Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র উন্নয়নে উদ্যোগ

সব সময়ের চিকিৎসক নেই। ব্লক হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই পালা করে পরিস্থিতি সামলান। কর্মীদের বেশ কিছু পদও ফাঁকা। কর্মী আবাসনের অবস্থাও ভাল নয়। বহির্বিভাগটিও কিছুটা অপরিসর। পরিকাঠামোগত প্রতিকূলতার মধ্যেও গত দেড় বছরে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের আওতাভুক্ত শিলিগুড়ি মহকুমার একমাত্র মা ও শিশুদের পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘পরশ’ গ্রামীণ এবং চা বাগিচার পরিবারগুলি মধ্যে পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে।

ফাঁসিদেওয়ার ‘পরশ’ ঘুরে দেখছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিব।—নিজস্ব চিত্র।

ফাঁসিদেওয়ার ‘পরশ’ ঘুরে দেখছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিব।—নিজস্ব চিত্র।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ০৩:০৬
Share: Save:

সব সময়ের চিকিৎসক নেই। ব্লক হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই পালা করে পরিস্থিতি সামলান। কর্মীদের বেশ কিছু পদও ফাঁকা। কর্মী আবাসনের অবস্থাও ভাল নয়। বহির্বিভাগটিও কিছুটা অপরিসর। পরিকাঠামোগত প্রতিকূলতার মধ্যেও গত দেড় বছরে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের আওতাভুক্ত শিলিগুড়ি মহকুমার একমাত্র মা ও শিশুদের পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘পরশ’ গ্রামীণ এবং চা বাগিচার পরিবারগুলি মধ্যে পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে। ১০ শয্যার কেন্দ্রটিতে প্রায়ই মা-শিশুদের রাখার জায়গা মেলে না। কোনওক্রমে পরিস্থিতি সামাল দেন কর্মীরা। নানা মহল থেকে তার খবর পৌঁছায় নবান্নেও।

অবশেষে শিলিগুড়ি সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ফাঁসিদেওয়ার জ্যোতিনগরের ওই কেন্দ্রটিকে ঢেলে সাজার কাজ শুরু করল রাজ্য প্রশাসন। মঙ্গলবার সকালে রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র এবং স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ফাঁসিদেওয়ায় গিয়ে কেন্দ্রটি ঘুরে দেখেন। তাঁরা ব্লকের প্রশাসনিক এবং স্বাস্থ্য দফতরের অফিসারদের সঙ্গেও কথা বলেন। কেন্দ্রের সেই সময় দায়িত্বে থাকা নার্সের কাছ থেকে রেজিস্টার খতিয়ে দেখেন। নানা খুঁটিনাটি বিষও জানতে চান।

সরকারি সূত্রের খবর, ফাঁসিদেওয়া থেকে মুখ্যসচিব উত্তরকন্যায় ফিরে মহকুমাশাসক দীপাপ প্রিয়াকে ওই কেন্দ্রের বিস্তারিত রিপোর্ট ছবি-সহ দ্রুত তৈরি করে কলকাতায় পাঠানোর কথা বলেন। তার পরেই কেন্দ্রের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হবে বলে তিনি জানিয়ে দেন। দুপুর থেকে স্থানীয় বিডিও বীরুপাক্ষ মিত্র ব্লকের স্বাস্থ্য কর্তাদের নিয়ে রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু করেন। সেই সঙ্গে খড়িবাড়ি ব্লক সদর এবং শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে একই ধরনের আরও দুটি কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাবও মহকুমা প্রশাসনের তরফে দেওয়া হয়েছে।

মহকুমা শাসক বলেন, ‘‘আমাদের মহকুমায় একটিই এই ধরনের কেন্দ্র রয়েছে। মুখ্যসচিব খুব ভাল কাজ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। সেখানে আরও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য কী কী দরকার, তার রিপোর্ট মুখ্যসচিবকে পাঠানো হচ্ছে। মহকুমায় আরও দুটি কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।’’

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজ্যের তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন। গ্রাম ছাড়াও মূলত চা বাগানের অপুষ্টিতে ভোগা ৬ মাস থেকে ৫ বছরের শিশুদের মা’র সঙ্গে কেন্দ্রটিতে রেখে চিকিৎসা, খাবারের বন্দোবস্ত করা হয়। অঙ্গনওয়ারি এবং আশা কর্মীদের মাধ্যমে শিশুদের আনার জন্য মায়েদের ৫০ টাকা পরিবহণ খরচও দেওয়া হয়। সুষম আহারের মাধ্যমে শিশুদের ওজন বাড়িয়ে সুস্থ করাটাই কেন্দ্রের কর্মীদের দায়িত্ব। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে মা’য়েদের থাকা খাওয়া ব্যবস্থা ছাড়া রোজ মা’কে ১০০ টাকা করেও দেওয়া হয়।

তবে বেশ কিছুদিন ধরে কেন্দ্রের শিশু চিকিৎসক নেই। ৪ জন সহায়িকার বদলে একজন আছেন। ২ জন নার্সের বদলে রয়েছেন ১ জন। রাঁধুনি এবং সাফাই কর্মী অবশ্য আছেন। বহির্বিবিভাগ থাকলেও তার জায়গা কম। শিশুদের খেলাধুলোর সরঞ্জাম এবং টিভি দেখার ‘প্লেরুম’ থাকলেও খোলা জায়গায় কিছুটা অভাব রয়েছে। এ ছাড়াও কর্মীদের আবাসনের সংস্কার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বিডিও বীরুপাক্ষবাবু বলেন, ‘‘আমরা শিশুদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠানও করি। প্রশাসনের তরফে নিয়মিত নজরদারি করা হয়। তবে পরিকাঠামো কিছু বাড়ানো প্রয়োজন, সেগুলি দেখা হচ্ছে।’’

মহকুমার পাহাড়গুমিয়া, হাঁসখোয়া, গঙ্গারাম, কমলা, মোহর গুলমা চা বাগান-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশুরা এখানে আসে। একমাসের ব্যবস্থায় প্রতিদিন দুইবেলা সমস্ত সবজি-সব মসুর ডালের খিচুরি শিশুদের খাওয়ানো হয়। সেই সঙ্গে ছোলার ছাতু, জবের গুড়ো, ময়দা, গুড় এবং কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল দিয়ে মন্ড তৈরি করে দিনে দুইবার করে শিশুদের দুধ এবং গরম জল দিয়ে তা খাওয়ানো হয়। প্রতিদিন ওজন নেওয়া ছাড়াও ব্লকের চিকিৎসকরা শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। প্রতিটি শিশু পিছু রোজ ১৩০ টাকা করে খরচ করা হয়। মহকুমা আর কোথাও না থাকায় কেন্দ্রটিতে ব্লকের বাইরে থেকে প্রয়োজনে যাতে শিশুদের রাখা যায়, সম্প্রতি সেই সিদ্ধান্তও নিয়েছে মহকুমা প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE