‘স্বজনপোষণ’ বিতর্কে বিভক্ত বলিউড। একটি শিবির কর্ণ জোহরের। অন্যটি কঙ্গনা রানাউতের। ছবি—সংগৃহীত
‘নেপোটিজম রকস্’! এই দু’টি শব্দেই ফের এক বার সামনে চলে এসেছে বি-টাউনের অন্দর কথা। আলোচনা, সমালোচনা, তর্ক-বিতর্কের জল এত দূর গড়িয়েছে যে, কার্যত দু’ভাগ বলিউড। একটি কর্ণ জোহরের শিবির, অন্যটি কঙ্গনা রানাউতের। আর কঙ্গনা রানাউত ও কর্ণ জোহরের মতো দু’জন সম্মুখসমরে নামলে ‘বিস্ফোরণ’ বেশ ভাল রকম হওয়ারই কথা। হয়েছেও তাই!
কর্ণের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন বেশ কয়েক জন। বরুণ ধবন (পরিচালক ডেভিড ধবনের ছেলে) ও সইফ আলি খান (শর্মিলা ঠাকুরের ছেলে) তো আইফা মঞ্চেই কর্ণের টিপ্পনিতে গলা মিলিয়েছিলেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, আথিয়া শেট্টি (সুনীল শেট্টির মেয়ে), অর্জুর কপূরের (বনি কপূরের প্রথম পক্ষের ছেলে) মতো দু-চারটে ছবির মাইলেজ পাওয়া স্টার কিডের মুখেও ‘কর্ণ-কর্ণ’ ডায়ালগ।
কী বললেন তাঁরা?
অর্জুনের কথায়, ‘‘মানছি প্রিভিলেজড পরিবারে জন্মেছি। কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে, আমাকে কোনও পরিশ্রম করতে হয়নি...’’। আর আথিয়া বলেছেন, ‘‘আমার তো মনে হয় স্টার কিড হওয়া আরও অসুবিধা। লোকে মনে করে তারকার ছেলে-মেয়ে মানে দারুণ কিছু করবে।’’ অন্য দিকে, বরুণ ধবন ও সইফ আলি খান আইফার মঞ্চে কার্যত সীমা ছাড়িয়ে ফেলেছিলেন। তা না হলে পরে হয়তো ক্ষমা চাইতেন না। কর্ণ জোহরের সঙ্গে ‘‘বোলে চুরিয়া, বোলে কঙ্গনা’’ গান গেয়ে টিপ্পনি কেটে তাঁরা বলেছিলেন, ‘‘কঙ্গনা কথা না বললেই ভাল’’।
আইফার মঞ্চে কর্ণদের ‘নেপোটিজম রকস্’ চেঁচিয়ে ঠাট্টা। ছবি: এএফপি।
অন্য দিকে, কেউ কেউ কঙ্গনার হয়ে মুখ খুললেও, কর্ণের দিকের পাল্লা অনেকটাই ভারী।
খুব জোর দিয়ে না হলেও, কঙ্গনা পাশে পেয়েছেন রণবীর কপূর (ঋষি কপূরের ছেলে) ও অনুষ্কা শর্মাকে (স্টার কিড নন)। প্রথম দিকে অল্প কিছুটা সোনম কপূরকে (অনিল কপূরের মেয়ে)।
‘‘কর্ণকে আমি বেশ ভাল মতোই চিনি। কঙ্গনাকেই বরং চিনি না। কিন্তু ও যেভাবে নিজের কেরিয়ার তৈরি করেছে সেটা আমার ভাল লাগে,’’ বলেছিলেন সোনম। এক ধাপ এগিয়ে সোনম এ-ও বলেছিলেন, ‘‘কর্ণের শোয়ে এক বার যাওয়ার পর ঠিক করে নিয়েছিলাম কাদা ছোড়াছুড়িকে একেবারেই প্রশ্রয় দেব না।’’
রণবীরের বক্তব্য ছিল, ‘‘আমি বিশ্বাস করি আমার ঠাকুরদা পৃথ্বীরাজ কপূর কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন কাজের জগতে তাঁর সন্তানদের সুযোগ করে দিতে। আমিও কঠোর পরিশ্রম করতে চাই,যাতে আমার সন্তানরাও সঠিক সময় সঠিক সুযোগটা পায়।... সত্যি বলতে, স্বজনপোষণ হয়।’’
অনুষ্কার সাফ কথা, ‘‘আমার মনে হয়েছে এই ইন্ডাস্ট্রিতে একেক জনকে একেক ভাবে ট্রিট করা হয়। যদিও আমি নেপোটিজমের শিকার নই।’’
এই লড়াইয়ের শুরুটা কিন্তু বেশ কিছু দিন আগে।
আসলে, সকলেই জানেন, সকলেই বোঝেন। কিন্তু এ নিয়ে মুখ খুলতেই কেউ সে ভাবে সাহস দেখাননি। ব্যতিক্রমী কঙ্গনা রানাউত। ‘কফি উইথ কর্ণ’-এ প্রযোজক-পরিচালকের মুখের উপর দিয়েছিলেন বলিউডে ‘নেপোটিজম’ অর্থাৎ স্বজনপোষণের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক কর্ণ। আসলে কঙ্গনা আগলটা খুলে দিয়েছিলেন। আর তাতেই হয়েছে কাল। তার পর থেকে লোকে রীতিমতো চোখে দূরবীন লাগিয়ে খোঁজার চেষ্টা করে যাচ্ছে কোথায় কোথায় নেপোটিজম হচ্ছে। তারকাদের ছেলেমেয়েরা অবশ্য অনেকেই সেটা মানতে নারাজ। তা না হলে গলায় কাঁটা বিধে থাকার মতো, নিউ ইয়র্কে ১৮তম ‘আইফা’র ঝলমলে রাতে কি কর্ণ জোহর আরও দুই সহচরকে নিয়ে ‘নেপোটিজম রকস্’ বলতেন?
‘কফি উইথ কর্ণ’-এর এই পর্বেই কর্ণকে ‘বলিউডে স্বজনপোষণের ধ্বজাধারী’ বলেছিলেন কঙ্গনা রানাউত। পাশে বসে সইফ আলি খান। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে।
গুণাগুণ, সাফল্য, জনপ্রিয়তা— এ সব তো অনেক পরে। বাস্তবটা হল, ফ্লপের পর ফ্লপ ছবি করেও স্টার কিডরা অনেকেই কিন্তু সুযোগ পেতে থাকেন অনেক দিন, যা অন্যদের ক্ষেত্রে হলে অনেক আগেই কেরিয়ার খতম হয়ে যেত। তার মানে কি বলিউডে এটাই রীতি? খেটেখুটে প্রতিটা রোল যে প্রত্যেক অভিনেতাই করেন, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। এবং প্রতিভাময়ী আলিয়া ভট্ট(পরিচালক মহেশ ভট্টের মেয়ে) থেকে ক্যারিশম্যাটিক স্বরা ভাস্কর (স্টার কিড নন)— তাঁদের অভিনয় আর গ্ল্যামারের গুণেই দর্শককে সিনেমা হলে পকেটের কড়ি খরচ করিয়ে টেনে আনেন,সন্দেহ সে ব্যাপারেও নেই। কিন্তু কোটি কোটি টাকা খরচ করে বানানো ছবি ফ্লপ করার পরেও যখন শুধুমাত্র পরিচয় জোরে সোনম কপূর, হর্ষবর্ধন কপূর (অনিল কপূরের ছেলে) বা আথিয়া শেট্টিরা ছবি করতে পারেন— ধন্দ তো লাগতেই পারে!
আরও পড়ুন, কঙ্গনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার লাইন, এ বার সইফও
দীর্ঘ দিন ধরে চলা নেপোটিজম বিতর্কে অবশেষে সইফ আলি খানকে একহাত নিয়েছেন কঙ্গনা। দিন কয়েক আগে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন সইফ। সেখানে তাঁর বক্তব্য ছিল, মায়ের জন্যই তিনি বলিউডে সুযোগ পেয়েছেন এটা ঠিক। তবে নেপোটিজমের থেকেও এ ক্ষেত্রে জিনের কৃতিত্ব বেশি। সেই প্রেক্ষিতেই সইফের বক্তব্যকে কটাক্ষ করে কঙ্গনা জানিয়েছিলেন, তিনিও জীবনের অনেকটা সময় জিনতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু বুঝতে পারেননি, কোন তত্ত্বে হাইব্রিড ঘোড়ার সঙ্গে এক জন প্রকৃত শিল্পীকে তুলনা করা যায়! সইফের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘‘যদি তোমার কথাই সত্যি হয়, তা হলে তো আমার বাড়ি ফিরে কৃষক হয়ে যাওয়া উচিত।’’
এ বিতর্ক হয়তো শেষ হওয়ার নয়। কিন্তু বিতর্কের সূত্রপাত যখন হয়েছে, তখন এর কাঁটাছেড়া হবেই! ‘নেপোটিজম রকস্’ বলে ফের এক বার কর্ণরা তো ‘হুঙ্কার’ ছেড়েছেন— ভাই-বেরাদরি ছাড়া নো ভেকেন্সি!
অবশ্য আইফা মঞ্চে কঙ্গনা রানাউতকে কর্ণ জোহরদের ‘স্বজনপোষণ’ খোঁচা মোটেই মেনে নেয়নি নেটিজেনরা। কর্ণ জোহরের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা হয়েছে টুইটারে। কর্ণের গলায় গলা মিলিয়েছিলেন যাঁরা— সেই বরুণ ধবন, সইফ আলি খানকেও ছেড়ে কথা বলেননি টুইটারেত্তিরা। আর এখানেই হয়তো বাজিমাৎ কঙ্গনার। কথায় আছে না, ‘জনতা জনার্দন’!
! ! ❤️
They tried to mock her in her absence. But audiences ridiculed them instead. Coz she resides in her fans hearts! #KanganaRanaut you rock! ❤️ pic.twitter.com/ILHjXcZj5l
— Kangana Ranaut (@KanganaTeam) July 18, 2017
এখন আশঙ্কা একটাই। আথিয়া, বরুণ, অর্জুনরা তো ইতিমধ্যেই এই ‘নেপোটিজম রকস্’ এনজয় করতে শুরু করেছেন। আগামী দশ বছরে এই প্ল্যাটফর্মে আরাধ্যা, আব্রাম, তৈমুরও কি আসবে?প্রশ্নটা কিন্তু উঠতেই পারে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy