সহিষ্ণু: গোমাংস কাণ্ডে সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষদের হত্যার প্রতিবাদ, আমদাবাদে। ছবি: রয়টার্স
উনিশশো চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মাঝামাঝি বঙ্গভূমির প্রায় সব স্কুলেই ইতিহাসের সাধারণসম্মত প্রামাণিক পাঠ্যরূপ ছিল ‘স্বদেশ ও সভ্যতা’। বইটির লেখক পণ্ডিতপ্রবর কালিদাস নাগ, একাধারে রবীন্দ্রপরিকর, সংস্কৃতি ও আভিজাত্যে অগ্রগণ্য বাঙালি। বহুর মধ্যে ঐক্য সাধনার প্রেক্ষিতে পরমতসহিষ্ণুতা ও অসহিষ্ণুতার বৈচারিক মাপকাঠিতে কালিদাস নাগ ঐতিহাসিক চরিত্রের মূল্যায়ন করতেন। পাল রাজবংশ বৌদ্ধ পোষক হলেও সব ধর্মমতসহিষ্ণু, তবে সেন রাজবংশ একটু গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদী। বহমনী সুলতানির উজির মামুদ গাওয়ান দক্ষ শাসক, তবে অল্পবিস্তর হিন্দুবিদ্বেষী। আকবর ঐকান্তিক পরমতসহিষ্ণু, মুঘল সাম্রাজ্য ও ভারতীয় সংস্কৃতির ভিত পোক্ত করেন। নানা গুণ সত্ত্বেও আওরঙ্গজেব পরধর্মদ্বেষী, তিনি অত বড় সাম্রাজ্যকে ধ্বংসের পথে এগিয়ে দেন। সহিষ্ণুতার পক্ষে আর অসহিষ্ণুতার বিপক্ষে সওয়াল শোনাতে শোনাতে আমাদের মতো মধ্যরাত্রির সন্তানদের ভারতীয় ইতিহাস পাঠের ছক ও মন কালিদাস নাগ তৈরি করে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার সকালে পাওয়া দু’টি বিস্কুটই ছিল নিজের অর্জন
পেশা ছিল ইতিহাসের মাস্টারি করা, পড়াতে পড়াতে শিখেছি যে ভারতের ইতিহাস নানা ধর্ম সম্প্রদায় ও সাংস্কৃতিক ঘরানার মধ্যে সমঝোতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আকীর্ণ, নানা স্তরে ও নানা ক্ষেত্রে সহিষ্ণুতা ও অসহিষ্ণুতার নিয়ত টানাপড়েন চলেছে, উভয়ের সীমানা বার বার অবস্থা ও পরিবেশ বুঝে সরে গিয়েছে, প্রতিসরিত হয়েছে। যেমন কথিত আছে, নগ্নশ্রমণরা ভাড়াটে গুন্ডা লাগিয়ে বুদ্ধ-শিষ্য মৌদ্গল্যায়নকে ঠেঙিয়ে মেরে দেহকে খণ্ড খণ্ড করে ঝোপের মধ্যে ফেলে রেখেছিল। বিজ্জলের আমলে কর্নাটকে বীরশৈবরা অল্প দিনের জন্য রাজ্য ক্ষমতা দখল করে, তার প্রতিক্রিয়ায় নগরে গোঁড়াদের হাতে বীরশৈবদের ঘিরে ছোটখাটো হত্যা মহোৎসব হয়। জৈন ও কুমারিল ভট্টের শিষ্যদের মধ্যে তর্ক-মীমাংসা মাঝে মাঝেই রক্তাক্ত সংঘর্ষে পরিণত হত। পরম কারুণিক বৌদ্ধরাও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের ছোঁয়াচ থেকে মুক্ত ছিল না। বৌদ্ধ দেবদের হাতে মাঝে মাঝেই ছিন্ন ব্রহ্মা-শির ঝুলত, স্বরূপে ত্রৈলোক্যবিজয় তো শিব-গৌরীকে সানন্দে পদদলিত করতেন। তর্কভূমি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নক্ষেত্র থেকেই একরাশ বিদ্বিষ্ট বজ্রযানী মূর্তি পাওয়া গেছে। বৃন্দাবন দাস পরম বৈষ্ণব, তরুতুল্য সহিষ্ণুতা তাঁর কৃত্য, অথচ তাঁর লেখা অনুপম চৈতন্যভাগবতে মাঝে মাঝেই বিরোধী পাখণ্ডদের প্রতি বাছা বাছা গালি মণিমুক্তোর মতো ছড়িয়ে আছে। তর্কপ্রিয় ভারতীয়দের বাদ-বিসংবাদ প্রধানত সমপর্যায়ের গোত্র ও মর্যাদার লোকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। সংহিতায় বাক্পারুষ্য বা উচ্চবর্ণের প্রতি নিম্নবর্ণের চোপার শাস্তি জিভে গরম লোহার ছেঁকা। রাজসভায় বিচারমল্ল পণ্ডিতদের আনাগোনা চলত। পাশাপাশি হিন্দু নামে কথিত দণ্ড শাসিত থাকবন্দি সমাজের দৈনন্দিন আচার ও বিধিতে আগ্রাসী উচ্চবর্গ নিম্নবর্গের উপরে আধিপত্য কায়েম রাখত, অসম সমাজ ব্যবহারের পক্ষে সওয়ালে স্মৃতিশাসন ও ন্যায়কথন পরস্পরকে জোরদার করত। এই দলনের নানা নিদর্শন সে কালে কবীর বা বেমানার বচনে, এ কালে জ্যোতিবা ফুলে বা অম্বেডকরের রচনাতে পাওয়া যাবে।
সহিষ্ণুতা বা অসহিষ্ণুতার ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার তালিকা বানিয়ে মানদণ্ডে উভয়ের তুল্যমূল্য বিচার করা উদ্দেশ্য নয়। শুধু মনে রাখা দরকার যে উভয়েরই সীমা আছে, পৌরাণিক কৃষ্ণ শিশুপালের মাত্র একশত অপরাধ সহ্য করেছিলেন। অনেক সময় সবলের দাপট দায়ে পড়ে দুর্বল সহ্য করে। কখনও কখনও অর্থনীতিতে নির্ভরশীলতার জন্য সমঝোতা চলে, যেমন মুঘল আমলে জাহাজিরা মুসলমান, কিন্তু বাণিজ্যে কর্জ জোগাত হিন্দু বানিয়া, আওরঙ্গজেবের ফতোয়া এই পারস্পরিক সহযোগিতায় একটুও চিড় ধরায়নি, অন্যথায় বন্দর সুরাতের বাণিজ্য লাটে উঠত। ঠিক আজকের তুলনা মনে আসে, উত্তরপ্রদেশে গরু কাটে মুসলমান কসাইরা, কিন্তু মাংস ব্যবসায়ের বড় বড় লগ্নিকারকের বেশির ভাগই ধর্মাচরণে হিন্দু। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সামাজিক ও দৈনন্দিন আচরণে পারস্পরিক প্রত্যাশার টানে গোষ্ঠীর মধ্যে সাংস্কৃতিক অন্বয় হয়। খাজা মৈনুদ্দিন চিশতি কুতব-ই-হিন্দ, লোকপ্রত্যাশায় তাঁর বরকতে যে কোনও মুশকিলের আসান হয়, তাঁর মাজারে চাদর চড়াতে কয়েকশো বছর ধরে সর্বশ্রেণির হিন্দু মুসলমানের ভিড়।
নবম শতকে কাশ্মীরের নৈয়ায়িক জয়ন্ত ভট্ট সহিষ্ণুতার পক্ষে ‘আগমডম্বর’ নামে একটি আদাবি নাটক লিখেছিলেন। নাটকে নানা সাম্প্রদায়িক মতের আপেক্ষিক সত্যতা ও বিচারমন্যতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। যে কোনও সম্প্রদায়ের যাথার্থ্যের পক্ষে নিরঙ্কুশ দাবি অহেতুক বিক্ষোভের সম্ভাবনা তৈরি করে। ওই নাটকেও নীলাম্বর সম্প্রদায়ভুক্ত যথেচ্ছবিহারী সংগীতবিলাসী একটি মাত্র বস্ত্র আবরণে আচ্ছাদিত মিথুনদের সঙ্গে সঙ্গে দণ্ড দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় কারণ যুগলরা সমাজ ধর্মে বিপর্যয় এনে ভারসাম্য নষ্ট করে। দৈনন্দিনতায় সামাজিক ভারসাম্য রক্ষাই সহিষ্ণুতা, অসহিষ্ণুতার প্রয়োগসীমানা নির্ধারণ করে।
ভট্ট জয়ন্তের ধারণায়, গোষ্ঠীপতিদের নিয়ন্ত্রণ ছাড়িয়ে আচরণে বাড়াবাড়ি ঘটলে রাজদণ্ডই ভারসাম্যের রক্ষক।
আরও পড়ুন: দেখুন স্বাধীনতার প্রথম সকালের সেই দুর্লভ মুহূর্তগুলো
সারা ভারত জুড়ে ধর্মসম্প্রদায়গুলির আচরণ ও মতচর্চায় ভারসাম্যের রাজনীতি মোগলাই শাসনে ভালমত কায়েম হয়েছিল। আত্মজীবনীতে জাহাঙ্গির বলেন যে আকবরের শাসনে নানা সম্প্রদায় যে ভাবে নির্বিবাদে ধর্মচর্চা ও মতবিনিময় করেছে, তার সমসাময়িক তুলনা অন্য কোনও রাজত্বে নেই। আওরঙ্গজেবের আমলে জিজিয়া কর ফের লাগু করার বিরুদ্ধে শিবাজি, রাজসিংহ বা যশোবন্ত সিংহ, যে কোনও কারও নির্দেশসাপেক্ষে লেখা এক পত্রনবিশের চিঠি একাধিক অঞ্চলে পাওয়া গিয়েছে। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছিল, কয়েক প্রজন্ম ধরে গড়ে ওঠা ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতা ও প্রশাসনিক ভারসাম্য অবিবেচক আলমগির নষ্ট করেছেন, তাঁর অসহিষ্ণু নীতির নানা কুফলের ফিরিস্তিও দেওয়া হয়। শেষে পত্রে লেখা হয় যে ইসলাম ও কুফর— দুই একই স্রষ্টার সৃষ্টি, মন্দিরে ঘণ্টাধ্বনি ও মসজিদে আজানের আহ্বান একই স্রষ্টার উদ্দেশে নিবেদিত। স্রষ্টা চিত্রকর, দুই বিপরীত রঙের মিশেলে সৃষ্টিপট এঁকেছেন। গোটা সপ্তদশ শতকে মানবিক সহিষ্ণুতা ও রাজনৈতিক মান্যতার এই রকম ধর্মিষ্ঠ দলিল পাওয়া একান্ত দুর্লভ।
দুশো বছরের ইংরেজ শাসনে আইনি সংস্কার, আদমশুমারি, কমিউনাল অ্যাওয়ার্ড, জাতি-বৈঠক ইত্যাদি নানা কলকবজার মাধ্যমে শহর, মফস্সল ও গ্রামে জাতপাত ও গোষ্ঠীগুলোকে ভালমতো দাগানো হয়, চাগিয়ে ওঠা গোষ্ঠী-কর্তৃত্ব প্রশাসনিকতার অঙ্গেও পরিণত হয়। নবোত্থিত ইংরেজি-শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভারতবোধ ও নিজ নিজ সংস্কৃতির অস্মিতাকেও ভেদাভেদের ছকে কাজে লাগানোর চেষ্টা চলে। পরিণামটা সবার জানা, গাঁধীর রাজনৈতিক ব্যর্থতা, দ্বিজাতি তত্ত্বের জয়, রক্তক্ষয়ী দেশভাগ আর আমাদের স্বাধীনতা লাভ।
ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে প্রজা পরিণত হল নাগরিকে, সে একক ও স্বতন্ত্র, ধর্মিষ্ঠ থেকে ধর্ম-উত্তরিত। নাগরিকের অভিরুচি স্ব-অর্থ সাপেক্ষ, অন্য বুদ্ধি নিরপেক্ষ। এহেন আদর্শায়িত নাগরিকদের ইচ্ছাজোটে তৈরি হয় নেশন বলে এক সমূহের কল্পসত্তা, সেই সত্তার প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতাবান রূপ নেশন স্টেট, জাতীয় রাষ্ট্র। সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে ওই রাষ্ট্রের সরকার নির্বাচিত হয়। ভারতীয় সংবিধানের মডেলটি পাশ্চাত্যের আধুনিক রাষ্ট্র, অম্বেডকরের চিন্তায় নানা অসম অন্বয়ে বিন্যস্ত ভারতীয় সমাজের পরিবেশে প্রতিনিধিত্বমূলক প্রজাতন্ত্র গড়ে তোলার একটি ভীম প্রয়াস। সংসদীয় রাজনীতির অক্ষক্রীড়ায় নানা গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, জাতপাতের ভোটব্যাংক তৈরি হল, উন্নয়নের টোপ, বঞ্চনার ক্ষোভ, সংস্কারের দাবি নানা সামাজিক কৌমের মধ্যে নতুন সম্পর্কের খতিয়ান তৈরি করেছিল। সংসদীয় বিতর্ক থেকে দাঙ্গা ও আন্দোলন বিস্তীর্ণ অঞ্চলের গণপরিসরে ছড়িয়ে পড়ত। স্বাধীনতার পরে অসম সামাজিক পরিবেশে জাতীয় সত্তার সংহত সাংবিধানিক অবয়বে মাঝে মাঝেই চিড় দেখা যায়। দশকের পর দশকে সংরক্ষণ, নানা কমিশনের অনুদান ইত্যাদি প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাজ সারা হয়েছে।
গত দশক ধরে নানা স্তরে নানা ভাবে জাতীয়তাবাদের নির্মিতিতে যে বিশাল সাংস্কৃতিক বিনিয়োগ চলছিল, একবিংশ শতকে তারই এক বিশেষ ফল স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের কর্মকাণ্ড ও বিজেপির রাজনীতি। পুঁজির আক্রমণ ও কেন্দ্রীয় বাজেটে পুষ্ট শক্তিশালী সামরিক বাহিনী চায় কেন্দ্রীভবন, সেই ঠেলাতে জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের দাবি হল একক নাগরিকের নিঃশর্ত আনুগত্য। আধিপত্যকে পরিণত করতে হবে সর্বেশ্বরতায়, নইলে খাঁই মিটবে না। ওই উদ্দেশ্যে মননে ও কর্মে জাতীয় সংস্কৃতির শুদ্ধ রূপ স্থাপনের নানা চেষ্টা চলে। রূপটা শাশ্বত ও চিরকেলে, আদি ও নিত্য, সেই রূপের নামই হিন্দু। বাকি সব যোগ-বিয়োগ ইতিহাসের কারসাজি, বিক্ষিপ্ত ও প্রক্ষিপ্ত, অতএব ওই ইতিহাসটাই খারিজযোগ্য। এই যুক্তিতেই উত্তরকাণ্ড বর্জিত রামায়ণের বিশুদ্ধ সংস্করণ নির্মিতির প্রাতিষ্ঠানিক ক্রিয়াকাণ্ড শুরু হয়েছে। পাশাপাশি জিএসটি পণ্য বাজারের একীভবন করছে, প্রস্তাব এসেছে, মৃত্যুর শংসাপত্রেও মৃতের আধারকার্ড নম্বর লাগবে। সর্বেশ্বরতার ঈপ্সায় কিলিয়ে কাঁঠাল পাকাবার এই রকম উদাহরণ আর কী হতে পারে?
পরিণামে দৈনন্দিন জীবনে সহিষ্ণুতার পরিসর সংকুচিত হচ্ছে, সম্পর্কগুলি টানটান, সামাজিক স্থিতিস্থাপকতা কমছে। এক পক্ষে, দাদরিতে এক মুসলমান পরিবারের সাম্প্রতিক আর্থিক সচ্ছলতায় ঈর্ষান্বিত গ্রামবাসীরা বাড়িতে গোমাংস রাখার মিথ্যা অজুহাতে পরিবারপ্রধানকে মেরে দেয়, কারও গায়ে অপর গোষ্ঠীর ব্যবহারলক্ষণ দেগে দিলেই যেন প্রতিবেশী খুনের দায় মকুব হয়। মথুরাগামী ট্রেনে ইদের কেনাকাটা সেরে ঘর-ফিরতি এক নিরীহ যাত্রীকে ভিন্নধর্মীরা হত্যা করে, যে কোনও অছিলায় কোনও এক অপরকে নিকেশ করলে নিজস্ব জাতিসত্তার বীরধর্ম তৃপ্ত হয়। অন্য পক্ষে, বৃহৎ জাতিসত্তার আগ্রাসন অন্য অন্য গোত্রের আত্মসত্তাকেও অসহিষ্ণু করে তোলে, গোষ্ঠী অনুমোদিত ব্যবহারের কোনও ব্যতিক্রম সহ্য করলে যেন সেই সত্তা দুর্বল হয়ে পড়বে। উপন্যাসে দলিত সত্তা অবমাননার দায়ে পেরুমল মুরুগানের মতো লেখককে দলিত গোষ্ঠী হেনস্থা করে, ঔরঙ্গাবাদে তসলিমা নাসরিনের একান্ত ব্যক্তিগত ভ্রমণও এক দল গোঁড়ার বিক্ষোভে বাতিল হয়। উলটো উপপত্তিও আছে। কর্নাটকে লিঙ্গায়েতরা হিন্দু ধর্মের বাইরে স্বতন্ত্র ধর্মগোষ্ঠী রূপে সাংবিধানিক পরিচিতির জন্য আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, ভোটপ্রত্যাশী বিজেপি শঙ্কিত, যেন তেন প্রকারে লিঙ্গায়েতদের হিন্দু ধর্মের ছাতার মধ্যে রাখতে হবে। টানাটানিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌল আদর্শ, ব্যক্তির স্ব পরিসরের মর্যাদা, সেটাই নাকচ হয়ে যাচ্ছে।
স্বাধীনতা প্রাপ্তির সত্তর বছরে পাল্লাটা অসহিষ্ণুতার দিকে ভারী, সোশ্যাল মিডিয়ার বড় অংশ তার উপর পাষাণ চাপাচ্ছে। সংকটমোচনের কোনও উপায়ই আমার জানা নেই। তবে সহিষ্ণুতা- অসহিষ্ণুতার টানাপড়েনে আমার মতো প্রত্যেকের নাম ও দায় আছে। শোনার অভ্যাস শোনানোর প্রাক্শর্ত। শোনার দায় থাকলেই শোনানোর দাবির জন্ম হয়। না শুনলে কী ভাবে অসহিষ্ণুতাকে বুঝব, তার মোকাবিলায় নিজের কথা বলব? চারপাশে গজিয়ে ওঠা রকমারি ছোট-বড় রাষ্ট্রভক্ত সস্তা ক্রেয়নদের জবরদস্ত বাণী শুনতে শুনতে, ফরমান পড়তে পড়তেই তো আজকের আন্তিগোনে সহিষ্ণু ও অন্তর্মুখী স্বরাজের পক্ষে নিজস্ব বয়ান তৈরি করতে থাকে, কেউ শুনতে চাইলে শোনানোর প্রস্তুতিও নেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy