Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Rabindra Jayanti Celebration

‘ফিউশন না হলে রবীন্দ্রনাথের গান জাস্ট ফুটে যাবে’

তেইশে বৈশাখ। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। চত্বর জুড়ে ম্যারাপ বাঁধার ঠুকঠাক, ঠকাস ঠকাস আওয়াজ। সঙ্গে দেওয়ালে রঙের পোচ বসানোর খসখসে শব্দ। তবে এ সব পরিশ্রমী শব্দ ছাপিয়ে সাউন্ড সিস্টেমে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে ‘অচলায়তন’-এর সেই গান...আজ হাওয়া যেমন পাতায় পাতায়...১৮৬১-র পর কেটে গিয়েছে প্রায় ১৫৪টি বছর। এত্ত বছর পর তাঁর নামাঙ্কিত ভারতীর ছেলেমেয়েরা কী ভাবে প্রভাবিত রবীন্দ্রনাথের লেখায়, গানে, ভাবনায়? পুরোপুরি রবীন্দ্র-আবহে, তাঁরই জন্মভিটেতে দাঁড়িয়ে সেটা জানার লোভ সামলানো গেল না। ঠাকুরদালানেই বসা গেল আড্ডায়। সঙ্গে মিউজিওলজি বিভাগের ন’জন ছাত্রছাত্রী— কৌশিক চট্টোপাধ্যায়, হিরন্ময় পট্টনায়ক, পৌলমী ভট্টাচার্য, অপ্সরা চট্টোপাধ্যায়, অয়ন্তিকা মারিক, মানালি রায়, সুমন সাহা, পারমিতা পাল এবং দেবকুমার সিংহ। কখনও চিত্কার, আঙুল উঁচিয়ে কখনও প্রায় হাতাহাতি, কখনও বা হাসির রোল। আড্ডার খেই ধরিয়ে দিলেন উজ্জ্বল চক্রবর্তী।তেইশে বৈশাখ। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। চত্বর জুড়ে ম্যারাপ বাঁধার ঠুকঠাক, ঠকাস ঠকাস আওয়াজ। তার মধ্যেই মিউজিওলজি বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আড্ডা দিলেন উজ্জ্বল চক্রবর্তী।

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৫ ১৫:৫৯
Share: Save:

দেড়শো বছরের পুরনো এক মানুষের ভাবনা এখনও তোমাদের কী ভাবে ভাবায়? যেমন, ‘তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম’ গানটির সঙ্গে নিজেদের প্রেমকে কি রিলেট করতে পারো?

হিরন্ময়: হ্যাঁ, আমি তো পারি। সেই অর্থে প্রেমের কোনও নির্দিষ্ট ভাষা নেই। তাই কোনও লিমিটেশনও নেই। একশো বছর আগের ভাষায় বলছি, না এখনকার ভাষায় বলছি, নাকি আরও ১০০ বছর পরের ভাষা বলছি, সেটা বড় ব্যাপার নয়। প্রেমের ভাবটাই বড়। রবীন্দ্রনাথের গানে আমি সেটা পাই।

অয়ন্তিকা: আমরা হয়তো হোয়াট্‌সঅ্যাপে কাউকে সরাসরি লিখে দিচ্ছি, আই লভ ইউ। কিন্তু, দু’জন যখন পাশাপাশি বসে থাকব, তখন ওই গানটা কিন্তু আমাদের অনুভূতিতে মিশে যাবে। নো ওয়ে! যাবেই।

অপ্সরা: শুধু প্রেম কেন! আমার তো যে কোনও ভাবনাতেই রবীন্দ্রনাথ চলে আসেন। পড়াশোনা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনচর্চা— সর্বত্র তিনি আছেন।

দেবকুমার: আচ্ছা, আমি কেন আমার পার্সোনাল বিষয়গুলোকে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মেলাতে যাব! কখনও কখনও তাঁর গান আমার ভাল লাগে! কিন্তু, ফর দ্য টাইম বিইং। বেশি ক্ষণ লাস্ট করে না।


আড্ডা তখন জমজমাট। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাস। ২৩ বৈশাখ অপরাহ্ণে।

পৌলমী

কৌশিক: দেখ, তোরা কী রকম পুরনো যুগে পড়ে আছিস! তখনকার লোকের টাইম ছিল। আমাদের মতো এত ব্যস্ত ছিল না। এই সময়টা বড় কমপ্লিকেটেড। অত পুরনো শব্দ আমাকে কোনও রকম ভাবেই টাচ করে না।

পৌলমী: তুই মোটেও ব্যস্ত নোস!

কৌশিক: শোন, ওই প্যানপ্যান করে হারমোনিয়ামে রবীন্দ্রনাথকে ধরে রাখলে হবে না। ভাল বিট দিয়ে ড্রাম-গিটারে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখলে লোকে শুনতে পারে। না হলে ওই বুড়োর কোনও দাম নেই। অন্তত আমার কাছে তো নেই।

পৌলমী: কৌশিক তুই না একটা যা তা! আমি তো ফেসবুক বা হোয়াট্‌সঅ্যাপে স্ট্যাটাস দেওয়ার সময়ও রবীন্দ্রনাথের কথা ভাবি। কালই তো দিলাম, ‘মম দুঃখ বেদন’। আমার সব অনুভূতি যেন ভদ্রলোক আগে থেকে চুরি করে জেনে নিয়েছিলেন।

সুমন: আসলে ভদ্রলোকের লেখার প্রাসঙ্গিকতা এখ‌নও রয়েছে। তিনি আমার থেকে প্রায় ১৩০ বছরের বড়। তবুই অনুভূতির মিল পাই।

অপ্সরা

অপ্সরা: রবীন্দ্রনাথ নিজেও এটা জানতেন। তাঁর গান যে সর্বকালীন হয়ে উঠবে সেটা তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন। আসলে সব বয়সের অনুভূতিই তাঁর গানে রয়েছে। শুধু গান কেন, কবিতাতেও। ধর, কোন সেই ছোটবেলায় পড়েছিলাম, আমাদের ছোট নদী...এখনও ভেবে দেখ কবিতাটা!

পৌলমী: ঠিক বলেছিস। পুরুলিয়ার দিকে ট্রেনে করে গেলে ছোট নদী দেখলেই কবিতাটা মনে পড়ে। বিশ্বাস কর, বৈশাখ মাসে সেই নদীগুলোর ছবি হুবহু মিলে যায় কবিতাটার সঙ্গে!

হিরন্ময়: তোরা সহজপাঠের কথা ভাব! ওঁর লেখা আর নন্দলাল বসুর ছবি। আশ্চর্য যুগলবন্দি! ভাবাই যায় না। মনে আছে, চ ছ জ ঝ দলে দলে/বোঝা নিয়ে হাটে চলে।

মানালি: তখন থেকে খালি গান-কবিতার কথা বলে যাচ্ছিস! আমার কিন্তু ভদ্রলোকের গল্প-উপন্যাসও বেশ লাগে! কত্তো বছর আগে লিখেছেন। অথচ, এত বছর পরেও আমাদের সমাজে সেই সমস্যাগুলো কিন্তু রয়েই গিয়েছে। হয়তো চরিত্রেরা পাল্টেছে। কিন্তু, সমস্যা আছেই। তাই ওঁর গল্প আজও আমাকে মুগ্ধ করে।

কৌশিক

কৌশিক: আচ্ছা রবীন্দ্রনাথ কি একটুও বদলাননি? একই রকম রয়েছেন? হতে পারে এটা!

পৌলমী: ঠিক বলেছিস। উনি একটুও বদলা‌ননি। বদলেছি আমরা। আমাদের মানসিকতা, লাইফস্টাইল— এই সব বদলেছে।

অয়ন্তিকা: আমরা তোর মতো ব্যস্ত হয়েছি আর ভাললাগার জিনিসগুলোকে ভুলে যেতে বসেছি। রবীন্দ্রনাথ তাঁর জায়গাতেই আছেন।

কৌশিক: না-না, আছেন তো বটেই। ছেড়ে তো চলে যাবেন না! কিন্তু, প্রশ্নটা হল, কোন জায়গাতে আছেন? দেখ, আমি যে খুব একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনি, তা নয়। ভাল লাগে না। আমার ফিলিংসটা কম। তাই জিজ্ঞেস করছি। তোদের ঠিক কখন মনে পড়ে ওই বুড়োর কথা?

পৌলমী: আমার তো ডিমের ডালনা রান্না করতে গিয়ে ভদ্রলোকের কথা মনে পড়ে। ঠাকুরবাড়ির মেনু দেখে যা-ই রান্না করি, মনে হয়, এটা রবীন্দ্রনাথ খেতে ভালবাসতেন। চিকেনের কোর্মা বানানোর সময় মনে হয়, তিনি আজ দুপুরে আমার হাতে খাবেন। বুঝলি কৌশিক! এক এক জনের অনুভূতি এক এক রকম। তোর ফিলিংস কম বলে কারও বেশি থাকবে না সেটা কোনও কথা নয়।

দেবকুমার: তার মানে তুই স্বীকার করছিস, শুধু বড়া রান্না করার সময়েই ওঁর কথা মনে পড়ে!

অয়ন্তিকা

অয়ন্তিকা: আমার অনুভূতিটা একটু আলাদা। আমি আসলে ভদ্রলোকের শিল্পকে সবার সঙ্গে শেয়ার করতে ভালবাসি। পঁচিশে বৈশাখ বা বাইশে শ্রাবণ এলেই আমার কেন জানি না মনে হয়, পাড়ার বাচ্চাদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করি। একটা প্রভাতফেরী বের করি। সবাই মিলে সেখানে কবিকে নিয়ে সময় কাটানো যাবে! প্রাণের আনন্দটা প্রকাশ পাবে।

কৌশিক: ধুর! আগের মতো আর রবীন্দ্রজয়ন্তী হয় নাকি পাড়ায় পাড়ায়! পুরনো কনসেপ্ট। আরে লোকের হাতে এত টাইম নেই। কে বেরোবে তোর প্রভাতফেরীতে? কেউ না। বাচ্চাদেরও অত সময় নেই। আর কয়েক বছর পরে দেখ না, এই জোড়াসাঁকোর মতো কয়েকটা জায়গা ছাড়া আর কোথাও কিস্যু হবে না। মানুষের ওয়েস্ট করার মতো হাতে সময় নেই।

দেবকুমার: অথচ তুই ড্যান্স হাঙ্গামার কথা বল! দেখ দলে দলে কাকা-জ্যাঠারা ভিড় জমাচ্ছে। এটাই এখনকার কালচার রে ভাই! সেই সত্যিটা স্বীকার করে নে তোরা। অত ওল্ড ফ্যাশন আর চলে না এখন। গ্রামের দিকেও তো এটাই চলছে।

সুমন: কৌশিক তুই জোড়াসাঁকোর কথা বলছিস? এখানে পঁচিশের সকালে যারা আসবেন তাঁদের একটা অংশ তো কপালে বড় টিপ পরে, খোপায় ফুলের মালা দিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ভাল ছবি এবং স্ট্যাটাস পোস্টের খোরাক খুঁজতে আসবে। সেই আন্তরিকতা, কবিপ্রেম— ক’জনের মধ্যে আছে রে! হাতে গোনা যাবে!

দেবকুমার

দেবকুমার: অনেকেই ছবি তুলবেন। ফেসবুকে লিখবেন, ‘মি অ্যাট জোরাসানকো অন দ্য ইভেন্ট অব টোয়েন্টি ফিফ্থ বোইশাখ’। প্রচুর লাইক পড়বে। এটাই ফ্যাশন। এটাই ট্রেন্ড।

পারমিতা: রবীন্দ্রনাথ এদের কাছে অনেকটা বডি স্প্রে-র মতো। বিশেষ বিশেষ দিনে একটু গায়ে মাখিয়ে নিয়ে রবীন্দ্রপ্রেমী হয়ে ওঠা গেল। আবার মিলিয়েও গেল। যতটুকু সৌরভ ছড়াল, তাতে স্ট্যাটাসটা আরও জোরদার হল।

অয়ন্তিকা: আচ্ছা সবার মধ্যেই রবিপ্রেম থাকতে হবে তার কী মানে আছে? যদি থাকেও, সব সময় সেই প্রেমে বিভোর থাকতে হবে, তারও কোনও কথা নেই। ধর, আমরা এই ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে ট্রেন ধরতে যখন শিয়ালদহ যাব, ট্রেনে বা বাসে ভিড়ের মধ্যে গাদাগাদি করে যাতায়াত করব তখন কি রবীন্দ্রনাথ মাথায় রাখা উচিত? না কি সম্ভব। তাই কে কাকে কী ভাবে মনে রাখবে সেটা তার ব্যাপার।

সুমন: তার মানে পরিস্থিতি এ ক্ষেত্রে একটা মস্ত বড় ফ্যাক্টর! তাই তো? সবাই পরিস্থিতি অনুযায়ী চলে। কার কোনটা ভাল লাগবে, কোনটা খারাপ— তা বাইরে থেকে ঠিক করে দেওয়া যায় না। উচিতও নয়। আর একটা বিষয় হল রুচি। যেমন ধর, রবীন্দ্রনাথের গানকে কিছু শিল্পী অন্য রকম ভাবে গাইবার, উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন। সেটা আমাদের কারও কারও ভাল লাগছে। কারও আবার ভাল লাগছে না।

হিরন্ময়

কৌশিক: আমাদের এই হানি সিং-এর যুগে ফিউশনে না মুড়লে রবীন্দ্রনাথের গান জাস্ট ফুটে যাবে রে!

পৌলমী: আমার বাবা রবীন্দ্রনাথের গান হলেই হল। সেটা ফিউশন হলেও আপত্তি নেই। দুটোর আলাদা ধরন। আলাদা স্টাইল। ক্ষেত্র বিশেষে দুটোই ভাল লাগে।

কৌশিক: পাশ কাটাস না। কেসটা ক্লিয়ার কর!

পৌলমী: ধর ঝড় উঠেছে। ঘরে গান চলছে পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে...বা নিজে গাইছি। যখন একা একা আছি তখন স্লো রিদম পছন্দ। মানে পুরনো ভার্সন। মন ধুয়ে যায়। আবার যখন তোদের সঙ্গে থাকব, বা বন্ধুদের সঙ্গে ভীষণ মজা করছি, তখন ফিউশনটা পছন্দ। আসলে আমার একা থাকতেও ভাল লাগে। আবার ফার্স্ট লাইফও পছন্দ। এটা তারই প্রভাব। তাই আমি ফিউশনেও আছি, পুরনোতেও।

অপ্সরা: আমার কিন্তু রবীন্দ্রনাথের অরিজিন্যাল স্বরলিপি মেনে গাওয়া গানই বেশি ভাল লাগে। ওর বাইরে শুনতে ভাল লাগে না।

অয়ন্তিকা: এটা কিন্তু ঠিক নয়। রবীন্দ্রনাথকে আধুনিক ভাবে উপস্থাপন না করতে পারলে কিন্তু আমাদের পরের জেনারেশন ওকে আর নেবে না। শুনবে না। পড়বে না। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ফিউশন না হলে উনি থাকবেন না।

অপ্সরা: তার মানে রবীন্দ্রসঙ্গীতে ইয়ো ইয়ো চাস তোরা? দেখ ভাল জিনিস অনেকেই নিতে চায় না। তাদের বোঝাতে হয়, এটা ভাল জিনিস। এই বিকৃত গানের মেয়াদ কিন্তু ১৫ দিন। তার বেশি টেকে না।

মানালি

হিরন্ময়: আচ্ছা তুই কেন পুরনো ভাবনায় আছিস বল তো? রবীন্দ্রনাথ তো নিজেই বিভিন্ন দেশের সুর নিজের গানে ব্যবহার করেছেন। তা হলে আপত্তি কোথায়? চলুক না ফিউশন। পছন্দ না হলে শুনব না।

কৌশিক: ঠিক বলেছিস। পছন্দ না হলে শুনব না। আমার জীবনে যেমন রবীন্দ্রনাথ নেই। নেই তো নেই! বুড়ো থাকুক বুড়োর জায়গায়। আমার তাতে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু, পরীক্ষার খাতায় না লিখলে ম্যাম নম্বর দেবেন না। তাই বুড়োকে খুব ভালবাসি। তার বাইরে ওঁর কোনও অস্তিত্ব নেই। ফিউশন হলে হয়তো কিছুটা ভাল লাগবে। না হলে, আমি নেই।

দেবকুমার: তা হলে রবীন্দ্রনাথের বই, গানের সিডি এত বিক্রি হয় কী করে?

কৌশিক: ছাড় তো! রবীন্দ্র রচনাবলীর তেমন একটা বিক্রি নেই। ও সব দিয়ে এখন লোকে ঘর সাজায়। অথচ দেখ, কেউ রবীন্দ্র কেচ্ছা নিয়ে সিনেমা বা বই লিখল, রমরমিয়ে বিক্রি।

হিরন্ময়: আচ্ছা তোরা শেষ কবে গীতবিতানের পাতা উল্টেছিস?

সুমন

অয়ন্তিকা: সত্যিই মনে পড়ে না। তবে ধুলো ঝেড়ে গীতবিতানের পাতা ওল্টানোর থেকে আমার কাছে ইউটিউব থেকে গানটা ডাউনলোড করে নেওয়া অনেক বেশি সোজা।

পৌলমী: আমি তো হোয়াট্‌সঅ্যাপ বা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার আগে নেট থেকে লাইনগুলো আর এক বার পড়ে নেই। পাতা ওল্টানোর দরকার কী? তবে একেবারে ওল্টাই না, এমনটা নয়।

অপ্সরা: এক কেজি রসগোল্লা আর এক কেজি মিহিদানার মধ্যে কোনটা বেশি হয়? ধরা যাক এক কেজি রসগোল্লা হবে কুড়িটা। আর মিহিদানা দু’হাজার। এখনকার সমাজে এই মিহিদানার সংখ্যাই বেশি। রসগোল্লা হাতে গোনা। রবীন্দ্রনাথ এই রসগোল্লাদের হাতেই বেঁচে থাকবেন।

অয়ন্তিকা: আধুনিকীকরণ না করলে রসগোল্লাও এক দিন প্রাচীন খাবারে পরিণত হবে। কেউ খুঁজে দেখবেও না। তাই আধুনিকীকরণ মাস্ট।

অপ্সরা: শোন কুয়োর ব্যাঙ কখনও সমুদ্র দেখতে পায় না। আর সমুদ্রের ব্যাঙ কিন্তু...

পারমিতা

হিরন্ময়: সমুদ্রের ব্যাঙও কিন্তু কুয়ো দেখতে পায় না। তর্কে না গিয়ে আধুনিকীকরণের ব্যাপারটা মেনে নিলেই তো হয়।

অপ্সরা: রবীন্দ্রনাথ যথেষ্ট আধুনিক। তাঁর আর আধুনিকীকরণের প্রয়োজন নেই। আমরা যেমন ভাবে গ্রহণ করেছি তাঁকে, পরের জেনারেশন আরও ভাল ভাবে তাঁকে গ্রহণ করবে। আমি তো আমার পরবর্তী জেনারেশনকে শুধু রবীন্দ্রনাথই শেখাব।

পৌলমী: আমি কিন্তু হানি সিং-ও শোনাব। এর পর সে কোনটা শুনতে ভালবাসবে সেটা তার ব্যাপার। ওটা নিয়ে আমি মাথা ঘামিয়ে কী করব। আমার ভাল লাগাটা তো কারও বলে দেওয়া, শিখিয়ে দেওয়ার উপর নির্ভর করেনি। তবে কেন পরবর্তী প্রজন্মের উপর আমরা সেটা চাপিয়ে দেব?

(আড্ডার বাক্য বিনিময় এমন জায়গায় পৌঁছয়, যেখান থেকে কিছুই শোনা যায় না। সে সব শব্দ-বাক্য মিশে যায় সাউন্ড সিস্টেমে বেজে চলার গানের স্রোতে। সেখানে তখন বাজছে...সব পথ এসে মিলে গেল শেষে তোমার দুখানি নয়নে।)

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rabindra Jayanti Special Rabindra Jayanti Celebration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE