শহরে ফের ডেঙ্গিতে মৃত্যু হল একজনের। সোমবার সকালে একবালপুরের একটি নার্সিংহোমে পরভীন শাহনওয়াজ নামে ৫০ বছরের ওই মহিলার মৃত্যু হয়। তাঁর রক্তে এনএস ওয়ান পজিটিভ ছিল।
স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য একে ডেঙ্গিতে মৃত্যু বলে মানতে চায়নি। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানিয়েছেন, ডেঙ্গিতে নতুন করে কোনও মৃত্যুর খবর তাঁর কাছে নেই। কিন্তু পরজীবী বিশেষজ্ঞরা মনে করেছেন, এনএস ওয়ান পজিটিভ হওয়ার অর্থ তা ডেঙ্গিই। এক পরজীবী বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘ডেঙ্গির বিষয়টি অস্বীকার করেই স্বাস্থ্য দফতর ক্রমাগত বিপদ বাড়াচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে এনএস ওয়ান পজিটিভ এবং অন্য নানা উপসর্গ দেখেও তাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। রাখা হচ্ছে না নজরদারিও। ফলে প্লেটলেট এক ধাক্কায় কমে গিয়ে কিংবা রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যু হচ্ছে অনেকেরই।’’
পরভীন শাহনওয়াজ রবিবারই ওই নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন। গত কয়েক দিন ধরে তাঁর জ্বর ছিল। নার্সিংহোমের দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা রয়েছে ‘কার্ডিও রেসপিরেটরি ফেলিওর ইন কেস অফ হেমারেজিক ফিভার উইথ গ্রস থ্রম্বোরিক উইথ মাল্টিঅর্গান ফেলিওর’। তাঁর প্লেটলেটও কমে হয়েছিল ১০ হাজার। এক পরজীবী বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘ডেঙ্গি শব্দটা উল্লেখ না থাকলেও এই হেমারেজিক ফিভার যে ডেঙ্গিই তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’
পড়ুন: ঠিক যেন পক্ষাঘাত! ডেঙ্গির নয়া উপসর্গে বিস্মিত চিকিত্সকরাও
এর পরেও অবশ্য কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের মুখ্য উপদেষ্টা তপন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি বলা নেই। তাই এখনই আমরা কিছু বলছি না। সব রিপোর্ট খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে মন্তব্য করব।’’
সম্প্রতি আরজিকরে ডেঙ্গিতে এক মেডিক্যাল ছাত্রীর মৃত্যুকে ঘিরে কলকাতা পুরসভার মেয়র ও মেয়র পারিষদের বক্তব্যকে ঘিরে বির্তক শুরু হয়েছিল। ডেঙ্গিতেই যে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল, প্রাথমিক ভাবে (ডেথ সার্টিফিকেট না দেখে ) তা স্বীকার করতে চাননি তাঁরা। মানিনী বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ১৮ বছরের ওই তরুণীর অস্থিমজ্জার অসুখ ছিল। পুরসভার দাবি ছিল, মৃত্যুর কারণও সেটাই। পরে অবশ্য ডেথ সার্টিফিকেট পেয়ে তাঁরা মেনে নেন ডেঙ্গিতেই মারা গিয়েছেন মানিনী।
ডেঙ্গির বিষয়টি এ ভাবে অস্বীকার করে কি তবে আসল পরিস্থিতি থেকে মুখ ফেরাতে চাইছে পুরসভা? মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘যা বলার বলবেন পুরসভার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বা মুখ্য চিকিৎসক।’’
রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ঠাণ্ডা পড়ছে একটু একটু করে। যতো তাপমাত্রা কমবে, ততই ডেঙ্গি জীবাণুর সক্রিয়তা কমবে এবং মশার সংখ্যাও কমবে বলে আশায় ছিলেন পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু সেরকম কিছুই এখনও না হওয়ায় পরজীবী বিশেষজ্ঞদের অনেকেই চিন্তিত। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা ১৩। এই মুহূর্তে উত্তর ২৪ পরগণা ঘেঁষা জায়গাগুলি যেমন সল্টলেক, দমদম, সিঁথি ইত্যাদি এলাকাতেই এর প্রকোপ বেশি। সল্টলেকের বিভিন্ন ব্লকে একই পরিবারের একাধিক সদস্য ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বলে জানা গিয়েছে। পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, এমন হতেই পারে। এই ধরনের ঋতু পরিবর্তনের সময় বিভিন্ন বাড়ির জানালা-দরজা বন্ধ থাকে। ডেঙ্গির জীবাণু বাহক এডিস ইজিপ্টাই ঘরে একবার ঢুকলে সহজে বেরোতে পারে না। সেই মশা যে ক’জনকে কামড়াবে তাঁদের সবাই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy