Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ডেঙ্গি রুখতে হু-এর বাজি সাইক্লোপডিয়া

নিতান্তই ছোট, খান কয়েক শুঁড় লিকপিকে গোটা দশেক পা আর মাথার উপরে নামমাত্র একটি চোখ—কামান নয়, ডেঙ্গির মশা মারতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’-এর সাম্প্রতিক দাওয়াই জলজ প্রাণী সাইক্লোপডিয়া। হালে তাদের কদর বেড়েছে, বিজ্ঞানীরা আদর করে ডাকছেন ‘সাইক্লপস্’।

মেসোসাইক্লপস লঙ্গিসেটাস

মেসোসাইক্লপস লঙ্গিসেটাস

রাহুল রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

নিতান্তই ছোট, খান কয়েক শুঁড় লিকপিকে গোটা দশেক পা আর মাথার উপরে নামমাত্র একটি চোখ—কামান নয়, ডেঙ্গির মশা মারতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’-এর সাম্প্রতিক দাওয়াই জলজ প্রাণী সাইক্লোপডিয়া। হালে তাদের কদর বেড়েছে, বিজ্ঞানীরা আদর করে ডাকছেন ‘সাইক্লপস্’।

পুকুর-ডোবা-স্রোতহীন বিল, গ্রাম বাংলার পরিচিত জলায় বিস্তর দেখা মেলে এই জলজ প্রাণীদের (প্ল্যাঙ্কটনিক অ্যানিমাল)। তবে, এত দিন প্রায় অপাংক্তেয় হয়েছিল তারা। সাইক্লোপডিয়ার মতো নিছকই এলেবেলে জলজ কীটের যে কোনও উপকারিতা রয়েছে, জীববিজ্ঞানীরা এত দিন তা ঠাওর করতে পারেননি। ‘হু’-এর বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘‘টপাটপ এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা গিলে সাইক্লোপডিয়া এখন ডেঙ্গির যম হয়ে উঠেছে।’’ ভিয়েতনাম থেকে কাম্বোডিয়া, লাওস থেকে বালি, ইন্দোনেশিয়া কিংবা বোর্নিও দ্বীপ জুড়ে প্রায় মহামারির চেহারা নেওয়া ডেঙ্গি রুখতে সম্প্রতি এই সাইক্লোপডিয়াই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সেরা বাজি।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে এই নব্য পথ্যে সাফল্য মেলায় এ বার হু-এর বিশেষজ্ঞরা তাই সাইক্লোপডিয়া’র দাওয়াই ছড়িয়ে দিতে চাইছেন এ রাজ্যেও। আন্তর্জাতিক ওই সংস্থার অধিকর্তা (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) পুনম ক্ষেত্রপাল সিংহ বলছেন, ‘‘কলকাতা-শিলিগুড়ি-বর্ধমানের মতো শহরাঞ্চলে ডেঙ্গি যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সে খবর আমাদের কাছে রয়েছে। ওই সব এলাকায় হু-এর বিশেষজ্ঞরাও ঘুরে এসেছেন। দেশের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের অনুমতি নিয়ে ওই সব এলাকায় সাইক্লোপডিয়া প্রয়োগ করে দেখতে চাইছেন আমাদের বিশেষজ্ঞরা।’’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জলজ প্রাণী বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ মিলার দীর্ঘদিন ধরেই ডেঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর গবেষণার সূত্র ধরেই ভিয়েতনাম থেকে মুছে গিয়েছিল ডেঙ্গি। এলিজাবেথ বলছেন, ‘‘সাইক্লোপডিয়ার রকমফের আছে। তাদের উপকারিতাও ভিন্ন। মেসোসাইক্লপস লঙ্গিসেটাস এবং ম্যাক্রো সাইক্লপস অ্যালবিডাস-এর পাতে এডিস মশার লার্ভা পড়লে আর রক্ষা নেই। এক থেকে দুই মিলিমিটার লম্বা এই সাইক্লপডিয়া মিনিটে ৪০ থেকে ৯০টি লার্ভা খেয়ে নিমেষে মশককুলের বংশনাশ করতে পারে। তবে এদেরই আবার মুখে রোচে না এনসেফ্যালাইটিসের উৎস, কিউলেক্স বিশনোই মশার লার্ভা।’’

স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এক সচিব পর্যায়ের কর্তা জানান, হু-এর পরামর্শ মেনে ইতিমধ্যেই ওই দাওয়াই অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশার কয়েকটি ডেঙ্গি কবলিত এলাকায় প্রয়োগ করা হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘গত দু’সপ্তাহে সাফল্যও মিলেছে। পশ্চিমবঙ্গেও ওই সাইক্লোপডিয়া ব্যবহারের নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে।’’

হু-এর এই নতুন শলা কি প্রয়োগ করে দেখবে স্বাস্থ্য দফতর? স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘বিশেষজ্ঞরা ভাল বুঝলে ব্যবহার করে দেখতেই পারেন।’’ ডেঙ্গির সংক্রমণ কলকাতার কপালে ভাঁজ ফেলেছে বলে মানতে নারাজ পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। তবে মানছেন, ‘‘পুরসভার ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগ হু-এর নির্দেশ মেনেই চলে। ফলে তারা নতুন কোনও প্রতিষেধক বাতলালে আমাদের বিশেষজ্ঞরা নিশ্চয় তা ভেবে দেখবেন।’’

সাইক্লোপডিয়া যে এডিস মশার যম, জীববিজ্ঞানী স্বপন শূরের এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা রয়েছে। বলছেন, ‘‘গ্রামের ডোবা-পুকুরে এই ধরনের জলজপ্রাণী অনায়াসে মেলে। পুকুরে এক বিশেষ ধরনের ছত্রাকের আশপাশেই এদের বসবাস। জাল ফেলে এদের সংগ্রহ করতেও তেমন ঝকমারি নেই।’’ সেই সঙ্গে লেবু এবং গোলমরিচের তেল ছড়িয়েও এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ঠেকানো য়ায় বলে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। বলছেন, ‘‘শহরের জমা জলে কিংবা ঝোপঝাড়ে এই তেল স্প্রে করলেও ফল মিলবে।’’

ক’দিন আগে, এনসেফ্যালাইটিসের বাহক কিউলেক্স বিশনোই মশককুল নিয়ন্ত্রণে পাতিহাঁস (ইন্ডিয়ান রানার ডাক), কিংবা মাসকভি হাঁস চাষের পরামর্শ দিয়েছিল হু। গড়িমসি করায়, সে যাত্রায় এনসেফ্যালাইটিসের জ্বরে কপাল পুড়েছিল রাজ্যের। এ বার, সাইক্লোপডিয়ার দাওয়াই তারা মানবেন তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mesocyclopes dengue who rahul roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE