বছর কুড়ি আগের কথাই ধরুন। বিশ্বায়ন তখনও বাঙালির দরজায় কড়া নাড়েনি। আন্তর্জাতিকতার বদলে আঞ্চলিকতাতেই অভ্যস্ত ছিল বঙ্গবাসী। শীত পড়লে, খেজুর এবং নলেন গুড় উঠলে বাড়িতে বাড়িতে পায়েস, পিঠের গন্ধ ম ম করত। দুটো মাস যেন পিঠেপুলির দখলে। ডিসেম্বর, জানুয়ারির চড়ুভাতির মেনুতেও মা-দিদিমার হাতে বানানো পাটিসাপ্টা, গোকুল পিঠে, দুধপুলি বা চুষি পায়েস, রসমাধুরী রাজত্ব চালাত। বাঙালির সেই আবেগে কি এখন ভাটার টান? মকরসংক্রান্তিতে এখনও কি পিঠের গন্ধে উদাস হন বাঙালি? এই একটা দিন ডায়েট ভুলে তারকারা কি গুছিয়ে ডান হাতের কাজ সারেন ‘ডুব দে মন পিঠে বলে’? ফিরিয়ে আনেন ছেলেবেলার দিনগুলো? তারই খোঁজে আনন্দবাজার অনলাইন।
মকরসংক্রান্তির নাম শুনেই চনমনে অম্বরীশ ভট্টাচার্য। ছোট পর্দার ‘পটকা’ এমনিতেই খাদ্যরসিক। সুযোগ পেলেই শরীর-ডায়েটের কথা শিকেয় তুলে গুছিয়ে খাওয়াদাওয়া করেন। পিঠে-পুলির কথা উঠতেই আনমনা অভিনেতা। জানালেন, ছোটবেলায় ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি— দুটো মাস টানা তাঁদের বাড়িতে পিঠে-পুলি কার্যক্রম। বিশেষ এই দিনে ভাত-তরকারি রান্নার কোনও পাটই থাকত না। অম্বরীশের কথায়, ‘‘বাবা আগের দিন থেকে নারকেল, ক্ষীর, ময়দা, চালের গুঁড়ো, সুজি, মাটির সরা বা ছাঁচ গুছিয়ে কিনে আনতেন। আগের রাত থেকে মা বসতেন পিঠে বানাতে। পাটিসাপ্টা, দুধপুলি, রসপুলি, পায়েস, সরার পিঠে— রকমারি পিঠে বানাতেন। নলেন গুড় দিয়ে পায়েস তো হতই!’’ কোনওটায় নারকেলের পুর। কোনওটায় ক্ষীর। কোনওটায় দুটোই মিশিয়ে। পিঠে আসত মামারবাড়ি থেকেও। সব মিলিয়ে এলাহি ব্যাপার। এখন কি সেই সব মজার অভাব টের পান? ‘পটকা’র কথায়, ‘‘অভাব অনুভব করার সুযোগ দিচ্ছে না ‘গুনগুন’ ওরফে তৃণা সাহা। ওর তত্ত্বাবধানেই স্টুডিয়োর পাশের বিখ্যাত মিষ্টির দোকান থেকে পাটিসাপ্টা চলে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাতে আমার মা-ও পিঠে বানিয়েছেন। তা দিয়েই শুক্রবার সকালের জলখাবার সেরেছি। শুনেছি, শ্যুট থেকে তাড়াতাড়ি ছুটি পাব। তার মানেই বাড়ি গিয়ে আর এক প্রস্থ খাওয়া পর্ব হবে।’’
মকরসংক্রান্তির দিনে নতুন করে মা-কে খোঁজেন মানালি দে। ‘‘মা থাকলে অনেক রকম পিঠে হত। আমি নিজে যদিও কিচ্ছু বানাতে পারি না। কেবল খেতে পারি! কিন্তু ছোটবেলায় মায়ের গা ঘেঁষে বসে পিঠে বানানো দেখতাম। তার মজাই আলাদা!’’— স্মৃতিতে ডুব ছোট পর্দার ‘ফুলঝুরি’র। মা মণীষা দে-র মৃত্যুর পরে তাই পিঠে পর্ব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তারকার বাড়িতে। মানালির কথায়, ‘‘তখন বন্ধুদের বলতাম, যার যার বাড়িতে পিঠে হবে, তারা কিন্তু পাঠাবি। সেই রীতি আজও চলছে।’’ পাশাপাশি, গত দেড় বছরে সেই অভাব পূরণ করে দিয়েছেন মানালির শাশুড়ি মা। বলতে বলতে পর্দার মতোই উচ্ছ্বল অভিনেত্রী। বললেন, ‘‘অভিমন্যুর মা কত রকম পিঠে বানান! পাটিসাপ্টা, দুধপুলি, গোকুল পিঠে। অভিমন্যু পিঠেয় ক্ষীরের পুর ভালবাসে। আমি নারকেলের পুর।’’ মানালির বাবার বাড়িতেও এই পিঠে পৌঁছে যায় নিয়ম করে।