Advertisement
০৭ অক্টোবর ২০২৪
Meningitis

ঘুম ভেঙেই অতিরিক্ত ঘাম, মৃত্যু হল তরুণীর! কী হয়েছিল তাঁর? কোন উপসর্গগুলি অবহেলার নয়

অ্যাশলেগ ডি-অ্যান্ড্রাড হঠাৎ করে জ্বরে আক্রান্ত হন। ঘুম থেকে উঠেই প্রবল ঘাম হয় তাঁর। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেই মৃত্যু। ঠিক কী হয়েছিল তাঁর?

Symbolic image of sweating

ঘুম থেকে উঠে প্রবল ঘাম হলে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২৩ ১৮:৩৬
Share: Save:

ইংল্যান্ডের সাউথপোর্টের বাসিন্দা অ্যাশলেগ ডি-অ্যান্ড্রাড বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে আর বিয়ে করা হয়ে উঠল না তাঁর। বিয়ের ক’দিন আগে হঠাৎ ধুম জ্বর। ঘুম থেকে উঠেই মৃত্যু হল তরুণীর। উত্তর ওয়েলসের হাফান ই মোর হলিডে পার্কে তিন ছেলের সঙ্গে সপ্তাহান্তের ছুটি কাটিয়ে সদ্য ফিরেছিলেন ৩১ বছর বয়সি অ্যাশলেগ। ছুটি থেকে ফিরেই জ্বর হয় তাঁর। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রবল ঘাম হয় তাঁর। হাসপাতালে নিয়ে গেলে, সেখানে তাঁর মস্তিষ্কে একাধিক বার রক্তক্ষরণ হয়েছিল। চিকিৎসকরা জানান, মেনিনজাইটিসে রোগেই মৃত্য হয়েছে তাঁর।

মরসুম বদলের সময়ে ভাইরাসঘটিত রোগের দাপট সবচেয়ে বেশি। কোভিডের পর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে ভাইরাল অসুখ শরীরে জাঁকিয়ে বসতে খুব বেশি সময় লাগছে না। এমনই ভাইরালঘটিত রোগ মেনিনজাইটিস।

কী এই রোগ?

মানুষের মস্তিষ্কের উপরে ফাইবারের একটি স্বচ্ছ, পাতলা আস্তরণ থাকে। এর নাম মেনিনজেস। এটি মস্তিষ্ককে সুরক্ষা দেওয়ার কাজ যেমন করে, তেমনই আবার এর পুষ্টি জোগাতেও সাহায্য করে। মেনিনজেসে যদি কোনও কারণে সংক্রমণ বা প্রদাহ হয়, তখন তাকে বলা হয় মেনিনজাইটিস। ভাইরাস, টিউবারকিউলোসিস-সহ ব্যাক্টেরিয়া, ফাঙ্গাস বা অন্যান্য জীবাণুর সংক্রমণ থেকেই মূলত হতে পারে মেনিনজাইটিস। কিছু বিরল ক্ষেত্রে কোনও সংক্রমণ ছাড়াই এই রোগ হতে পারে। যেমন, ক্যানসার থেকে বা কোনও রাসায়নিক যৌগ থেকে। মেনিনজাইটিস একটি স্নায়ুঘটিত রোগ। এ ক্ষেত্রে যদি চিকিৎসা শুরু করতে দেরি করা হয়, তা হলে রোগীর সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সমস্যা হতে পারে। মেনিনজাইটিসের ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাস শরীরে ঢোকে নাক বা শ্বাসনালির মধ্য দিয়ে। তার পরে তারা সেখানে বাসা বাঁধে এবং শেষমেশ গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। নাকের সঙ্গে যে হেতু মস্তিষ্কের যোগ রয়েছে, তাই এই সংক্রমণ খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে যায় সেখানে।

Image of x-ray

মেনিনজেসে যদি কোনও কারণে সংক্রমণ বা প্রদাহ হয়, তখন তাকে বলা হয় মেনিনজাইটিস। ছবি: সংগৃহীত।

কোন উপসর্গগুলি দেখলে সতর্ক হবেন?

এই রোগে আক্রান্ত হলে জ্বর হয়, সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, ঘন ঘন বমি, খিঁচুনি ধরতে পারে। মাঝেমধ্যেই এবং ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়েন রোগী। এগুলি ছাড়াও আরও দু’-একটি লক্ষণ দেখা যায়— যেমন, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া বা গা ভর্তি র‌্যাশ বেরোনো। বেশ কিছু মেনিনজাইটিসের ক্ষেত্রে শরীরে র‌্যাশ বেরোতে দেখা যায়। মেনিনগোকক্কাস ব্যাক্টেরিয়ার কারণে সদ্যোজাত বা শিশুদের মেনিনজাইটিস হলে গায়ে র‌্যাশ বেরোয়। সঙ্গে জ্বর ও বমিও হয়। বড় বা ছোটদের মধ্যে এই লক্ষণগুলি একসঙ্গে বা এদের কয়েকটি দেখা দিলেই রোগীকে তখনই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।

মেনিনজাইটিসে তিন ধরনের পরিণতি হতে পারে। এক, রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেন। দুই, চিকিৎসা সত্ত্বেও রোগী মারা গেলেন। সাধারণত বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা বেশি থাকে। তৃতীয় পরিণতি, রোগ সেরে গেলেও রোগের মাত্রা খুব বেশি হওয়ার কারণে শারীরিক সমস্যা থেকে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে কারও হয়তো ব্রেন ড্যামেজ হল, কেউ স্মৃতিশক্তি হারালেন, কারও শরীরের এক দিক প্যারালিসিস হয়ে গেল, কেউ এক কানে আর শুনতে পেলেন না, কারও চোখের মণি প্রভাবিত হল। এটা অনেকটা রোধ করা যায় যদি ঠিক সময়ে রোগ ধরা পড়ে এবং সেই মতো চিকিৎসা শুরু করা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Meningitis Fever Safety
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE