Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মেডিক্যালের দুই ডাক্তারের দেহে সোয়াইন ফ্লু-র উপসর্গ

সোয়াইন ফ্লু রোগীদের চিকিত্‌সা করতে গিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিত্‌সক ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করছেন কর্তৃপক্ষ। পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের ওই দুই চিকিত্‌সককে আইডি ওয়ার্ডে ভর্তি করার কথাও জানানো হয়। তাঁদের নাম সাকিব হাসান এবং দিব্যায়ণম সাহু। তবে তাঁরা আইডি ওয়ার্ডে থাকতে না-চাওয়ায় হস্টেলেই আলাদাভাবে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মেডিক্যালের বৈঠকে রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য।

মেডিক্যালের বৈঠকে রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৪
Share: Save:

সোয়াইন ফ্লু রোগীদের চিকিত্‌সা করতে গিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিত্‌সক ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করছেন কর্তৃপক্ষ। পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের ওই দুই চিকিত্‌সককে আইডি ওয়ার্ডে ভর্তি করার কথাও জানানো হয়। তাঁদের নাম সাকিব হাসান এবং দিব্যায়ণম সাহু। তবে তাঁরা আইডি ওয়ার্ডে থাকতে না-চাওয়ায় হস্টেলেই আলাদাভাবে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার পর্যন্ত তাঁরা কাজ করেছেন। তবে এ দিন থেকে কাজ বন্ধ রেখে তাঁরা হস্টেলে বিশ্রামে রয়েছেন। তাঁদের বাড়ি কলকাতা এবং মেদিনীপুরে। এ দিন ওই দুই চিকিত্‌সকের গলার লালা পরীক্ষা করাতে কলকাতায় নাইসেডে পাঠানো হয়। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ভর্তি দুই ব্যক্তির শরীরে সোয়াইন ফ্লু’র এন১এইচ১ ভাইরাস মিলেছে। তাঁদের দেহে বসন্ত এবং ডেঙ্গির জীবাণুও রয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে বসন্তের রোগী হিসাবে তাঁদের চিকিত্‌সা করা হচ্ছিল। সে সময় চিকিত্‌সক, স্বাস্থ্য কর্মীরাও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নিয়েই রোগীদের কাছে গিয়েছিলেন। সে কারণেই ওই দুই চিকিত্‌সক আক্রান্ত হয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। চিকিত্‌সক দু’ জনেরই সর্দি, জ্বর গলা ব্যথার মতো উপসর্গ রয়েছে। সর্দি এবং জ্বরের আক্রান্ত হয়েছেন মেডিসিন বিভাগের প্রধানও। তবে সে রকম গুরুতর কিছু নয় বলেই তিনি জানান।

এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে অধ্যক্ষ, সুপার, নার্সিং বিভাগের মেট্রন, দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-২, কমিউনিটি মেডিসিন, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকে এই রোগ হলেও তার টাইপ একটু আলাদা। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ওষুধ, নমুনা পরীক্ষার জন্য কলকাতায় নিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় মিডিয়াম, মুখোশ, অ্যাপ্রোন সবই রয়েছে। আগাম সতর্ক হতে এবং সচেতনতা প্রচারে বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠনগুলিকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানানো হয়েছে।” হাসপাতালের আইডি’তে ৫ জনকে রাখার আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। প্রয়োজনে তা বাড়িয়ে ১০ টা করা হবে বলে জানানো হয়। তা ছাড়া শিলিগুড়ি হাসপাতালেও জ্বর, সর্দি আক্রান্ত রোগীদের রাখার জন্য ১০ শয্যার আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালেও এ দিন থেকে ৫ শয্যার আলাদা ব্যবস্থা রাখার কথা জানানো হয়েছে। সেখানেও নমুনা সংগ্রহ করে নেওয়ার জন্য মাধ্যম, ওষুধ, মুখোশ সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পরিস্থিতির কথা ভেবে ‘র্যাপিড রেসপনস টিম’ করা হয়েছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরিস্থিতি নিয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন কর্তৃপক্ষ। সেখানে চিকিত্‌সকদের মতামতগুলি স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে। এ দিন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে শহরের নার্সিংহোমগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস। তিনি জানান, সর্দি জ্বরে আক্রান্ত বা সোয়াইন ফ্লু সন্দেহভাজন রোগীদের ক্ষেত্রে কী করণীয় সে ব্যাপারে সরকারি নির্দেশিকা তাঁদের দেওয়া হয়েছে। আপাতত নার্সিংহোমগুলিতে কোথাও সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত সন্দেহে কেউ ভর্তি নেই বলে জানানো হয়। আক্রান্ত যে দুই জন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি রয়েছেন তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল। তাঁরা মাটিগাড়ার তুম্বাজোতে যেখানে ভাড়া থাকেন সেখানে এ দিন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয়েছে। কারও জ্বর, সর্দি রয়েছে কি না তা তাঁরা খতিয়ে দেখেন। দিন ১৫ আগে সেখানকার আবাসিক আরও এক জনের একই রকম উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। তবে তিনি বাইরে চিকিত্‌সা করিয়ে সুস্থ হন বলে জানিয়েছেন।

এই পরিস্থিতির মধ্যে হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত ওষুধ নেই বলে অভিযোগ। এমনকী চিকিত্‌সক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। সে কারণে পরিষেবার দেওয়ার প্রয়োজনে চিকিত্‌সক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের একাংশ সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত রোগীদের কাছে যেতে উদ্বিগ্ন রয়েছেন। উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে ওই রোগের ভাইরাস থেকে তাদের মধ্যেও যে সংক্রমণ যে ঘটতে পারে তা স্বীকার করে নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। বিষয়টি রাজ্য স্বাস্থ্য কর্তাদেরকেও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতির জেরে স্থানীয় ভাবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ওষুধ, মুখোশ, অ্যাপ্রোন, নমুনা নিয়ে যাওয়ার মাধ্যম কিনেছেন।

মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহারের বিএসএফ ক্যাম্পের বাসিন্দা এক যুবক দিন কয়েক আগে সোয়াইন ফ্লুর উপসর্গ নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন। চিকিত্‌সক তাঁকে পরীক্ষার পর আইডি ওয়ার্ডে ভর্তির পরামর্শও দিয়েছিলেন। তিনি ভর্তি হলে তার গলার লালা নমুনা নাইসেডে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু তিনি ভর্তি হননি। তাঁর ঠিকানা, ফোন নম্বর কর্তৃপক্ষ জেনে রেখেছেন এবং যোগাযোগ রাখছেন। রোগ সংক্রমণ বাড়লে ওই যুবক নিজেই যোগাযোগ করবেন বলে জানিয়েছিলেন।

অন্যদিকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি চোপড়ার বাসিন্দা তৈয়ব আলি নামে এক ছাত্র অ্যাকিউট এনসেফ্যালাটিস সিনড্রম (এইএস) নিয়ে ভর্তি রয়েছে। সে পরীক্ষা দিতে পারছে না। গত রবিবার থেকে ওই রোগী ভর্তি রয়েছে। তার রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এ বছর জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এইএসের উপসর্গ নিয়ে অন্তত ৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে হাসপাতালেরই একটি সূত্র জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

swine flu north bengal medical college 2 doctors
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE