Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পুজোর শপ-টক

হাতে আর কয়েকটা দিন। তার পরেই বাঙালির আহ্লাদে আটখানা হওয়ার দিনগুলো আসছে। ষষ্ঠী থেকে দশমী, কী পোশাকে সাজবে বাঙালি, এখন চলছে তারই প্রস্তুতি পর্ব। কেনাকাটার আড়ালে কাজ করে পারিবারিক সম্পর্কের নানা সমীকরণ। পুজো-বাজারের আনাচে-কানাচে কান পাতলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়হাতে আর কয়েকটা দিন। তার পরেই বাঙালির আহ্লাদে আটখানা হওয়ার দিনগুলো আসছে। ষষ্ঠী থেকে দশমী, কী পোশাকে সাজবে বাঙালি, এখন চলছে তারই প্রস্তুতি পর্ব। কেনাকাটার আড়ালে কাজ করে পারিবারিক সম্পর্কের নানা সমীকরণ। পুজো-বাজারের আনাচে-কানাচে কান পাতলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধুমাত্র আনন্দবাজার ওয়েবসাইটের জন্য।

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ১৮:৪৮
Share: Save:

“আসলে কী জানিস, আমার বাজেট বাড়লে শ্বাশুড়িরও তো বাড়াতে হবে। বুঝতেই পারছিস...এটাই চাপের।” ফ্যাকাশে লাগল অনন্যার মুখ। বলল, “একসঙ্গে থাকার যে কী চাপ!”

কাজের ব্যস্ততা যতই থাক, পুজোর বাজারে সেই কবে থেকে অনন্যা আর আমি গড়িয়াহাট থেকে বিভিন্ন শাড়ির বুটিকে ছুটে বেড়াই। ওকে দেখলে বোঝা যায়, মানুষের মন-বদল, পরিস্থিতি-বদল পুজো শপিংকেও কেমন নানান খাতে নিয়ে চলে। শুধু অনন্যার সংলাপে নয়, কলকাতার রাস্তা থেকে শপিং মলের হিম মেজাজে এখন শুধু পুজো শপিং-এর চর্চা।

অফিস থেকে মেট্রোর ভিড় উপচে পড়া বাজার হোক বা মায়ের রান্নাঘরের মোবাইল ফোন। সর্বত্রই পুজোয় ‘কী পেলি?’ বা ‘কী নিলি?’ বা ‘কী দিলি?’র চর্চা। জেন ওয়াই থেকে আশি কেউ বাদ নেই এই শপ-চর্চায়। সারা বছর ধরে কেনাকাটা কলকাতায় চালু হলেও পুজোর বাজারের কদর কোথাও যে এতটুকুও কমেনি তার প্রমাণ আজকের কলকাতার ভিড়ে ভর্তি রাস্তাঘাট। আর এই শপিং-এর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে পারিবারিক নানা কাহিনি। অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন শপিং আর হাতা-খুন্তির জলজ্যান্ত গপ্পো কেমন করে এক ছাদের তলায় পাবেন? পেতে হয়। আর সে জন্য পাততে হয় কান। পুজো বাজারের খোলা প্রান্তরে পরিবার, বন্ধুত্বের ইকুয়েশনগুলো আরও স্পষ্ট হতে থাকে।

“ননদ আর বোনকে কি কখনও এক বাজেটে আনা যায় বল? আমি পরি না এমন ছাপাশাড়ি যে ননদ নববর্ষে দেয়, পুজোয় সস্তার চকচকে শাড়ি দিয়ে দাদার কাছে বড়াই করে, হতে পারে সে অয়নের বোন, কিন্ত আমার বাজেট বাধা।” বেশ বিরক্তিই ধরা পড়ল দন্ত চিকিত্সক অনুপমার চোখে। আসলে ট্যাব থেকে হাইরাইজ— যতই এগোই না কেন আমরা, ভাঁড়ার ঘরের চাবি আর পুজো বাজারের ছড়ি এ দু’টো এখনও মহিলাকূলের মুঠোয়, সে তিনি চাকুরিরতাই হোন বা গৃহবধূ।

লোরেটোর আঠেরো ছুঁই ছুঁই অনামিত্রা তো বলেই বসল, “বাবাদের আবার শপিং কী? পুজো তো আমার আর আমার মায়ের।” বাবা কেবল স্পনসার করবে! বেচারা পুরুষ! তাঁদের অধিকাংশই তো শপিং-এর মতো ‘মেয়েলি’ বিষয়ে নাক সিঁটকে থাকেন, আজও! কিন্তু যে সমস্ত পুরুষ শপিং-এ আগ্রহী, তাঁদের মতামতও শপিং ম্যানিয়াক মহিলাকূলের দাপটে ধোপে টেকে না।

“দেওয়া নেওয়ার চুলচেরা হিসেব মেয়েদের মতো কেউ পারে না।” সাফ জানালেন অধ্যাপিকা গার্গী রায়। “আমি তো পয়লা বৈশাখের পরতে না-পারা গিফ্টের শাড়িগুলো পুজোর লম্বা গিফ্টের তালিকায় চালান করি। আজকাল তো আর বোনাসের দিন নেই! তার উপর ইএমআই-এর মোটা অঙ্ক নিঃশ্বাস ফেলছে ঘাড়ের কাছে।পুজোয় তো দেওয়ারও শেষ নেই।এ ভাবেই ম্যানেজ করি।” এই প্রথার জেরে হোমমেকার সুদক্ষিণা জানালেন, “এক বার আমারই দেওয়া একটা শাড়ি আমার এক বোনের হাত ঘুরে ওর ননদের হাত দিয়ে আমার কাছে ফেরত আসে। জাস্ট ভাবা যায় না!”

পরিবার নিয়ে শপিং-এর চল এখন। চারতলা শপিং মলে সুখি পরিবারের কেনাকাটায় কান পাতলেই নানা রকম গালগল্প শোনা যায়। “বাবা এ কী! মা যদি এই সাদা শাড়িটা নেয় তা হলে তো ওর বাজেট নাইন থাউজ্যান্ড হয়ে যাবে! আমারও কিন্তু নাইন থাউজ্যান্ডই চাই।” দেখলাম বাবা-মায়ের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে বছর পনেরোর একটি মেয়ে তার মায়ের সাদা শাড়ি কেনা থেকে বাজেট ছাড়িয়ে যাওয়া— সব নিয়ে কমেন্ট করেই চলেছে। বাইরের কেউ শুনছে বা ভাবছে— সে সবের পরোয়া এরা করে না। আর মা, বাবা এদের মতামত নিয়েই নিজের পোশাক কেনেন। “দ্যাখ না সাদাটা মানাবে তো আমায়? আচ্ছা ঠাকুমার জন্যে কোন শাড়িটা নেব বল তো মিমি?” মিমি দেখলাম নিজের বাজেট কাট-অফ-এর ভয়ে লোকভরা দোকানে চেঁচিয়ে বলে উঠল, “ওর তো ৬টা পাওনা হল। ওকে আর দিয়ে কী লাভ?” একটু অবাক হয়েছিলাম সে দিন। এরাই বুঝি জেন ওয়াই? হবেও বা! এ রকমই বোধহয় ‘গ্লোবাল পরিবার’।

মেয়ে উন্মনা পুজোয় শাড়ি পরে। সেই কথা মাথায় রেখে নিজের শাড়িগুলোকেও একটু অন্য রকম, মানে হাল্কা চালের আদলে কেনেন মিতালি। “আসলে মা মেয়ের সম্পর্কে শাড়ি তো জড়িয়েই আছে, তাই না?” মুচকি হাসেন তিনি। “আগে ক্লাস নেওয়ার কথা ভেবে শাড়ি বাছতাম, এখন সে জায়গা নিয়েছে মেয়ের পছন্দ। আর এই জন্যেই হাল্কা শাড়ির বদলে এই বয়সে গাঢ় রঙের শাড়ি পড়ছি আমি। তবে আমাদের পুজোর বাজার হবে এক দিনেই— বারো তারিখে। উন্মনার বাবার ক্রেডিট কার্ডে হবে এ বার সকলের পুজো-বাজার। আর হিসেব মতো সেটা অক্টোবরের বারো তারিখে পাঞ্চ করলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে স্যালারি অ্যাকাউন্ট থেকে কাটবে।” হাসলেন মিতালি।

এ ভাবেই না হয় স্বস্তির হাসি আর তৃপ্তির আশ্বাসে ভরা থাক লাগাম ছাড়া এবং হিসেব মাপা পারিবারিক পুজো-বাজার। এ বারেরটা ভালয় ভালয় হয়ে যাক; আসছে বছর আবার হবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pujo marketing srobonto bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE