সেরা রায়না: ৪৬ বলে ৮৪
গুজরাত লায়ন্স জয়ী ৪ উইকেটে
ইডেন গ্যালারির করতালিতেই তখন তিনি মাঠ ছাড়ছেন। মুখে তৃপ্তির ছাপ। ডাগআউটে গিয়ে বসার আগে সতীর্থরা পিঠ চাপড়ে দিলেন।
চেন্নাই সুপার কিংগসের জার্সি গায়ে তাঁর সে সব সোনালি দিন আজ অতীত। নতুন দলের জার্সিতে এ বারের আইপিএলে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে পারেননি এখনও। মনে করা হচ্ছিল, তা হলে কি তাঁর সোনার সময় শেষ?
কী ভুলটাই না ভাবা হয়েছিল।
কথা যখন উঠছে আইপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্কোরারের, তখন সেই ক্রিকেটারকে কত দিন আর আটকে রাখা যায়। কথাতেই তো আছে, ফর্ম সাময়িক কিন্তু প্রতিভা চিরস্থায়ী। তাঁর স্বপ্নের ইনিংসেই তো ইডেন নামক দুর্গ থেকে তিন পয়েন্ট নিয়ে গেল গুজরাত লায়ন্স। তাঁর নৃশংস ব্যাটিংয়েই ব্যাঙ্গালোর ম্যাচের আগে থামল নাইট-এক্সপ্রেস।
তিনি— সুরেশ রায়না।
রবিবার বিরাট কোহালির ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে মহারণে নামবে নাইট রাইডার্স। বিরাটের আরসিবি-ও কলকাতায় চলে এল শুক্রবার। যার আগে গুজরাত ম্যাচকে ধরা হয়েছিল নাইটদের মনোবল বাড়ানোর লড়াই। কিন্তু সেই পরীক্ষাতে পাস করল কোথায় কেকেআর? কোহালিকে দেখার আগে বিধ্বংসী এক রায়নাকে দেখলেন নাইটরা। যাঁর ক্রুদ্ধ গর্জনে ব্যাঙ্গালোর ম্যাচের আগে নাইট আকাশে লাগল অমাবস্যা।
এই পরিস্থিতি অবশ্য আসতই না। মাত্র এক রানেই নারাইনের বলে রায়নার ক্যাচ ফেলেন উথাপ্পা। পনেরো রানেও আবার দ্বিতীয় বার প্রাণ ফিরে পান রায়না। ওকসের বলে রায়নার ক্যাচ ফস্কান ইউসুফ পাঠান। কে জানত এই দু’টো ভুল গোটা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। উল্টোদিকে তখন ব্রেন্ডন ম্যাকালাম, ঈশান কিষাণরা একের পর এক ফিরছেন আউট হয়ে। কিন্তু রায়না তাঁর খেলাটা খেলে গেলেন। সাকিব আল হাসানের মতো বোলারকে দেখে খেললেন। আবার ওকস, কোল্টার নাইলের ওভারে চালিয়ে খেললেন। ১৮৭ তাড়া করতে নেমে সব সময় আস্কিং রেটের বেশিই রানটা রেখে গেলেন। ৯টা চার ও ৪টে ছক্কা মেরে ৪৬ বলে ৮৪ করলেন রায়না।
টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন রায়না। ঘাসের পিচে রান তাড়া করতে চেয়েছিলেন তিনি। তিন ওভার শেষে মনে হচ্ছিল সিদ্ধান্তটা হয়তো ভুল হল। কারণ গুজরাত ফিল্ডারদের মুখে তখন আতঙ্কের ছাপ। নারাইন-ঝড় থামানোর কোনও উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলেন না ফকনার-থাম্পিরা। প্রথম তিন ওভারে ন’টা বাউন্ডারি মেরে ৪২ করেন নারাইন।
ঠিক সেই সময় বল হাতে গুজরাতের ত্রাতা হয়ে উঠলেন রায়না। নারাইনকে আউট করেন তিনি। সানি আউট হওয়ার পরে রবিন উথাপ্পা নাইট ইনিংসকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান। ইডেনে বড় রান করা এখন অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে উথাপ্পার। ৭২ করে কেকেআরকে ১৮৭ রানে পৌঁছতে সাহায্য করেন তিনি।
আগমন: শুক্রবার কলকাতায় এসে পড়লেন কোহালি। ছবি: সৌভিক দে।
রান তাড়া করতে নেমে প্রথম পাঁচ ওভারে গুজরাত তোলে ৬২। অ্যারন ফিঞ্চ আর ব্রেন্ডন ম্যাকালাম চার-ছয় দিয়ে শুরু করেন। নাথান কোল্টার নাইলের সৌজন্যে সেই পার্টনারশিপ ভাঙে। ফিঞ্চের উইকেট তোলেন কোল্টার নাইল। পাঁচ ওভার শেষে বৃষ্টিতে প্রায় আধঘণ্টা ম্যাচ বন্ধ থাকে। ম্যাচ শুরু হওয়ার পরে গুজরাত দ্রুত দু’টো উইকেট হারায়। ম্যাকালাম ও দীনেশ কার্তিক। রায়নাকে বেশিক্ষণ ক্রিজে সঙ্গ দিতে পারেননি ইশান কিষাণ ও ডোয়েন স্মিথও। ‘কেকেআর, কেকেআর’ চিৎকারে ইডেন গ্যালারি তখন যেন আত্মবিশ্বাসী গম্ভীরদের জয় দেখেই বাড়ি ফিরবে। কিন্তু হল কোথায়।
গুজরাতের উইকেট পড়তে থাকলেও রায়না অটল ছিলেন ক্রিজে। বাকিরা লিগের ‘লাস্ট বয়ের’ মতো হাবভাব দেখালেও রায়না ছিলেন বিশ্বাসী। হারার আগে হারব না, মরার আগে মরব না— এই মানসিকতাটাই ফুটে উঠল রায়নার ব্যাটিংয়ে। আঠারো ওভারে রায়না আউট হলেও তখন যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। রবীন্দ্র জাডেজা বাকি কাজটা করে আসেন। দশ বল বাকি থাকতেই ফিনিশিং লাইনে পৌঁছয় গুজরাত।
হারের ময়নাতদন্ত করতে বসলে তিনটে কারণ পরিষ্কার হবে। এক, নাইটদের স্পিনাররা অকেজো ছিল। নারিনের মতো বোলার চার ওভারে দিলেন ৪২ রান। দুই, উমেশ যাদবের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার এখনও ফর্ম খুঁজে পাননি। তিন, খারাপ ফিল্ডিং।
ম্যাচ শেষে ওকসের মুখে তখন হতাশার ছাপ। নারাইনও ফ্যাকাশে মুখে দাঁড়িয়ে। গম্ভীরও চিন্তিত হয়ে মাঠ ছাড়ছেন। চিন্তিত হওয়াই তো স্বাভাবিক। রবিবারই নাইটদের জন্য অপেক্ষা করছেন বিরাট কোহালি।
স্কোরকার্ড
কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৮৭-৫ (২০)
গুজরাত লায়ন্স ১৮৮-৬ (১৮.২)
কলকাতা নাইট রাইডার্স
নারাইন ক ফকনার বো রায়না ৪২
গম্ভীর ক রায়না বো ফকনার ৩৩
উথাপ্পা ক ম্যাকালাম বো প্রবীণ ৭২
মণীশ বো থাম্পি ২৪
ইউসুফ ন.আ ১১
সূর্যকুমার রান আউট ১
সাকিব ন.আ ১
অতিরিক্ত ৩
মোট ১৮৭-৫
পতন: ৪৫-১ (সুনীল নারাইন ৩.২), ১১৪-২ (গৌতম গম্ভীর, ১১.৩), ১৬৯-৩ (রবিন উথাপ্পা, ১৮.২),
১৮৪-৪ (মণীশ পাণ্ডে, ১৯.৩), ১৮৬-৫ (সূর্যকুমার যাদব, ১৯.৫)।
বোলিং: প্রবীণ কুমার ২-০-২৪-১, জেমস ফকনার ৪-০-৩৮-১, বাসিল থাম্পি ৪-০-৪৪-১,
সুরেশ রায়না ২-০-১১-১, ধবল কুনকার্নি ২-০-২৩-০, রবীন্দ্র জাডেজা ৪-০-৩১-০, ডোয়েন স্মিথ ২-০-১৪-০।
গুজরাত লায়ন্স
ফিঞ্চ ক পাণ্ডে বো কোল্টারনাইল ৩১
ম্যাকালাম ক পাণ্ডে বো ওকস ৩৩
রায়না ক পাণ্ডে বো কুলদীপ ৮৪
কার্তিক ক গম্ভীর বো কোল্টারনাইল ৩
কিষাণ ক উমেশ বো কুলদীপ ৪
স্মিথ বো উমেশ ৫
জাডেজা ন. আ ১৯
ফকনার ন. আ ৪
অতিরিক্ত ৫
মোট ১৮৮-৬
পতন: ৪২-১ (অ্যরন ফিঞ্চ, ৩.৩), ৭৩-২ (ব্রেন্ডন ম্যাকালাম, ৬.২), ৮১-৩ (দীনেশ কার্তিক,৭.২),
১১৫-৪ (ঈশান কিষাণ, ১১.৪), ১২২-৫ (ডোয়েন স্মিথ, ১২.৪), ১৮০-৬ (রায়না, ১৭.৫)।
বোলিং: সাকিব আল হাসান ৩-০-৩১-০, সুনীল নারাইন ৪-০-৪২-০, নাথান কোল্টার নাইল ৩.২-০-৪১-২,
ক্রিস ওকস ২-০-২০-১, কুলদীপ যাদব ৪-০-৩৩-২, উমেশ যাদব ২-০-১৭-১।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy