ইডেনে ম্যাচ জিতিয়ে নায়ক পুণের রাহুল ত্রিপাঠী। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমি
মাত্র সাত দিনে কত কিছুই না পাল্টে যায়।
এক সপ্তাহ আগে মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে তখন কেকেআর শিবিরের আমেজটা ছিল উৎসবের। গৌতম গম্ভীরের মতো নিশ্চিন্ত ক্রিকেটার আর কেউ ছিলেন না। প্লে-অফ তখন যেন কড়া নাড়ছে।
ফাস্ট ফরোয়ার্ড করা যাক। বুধবারের ইডেনের কলকাতা নাইট রাইডার্সের ছবিটা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। উৎসবের জায়গায় নাইট ডাগআউটে বিমর্ষ সব মুখ। হাসিখুশি সেই কেকেআর ক্যাপ্টেনের কপালে ভাঁজ। মুখে চিন্তা। এক কোণায় দাঁড়ানো জাক কালিস আজ আর হাসছেন না। বরং তাঁর মুখে হতাশার ছবি। নাইট সংসারে হঠাৎ করেই যেন ব্যর্থতা এসে হানা দিয়েছে। প্লে-অফে উঠতে পারব তো? তীরে এসে তরি ডুববে না তো? গোটা মরসুম দৌড়ে এগিয়ে থেকে শেষমেশ সেই কেউ টেক্কা দিয়ে যাবে না তো? বুধবার রাতের ইডেনে এ সমস্ত প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল।
ছ’দিন আগেই তো এই পুণের বিরুদ্ধে নিঁখুত একটা ব্যাটিং পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছিল কেকেআর। উথাপ্পা ও গম্ভীরের ব্যাটে সে দিন যেন ধ্বংস লেখা ছিল। কিন্তু এ দিন সেই নাইট ব্যাটিংয়ে ফুটে উঠল বিপর্যয়। যেখানে ওপেনার করলেন শূন্য রান। অধিনায়ক তিরিশেও পৌঁছতে পারলেন না। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান ছিল ৩৭। ইউসুফ পাঠান, ক্রিস ওকসের মতো বড় নামেরা ফের হারিয়ে গেলেন।
দাপট: পুণে জয়ের অন্যতম কারিগর রাহুল ত্রিপাঠীর সঙ্গে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন স্মিথ। কেকেআর প্রথম ধাক্কাটা খায় যখন গম্ভীর টসের সময় জানিয়ে দেন চোটের জন্য দলে নেই রবীন উথাপ্পা। দলের সেরা ব্যাটসম্যান না থাকার মানসিক ধাক্কাটাও স্পষ্ট ছিল।
আরও পড়ুন: প্লে-অফের আগে হয়তো উথাপ্পা নেই
ওপেনার নারাইন পাঁচটা ডট বল খেলে ক্যাচ তুলে দেন উনাদকাটের হাতে। উথাপ্পার জায়গায় নামেন শেলডন জ্যাকসন। কিন্তু উথাপ্পার মতো ধৈর্য্য ধরে ইনিংস গড়ে তোলা তো দূর। যুবরাজ সিংহ, রবীন্দ্র জাডেজার ‘হিট উইকেট’ ক্লাবে নাম লিখিয়ে এলেন জ্যাকসন। পুণের সেই বিধ্বংসী গম্ভীর ইডেনে হারিয়ে গেলেন। ইউসুফ পাঠান করলেন মাত্র চার। ক্রিস ওকস এক রানে হলেন রান আউট। কলিন ডে গ্র্যান্ডহম ও মণীশ পাণ্ডের পার্টনারশিপ কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যায় নাইটদের ইনিংস। সূর্যকুমার যাদব ১৫০ পার করতে সাহায্য করেন। তাতেও কোনও বড় ইনিংস দেখা যায়নি। নাইট ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা দিতে হলে একটা কথা জলবৎ তরলং হয়ে যাচ্ছে— কোনও এক আন্দ্রে রাসেলের অভাব এখনও টের পাচ্ছে কেকেআর।
ম্যাচের আগে সবার নজর ছিল পুণের বেন স্টোকসের ওপর। তবে ইডেনে সুপারজায়ান্ট হয়ে উঠলেন কর্নেল পুত্র। হ্যাঁ, রাহুল ত্রিপাঠী। আইপিএল গ্রহে এতদিন তিনি ছিলেন উঠতি একজন প্রতিভা। কিন্তু ইডেন তাঁকে করে তুলল তারকা। স্টিভ স্মিথ(৯), অজিঙ্ক রাহানে(১১), বেন স্টোকস (১৪), মহেন্দ্র সিংহ ধোনির(৫) মতো তাবড় তাবড় নাম তখন একের পর এক আউট হচ্ছেন। কিন্তু ত্রিপাঠি যেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন পুণেকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়বেন। কী ব্যাটিংটাই না করলেন। কুল্টার নাইল থেকে কুলদীপ যাদব। সবাইকে বলে বলে ছয় মারলেন। আস্কিং রেটটা বজায় রাখলেন। ৫২ বলে করলেন ৯৩। প্রথম দশ ওভারেই ম্যাচটা বের করে নিলেন। ক্রিস ওকস আর উমেশ যাদবের মতো বোলার শেষ ওভার পর্যন্ত ম্যাচটা নিয়ে গেলেও এত কম রানে কি আর বাঁচানো যায় দলকে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy