ফার্স্ট ইম্প্রেশন ইজ দ্য লাস্ট ইম্প্রেশন...
বহুল প্রচলিত এই প্রবাদ আগেও জানতেন অত্রি। যদিও ব্যাপারটা মাথায় ঢোকে ‘টশন’ ছবিটি দেখার সময়। করিনার জিরো ফিগারের পাশাপাশি অনিল কপূরের ডায়লগ গভীর ছাপ ফেলেছিল ওঁর জীবনে। কী ভাবে?
অত্রি এই ফার্স্ট ইম্প্রেশনের ফান্ডা কাজে লাগিয়ে ডেটিং বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠলেন আস্তে আস্তে। এমনকী বন্ধুরাও ইদানীং ডেটে যাওয়ার আগে পরামর্শ নেন অত্রির। আপনিও কি সে রকমই কোনও পরামর্শদাতার সন্ধানে আছেন? ভাবছেন, কী ভাবে প্রথম দর্শনেই পার্টনারকে দিওয়ানা করে দেবেন?
অনেক সময়ই ডেটের মাধ্যমে সম্পর্কের ‘অফিশিয়াল’ শুরু হয়। তবে নিজেকে চেনানোর আগে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ আপনার প্রথম ঝলক। ডেটে যাওয়ার প্রথম শর্ত আপনাকে প্রেজেন্টেবল হতে হবে। অভিনেত্রী মিমির কথায়, “পহলে দর্শনধারী, ফির গুণবিচারি। মেয়েরা সব সময় একটু বেশি গোছানো হয়। তাই আপনি যে এই সাক্ষাতের ব্যাপারে বেশ উৎসাহী এবং যত্নশীল, সেটা বোঝানোর অন্যতম মাধ্যম আপনার পরিপাটি হাবভাব। তবে ‘ওভার-ড’ু করবেন না। এ বিষয়ে ছেলেদের একটু বেশি সতর্কতার প্রয়োজন।”
এ প্রসঙ্গে মিমি ফিরে গেলেন তাঁর হস্টেল জীবনের একটি ঘটনায়। সেটা ছিল তাঁর প্রথম ডেট। কিন্তু ঈপ্সিত পুরুষটির সঙ্গে কোনও রকম আলাপ-পরিচয় না করেই ফিরে আসেন তিনি। কেন? কারণ প্রথম দর্শনেই সে পুরুষ ‘ফেল’ করে যান। কারণ? সাজপোশাকে রুচিশীলতার অভাব।
ডেট করতে এলে পুরুষরা তা হলে কী ভাবে সাজবেন? মিমির পরামর্শ, ব্লু ডেনিম, সাদা শার্ট, ভাল সুগন্ধি যে কোনও মেয়েকেই প্রথম দর্শনে বিহ্বল করার পক্ষে যথেষ্ট। মিমির যেমন মনে হয় তাঁর ‘খুব ভাল বন্ধু’ পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর ড্রেস সেন্স দারুণ। একবার এবিপি আনন্দের, বছরশেষের অনুষ্ঠানে ‘কফি কথা’ শু্যট চলছে। আড্ডায় রাজ-মিমি দুজনেই ছিলেন। মিমি, রাজের লেগ পুল করার জন্য বলেছিলেন পরিচালক নাকি নায়িকাদের চেয়ে বেশি সময় ধরে মেক আপ করেন। রাজ একটু আধটু প্রতিবাদ করেন ঠিকই কিন্তু লক্ষ করলাম রাজ মিমির কথা বেশ উপভোগই করলেন। ভাল বন্ধু বলে কথা!
পোশাকআশাকের পরেই আসে দ্বিতীয় শর্ত। আর তা হল তথ্য জোগাড় করা। কী তথ্য? যাঁর সঙ্গে ডেটে যাচ্ছেন, তাঁর সম্পর্কে আগেভাগেই একটু হোমওয়ার্ক করে নেওয়া। মানে তাঁর সম্পর্কে খানিকটা জেনে যাওয়া। তবে কী ধরনের তথ্য জানবেন সেটাও আপনাকে চিন্তা করে নিতে হবে। ডেট করলে প্রাথমিক আড্ডা মারার একটা জারিজুরি তো থাকা দরকার। সে ক্ষেত্রে জেনে নিন যাঁর কাছে যাচ্ছেন, তাঁর ভাললাগার বিষয় কী।
প্রথম দর্শনেই ‘হৃদ্মাঝারে’ জায়গা করে নিতে অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায় এই পরামর্শই দিলেন। তিনি বলছেন, “ডেট মানে আউট অব দ্য ওয়ার্ল্ড কিছু নয়। যতটা স্বাভাবিক হয় ততই ভাল।”। তবে বলাই বাহুল্য কিছুটা নার্ভাস ফিলিং তো থাকবেই। থার্ড ইয়ারের ছাত্রী, মধুপর্ণা ডেটে যাওয়ার আগে কী বলবে আর কী বলবে না তা নিয়ে বেজায় কনফিউজড। আয়নার সামনে রিহার্সাল পর্যন্ত দিয়েছিলেন। মধুপর্ণা আর ওঁর মতো বাকিদের জন্য আবিরের পরামর্শ, “নিজের মতো থাকুন। দু’জনের আগ্রহ আছে এমন বিষয় নিয়ে কথা বলুন। জাজমেন্টাল হবেন না দয়া করে। খোলা মনে বন্ধুর সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করুন।” বাঙালির খুব প্রিয় দুই গোয়েন্দা চরিত্র, ফেলুদা এবং ব্যোমকেশ দুই চরিত্রেই অভিনয় করেছেন আবির। এঁদের দুজনের মধ্যে ফার্স্ট ইমপ্রেশন গড়তে কার ওপর বেশি ভরসা করা যায়? উত্তরে আবির বললেন, “ব্যোমকেশ রোম্যান্টিক। তার একটা ফার্স্ট ইমপ্রেশনের ব্যাপার তো থাকেই। কিন্তু ফেলুদার বিয়ে বা প্রেম নেই যা দিয়ে ওর ফাস্টর্র্ ইমপ্রেশন কেমন হতে পারে তা বোঝা যায়।”
প্রথম বার ডেট করতে গিয়ে দারুণ বাড়াবাড়ি না করাই ভাল। এমন মত পোষণ করেন আমজনতার অনেকেই। এমন একজন স্বপ্ননীল। ঠেকে শিখেছেন। তিনি একবার প্রথম ডেট করতে গিয়ে এত বেশি কবিতা বলে ফেলেছিলেন যে এক ঘণ্টা পার না হতেই সেই বান্ধবী একটা কী যেন কাজের বাহানা করে উঠে পড়েছিল। অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘আমি খুব স্মার্ট এটাও যেমন বোঝাবার প্রয়োজন নেই। তেমনি আমি খুব উদাসীন এমনটাও দেখানোর দরকার নেই। ধরা যাক আপনার ক্যাজুয়েল বা সিরিয়াস ভাব কারও পছন্দ হয়ে গেল। অথচ আপনি মোটেই ব্যক্তিগত ভাবে তেমন নন। তখন ওই অভিনয় দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এমনটাই মনে করেন পরমব্রত।
এ ছাড়া তিনি এও বললেন, মাঝে মাঝে ডেট করতে গিয়ে তৈরি হতে পারে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি। তখন কিন্তু নার্ভাস হলে চলবে না। এমনই এক ডেটের দিনের গল্প করতে করতে পরমব্রত বললেন, “হঠাৎ দেখি প্রাক্তন বান্ধবী ওই একই কফি শপে বসে আছে। সে আবার আমার টৈবিলে এসে কথাও বলে গেল। নতুন করে ডেট করতে চায় এমন আভাসও দিয়ে গেল।” এমনটা হতেই পারে। কিন্তু এমন অবস্থায় ঘাবড়ালে চলবে না। খুব স্মার্টলি পরিস্থিতিটাকে মোকাবিলা করতে হবে। হতে পারে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে নতুন বান্ধবীর আপনার প্রতি আকর্ষণ আরও বেড়ে গেল। এমনটাই বলছেন পরমব্রত।
প্রথম ডেটিংয়ের দিনটা বিশেষ হয়ে ওঠে কারণ পরষ্পরের কোনও দিকই জানা থাকে না। অনেক কিছু অজানা থাকে। অনেক চমক থাকে। ডেটিংয়ের আর এক শর্ত হল, যে সময়টা বন্ধু বা বান্ধবীর সঙ্গে কাটাতে গিয়েছেন সেই সময়টা যেন উপভোগ্য হয়ে ওঠে। দু’ জনের ক্ষেত্রেই। তার জন্য দু’জনে দু’জনকে বোঝার চেষ্টা করুন। অভিমত শুভশ্রীর। তিনি বলছেন, “যেহেতু প্রেমের শুরু বন্ধুত্ব দিয়ে, তাই ওই ভাবে ডেট করা হয়নি।” আপসোস নেই তাঁর। জানালেন শুভশ্রী। কারণ আজও ওই সব স্মৃতি খুব সুখের তাঁর কাছে। মেয়েরা এই রকমই হয়বললেন শুভশ্রী। তাঁরা চান পুরুষেরা তাঁদের প্রতি বিশেষ ভাবে নজর দিন। কিছু সারপ্রাইজ থাক মেয়েদের খুশি করার জন্য। কিছু সুখস্মৃতির জন্য।
আপনার ডেটিংয়ের সাফল্য যে রণবীর কপূরের মতো হবে এমন মাথার দিব্যি কেউ দেয়নি। তাই প্রতিদিনের জীবনে যে ব্যস্ততা সেই ব্যস্ততা ডেটিংয়েও দেখিয়ে বসবেন না। আর রোম্যান্টিক বাঙালিকে এও বলতে হবে না যে প্রেম, ভালবাসা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করার অনুভূতি কী রকম!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy