হারালাম যাঁদের

শঙ্খ ঘোষ

৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২-২১ এপ্রিল,২০২১

প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে লিখেছেন। তাঁর কবিতা বাঙালি মননকে আবিষ্ট করে রেখেছে। কখনও সামাজিক অসঙ্গতি, কখনও শাসকের ঔদ্ধত্যের দিকে স্থিতপ্রজ্ঞ ঋষির মতো অঙ্গুলিনির্দেশ করেছেন। রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ হিসাবেও সমাধিক খ্যাতি তাঁর। পদ্মভূষণ, দেশিকোত্তম, জ্ঞানপীঠ, আনন্দ পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি-সহ বহু সম্মানে ভূষিত। করোনায় আক্রান্ত হয়ে জীবনাবসান।

সুব্রত মুখোপাধ্যায়

১৪ জুন, ১৯৪৬–৪ নভেম্বর, ২০২১

পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী।১৯৭২ সালে ছাত্রনেতা সুব্রতকে নিজের মন্ত্রিসভায় নেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। বাম জমানায় তিনিই কলকাতার প্রথম বিরোধী দলের মেয়র। রাজ্য বিধানসভা এবং কলকাতা পুরসভায় দু’টি পৃথক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্বও করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। শ্রমিকনেতার পাশাপাশি প্রশাসক হিসেবেও কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।

স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত

২২ মে, ১৯৫০–১৬ জুন, ২০২১

যেমন নাটকের মঞ্চ দাপিয়ে অভিনয় করেছেন, তেমনই স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন সত্যজিৎ রায়ের ‘ঘরে বাইরে’ ছবির ‘বিমলা’ চরিত্রের জন্য। দীর্ঘ ৩১ বছর পরে সৌমিত্রর সঙ্গেই পর্দায় ফিরেছিলেন স্বাতীলেখা। ‘বেলাশেষে’ ছবিতে সৌমিত্র-স্বাতীলেখার রসায়ন দেখে মুগ্ধ হন দর্শকরা। ‘বেলাশুরু’-তে ফের অভিনয় করেন তাঁরা। কিন্তু ছবি মুক্তির আগেই চলে গেলেন নায়ক-নায়িকা।

বুদ্ধদেব গুহ

২৯ জুন ১৯৩৬-২৯ অগস্ট,২০২১

অরণ্য সাহিত্যকে বিভূতিভূষণ-পরবর্তী সময়ে ভিন্নতর মাত্রায় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর লেখায় বাঙালি পাঠক নিজের শর্তে বাঁচতে চাওয়া এক প্রেমিককে আবিষ্কার করেছে। পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হলেও লেখালিখির পাশাপাশি গান গেয়েছেন। বিশেষত টপ্পা, পুরাতনী। ছবিও এঁকেছেন। শিকার করেছেন। ঘুরে বেড়িয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে।

আখতার আলি

৫ জুলাই, ১৯৩৯–৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

১৯৫০ সাল থেকে দীর্ঘ সময় সিঙ্গলস এবং ডাবলসে ডেভিস কাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, প্রেমজিত লাল, নরেশ কুমারদের সঙ্গে খেলেছেন। যুব জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। যুব উইম্বলডনে সেমিফাইনাল খেলেছিলেন। লিয়েন্ডার পেজ, রমেশ কৃষ্ণনরা উঠে এসেছেন তাঁর হাত ধরেই। সানিয়া মির্জাকেও পরামর্শ দিয়েছেন। ৮১ বছর বয়সে প্রয়াত।

শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

২৫ এপ্রিল, ১৯৪৬-২৩ মে, ২০২১

ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারের প্রাক্তন অধিকর্তা শ্রীকুমার তাঁর চাকরিজীবন শেষ করেন দেশের পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান পদে থেকে। আইআইটি খড়্গপুরের প্রাক্তন ছাত্র। ধাতুনিষ্কাশনবিদ্যায় প্রথম সারির বিজ্ঞানী। ২০০৫ সালে ‘পদ্মশ্রী’ পান। ১৯৮৯ সালে বিজ্ঞান গবেষণায় অসামান্য ভূমিকার জন্য পেয়েছিলেন ‘ভাটনগর পুরস্কার’।

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত

১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৪-১০ জুন, ২০২১

প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি ‘দূরত্ব’। ‘স্বপ্নের দিন’ এবং ‘উত্তরা’ ছবি পরিচালনার জন্য জাতীয় পুরস্কার পান। এ ছাড়া তাঁর পরিচালিত ১০টি ছবি নানা বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে (৫ বার সেরা ছবি, ৩ বার সেরা বাংলা ছবি)। তাঁর প্রতিভার ছোঁয়া পেয়েছে সাহিত্য জগৎও। কবি বুদ্ধদেবের কলমে বেশ কিছু কবিতা জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

গৌরী ঘোষ

৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৮–২৬ অগস্ট, ২০২১

‘কর্ণকুন্তী সংবাদ’-এর অবিসংবাদী ‘কুন্তী’। বাচিকশিল্পী গৌরী ঘোষকে ছাড়া যে আবৃত্তি অন্ধকার! আকাশবাণীর ঘোষক হিসেবে আবৃত্তিকার দম্পতি পার্থ-গৌরীর পেশাজীবন শুরু। দীর্ঘ দিন ধরে তাঁরা আকাশবাণী কলকাতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দেশে এবং বিদেশে বহু অনুষ্ঠানও করেছেন। শিক্ষিকা হিসেবে তৈরি করে গিয়েছেন বহু ছাত্রছাত্রীকে।

ব্রজ রায়

৩০ নভেম্বর, ১৯৩৬ -১৩ মে, ২০২১

পশ্চিমবঙ্গে মরণোত্তর দেহদান আন্দোলনের পথিকৃৎ এবং নিরলস কর্মী। ম়ৃত্যু করোনায়। ফলে তাঁর মরদেহই দান করতে পারেননি বন্ধু-পরিজনরা। যৌবনে অনন্ত সিংহের ‘ম্যান-মানি-গান’-এর সক্রিয় সদস্য। জেলে ছিলেন বেশ কয়েক বছর। ছাড়া পাওয়ার পর মানবাধিকার আন্দোলনে যুক্ত হন। মরণোত্তর দেহদান নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে ‘গণদর্পণ’ পত্রিকা প্রকাশ করেন।

ইন্দ্রজিৎ দেব

১৯৪৮-৩০ জানুয়ারি, ২০২১

ডিডি বাংলায় ‘তেরো পার্বণ’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ইন্দ্রজিৎ। সেটিই টলিপাড়ার প্রথম টেলিভিশন ধারাবাহিক। পরবর্তী কালে টলিউডের বহু বিখ্যাত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। অভিনয় করেছেন বহু ছবি ও ধারাবাহিকে। ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’ ধারাবাহিকেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। দীর্ঘ দিন শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ছিল কিডনির সমস্যাও।

স্বপন চক্রবর্তী

২৯ জুলাই,১৯৫৪–২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

যাদবপুরে তাঁর ছাত্ররা বলতেন, তিনি শেক্সপিয়র উল্টো দিক থেকেও মুখস্থ বলতে পারেন! প্রেসিডেন্সি কলেজ আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পর যাদবপুরে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেন। অবসর নেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ডিফিল গবেষণা করেছিলেন অক্সফোর্ডে। জাতীয় গ্রন্থাগারের অধিকর্তাও ছিলেন। বহুমুখী পাণ্ডিত্যের অধিকারীপ্রয়াত হলেন কোভিড-পরবর্তী জটিলতায়।

শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়

১৫ অগস্ট, ১৯৩১-২০ ডিসেম্বর, ২০২১

কবি ও গদ্যকার শরৎকুমার পেশায় ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকাগোষ্ঠীর প্রথম প্রজন্মের এই কবির সাহিত্য-যাত্রা শুরু ‘সোনার হরিণ’ কাব্যগ্রন্থ দিয়ে। কৃত্তিবাসী-বোহেমিয়ানার অন্যতম শরিক। গদ্যেও স্বচ্ছন্দ শরৎকুমারের প্রথম উপন্যাস ‘সহবাস’ প্রকাশের সময়ে বিপুল বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। ২০০৯-এ তিনি সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন।

অনীশ দেব

২২ অক্টোবর, ১৯৫১-২৮ এপ্রিল, ২০২১

বাংলা সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞানের মৃদু আলোকিত শাখার উজ্জ্বল প্রতিনিধি। পাশাপাশি রচনা করেছেন ভৌতিক রহস্য গল্প এবং থ্রিলারও। করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে তাঁর জীবন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। ১৭ বছর বয়স থেকে লেখালেখির সূত্রপাত। পেয়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহ দাস পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যাসাগর পুরস্কার।

প্রশান্ত ডোরা

৪ জানুয়ারি, ১৯৭৬–২৬ জানুয়ারি, ২০২১

কলকাতার তিন প্রধান এবং জাতীয় দলে খেলা গোলরক্ষক। ১৯৯৯ সালে তাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে দেশের হয়ে অভিষেক। সাফ কাপ, সাফ গেমসে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৯৭-’৯৮ এবং ১৯৯৮-’৯৯ মরসুমে বাংলার সন্তোষ ট্রফি জয়ী দলের সদস্য। দু’বারই সেরা গোলরক্ষক হয়েছিলেন। রক্তের বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে ৪৩ বছর বয়সে প্রয়াত হন।

চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়

২৮ এপ্রিল, ১৯৫৪-১৫ অগস্ট, ২০২১

১৯৭৫ সালে সই করেন মোহনবাগানে। নির্ভরযোগ্য রাইট ব্যাক। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলে। পরের বছর মহমেডানে। ১৯৮১-র কলকাতা লিগ জয়ী মহমেডান দলের সদস্য। পরের বছর ফের ইস্টবেঙ্গলে। ১৯৭৮ সালের এশিয়ান গেমসে ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন। বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফি জিতেছেন। ৬৮ বছর বয়সে প্রয়াত হন।

রচপাল সিংহ

২ অক্টোবর, ১৯৪২–৮ জুলাই, ২০২১

বাম জমানায় ‘শাসক শিবিরের ঘনিষ্ঠ’ আইপিএস অফিসার হিসেবে পরিচিতি ছিল। পুলিশের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে রচপাল সিংহ তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে হুগলির তারকেশ্বর কেন্দ্রের বিধায়ক হন। ২০১১-’১৬ রচপাল রাজ্যের পর্যটন এবং পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন। পরে রাজ্য পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান হন।

শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

২০ অগস্ট, ১৯৬৬–২৫ অগস্ট, ২০২১

বাংলা তথা দেশের অন্যতম সেরা তবলিয়া ছিলেন শুভঙ্কর। মা কাজলরেখাদেবী ছিলেন পোলিয়ো-আক্রান্ত। তিনিই ছিলেন শুভঙ্করের অনুপ্রেরণা। দেশবিদেশে বহু উচ্চমার্গের অনুষ্ঠান করেছেন। পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া কিংবা পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার সঙ্গে তাঁর সঙ্গত সতত স্মরণীয় হয়ে থাকবে।শুভঙ্করকে কেড়ে নিল কোভিড-পরবর্তী জটিলতা।

হাসান আজিজুল হক

২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৯-১৫ নভেম্বর,২০২১

জন্ম বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে। লেখাপড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পাক-সেনার হাতে নির্যাতিত। বাংলাদেশেই আজীবন অধ্যাপনা। ছোটগল্প লিখে নজর কাড়লেও উপন্যাসই তাঁর সৃষ্টিশীলতার চরম উৎকর্ষ। ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’, ‘নামহীন গোত্রহীন’ সেগুলিরই দু’একটি। আনন্দ পুরস্কার, একুশে পদক-সহ পেয়েছেন বহু সম্মান।

দিলীপ কুমার

১১ ডিসেম্বর, ১৯২২-৭ জুলাই, ২০২১

জন্ম বর্তমান পাকিস্তানের পেশোয়ারে। নাম ছিল মহম্মদ ইউসুফ খান। বলিউডে এসে নাম পাল্টে হন দিলীপ কুমার। অভিনয় জীবন শুরু চল্লিশের দশকে। ১৯৯৮ সালে ‘কিলা’ ছবিতে শেষ অভিনয়। মাঝের ছয় দশক চুটিয়ে অভিনয় করেছেন বলিউডের ‘ট্র্যাজেডি কিং’। ছবি পরিচালনাও করেছেন।

মিলখা সিংহ

২০ নভেম্বর, ১৯২৯–১৮ জুন, ২০২১

১৯৫৮-র কমনওয়েলথ্ গেমস চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন ‘উড়ন্ত শিখ’ মিলখা। ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিক্সে অল্পের জন্য পদক পাননি। চতুর্থ হন। এশিয়ান গেমসে ৪টি সোনা আছে। ১৯৫৯ সালে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান পান। তাঁকে নিয়ে তৈরি জীবনীচিত্র ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ মুক্তি পায় ২০১৩ সালে। কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ৩০ দিন পর জীবনাবসান।

রাজন মিশ্র

২৮ অক্টোবর, ১৯৫১–২৫ এপ্রিল, ২০২১

ভা‌ই সাজন মিশ্রকে সঙ্গে নিয়ে কয়েক দশক ধরে দর্শকের মন জয় করেছেন তিনি। বেনারস ঘরানার কিংবদন্তি বড়ে রামদাসের এই নাতির হাতেখড়ি দাদুর হাতেই। বাবা হনুমানপ্রসাদ মিশ্র এবং কাকা বিশ্রুত সারেঙ্গিবাদক গোপালপ্রসাদ মিশ্রের তত্ত্বাবধানে যা শিখেছেন, জীবনভর তা-ই বিলিয়ে দিয়েছেন শ্রোতাদের মধ্যে। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন খেয়ালশিল্পী।

বিপিন রাওয়ত

১৬ মার্চ, ১৯৫৮-৮ ডিসেম্বর, ২০২১

স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখার প্রথম সর্বাধিনায়ক। আরও ১২ জনের সঙ্গে সস্ত্রীক প্রাণ হারালেন হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায়। উত্তরাখণ্ডের পৌড়ীর এক গঢ়ওয়ালি রাজপুত পরিবারের জন্ম। ১৯৭৮ সালে গোর্খা রাইফেলসে যোগ। সেখান থেকে ২০১৬ সালে দেশের স্থলসেনা প্রধান। ১ ডিসেম্বর, ২০২০ দেশের সেনা-সর্বাধিনায়ক। পদে থাকাকালীনই মৃত্যু।

সুন্দরলাল বহুগুণা

৯ জানুয়ারি, ১৯২৭–২১ মে, ২০২১

গঢ়বালে জন্ম। গ্রামের পাশেই গঙ্গা। গঙ্গার প্রতি গভীর প্রেম। ১৭ বছর বয়সে গাঁধীজির ডাকে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগ দিয়ে জেলে যান। স্বাধীনতার পরে কিছু দিন কংগ্রেস রাজনীতি করলেও পরে ‘নবজীবন আশ্রম’ গড়ে জনসেবা এবং পরিবেশরক্ষায় আত্মনিয়োগ করেন। হিমালয়ের অরণ্য রক্ষায় তাঁর ‘চিপকো আন্দোলন’ ঠাঁই পেয়েছে ইতিহাসে।

সিদ্ধার্থ শুক্ল

১২ ডিসেম্বর, ১৯৮০-২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

হিন্দি টিভি ধারাবাহিক ‘বালিকা বধূ’-র মাধ্যমে পরিচিতি পান সিদ্ধার্থ। এর পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৪ সালে ‘হাম্পটি শর্মা কি দুলহনিয়া’ ছবিতে আলিয়া ভট্ট এবং বরুণ ধবনের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ‘বিগ বস’-এ জয়ী হয়েছেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪১ বছর বয়সে প্রয়াত।

বনরাজ ভাটিয়া

৩১ মে, ১৯২৭–৭ মে ২০২১

শ্যাম বেনেগালের ‘জুনুন’ ছবির শীর্ষসঙ্গীতের মতো বহু কালজয়ী সুর রচনা করে গিয়েছেন বনরাজ। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের সুরের মূর্ছনা মিশে থাকত তাঁর প্রত্যেকটি কাজে। বনরাজ এক দিকে যেমন ধ্রুপদী, তেমনই অন্য দিকে আদ্যোপান্ত ছকভাঙা। একটি সাবানের বিজ্ঞাপনের জন্য তাঁর সৃষ্টি-করা বিপুল জনপ্রিয় সুর বহু বছর পরেও আলোচনায় আসে।

কমলা ভাসিন

২৪ এপ্রিল, ১৯৪৬- ২৫ সে‌প্টেম্বর, ২০২১

লিখেছিলেন, ‘আমি মেয়ে, তাই আমাকে পড়তেই হবে... অত্যাচারকে বুঝতে হলে পড়তে হবে।’ নারীর অধিকার রক্ষা নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন সমাজবিজ্ঞানী কমলা ভাসিন। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে লড়াই করেছেন লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে। নেতৃত্ব দিয়েছেন ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার ‘ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং’ আন্দোলনেও।

কল্যাণ সিংহ

৫ জানুয়ারি, ১৯৩৭–২১ অগস্ট, ২০২১

১৯৬৭ সালে জনসঙ্ঘের প্রার্থী হিসেবে উত্তরপ্রদেশের অত্রাউলির বিধায়ক। ১৯৯১-তে উত্তরপ্রদেশের প্রথম বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় তিনিই মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তী কালে দু’বার বিজেপি ছেড়ে নিজের দল গড়েন। ২০০৯-এ সমাজবাদী পার্টির সমর্থনে এটার সাংসদ হন। ২০১৩-য় বিজেপি-তে ফেরেন। রাজস্থান এবং হিমাচলের রাজ্যপাল হয়েছিলেন।

যশপাল শর্মা

১১ অগস্ট, ১৯৫৪–১৩ জুলাই, ২০২১

১৯৮৩-র বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য। ভারতের হয়ে ৩৭টি টেস্ট খেলেছেন। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। টেস্টে দুটি শতরান-সহ ১,৬০৬ রান। একদিনের আন্তর্জাতিকে ৮৮৩। ১৯৮৩-র বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ১১৫ বলে ৬১ রান করেন। অ্যালান ল্যাম্বকে রান আউটও করেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬৬ বছর বয়সে প্রয়াত।

রাজীব কপূর

২৫ অগস্ট, ১৯৬২-৯ ফেব্রুয়ারি,২০২১

ঋষি এবং রণধীর কপূরের ছোট ভাই জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছন ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’ ছবিতে অভিনয়ের সূত্রে। ১৯৮৩ সালে ‘এক জান হ্যায় হম’ ছবিতে তাঁর প্রথম অভিনয়। এর পর ‘লাভার বয়’, ‘জবরদস্ত’, ‘নাগ নাগিন’-সহ আরও কিছু ছবিতে দেখা যায় তাঁকে। অভিনয় ছাড়াও ছবি পরিচালনা এবং প্রযোজনাও করেছেন।

সুরেখা সিক্রি

১৯ এপ্রিল, ১৯৪৫-১৬ জুলাই, ২০২১

তিন বার জাতীয় পুরস্কার জয়ী। এই অভিনেত্রীকে দেখা গিয়েছে ‘তমস’, ‘মাম্মো’, ‘বধাই হো’, ‘জুবেদা’-র মতো ছবিতেও। ‘বালিকা বধূ’ ধারাবাহিকে ‘দাদিসা’-র চরিত্রেও দর্শকের মন জয় করেছিলেন। মঞ্চ, ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দা—সব জায়গাতেই ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। ২০১৮ সাল থেকে পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী ছিলেন সুরেখা।

সত্য পল

২ ফেব্রুয়ারি,১৯৪২-৬ জানুয়ারি, ২০২১

শাড়ি যে ‘ডিজাইনার’ হতে পারে, তা ভারত শিখেছিল পোশাকশিল্পী সত্য পলের হাত ধরেই। ১৯৮৫ সালে দিল্লিতে প্রথম বস্ত্রবিপণি খুলেছিলেন। ছকভাঙা প্রিন্ট, রং এবং নতুন ধরনের কাপড়ের সেই শাড়ি কারও আলমারিতে থাকা ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। পরবর্তী কালে শাড়ি ছাড়াও স্কার্ফ, টাই, ব্যাগের দুনিয়াতেও বিপ্লব আনতে পেরেছিলেন।

অস্কার ফার্নান্ডেজ

২৭ মার্চ, ১৯৪১–১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সত্তরের দশকে রাজনীতিতে প্রবেশ। ১৯৭৫ সালে কর্নাটকের উদুপির পুরভোটে জেতেন। ১৯৮০-তে উদুপি লোকসভা কেন্দ্রে জয়। ১৯৯৯ পর্যন্ত টানা পাঁচবার সেখানকার সাংসদ। ১৯৯৯-এ হেরে যান। পরে রাজ্যসভার সাংসদ হন। হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও। রাজীব গাঁধীর জমানায় সংসদীয় সচিব ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে এআইসিসি-র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

শশীকলা

৪ অগস্ট, ১৯৩২-৪ এপ্রিল, ২০২১

খুব ছোটবেলায় আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে মুম্বই চলে যায় তাঁর পরিবার। তখন থেকেই বলিউডে কাজ পাওয়ার লড়াই শুরু। চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে আস্তে আস্তে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। ১০০টিরও বেশি হিন্দি ছবিতে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘ডাকু’, ‘রাস্তা’, ‘কভি খুশি কভি গম’-এর মতো জনপ্রিয় সিনেমা। পেয়েছেন বেশ কিছু পুরস্কারও।

নান্দু নাটেকর

১২ মে, ১৯৩৩–২৮ জুলাই, ২০২১

দেশের অন্যতম সেরা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। ১৯৫৪ সালে অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছন। মালয়েশিয়ায় প্রথম ভারতীয় হিসেবে আন্তর্জাতিক খেতাব জিতেছিলেন। লম্বা কেরিয়ারে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে রয়েছে মোট ১০০টি খেতাব। ব্যাডমিন্টন ধ্যান-জ্ঞান হলেও ক্রিকেটেও বেশ পারদর্শী ছিলেন। বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

অজিত সিংহ

১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৯–৬ মে, ২০২১

বাবা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিংহ ছিলেন উত্তরপ্রদেশের জাঠ বলয়ের অবিসংবাদী নেতা। খড়্গপুর আইআইটি-র প্রাক্তনী অজিতকিন্তু রাজনীতি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেননি। আশির দশকের গোড়ায় বহুজাতিক সংস্থার চাকরি ছেড়ে বাবার তৈরি লোকদলে যোগ দেন। ছ’বারের সাংসদ। ভি পি, নরসিংহ, বাজপেয়ী, মনমোহনের সরকারে মন্ত্রীও ছিলেন।

বুটা সিংহ

২১ মার্চ, ১৯৩৪-২ জানুয়ারি, ২০২১

অকালি শিবির থেকে ১৯৬০ সালে কংগ্রেসে যোগ দেন এই দলিত নেতা। ১৯৬২-তে রাজস্থানের জালৌর থেকে প্রথমবার লোকসভায়। আটবারের সাংসদ বুটা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নানা দায়িত্ব সামলেছেন। রাজীব গাঁধী মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৮৮ সালে জ্যোতি বসু এবং সুবাস ঘিসিংয়ের গোর্খা পার্বত্য পরিষদ চুক্তি সইয়ে মধ্যস্থতা করেছিলেন।

অরবিন্দ ত্রিবেদী

৮ নভেম্বর, ১৯৩৮-৬ অক্টোবর, ২০২১

দীর্ঘ চার দশক ধরে গুজরাতি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তবে রামানন্দ সাগরের ‘রামায়ণ’ ধারাবাহিকে রাবণের ভূমিকায় অভিনয় অরবিন্দ ত্রিবেদীকে দেশজোড়া পরিচিতি দেয়। কয়েকটি হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছেন। রাজনীতিতেও এসেছিলেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত গুজরাতের সবরকন্ঠা লোকসভা আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ ছিলেন।

গার্ড মুলার

৩ নভেম্বর, ১৯৪৫–১৫ অগস্ট, ২০২১

বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার। জার্মানিকে ১৯৭২-এর ইউরো কাপ, ১৯৭৪-এর বিশ্বকাপ জেতাতে বিরাট ভূমিকা নিয়েছিলেন। ইউরো ফাইনালে মুলারের জোড়া গোলে জার্মানি ৩-০ গোলে হারিয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে। বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোলের রেকর্ড ৩২ বছর তাঁর দখলে ছিল। ২০০৫ এবং ২০০৯ সালে কলকাতায় এসেছিলেন। ৭৫ বছর বয়সে প্রয়াত।

আব্দুল কাদির খান

১ এপ্রিল, ১৯৩৬-১০ অক্টোবর,২০২১

পাকিস্তানে পারমাণবিক গবেষণা এবং পরমাণু বোমার ‘জনক’। কৃতী বিজ্ঞানী। শেষ জীবনে বিতর্কে জড়ান। ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু প্রযুক্তি পাচার করার অভিযোগে ২০০৪ সালে তাঁকে গৃহবন্দি করে পরভেজ মুশারফ প্রশাসন। শেষ পর্যন্ত ইসলামাবাদ হাই কোর্টের রায়ে ২০০৯ সালে অভিযোগ এবং বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান।

প্রিন্স ফিলিপ

১০জুন, ১৯২১-৯ এপ্রিল,২০২১

ব্রিটেনের রানির স্বামী। তবে রাজা নন। রাজপুত্রই রয়ে গেলেন আজীবন। ঠাকুর্দা ছিলেন গ্রিসের রাজা। সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে ব্রিটেনে। এলিজাবেথের বয়স যখন ১৩, তখন থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব। ফিলিপ তখন ১৮। বিয়ে করেন ১৯৪৭ সালে। জন্মশতবর্ষ ছোঁয়ার মাস দুয়েক আগে চলে গেলেন ‘কনসর্ট অব ব্রিটিশ মনার্ক’ প্রিন্স ফিলিপ।