কামান দাগা। সম্প্রতি ঝালদায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
ত্রৈলোক্যনাথের ‘কঙ্কাবতী’ উপন্যাসে ছিল ‘মশা-প্রভুদের’ কথা। সেই মশা-প্রভুদের সামনে জাঁদরেল লোকেও কাঁচুমাচু হয়ে থাকত। পুরুলিয়া শহরের নামোপাড়া, ভাটবাঁধ, নডিহা, কর্পূর বাগান-সহ বিভিন্ন পাড়ায় এখন যেন সেই মশাপ্রভুদেরই রাজত্ব। মশার উৎপাতে এলাকায় টেকা দায় হয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। অবস্থার জন্য তাঁরা দায়ী করেছেন পুরসভাকে।
শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সেফডাঙা এলাকার বাসিন্দা সুন্দরা গোপ অভিযোগ করেন, দুপুরের পর থেকেই মশার দৌরাত্ম্য শুরু হয়ে যায়। যে সমস্ত ঘরে আলো ঢোকে না সেখানে দিন-রাত মশার উপদ্রব। সুন্দরাদেবী এর দায় চাপান সাফাই বিভাগের উপর। তাঁর অভিযোগ, ‘‘নিয়মিত নর্দমা সাফাই হয় না। নোংরা জল জমে দুর্গন্ধ ছ়ড়ায়। তার থেকে মশা বাড়ছে।’’ কার্তিকডির বাসিন্দা অনুপম রঞ্জিত এবং অসিত বাউরীও অভিযোগ করেন, নর্দমার মধ্যে জঞ্জাল জমে জল আটকে থাকছে।
পুরপ্রধান কে পি সিংহ দেওয়ের নিবার্চনী ক্ষেত্র ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউসিসিংহ ষ্ট্রিটেও একই চিত্র। এলাকার বাসিন্দা অনিমা মাহাতো জানান, আগে পুরসভার তরফে পাড়ায় মশা মারার তেল ছড়ানো বা ধোঁয়ার মেশিন ঘোরানো হত। আজকাল সে সব কিছুই হয় না। নামোপাড়া এলাকার বকুলতলা লেনের বাসিন্দা সোমনাথ সেন এলাকায় মশার উৎপাতের জন্য নোংরা নর্দমা এবং রাস্তার ধারে আগাছাকেই দায়ী করেন। কার্তিকডি লাগোয়া বস্তি এলাকার বাসিন্দারাও মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। এলাকার বাসিন্দা তথা বিরোধী কাউন্সিলর মিতা চৌধুরী অভিযোগ করেন, বারবার জানানো সত্ত্বেও নর্দমা সাফাই নিয়ে পুরসভার কোনও হেলদোল নেই।
২১ নম্বর ওয়ার্ডের কর্পূরবাগান এলাকার বাসিন্দা সরস্বতী বাউরি বলেন, ‘‘নোংরা জল নর্দমা ছাপিয়ে রাস্তায় উঠে আসছে। তার উপর শুয়োর চড়ে বেড়াচ্ছে। মশা তো বাড়বেই!’’ শহরের একেবারে উল্টোদিকেও একই অবস্থা। আমডিহার বাসিন্দা মীরা মাহাতো, মালতী কুন্ডু বা নডিহার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক মণীন্দ্রনাথ জানা অভিযোগ জানান, পুজোর আগে নর্দমা পরিস্কার করা হলেও ফের তা জঞ্জালে ভরে গিয়েছে।
পুরসভার বিরোধী কাউন্সিলর কংগ্রেসের সুদীপ মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, সাফাই বিভাগের কাজকর্ম নিয়ে বারবার সরব হওয়া সত্ত্বেও বর্তমান পুর-বোর্ডের টনক নড়েনি। দু’একটি এলাকা নয়, গোটা শহরের অধিকাংশ পাড়ার অবস্থা এক।
তিনি দাবি করেন, পুরসভার সাফাই বিভাগে যত জন কর্মী রয়েছে সেই নিরিখে শহরের সাফাই ঠিক মত হয় না। সুদীপবাবুর দাবি, পুরসভার গত আর্থিক বছরের বাজেটে মশা মারার তেল বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হয়েছিল। এবারও একই পরিমান খরচ দেখানো হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, সেই টাকা সঠিক খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে না।
পুরসভার সাফাই বিভাগের দায়িত্বে থাকা কৃষ্ণেন্দু মাহালি বলেন, শহরে সাফাইয়ের কাজ নিয়মিতই চলছে। কোনও জায়গায় থেকে অভিযোগ এলে তাঁরা দ্রুত সেখানে সাফাইয়ের কাজ করাচ্ছেন। মশার উপদ্রব নিয়ে পুরসভার হাত গুটিয়ে থাকার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘মশা মারার ধোঁয়া মেশিন বিভিন্ন পাড়াতে ঘোরানো হয়।’’
যদিও বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা অন্য। তাঁদের অভিযোগ, মশারা কানের কাছে ভোঁ ভোঁ করে ঘুরে বেরালেও পুরসভার মশা মারতে কামানের দেখা মেলা না। অগত্যা মশার কামড়ই তাঁদের কপালে আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy