ক্যানসারের কিছু প্রতিষেধক এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেই প্রতিষেধক নিয়েও মানুষের মনে নানা রকম প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। কোন কোন ক্যানসারের ভ্যাকসিন এখন কার্যকর? কোন বয়সেই বা তা নেওয়া যায়?
কোন কোন ক্যানসারের প্রতিষেধক রয়েছে?
ক্যানসার শল্যচিকিৎসক ডা. গৌতম মুখোপাধ্যায় বলছেন, “ক্যানসার প্রিভেনশনের জন্য দুটো ভ্যাকসিন আছে এখন। একটা হল হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের ভ্যাকসিন, যেটা সার্ভাইক্যাল ক্যানসার প্রতিরোধ করে। আর একটা হল হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন, যেটা লিভার ক্যানসার থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া যে সব ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা চলছে, সেগুলো এখন ট্রায়াল পিরিয়ডে। আপাতত যদি ক্যানসার প্রতিরোধ করার মতো কার্যকর ভ্যাকসিনের কথা বলতে হয়, তা হলে এই দুটোই।” এইচপিভি ভ্যাকসিন সার্ভাইকাল ক্যানসার তো প্রতিরোধ করেই। তা ছাড়াও ভ্যাজাইনা, ভালভা, অ্যানাস ও কিছু ধরনের থ্রোট ক্যানসারও রোধ করে। এর মধ্যে ওরো-ফ্যারিঞ্জাল ক্যানসারও এইপিভি-র সংক্রমণে হয়ে থাকে। ফলে এই ভ্যাকসিনে তার থেকেও সুরক্ষা পাওয়া যায়।
এইচপিভি-তে আক্রান্ত হলেই কি ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে?
এই ভাইরাসের প্রায় ৪০টি স্ট্রেন আছে। “তার মধ্যে স্ট্রেন নম্বর ১৬ ও ১৮-র জন্য ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে ক্যানসার হয়ে থাকে। বাকি স্ট্রেনে আক্রান্ত হলেও ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা ততটা থাকে না। তবে এইচিপিভি ৬ ও ১১-এ সংক্রমিত হলে তা থেকে জেনিটাল ওয়ার্টস হতে পারে। এই ওয়ার্টস হল আঁচিলের মতো এক ধরনের উপবৃদ্ধি। অনেকেই এগুলোকে ক্যানসার ভেবে ভয় পান। তবে এর থেকে ক্যানসার হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই।” কসমেটিক কারণে অনেকে চিকিৎসা করান। বেশির ভাগ ভ্যাকসিনও এইচপিভি ১৬ ও ১৮-র বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। কিছু ভ্যাকসিন এইচপিভি ৬ ও ১১-র বিরুদ্ধেও সুরক্ষা দিয়ে থাকে।
একই মত গাইনিকোলজিস্ট ডা. চন্দ্রিমা দাশগুপ্তের। তিনি বললেন, “এইচপিভি ভাইরাসের কিছু লো রিস্ক স্ট্রেন আছে, যেমন ৬, ১১, যা থেকে জেনিটাল ওয়ার্টস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, কিন্তু ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কম। আর একটা কথাও মনে রাখতে হবে, এইচপিভির ক্যানসার স্ট্রেন শরীরে থাকলেও ক্যানসার না-ও হতে পারে। অনেক সময়ে দেখা যায় প্রি-ক্যানসারাস স্টেজ, সার্ভাইকাল ইন্ট্রাপিথেলিয়াল নিয়োপ্লেশিয়া থেকেও অনেকে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছেন। এটা নির্ভর করে ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপরে। তবে প্রাথমিক প্রিভেনশন হিসেবে ভ্যাকসিন নিতে হবে আর সেকেন্ডারি প্রিভেনশন হিসেবে প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট করাতে হবে।” এই দুটো দিক খেয়াল রাখলে অনেকটা সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা যায়।
এ দিকে ক্রনিক হেপাটাইটিস বি ইনফেকশন থেকে অনেক সময়ে পরে লিভার ক্যানসার হতে পারে। তাই আগে বুঝতে হবে, হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ কখন হতে পারে। প্রথমত গর্ভাবস্থায় মায়ের পেটে থাকাকালীন শিশু হেপাটাইটিস বি-তে সংক্রমিত হতে পারে। কোনও কারণে রক্ত নিতে হলে বা সংক্রমিত পার্টনারের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলে সংক্রমণ হতে পারে। আবার ইনফেক্টেড নিডল থেকেও এই ভাইরাসে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই হেপাটাইিস বি-র ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে লিভার ক্যানসারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা পাওয়া যাবে।
ভ্যাকসিন কখন দেবেন?
এই ভ্যাকসিন দেওয়ার একটা বয়সসীমা আছে। ৯ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে এইচপিভি ভ্যাকসিন দেওয়া যায়। তবে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার আগেই এই ভ্যাকসিন হয়ে গেলে সবচেয়ে ভাল। ডা. গৌতম মুখোপাধ্যায় বলছেন, “একবার সংক্রমণ হয়ে গেলে কিন্তু ভ্যাকসিন নিয়েও সুরক্ষা পাওয়া যাবে না। তাই যৌন সম্পর্ক শুরু হওয়ার আগেই এই ভ্যাকসিন নিয়ে নেওয়া জরুরি। সেই জন্য ৯ থেকে ১৪-র মধ্যে এখন এই ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা প্রচার করা হচ্ছে। তবে তার পরেও ৪৫ অবধি এই ভ্যাকসিন নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে নতুন করে যদি সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেখানে সুরক্ষা পাওয়া যাবে। তবে আগে যদি এইচপিভি-র ওই স্ট্রেনে সংক্রমণ হয়ে গিয়ে থাকে, সেই স্ট্রেনের বিরুদ্ধে আর সুরক্ষা পাওয়া যাবে না।”
১৪-র নীচে বয়স হলে এইচপিভি ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ় নিতে হবে। ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ় নেওয়ার ছ’মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ় নিতে হয়। আর ১৪-র পরে যদি নেওয়া হয়, তা হলে তিনটে ডোজ় দেওয়া হয়। প্রথম ডোজ়ের দু’মাস পরে দ্বিতীয়টা আর ছ’মাস পরে তৃতীয় ডোজ় নিতে হবে বলে জানালেন ডা. চন্দ্রিমা দাশগুপ্ত। তিনি আরও বললেন, “তবে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, ছেলেদের অ্যানাল, জেনিটাল, হেড অ্যান্ড নেক, ওরো-ফ্যারিঞ্জাল ক্যানসার হতে পারে। তাই এই ভ্যাকসিন ছেলেদেরও নিতে হবে। এই সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার।”
হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন কী ভাবে সুরক্ষা দেয়?
হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন প্রায় ৬০ বছর বয়স অবধি নেওয়া যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভ্যাকসিন কখন নেবেন, তা ঠিক করতে হবে। তবে সব ভ্যাকসিনই যত আগে নেওয়া যায় তত ভাল। তাই ভ্যাকসিন প্রোটোকল অনুযায়ী, এখন শিশুদের ভ্যাকসিন চার্টে অনেক কম বয়সেই হেপাটাইটিস বি-র ডোজ় দেওয়া থাকে।
কখন ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না?
এ ছাড়াও প্রস্টেট, ব্লাডার, কিডনির ক্যানসারের ভ্যাকসিন নিয়ে ট্রায়াল চলছে। কিন্তু সে সব প্রতিষেধক এখনও সফল ভাবে দেওয়া শুরু হয়নি। তবে যে যে ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy