Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বিশেষজ্ঞ-বার্তা

ডায়াবেটিসের শিকার বহু শিশুও, রুখতে প্রয়োজন সচেতনতা

মাত্র আড়াই বছর বয়স ছিল তখন। যে সময়টা ছোটাছুটি করে খেলাধুলোর কথা, সেই সময়টাতেই নেতিয়ে পড়ত সে। সঙ্গে মাথা ঘোরা, ঘন ঘন বাথরুমে যাওয়া, অস্বাভাবিক ঘাম হওয়া, শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকত। প্রথমে তেমন খেয়াল করেননি অভিভাবকেরা। পরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলেও ধরা পড়েনি অসুখ। নানা পরীক্ষা হয় অবশ্য। কয়েক জনের কাছে ঘোরার পরে শেষে এক চিকিৎসক রক্তের শর্করা পরীক্ষা করতে বলেন। তাতেই দেখা যায়, আড়াই বছরের শিশুর রক্তে শর্করার মাত্রা ৪১৬!

সায়নী ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪১
Share: Save:

মাত্র আড়াই বছর বয়স ছিল তখন। যে সময়টা ছোটাছুটি করে খেলাধুলোর কথা, সেই সময়টাতেই নেতিয়ে পড়ত সে। সঙ্গে মাথা ঘোরা, ঘন ঘন বাথরুমে যাওয়া, অস্বাভাবিক ঘাম হওয়া, শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকত। প্রথমে তেমন খেয়াল করেননি অভিভাবকেরা। পরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলেও ধরা পড়েনি অসুখ। নানা পরীক্ষা হয় অবশ্য। কয়েক জনের কাছে ঘোরার পরে শেষে এক চিকিৎসক রক্তের শর্করা পরীক্ষা করতে বলেন। তাতেই দেখা যায়, আড়াই বছরের শিশুর রক্তে শর্করার মাত্রা ৪১৬!

নবদ্বীপের সায়নী সরকার শুধু নয়, একই সমস্যায় পড়তে হয়েছে সার্থক, দেবব্রত, পূজার মতো অজস্র শিশুকে। ডাক্তারি পরিভাষায় এরা সকলেই ‘টাইপ ওয়ান’ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অর্থাৎ তাদের অগ্ন্যাশয় সম্পূর্ণ ভাবে ইনসুলিন নিঃসরণ করা বন্ধ করে দিয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য দিনে নিয়মিত তিন থেকে চার বার ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিতে হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বাচ্চাদের মধ্যে ‘টাইপ টু’ ডায়াবেটিসও দেখা যায়, যাদের অগ্ন্যাশয় আংশিক কাজ করে। ইঞ্জেকশন নিতে হয় তাদেরও।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোটদের মধ্যে ডায়াবেটিস ধরা পড়ছে অনেকটাই দেরিতে। কারণ অভিভাবকদের মধ্যে তো বটেই, ডাক্তারদের মধ্যেও এ নিয়ে সচেতনতা অনেক কম। তাই বাচ্চারা প্রাথমিক উপসর্গ নিয়ে গেলেও অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, চিকিৎসকেরা বাচ্চাদের ডায়াবেটিস বাদে বাকি পরীক্ষা করিয়েছেন। কারণ ওই বয়সে যে ডায়াবেটিস হতে পারে, সেটাই তাঁদের মাথায় থাকে না। এসএসকেএম-এর এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সতীনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই রোগ যে কারও হতে পারে। এমনও উদাহরণ আছে, যে তিন দিন ধরে বাচ্চা আইসিইউ-তে ভর্তি। সব পরীক্ষা হয়েছে, কিন্তু রক্তের শর্করা পরীক্ষা হয়নি। দিন কয়েক অপেক্ষার পরে অবশেষে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে দেখা গেল তার রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে। আবার সদ্যোজাতের রক্তে শর্করার মাত্রা ৬০০, এমনও দেখেছি।” এ ব্যাপারে মেডিক্যাল পড়ুয়াদের সচেতন করা বেশি জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ইনসুলিন ইঞ্জেকশনের যথাযথ প্রয়োগ সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে পিজি-র এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক শুভঙ্কর চৌধুরী বলেন, “যখন থেকে বাচ্চাদের মধ্যে প্রাথমিক উপসর্গগুলি প্রকাশ পায়, তখনই রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করলে উন্নতির অনেক সুযোগ থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ‘টাইপ টু’ রোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষতি হওয়ার পরে বিষয়টি নজরে আসে।”

সত্যিই কি শিশু চিকিৎসকদের সচেতনতার মাত্রা কম? শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, “বিষয়টা অত সহজ নয়। ডায়াবেটিসের উপসর্গ নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি থাকে। আবার অনেক সময়েই সংশ্লিষ্ট ডাক্তার শিশুর বাড়ির লোককে রক্তের শর্করা পরীক্ষা করতে বললেও তাঁরা তা মানতে চান না। দু’পক্ষের সমন্বয়টা জরুরি। ক্রমশ সেটা বাড়ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sayani bhattacharya diabetes awareness
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE