Advertisement
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Entertainment News

অপরাধীকে হিরো বানানোর চেষ্টা? এ বার ‘সঞ্জু’র সমালোচনায় আরএসএস

কী লেখা হয়েছে পাঞ্চজন্যের সম্পাদকীয়ে? লেখা হয়েছ— ‘‘সঞ্জয় দত্তের বহু রকম বদগুণ রয়েছে: তিনি ১৯৯৩ সালের বিস্ফোরণ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জড়িত ছিলেন, তিনি নিজের বাড়িতে অস্ত্র রেখেছিলেন এবং পুলিশকে তা জানাননি।

‘সঞ্জু’তে রণবীর কপূর।

‘সঞ্জু’তে রণবীর কপূর।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ১২:৩৪
Share: Save:

রমরম করেই হয়েছিল শুরুটা। টানটান চিত্রনাট্য। অসামান্য অভিনয় রণবীর কপূরের। সরগরম ছিল ‘সঞ্জু’র বক্স অফিস। রণবীরের অসাধারণ ‘কামব্যাক’ হিসেবে দেখা হচ্ছিল রাজকুমার হিরানির ছবিটাকে। প্রথম সপ্তাহ কাটার পরেও ‘সঞ্জু’র বাজার সে রকমই সরগরম। তবে এখনকার গরমটা বিতর্কেরও। সঞ্জয় দত্তকে মহিমান্বিত করতে গিয়ে মিডিয়াকে এ ভাবে আক্রমণ? প্রশ্ন উঠেছিল প্রথমেই। অপরাধীকে মহান বানানো অনুচিত, সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার। এ বার সেই একই প্রশ্ন তুলে আসরে সঙ্ঘ মুখপত্র ‘পাঞ্চজন্য’ও। এমন পরিস্থিতিতে আগে কিন্তু পড়েননি হিরানি।

কী লেখা হয়েছে পাঞ্চজন্যের সম্পাদকীয়ে? লেখা হয়েছ— ‘‘সঞ্জয় দত্তের বহু রকম বদগুণ রয়েছে: তিনি ১৯৯৩ সালের বিস্ফোরণ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জড়িত ছিলেন, তিনি নিজের বাড়িতে অস্ত্র রেখেছিলেন এবং পুলিশকে তা জানাননি। তিনি তিনটে বিয়ে করেছেন এবং নিজের মেয়ের সঙ্গে বহু বছর দেখা করেননি। ছবি অনুযায়ী সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ৩০৮ জন মহিলার। ‘সঞ্জু’ তাঁর বাবা-মার সম্মান রাখেননি। এই হলেন সঞ্জয় দত্ত।’’ এই রকম কঠোর ভাষাই সঞ্জয় দত্ত সম্পর্কে ব্যবহার করা হয়েছে সঙ্ঘের মুখপত্রে।

পরিচালক রাজকুমার হিরানির কড়া সমালোচনা করে সঙ্ঘ মুখপত্র লিখেছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডকে মহিমান্বিত করা হয়েছে ছবিতে, সব দোষ-ত্রুটি ছেঁটে বাদ দিয়ে মহান চরিত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে সঞ্জয় দত্তকে।

সঙ্ঘের এই আক্রমণের খুব কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে সঞ্জয় দত্তের পরিবার থেকে। সঞ্জয়ের বোন তথা প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়া দত্ত বলেছেন, ‘‘ইতিবাচক কিছু ঘটলেই আরএসএস তার সমালোচনায় সরব হয়।’’ সঞ্জয়কে ‘রোল মডেল’ আখ্যা দিয়ে প্রিয়ার বিস্মিত প্রশ্ন— আমি বুঝতে পারছি না কীসের এত বিতর্ক?

আরও পড়ুন, কেমন করে রণবীর হয়ে উঠলেন সঞ্জয় দত্ত? দেখুন ভিডিয়ো

প্রিয়া বুঝতে পারুন বা না পারুন, বিতর্কের যথেষ্ট রসদ কিন্তু রয়েছে রাজকুমার হিরানির ‘সঞ্জু’তে। সঞ্জয় দত্তের জীবনের একাধিক ‘অস্বস্তিকর’ অধ্যায়কে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর এই বায়োপিক থেকে। বলছেন ফিল্ম ক্রিটিকরাও। সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে যে সব মারাত্মক অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে আদালতে, সেগুলোকেও হালকা করে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে পর্দায়, অজুহাত খুঁজে যেন বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে সঞ্জয়ের নানা অপরাধকে— গুঞ্জন খোদ বলিউডেই। সঞ্জয় অতটা খারাপ নন, সঞ্জয়কে আদ্যন্ত নেতিবাচক ভাবে তুলে ধরেছে দেশের মিডিয়া— ছবির প্রতিপাদ্য অনেকটা যেন এ রকমই।

সঞ্জয় ড্রাগ নিতে শুরু করেছিলেন কেন? এক বন্ধুর পাল্লায় পড়ে। সঞ্জয় বাড়িতে বেআইনি অস্ত্র রেখেছিলেন কেন? বাবা সুনীল দত্তের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন বলে। সঞ্জয় আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিলেন কী ভাবে? পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন বলে। রাজু হিরানি এ ভাবেই দেখেছেন সঞ্জয় দত্তের চরিত্রকে, এ ভাবেই দেখাতে চেয়েছেন পর্দায়। তিনি এও বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন যে, তিনি যে ভাবে দেখেছেন, সঞ্জয় দত্তকে সে ভাবেই দেখা উচিত। মিডিয়া যে ভাবে সঞ্জয়কে তুলে ধরেছে, সে ভাবে নয়।


এই ভাবেই প্রতিবাদ জানিয়েছে আর এস এস।

প্রথমেই প্রশ্ন উঠেছে বায়োপিক তৈরির এই ভঙ্গিটা নিয়ে। বায়োপিক মানে কি কোনও চরিত্রকে শুধু মহিমান্বিত করে দেখানো নাকি? প্রশ্ন অনেকেরই। বহুচর্চিত যে কোনও চরিত্রকে নিয়েই বায়োপিক হতে পারে। কিন্তু সে ছবিতে চরিত্রটাকে পরতে পরতে খুলে ধরাই তো কাম্য। তা না করে নানা পরত ছেঁটে বাদ দিয়েছেন হিরানি। বায়োপিকের ব্যাকরণ বলে যদি কিছু থাকে, তা হলে তার সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটেছেন পরিচালক, চরিত্রটির আসল রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ-স্পর্শকে ধরার চেষ্টাই করেননি তিনি। বলছেন একাধিক সমালোচক।

দ্বিতীয় প্রশ্ন উঠছে, ডিসক্লেমার নিয়ে। সৌজন্যমূলক ভাবে দায় স্বীকার করার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেননি পরিচালক। যে ভাবে ছবিতে সঞ্জয় দত্তের চরিত্রকে তুলে ধরা হয়েছে, তা যে একান্তই পরিচালকের দৃষ্টিভঙ্গী, তাও কোথাও গোটা করে স্বীকার করেননি হিরানি।

আরও পড়ুন
‘সঞ্জু’ থেকে বাদ পড়েছে যে ১০ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়

সঞ্জয় দত্ত প্রথম যখন গ্রেফতার হয়েছিলেন, তখন তাঁর বাবা সুনীল দত্ত অত্যন্ত প্রভাবশালী রাজনীতিক। ছেলেকে মুক্ত করতে বাবা যে যথেষ্ট প্রভাব খাটিয়েছিলেন, তা কারও অজানা নয়। শুধু প্রশাসনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছিল, এমনও নয়। সুনীল দত্তের প্রভাবে বলিউডের অনেক কেউকেটা সে সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও সঞ্জয়ের পাশে থাকতে বাধ্য হন বলেও অনেকেরই মত। কিন্তু ‘সঞ্জু’তে সে সব পর্বের উল্লেখ মাত্র নেই।

আরও পড়ুন, ‘সঞ্জু’র জন্য বিরাট অঙ্কের টাকা দাবি করেছিলেন সঞ্জয় দত্ত?

টানটান চিত্রনাট্য, অসামান্য কাস্টিং, অনবদ্য অভিনয়— সব মাপকাঠিতে রাজকুমার হিরানির ছবি সফল। কিন্তু টাকার অঙ্কে ‘সঞ্জু’র ব্যবসার পরিমাণ যত বাড়ছে, ততই লাফিয়ে বাড়ছে বিতর্ক। বলিউডে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। রাজকুমার হিরানি, বিধুবিনোদ চোপড়ার মতো রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার ঝুঁকি কেউ নিতে চাননি। কিন্তু মুম্বই ফিল্ম ইন্ডস্ট্রির অন্দরে ‘সঞ্জু’ নিয়ে নেতিবাচক গুঞ্জন যে চোরাস্রোতের মতো বইছে, তা খুব স্পষ্ট। আর ইন্ডাস্ট্রির বাইরে কান পাতলেই প্রকাশ্য নিন্দা শোনা যাচ্ছে।

টাডা কোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল সঞ্জয় দত্তের মামলা। ২০১৩ সালে চূড়ান্ত রায় হয়। সঞ্জয় জেলে যান। সে সময় যিনি মুম্বইয়ের পুলিশ কমিশনার ছিলেন, সেই সত্যপাল সিংহ এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সঞ্জয়ের বায়োপিক সম্পর্কে বিরূপ মতামত দিয়েছেন সত্যপালও। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় অপরাধীদের মহান করে দেখানো বন্ধ হওয়া উচিত, সে দাউদ ইব্রাহিমই হোক বা অন্য কেউ। সঞ্জয় দত্তকে মহিমান্বিত করাও অনুচিত। সত্যটা সমাজের সামনে আসা উচিত।’’

আরও অনেক বিতর্কিত বিষয় নিয়ে তো ছবি হয়। রিলিজই আটকে যায় অনেক ক্ষেত্রে, সেন্সরের কাঁচি সয়ে ছবি বাজারে আনতে হয়। ‘সঞ্জু’ তো সে ভাবে কাঁচির সামনে পড়েনি। রিলিজের আগে তেমন কোনও বিতর্কও ছিল না। কেন বিতর্ক বাড়ছে রিলিজের পরে? ছবিটি যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, দেশের ইতিহাসের খুব স্পর্শকাতর একটা অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ছবিটা। ১৯৯২-এর বাবরি কাণ্ড, তার প্রেক্ষিতে দেশের নানা প্রান্তে হিংসা, সে হিংসার ক্ষত ঠিক মতো শুকনোর আগেই মুম্বইতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, মৃত্যুর মিছিল, ধরপাকড়, কেউকেটাদের নাম জড়িয়ে যাওয়া। অস্থির-উত্তাল সেই সময়টা থেকে একটা চরিত্রকে তুলে নিয়ে বায়োপিক তৈরি করতে হলে যতটা সংবেদনশীলতা দেখাতে হয়, ততটা দেখাননি হিরানি। ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নিজের খেয়ালখুশিতে খেলতে চেয়েছেন বেশ কিছু জায়গায়। ফলে অনেকের ভাবাবেগে ধাক্কা লেগেছে। অনেকে মনে করেছেন, অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দিয়ে ব্যবসা পেতে চেয়েছেন হিরানিরা।

আরও পড়ুন, বলিউডে পা রাখতে চলেছেন ‘সাংবাদিক’ হাসিন

ছবি নির্বিঘ্নেই চলতে শুরু করেছিল গোটা দেশে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, কাটাছেঁড়াটা শুরু হচ্ছে তত গভীরে গিয়ে। তাতেই প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ছেন রাজকুমার হিরানি। এর আগে কোনও ছবি নিয়েই এধরনের সমালোচনার মুখে সম্ভবত পড়তে হয়নি বলিউডের এই প্রভাবশালী পরিচালককে।

মিডিয়াকে যে আলোকে দেখানো হয়েছে ছবিতে, তাতে অসন্তোষ নানা শিবিরেই ছিল। কিন্তু মূল ধারার মিডিয়া নিরপেক্ষ থাকার তাগিদেই সে ভাবে সমালোচনার পথে হাঁটেনি। সঙ্ঘের মিডিয়ার সে দায় নেই। নীতিগত ভাবেও সঙ্ঘ এ ছবির উপজীব্যের সঙ্গে সহমত নয়। ফলে জোরদার আঘাতটা এল পাঞ্চজন্যের সম্পাদকীয় কলম থেকেই। প্রবণতায় আভাস, প্রতিকূলতা বাড়বে বই কমবে না। ধাক্কা সামলানো কিন্তু বেশ কঠিন হয়ে উঠতে পারে রাজকুমার হিরানির পক্ষে।

অন্য বিষয়গুলি:

Sanju Ranbir Kapoor Bollywood RSS celebrities Hindi Film Rajkumar Hirani Sanjay Dutt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy