Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ব্লেড গিলে বিপত্তি, গলা কেটে রক্ষা

খেলতে খেলতে ব্লেড গিলে ফেলেছিল চার বছরের মেয়েটি। কাউকে তা জানায়নি। কিন্তু প্রচণ্ড যন্ত্রণায় বারবার কেঁদে উঠছিল। সঙ্গে মারাত্মক কাশি, পেটে ব্যথা। কোনও ওষুধেই কাজ হয়নি। হঠাৎই কাশির সঙ্গে রক্ত বেরোতে দেখে ভয় পেয়ে যান শিশুটির বাবা-মা।

এক্স-রে প্লেটে দেখা যাচ্ছে অদিতির গলায় আটকে ব্লেড। (ইনসেটে) মায়ের কোলে অদিতি

এক্স-রে প্লেটে দেখা যাচ্ছে অদিতির গলায় আটকে ব্লেড। (ইনসেটে) মায়ের কোলে অদিতি

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:২৬
Share: Save:

খেলতে খেলতে ব্লেড গিলে ফেলেছিল চার বছরের মেয়েটি। কাউকে তা জানায়নি। কিন্তু প্রচণ্ড যন্ত্রণায় বারবার কেঁদে উঠছিল। সঙ্গে মারাত্মক কাশি, পেটে ব্যথা। কোনও ওষুধেই কাজ হয়নি। হঠাৎই কাশির সঙ্গে রক্ত বেরোতে দেখে ভয় পেয়ে যান শিশুটির বাবা-মা। ছোটেন ডাক্তারের কাছে। শেষ অবধি এক্স-রে দেখে চমকে ওঠেন সকলে। আস্ত ব্লেড আটকে রয়েছে ছোট্ট অদিতি পটেলের খাদ্যনালীতে! এমনই কাণ্ড ঘটে গুয়াহাটির কালাপাহাড় এলাকায়।

সাইকেল ফ্যাক্ট্রি এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণ পটেল ও সুনীতা পটেলের একমাত্র মেয়ে অদিতি। কৃষ্ণবাবু একটি পানের দোকানে কাজ করেন। তিনি জানান, এক সপ্তাহ ধরে অদিতির কাশি ও পেট ব্যথা হচ্ছিল। প্রথমে তাঁরা আমল দেননি। কিন্তু মুখ থেকে রক্ত বের হওয়ার পরেই আতঙ্কিত হয়ে তাঁরা ডাক্তার দেখান। প্রথমে চিকিৎসকও কিছু বুঝতে পারছিলেন না। ওষুধে কাজ না হওয়ায় বুক ও পেটের এক্স-রে, আলট্রা সোনোগ্রাফি করানো হয়। তখনই দেখা যায় আটকে থাকা ব্লেডটিকে। ব্লেডের ধারে ক্রমাগত খাদ্যনালী কেটে রক্ত বের হচ্ছিল। সেই রক্তের খানিক বেরচ্ছিল মুখ দিয়ে। বাকিটা জমা হচ্ছিল পেটে। ডাক্তার জানান, বিপজ্জনক ভাবে আটকে রয়েছে ব্লেডটি। তা বের করতে জটিল অস্ত্রোপচার করতে হবে। দরকার মোটা টাকার। কিন্তু দরিদ্র কৃষ্ণবাবুর কাছে বেশি টাকা ছিল না।

ঘটনার কথা জানতে পেরে অসমের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নজরুল ইসলাম সরকারি খরচে অদিতির অস্ত্রোপচারের নির্দেশ দেন। গত কাল মেয়েটিকে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার অস্ত্রোপচারের জন্য বিশেষ দল গড়ে দেন সুপার বাবুল বেজবরুয়া। তিনি জানান, মেয়েটি কষ্টে এতটাই ছটফট করছিল যে তার সিটি স্ক্যান-সহ কোনও পরীক্ষা করানোই সম্ভব হচ্ছিল না। শেষ অবধি ঘুমের ওষুধ দিয়ে অবশ করে সব পরীক্ষা করা হয়।

আজ সকালে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে অদিতির শ্বাসনালী ও খাদ্যনালীতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। বেজবরুয়া বলেন, ‘‘খুব জটিল ও বিপজ্জনক অস্ত্রোপচার ছিল। আমরা শিশুটির গলা কেটে শ্বাসনালী ও খাদ্যনালী উন্মুক্ত করে তিন টুকরো করে ব্লেডটিকে বের করে এনেছি। ব্লেডটি শ্বাসনালী ও খাদ্যনালীর মধ্যে আটকে ছিল।
এত দিন ধরে কেটে কেটে ট্র্যাকিয়ায় কতটা ক্ষতি হয়েছে তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। অদিতিকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।’’

আপাতত ছোট্ট মেয়েটিকে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হচ্ছে। অস্ত্রোপচার সফল হলেও এখনও অনেক দিন সে কিছুই খেতে পারবে না। ফের কবে অদিতি স্বাভাবিক হবে— তা নিয়ে এখনই চিকিৎসকেরা ভরসা দিতে পারছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE