বাঙালি এখন গ্লোবাল। আজকের প্রজন্ম যদিও খুব কমই – ‘বাঙলায় গান গায়’।
কিন্তু চৈত্রের শেষবেলা থেকে বিশ্বের প্রায় সব বাঙালির কাছেই বোধহয় আমাদের এই বাঙলা নিয়ে একটা মন কেমন করা ভাব জাগে। মনে মনে অনেকেই বলেন – ‘বাংলা আমার তৃষ্ণার জল, তৃপ্ত শেষ চুমুক’।
বাঙালি আদতে ভোজন রসিক। শুধু ‘তৃষ্ণার জলে’ কি মন ভরে ? চাই নতুন স্বাদের খাবার দাবার।
নতুন বাঙলা বছরে শেফ রঙ্গন নিয়োগী কিছু জিভে জল আনা ডিশের রেসিপি জানালেন।
গন্ধরাজ ক্রিম সসে গলদা চিংড়ি
একেই বিশালাকায় গলদা চিংড়ি। তায় আবার গন্ধরাজের সুগন্ধে সুরভিত। এর প্রেমে মজবে না এমন মানুষ পৃথিবী ঢুঁড়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তুলতুলে নরম গলদা চিংড়িতে মাখো মাখো নারকেলের ক্রিম। সামান্য লেবুর রসে জারানো বলে চিংড়ি বাঘা সাইজের হলেও মাখনের মত নরম, মুখে দিলেই স্বর্গীয় স্বাদ। শাহী মরিচের সঙ্গে কাঁচা লঙ্কার মৃদু ঝালের মিশেল। আর কোকোনাট ক্রিমের হাল্কা মিষ্টি স্বাদে ভরা গন্ধরাজ ক্রিম সসে মজানো গলদা চিংড়ি বাড়িতে রান্না করতে খুব বেগ পেতে হবে না। বাঙালির নানান ডিশ নিয়ে অনবরত এক্সপেরিপেন্ট করা শেফ রঙ্গনের প্রিয় শখ। আর তারই ফলস্বরূপ গোয়ান লবস্টারের স্টাইলে রান্না এই স্বর্গীয় স্বাদের গলদা। গন্ধরাজের মন কাড়া সুগন্ধ গোয়ান স্টাইল রান্নায় বাঙ্গালিয়ানা যোগ করেছে। বাড়িতেও বানিয়ে ফেলতে পারেন অনায়াসে।
উপকরণ
• দুটো বড় আকারের গলদা চিংড়ি
• পাতিলেবুর রস ও গন্ধরাজ লেবুর রস দুটোই ১ টেবল চামচ করে
• নুন: স্বাদ অনুযায়ী
• শাহী মরিচ গুঁড়ো: সামান্য
• কাঁচালঙ্কা বাটা: ১/২ টেবল চামচ
• নারকেল দুধ: ৫০ মিলি
• ক্রিম: ৫০ মিলি
• পেঁয়াজ বাটা ও রসুন বাটা: ১ টেবল চামচ ও ১/২ টেবিল চামচ
• অলিভ অয়েল: ১০০ মিলি
• গন্ধরাজ লেবুর সবুজ খোসা কুচি: ১/৪ চা চামচ
• তাজা গন্ধরাজ লেবু পাতা: ১টি
প্রণালী: চিংড়ি পরিষ্কার করে ছাড়িয়ে ধুয়ে পাতিলেবুর রস, নুন ও জল দিয়ে ম্যারিনেট করতে হবে ৩০ মিনিট। এরপর জল দিয়ে ধুয়ে নিয়ে শুকনো করে রাখুন। প্যানে অলিভ অয়েল গরম করে সেদ্ধ করা পেঁয়াজ ও রসুন বাটা দিয়ে কষে নিতে হবে। এর মধ্যে চিংড়ি দুটো ছেড়ে মৃদু আঁচে কিছুক্ষণ সতে করতে হবে। চিংড়ির রঙ লাল হলে অল্প গরম জল, লেমন জুস, গন্ধরাজ লেবুর সবুজ খোসা কুচি, নুন দিন। ফুটে উঠলে নারকেলের দুধ আর শামরিচ গুড়ো দিয়ে চিংড়ি সেদ্ধ করে নিন। নামানোর আগে গন্ধরাজ পাতা দিন। নামিয়ে নিয়ে ওপরে ক্রিম ছড়িয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
রূপচাঁদা মশলা ভাজা
পয়লা বৈশাখের জমাটি আড্ডার অনুষঙ্গ যদি মাছ ভাজা হয়, তবে আড্ডা তো জমে ক্ষীর। রূপচাঁদা বা পমফ্রেট মাছের মশলা ভাজা এমনই এক অসামান্য পদ যার স্বাদে আম বাঙালি মুগ্ধ হবেই এ কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়। লেবু আর তেঁতুলের ক্ক্বাথে আচারি স্বাদের মাছ ভাজা প্রচলিত ফিশ ফ্রাইয়ের মত পুরু ব্যাটারের মোড়কে মোড়া নয়। মুচমুচে পাতলা অ্যারারুটের পরতে জড়ানো বিট নুনের স্বাদে ভরা রূপচাঁদার প্রতি কামড়েই চমক। অবশ্য বাজার ঢুঁড়ে রূপচাঁদা মাছ না পেলেও ক্ষতি নেই। মশলা একই থাকবে শুধু মাছ যাবে বদলে। রূপচাঁদার পরিবর্তে পমফ্রেট মাছ মশলা ফ্রাইও বানানো যায়। আর নরম কাঁটার পমফ্রেট আট থেকে আশি সকলেরই প্রিয়। কাঁটা বাছার বালাই নেই। সবসুদ্ধ চিবিয়ে ফেলা যায়। ক্যালসিয়াম আর ফসফরাসে সমৃদ্ধ এই মাছ রসনা সিক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে হাড় আর হার্ট ভাল রাখে। বাড়িতে এই ভাবে মাছ ভাজা তৈরি মোটেও কঠিন নয়। রঙ্গনদার রেসিপি আপনাদের জন্যে।
উপকরণ
• রূপচাঁদা বা পমফ্রেট মাছ: ২ টো
• হলুদ, নুন, কাশ্মীরী লঙ্কা গুঁড়ো: দরকার মতো
• তেঁতুলের ক্ক্বাথ: ১ চা চামচ
• বিট নুন: সামান্য
• জিরে ভাজা গুঁড়ো: অল্প
• অ্যারারুট: ৫০ গ্রাম
• পাতিলেবুর রস: ১ চা চামচ
• সর্ষের তেল: ভাজার জন্যে
• সাজানোর জন্যে- সরু করে কাটা শসা ও গাজর, ফালি করে কাটা পাতিলেবু (ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে রাখলে ক্রিস্পি থাকবে)
প্রণালী: মাছ পরিষ্কার করে ধুয়ে নুন ও লেবুর রস মাখিয়ে রাখুন আধ ঘন্টা। জল দিয়ে ধুয়ে আবার নুন, হলুদ ও কাশ্মীরি লঙ্কা গুঁড়ো মাখিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। এর পর নুন হলুদ মাখানো মাছের গায়ে তেতুলের ক্ক্বাথের সঙ্গে সামান্য বিট নুন ও জিরা ভাজা গুঁড়ো মিশিয়ে সর্ষের তেল দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবে আরও আধ ঘন্টা। মশলা মাখানো মাছ অ্যারারুটে মাখিয়ে ছাঁকা তেলে বাদামি করে ভেজে জুলিয়েন করে কাটা শসা, গাজর ও পাতিলেবু সহযোগে পরিবেশন করতে হবে।
চিকেন ম্যারেঙ্গো
চেনা স্বাদের থেকে একেবারে অন্য রকম এই চিকেন। পাতলা ময়দার লেয়ারে ভাজা চিকেন মুখে দিলেই পাওয়া যাবে মরিচ আর এক অসাধারণ অন্য রকম সসের স্বাদ। থাইমের সুগন্ধে ভরা মাশরুম সহযোগে জেন ওয়াই তো বটেই, প্রত্যেক খাদ্যরসিকেরই মন জয় করবে চিকেন ম্যারেঙ্গো।
উপকরণ
• চিকেন লেগ: ২ পিস
• ময়দা: ৫০ গ্রাম
• নুন, মরিচগুড়ো ও এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল: প্রয়োজন মতো
• স্লাইস মাশরুম: ৪ টুকরো
• ছাঁচি পেঁয়াজ কুচি: অল্প
• কুচনো রসুন: অল্প
• টোম্যাটো কুচি: ২টো (মাঝারি)
• শুকনো গুঁড়ো থাইম: ১ চামচ
• ড্রাই রেড ওয়াইন: ৩০ মিলি
• ভিল দেমি-গ্লেস -১০০ মিলি ( শপিং মলে পাওয়া যায়)
• জল -১০০ মিলি
প্রণালী: চিকেন ধুয়ে পরিষ্কার করে অল্প নুন মাখিয়ে প্রি হিটেড ওভেনে রেখে খটখটে করে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর একটা প্লাস্টিক ব্যাগে ময়দা, নুন, মরিচ গুঁড়ো দিয়ে ঝাঁকিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। এর মধ্যে চিকেনের টুকরো দুটো দিয়ে ভাল করে নেড়েচেড়ে প্যাকেট সিল করে রাখতে হবে কিছুক্ষণ। চিকেনের গায়ে ময়দার লেয়ার বসে গেলে প্যাকেট খুলে বাড়তি ময়দা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে প্যানে তেল গরম করে হাল্কা আঁচে বাদামি হওয়া পর্যন্ত চিকেন এপিঠ ওপিঠ করে ভেজে নিতে হবে। এর মধ্যে মাশরুমের টুকোর দিয়ে নেড়েচেড়ে ওভেনে রান্না করতে হবে। ফ্রাইং প্যানে পেঁয়াজ ও রসুন কুচি দিয়ে নেড়েচেড়ে আঁচ বাড়িয়ে রেড ওয়াইন যোগ করে ১ মিনিট ফুটিয়ে নিয়ে টোম্যাটো কুচি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ অল্প আঁচে ফুটিয়ে ঘন সস তৈরি করে নিতে হবে। এর মধ্যে মাশরুম ও বাকি মরিচগুঁড়ো ছড়িয়ে চিকেনের ওপর ঢেলে গরমাগরম পরিবেশন করতে হবে।
তথ্য: সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: অনির্বাণ সাহা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy