন: ‘হু ইজ কেকে?’ কী বলবেন?

রূপঙ্কর: দরাজ কণ্ঠের অভূতপূর্ব এক শিল্পী। আমি নিজে কেকে-র গানের ভক্ত। আমি কিন্তু কোনও প্রাদেশিকতায় বিশ্বাস করি না। লতা মঙ্গেশকর থেকে কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, শান, অরিজিৎ সিংহ— সব শিল্পীর গান শুনি। আমি জাত্যাভিমান থেকেই ওই কথা বলেছিলাম। সেই প্রসঙ্গে কেকে-র নাম ব্যবহার করি। তা আমার উচিত হয়নি। আমি ভুল করেছি। ওই প্রসঙ্গে আমার সঙ্গে যে সমস্ত বাংলার শিল্পীদের নাম উচ্চারণ করছিলাম, সেটাও উচিত হয়নি। তাঁদের নাম বলার আগে আমার তাঁদের থেকে অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল। এটাও আমার ভুল। তাঁরা পরবর্তী কালে যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, তাতে তাঁরা ঠিকই বলেছেন।

প্রশ্ন: একের পর এক ভুল? কেন এমন করলেন?

রূপঙ্কর: আমি ভেবে দেখেছি, করোনাকালে লকডাউনে বন্দি আমি নেটমাধ্যমকে খুব বেশি ব্যবহার করতে আরম্ভ করি। নব্বইয়ের দশকে পাড়ায় যেমন আড্ডা দিতাম তেমন করেই, সেই এক ভাষায়, ফেসবুকে কথা বলতে শুরু করি। আগে কিন্তু রূপঙ্কর এমন করেনি। আমি মনেই করিনি ফেসবুকে যা মনে হচ্ছে, সব বলা যায় না। মুখোশ পরতে হয়। কেকে-বিতর্কে যাঁরা আমার বিরুদ্ধে তির্যক মন্তব্য করেছেন, তাঁদের আমি ধন্যবাদ জানাই। তাঁরা আমায় শিখিয়ে দিয়েছেন, ফেসবুকে কী ভাবে কথা বলতে হয়। তাঁদের প্রত্যেকের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা আছে।

প্রশ্ন: এ বার তা হলে ফেসবুকে আসার কী প্রস্তুতি নেবেন?

রূপঙ্কর: ভাবছি খুব বেশি আসব না আর। যা করছি, তার ছবি দিচ্ছি, সব মনের কথা খুলে বলছি— এ সব বন্ধ করে দেব। ওই সময়ে বরং অন্য সৃজনশীল কাজে দেব।

প্রশ্ন: সৃজনশীল কাজ! অভিনয়?

রূপঙ্কর: অভিনয় আমি নিজে করতে চাইনি। আমাকে কিন্তু পরিচালকেরাই ডেকেছেন। তবে আমি গায়ক রূপঙ্কর। অভিনেতা রূপঙ্কর নই। সেটা কোনও দিন হতে চাইব না। আমি অভিনয় করবো না তা নয়, তবে গানই আমার মূল লক্ষ্য।

প্রশ্ন: অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় বলেছেন আপনি গায়ক হয়ে অভিনয় করতে গিয়ে অভিনেতাদের জায়গা নিয়ে নিচ্ছেন...।

রূপঙ্কর: স্বস্তিকা আমার পছন্দের অভিনেত্রী। ওঁর সঙ্গে একটি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছি। উনি ওঁর মতামত দিয়েছেন। আমার দিক থেকে বলতে পারি, অভিনেতা রূপঙ্কর হতে চাই না।

প্রশ্ন: জীবনের এই পর্যায়ে এসে কী মনে হচ্ছে?

রূপঙ্কর: মনে হচ্ছে আমার একটা ধাক্কা খাওয়া উচিত ছিল। সেই আঘাত পেয়েছি। বুঝেছি রূপঙ্কর খ্যাতনামী কেউ না। গায়ক না। সে এক জন বাবা। এক জন স্বামী। সম্পূর্ণ পারিবারিক মানুষ। বিপর্যয়ের ওই রাতে বাবাকে যা নয় তাই বলা হচ্ছে দেখে তার সদা হাস্যমুখী মেয়ের চোখে জল! সে তখন বুঝেছে, তার ভুল কোথায়। স্ত্রী চৈতালি যখন সারা রাত জেগে, চোখের তলায় কালি, ওর কাছে একের পর এক অশ্লীল ভাষায় ফোন আসছে, তখন রূপঙ্কর জানল কতটা কথা সে বলতে পারবে, কতটা পারবে না। সে সচেতন হল।

প্রশ্ন: যে বাঙালি সংস্কৃতির জন্য এত লড়াই করে, সে বাঙালি আজ আপনার বিরুদ্ধে। কেক প্রস্তুতকারী সংস্থা আপনার গান বাজাবে না বলছে। উদ্যোক্তাদের তালিকায় আপনার নাম বাদ...।

রূপঙ্কর: আমাকে সময় দিতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। যে দিন স্কটিশ চার্চ স্কুলের অনুষ্ঠানে গেলাম, মঞ্চে পা রাখলাম, আলো জ্বলে উঠল। সে দিন গান ধরে মনে হল দর্শকরা আমার ঈশ্বর। ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে সব দুঃখ, শোক আমি ভুলে যেতে পারি। সেই জায়গা থেকে ভেবেছি, আরও সচেতন হব। বাংলার শ্রোতারা আমায় খুব ভালবাসেন। তাই এমন তীব্র ভাবে তাঁরা আমার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এটাই তো স্বাভাবিক।

প্রশ্ন: এর পর?

রূপঙ্কর: ওঠাপড়া জীবনে থাকবেই। অনুষ্ঠানের ডাক নিশ্চয়ই পাব। আর যদি না পাই, সেটাও মেনে নিয়ে অন্য কিছু ভাবব। তবে আমি বাংলা গানে প্রচুর কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এত অনুষ্ঠান করেছি, এত ছবিতে গান গেয়েছি! এক এক সময়ে মনে হত, এক অনুষ্ঠানে তো সব গান গেয়ে ওঠাই হল না! গান নিয়ে আমি তৃপ্ত। সেই গান গেয়েই এক জন সাধারণের মতো জীবন কাটিয়ে দেব। আর কী?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE